ব্যবসায়ীকে হতে হবে সাহসী

রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জ। ঢাকার সঙ্গে সহজ ও দ্রæত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার; গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্পকারখানা। এই জনপদের একজন সফল নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ী মো. আহসান হাবিব। কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া নূরপুরে ‘হাবিব এন্টারপ্রাইজ’-এর স্বত্বাধিকারী তিনি। বন্ধনের নিয়মিত আয়োজন ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে এবার জানাব সফল এ মানুষটির সাফল্যের রহস্য। সহযোগিতায় ছিলেন আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা মাহফুজুল হক।

মো. আহসান হাবিবের জন্ম ১৯৮১ সালের ১০ অক্টোবর কেরানীগঞ্জে। বাবা মরহুম শওকত হোসেন ও মা মোছা. জোবেদা খাতুন। ১৯৯৭ সালে কলাতিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৯৯ সালে কলাতিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর পাড়ি জমান সৌদি আরব। প্রায় চার বছর পর দেশে ফিরে ২০০৪ সালে শুরু করেন জমি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা। এই ব্যবসার একপর্যায়ে ২০২০ সালে জড়িত হন নির্মাণপণ্য ব্যবসায়। বর্তমানে তিনি আকিজ সিমেন্টের কেরানীগঞ্জ-২ টেরিটরির একজন এক্সক্লুসিভ বিজনেস পার্টনার। ডিলারশিপের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর ব্যবসাসম্ভারে রয়েছে সিমেন্ট, রড, ইট, বালু ও পাথর। 

আহসান হাবিব যখন নির্মাণপণ্য ব্যবসা শুরু করেন, তখন বিশ^জুড়ে চলছে মহামারি করোনা। ভয়াবহ সেই পরিস্থিতিতে আহসান হাবিবের নির্মাণপণ্য ব্যবসার সিদ্ধান্ত চরম বোকামি বলেই মনে করেছিল অনেকে। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ওই সময়ে ব্যবসায় দারুণ সাফল্য লাভ করেন তিনি। প্রত্যাশার চেয়েও অধিক পরিমাণ পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হন। আর এই সাফল্যেও পেছনে ছিল আহসান হাবিবের সুনাম। ফলে তাঁর ব্যবসার প্রসারও ঘটে দ্রæত। বর্তমানে তাঁর রয়েছে ৩টি শোরুম ও গোডাউন।  

স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায় সাফল্য পেতে প্রয়োজন বেশ কিছুটা সময় ও অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে ডিলারশিপ ব্যবসার ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ের অভিজ্ঞতা জরুরি। অথচ আহসান হাবিব খুচরা পর্যায়ে ভালো করায় নির্মাণপণ্য ব্যবসা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই গ্রহণ করেন আকিজ সিমেন্টের ডিলারশিপ। এটা যেমন তাঁর জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল বিশ^স্ত খুচরা ব্যবসায়ী বাছাই ও তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানো। এলাকার নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ীরা তাঁর পরিচিত হওয়ায় তিনি বেশ আত্মবিশ^াসের সঙ্গেই কাজটি করতে সমর্থ হন। নিয়মিত ব্যবসায়ী ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন বাজারে যেসব নির্মাণপণ্যের ব্যবসায়ী রয়েছে, তারাও তাঁর কাছ থেকে প্রায়ই পণ্য সংগ্রহ করেন। তা ছাড়া ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে আহসান হাবিব নানা পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। এসবের মধ্যে প্রতিবছর ঈদে উপহার প্রদান, টার্গেট বোনাস, আনন্দভ্রমণ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও রাজমিস্ত্রিদের জন্যও তিনি বিভিন্ন বিনোদনমূলক আয়োজন করে থাকেন। 

মো. আহসান হাবিব বিয়ে করেন ২০০১ সালে। তাঁর স্ত্রী সানজিদা আক্তার। এ দম্পত্তির ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন নর্থ-সাউথ বিশ^বিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। মেজো ছেলে সালমান হোসেন কলাতিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে জুবাইরা আফরিন সারা মিশন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। ব্যবসায়িক ব্যস্ততার পাশাপাশি আহসান হাবিব বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত। তিনি বাইতুল আমান জামে মসজিদের সভাপতি ও সামাজিক সংগঠন বর্ণমালা-এর একজন সদস্য। সংগঠনটির মাধ্যমে অসহায়-দুস্থ জনগোষ্ঠীর মাঝে ত্রাণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ, করোনা মহামারিকালীন সহায়তাসহ নানা মানবিক কাজ পরিচালিত হয়। এ ছাড়া তাঁর ব্যবসার অধীনে নিশ্চিত হয়েছে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান। 

একজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসায় সাফল্য পেতে অবশ্যই তিনটি বিষয় মানতে হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী আহসান হাবিব। আর সেগুলো হচ্ছে সৎ থাকা, প্রতিশ্রæতি রক্ষা ও সবার বিশ^াস অর্জন। পাশাপাশি দোকানে সব সময় চাহিদামতো পণ্য থাকতে হবে, যেন ক্রেতা ফিরে না যায়। এই বিষয়গুলো মেনে ব্যবসা করলে ব্যবসায় উন্নয়ন সম্ভব। আরও বড় পরিসরে ব্যবসা করার লক্ষ্যে এই ব্যবসায়ী কাজ করে চলেছেন। দুটি শোরুম উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন শিগগিরই। আকিজ ইস্পাতের ডিলার হওয়ার চেষ্টাও রেখেছেন অব্যাহত। ল্যান্ড ব্যবসার পাশাপাশি ডেভেলপার ব্যবসায়ও নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান দ্রæতই।

একনজরে

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম: হাবিব এন্টারপ্রাইজ 

স্বত্বাধিকারীর নাম: মো. আহসান হাবিব

অবস্থান: চৌরঙ্গী মার্কেট, নূরপুর, কলাতিয়া, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

ব্যবসা শুরু: ২০২০ সাল

নির্মাণপণ্য: সিমেন্ট, রড, ইট, বালু ও পাথর

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৩ তম সংখ্যা, মে ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top