অধ্যাপক ড. খবিরুল হক চৌধুরী
শনাক্তকরণের ব্যর্থতায় জাহাজ উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। আমাদের এমন উদ্ধারকারী জাহাজ আনতে হবে, যা দিয়ে সহজেই দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজ চিহ্নিত করা যায়

ড. খবিরুল হক চৌধুরী নৌযান বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক। শিক্ষকতা করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। জন্ম ১৯৫৩ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায়, এখন যা রাজবাড়ী জেলার অন্তর্গত। বাবা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী। রাজবাড়ীর রাজা সূর্যকুমার ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাথমিক শেষে মাধ্যমিকে উর্ত্তীণ হন। রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর নেভাল আর্কিটেক্ট অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপর মাস্টার্স করেন ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল ইউনিভার্সিটি থেকে। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌ সংস্থা রয়েল ইনস্টিটিউট অব নেভাল আর্কিটেক্টের সদস্যপদ লাভ করেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বুয়েটের নেভাল আর্কিটেক্ট অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে রয়েল ইনস্টিটিউট অব নেভাল আর্কিটেক্টের সম্মানিত ফেলো নির্বাচিত হন। এ ছাড়া বিশেষভাবে তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে জাহাজ ডিজাইন, জাহাজ অর্থনীতি, জাহাজ সুরক্ষা, পরিবহন সিস্টেম পরিকল্পনা, সংগ্রহ ও রেগুলেশন বিষয়ে। সদালাপি গুণী এ শিক্ষাবিদ মুখোমুখি হয়েছিলেন বন্ধন-এর। জানিয়েছেন বাংলাদেশের জাহাজশিল্পের সমস্যা, সম্ভাবনা ও দূর্ঘটনার কথা। সাথে ছিলেন ম. শাফিউল আল ইমরান

ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবাহী লঞ্চ
ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবাহী লঞ্চ

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নৌ-প্রকৌশল সম্পর্কে জানতে চাই?
নৌ-প্রকৌশল একটি ব্যাপক বিষয়। এর মধ্য নৌ, সমুদ্র, জাহাজ সবকিছুই পড়ে। অধুনা বিশ্বে মেরিটাইম টেকনোলজি, নেভাল আর্কিটেকচার, শিপ বিল্ডিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিংÑএর মতন বিষয় আজ নৌ-প্রকৌশলের অর্ন্তভূক্ত। জাহাজ কীভাবে ডিজাইন করতে হবে, কীভাবে অপারেশন করতে হবে, কীভাবে কনস্ট্রাকশন করতে হবে, জাহাজটা যখন গভীর সমুদ্রে ঝড়ের মধ্য পড়বে, তখন কীভাবে কাজ করবে-সবকিছু এর মধ্য থাকে। এরপর সমুদ্রের ভেতরে যে ইঞ্জিনিয়ারিং, এটাকেও আমরা সমুদ্র প্রকৌশল বা ওশান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মধ্য ফেলতে পারি। এ জন্য বর্তমান বিশ্বে নৌ-প্রকৌশলের মধ্য এ সবকিছুকেই আনা হয়েছে। আর তাই সমুদ্রবিজ্ঞান, সমুদ্র প্রকৌশল, নৌ-প্রকৌশল সব এখন মিলেমিশে একাকার। ভূমির তুলনায় পানির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় স্থলে যেসব ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে, সে তুলনায় সমুদ্রে ইঞ্জিনিয়ারিংটা অনেক বেশি। এই যে আমরা ২০০ মাইল সমুদ্র পেয়েছি এর ডিপ ইনস্টেলেশন সি বেল্টের মধ্য রয়েছে বিশাল এক  ইঞ্জিনিয়ারিং।   

নৌ-দুর্ঘটনা এ দেশে একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণগুলো কী কী? 
নৌ-দুর্ঘটনার কারণ অনেক। এ নিয়ে আমি ১৯৮৬ সাল থেকে কাজ করছি। ওই বছরই একটা লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। কারণটি খুব সাধারণ। লঞ্চটির ডিজাইনে সমস্যা ছিল, সমস্যা ছিল কনস্ট্রাকশনে, সমস্যা ছিল অপারেশনেও। সুতরাং এখানে পদে পদে সমস্যা। আমাদের এখানে লঞ্চ বা জাহাজের ডিজাইনটা দ্রুত করে ফেলা হচ্ছে। কেউ হয়তো লোভে পড়ে ছাড়পত্র দিয়ে দিল; সার্ভেয়ার সার্ভে করে গেল লোকস্বল্পতা নিয়ে; আবার কনস্ট্র্রাকশনে যে জিনিস লাগানোর কথা সে জিনিস লাগাল না। আপাতত চলুক, পরে দেখব।   ফাটল ধরলেও সেই ফাটল কেউ মেরামত করল না। সামান্য অবহেলায় জাহাজটা ডুবে গেল। জাহাজের মালিকেরা বলে প্রতিদিন তো জাহাজ চলে কোনো সমস্যা হয় না। দুর্ঘটনা ঘটবে কয় দিন, এক দিন। এর কারণ আর কিছুই না চালকের সতর্কতার অভাব, ডিজাইনে সমস্যা, অপারেশনে সমস্যা, প্রশিক্ষিত লোক দিয়ে জাহাজ না চালানো। স্টিয়ারিং ধরা আর জাহাজ চালানো কিন্তু এক কথা নয়। যে কাজের জন্য যে উপযুক্ত, সেই লোক দিয়ে কাজ করাতে হবে। তবেই কমবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।    

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে চলাচল
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে চলাচল

নদীপথে চলাচলের জন্য নৌ-প্রকৌশল বিভাগের কোনো প্রস্তাবনা আছে কি?
হ্যাঁ, অনেক প্রস্তাবনা আছে আমাদের কাছে। অনেক প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি। যেমন অনেক জাহাজের ডিজাইন আমরা চাইছি। আমাদের যে জাহাজ আছে, সেগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি, যাতে সামনে যেন আর দূর্ঘটনা না ঘটে। এভাবে আমরা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারি। অতি দ্রুত চলাচলরত জাহাজগুলো পরীক্ষা করা উচিত, উচিত ডিজাইনের অবস্থা, বর্তমান অবস্থা পরীক্ষা করা। ১৯৮৬ সালে আমাদেরকে ৩৪টি জাহাজের ডিজাইন চেক করতে বলা হয়েছিল। আমরা চেক করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জাহাজগুলোর ডিজাইন অনুপযোগী পেয়েছি। সরকার প্রতিবেদন দিতে বলেছিল, আমরা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলোর কোনো শাস্তি হয়েছে কি না আমাদের তা জানা নেই। আমরা শুধু সরকারকে চিহ্নিত করে সহায়তা করেছিলাম। এরপর বাকি দায়দায়িত্ব সরকারের। 

লঞ্চ নির্মাণজনিত ত্রুটিই কি লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ? এ থেকে প্রতিকারে করণীয় কী?
এখানে চলাচলরত জাহাজে রয়েছে ডিজাইন ত্রুটি, কনস্ট্র্রাকশন ত্রুটি ও অপারেশন ত্রুটি। তাহলে লঞ্চ নির্মাণজনিত মোট তিনটি ত্রুটির কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে। একটা জায়গা দিয়ে যদি এটি মেকআপ করা যেত, তবে কিছু করা যেত। ডিজাইন, কনস্ট্র্রাকশন, আর অপারেশনে খারাপ হলে অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? ভাবুন তো!  

লঞ্চের ত্রুটিপূর্ণ নকশা প্রণয়নে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের এখনকার ভূমিকা কি যথেষ্ট?
না! তারা তো স্বীকার করছেই, তাদের লোকবল কম। এখানে কিছু ডিজাইন হাউস আছে যারা শুধুমাত্র ডিজাইনে দেখায় প্যাসেঞ্জার ভেসেলগুলো কীভাবে চলবে। আমি কার্গো বা ট্যাংকারের কথা বলব না। কারণ, সেখানে লোকজন কম থাকে কিন্তু যাত্রীবাহী লঞ্চে বাচ্চা, মহিলা, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সের যাত্রী থাকে। যাত্রীবাহী এ লঞ্চ যখন দুর্ঘটনায় পড়ে তখন তার দায় অনেক বেশি। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের লোকবল কম হওয়ায় আমরা বলেছি, এই যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে বুয়েটের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হোক, এটা আমরা দেখব। তাদের লোকবল যেহেতু যথেষ্ট নয়, তাই আমরা তাদেরকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারি। 

নির্মাণাধীন ক্রুজ
নির্মাণাধীন ক্রুজ

নিয়মবহির্ভূতভাবে লঞ্চের সার্ভে রেজিস্ট্রেশন, নকশা অনুমোদন, ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান, অতিরিক্ত যাত্রীবহনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে কি?
ওই যে বললাম, অবশ্যই না। কারণ হলো একজনকে বলা হলো বেশি যাত্রী ওঠে কি না। সে স্বীকার করেছে আমি অন্য কাজে ছিলাম। সে কিন্তু তার ব্যক্তিগত কাজে যায়নি, সরকারেরই অন্য কাজে গিয়েছিল। তার মানে জনবলসংকট। সুতরাং এসব জায়গায় অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। তারা কিন্তু যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।  

লঞ্চ নির্মাণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিয়ম মানছে কি? এ নিয়মে নির্মিত লঞ্চ ঝড় বা দুর্যোগে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত কাত হলেও পানি ঢোকে না। কিন্তু দেশে নির্মিত লঞ্চগুলো মাত্র ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি কাত হলেই পানি ঢুকে দুর্ঘটনায় পড়ছে। এর কারণ কী? এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
খুব সুন্দর প্রশ্ন। জাহাজ যদি ৪৫ ডিগ্রিতে কাত হয়, তাহলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে কিন্তু যদি ৪০ ডিগ্রিতে কাত হয় তবে দ্রুতই ফিরে আসে। কিন্তু সমস্যাটা হোল্ডের মধ্য পানি ঢোকা। হোল্ডের মধ্য নির্মাণত্রুটির কারণে যখন পানি ঢুকে যায়, ফ্রি সারফেজ এফেক্টের কারণে তখন আর এ নিয়ম খাটে না। এবং জাহাজে সাব ডিভিশন বাল্কেট যদি না থাকে তখন তখন পুরো হোল্ডের মধ্য পানি ঢুকে গিয়ে জাহাজকে ডুবিয়ে ফেলে। ওই যে জাহাজের মধ্য সাবডিভিশন বাল্কেট না থাকাটা পুরো জাহাজটাকে এফেক্ট করে জাহাজকে ডুবিয়ে দেয়। আর সাবডিভিশন বাল্কেট যদি থাকত তাহলে এত সহজে জাহাজ ডুবত না। এ ক্ষেত্রে দক্ষ লোক নিতে হবে। আমি আবারও বলছি, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা লোক নিলেই হবে না, নিতে হবে অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল। আর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দক্ষজনবলের একটি তালিকা থাকে, সেখান থেকে বেছে নিয়ে তাদেরকে দিয়ে এ কাজ করানো হয়।

অভিজ্ঞ মাস্টার, সারেং ও সুকানির অভাব রয়েছে এখানে। লঞ্চ চালাতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে আরও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা আছে কি? এদের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানের করা কীভাবে সম্ভব?
খুব সুন্দর প্রশ্ন, আমাদের দেশের যে প্রশিক্ষিত কর্মী, তারা বিদেশে গিয়ে প্রচুর নাম করছে। সুতরাং আমাদের এখানকার লোকজন দারুন দক্ষ। জেলায় জেলায় যে ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউড আছে, এগুলো প্রচুর দক্ষ কর্মীর জন্ম দিচ্ছে। পাশাপাশি দেশের নদীমাতৃক অঞ্চলে আরও ইনস্টিটিউট গড়ে তুলে দক্ষ জনবলকে ট্রেনিং দিয়ে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ কর্মী বের করা সম্ভব।

জীবন রক্ষাকারী ভাসমান সামগ্রী
জীবন রক্ষাকারী ভাসমান সামগ্রী

সম্প্রতি ডুবে যাওয়া লঞ্চ খুঁজে না পাওয়াকে কি ব্যর্থতা বলবেন? এ ক্ষেত্রে আধুনিক কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এর সুফল পাওয়া যেত?
ব্যর্থতার মানেটাই লঞ্চটাকে খুঁজে না পাওয়া। যখন উদ্ধার জাহাজগুলো কেনা হলো তখন উচিত ছিল এর রিকয়ারমেন্টকে ফুলফিল করা। আমাদের নদী, মানুষ, কিংবা আমাদের ডুবে যাওয়া, এটাকে আমদের মতো করে ভাবতে হবে। বিদেশি একটা জাহাজ এনে আমার ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। সুতরাং আমাদের প্রযুক্তি আছে শ্যালভেজ করার ব্যাপারে পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তিটা থাকতে হবে। এই খুঁজে পাওয়ার বিষয়টা আমাদের ওপরই বর্তায়। কেননা, বাংলার নদী স¤পর্কে আমরা জানি, জানি এর চরিত্র কেমন। কিন্তু যেটুকু লাগবে আমাদের সাহায্য করার জন্য, শুধু সেটুকুই বিদেশ থেকে আনতে হবে। আর এ ধরনের ডুবে যাওয়া জাহাজ খোঁজার জন্য আমাদের কার্যকর বিদেশি উদ্ধার জাহাজ থাকা উচিত। আমি তো এটাকে ব্যর্থতাই বলব। 

উদ্ধারকারী জাহাজগুলোও ডুবে যাওয়া নৌযান উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
উদ্ধারকারী জাহাজগুলো কিন্তু উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছে না, শনাক্ত করলে তো উদ্ধার করতে পারবে। তার মানে আমি বলব শনাক্তকরণে ব্যর্থ হচ্ছে। কোথায় জাহাজটা? পাওয়ারফুল ক্রেন থাকা সত্তে¡ও আমরা বসে থাকছি। শনাক্ত করতে পারলে তা পাওয়ারফুল ক্রেন দিয়ে তুলে আনা সম্ভব। আমি বলব, উদ্ধারে ব্যর্থ নয়, শনাক্তকরণের ব্যর্থতায় জাহাজ উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। আমাদের এমন উদ্ধারকারী জাহাজ আনতে হবে, যা দিয়ে সহজেই দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজ চিহ্নিত করা যায়। নেভির আছে, কোস্টগার্ডের আছে, আমাদেরও মেরিটাইম দেশ হিসেবে, রেগুলেটারি দেশ হিসেবে বিআইডব্লিওটিএর উন্নত উদ্ধার জাহাজ লাগবে। এই যে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, এর আগেও চাঁদপুরে একবার ডুবে যাওয়া জাহাজের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এখন আমাদের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী উদ্ধারকারী জাহাজ লাগবে। কিন্তু লক্ষ রাখতে হবে কেউ যেন জাহাজ কেনার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা না করে। রাইট রিকয়ারমেন্টে যেন আমরা উদ্ধারকারী জাহাজ কিনতে পারি। 

ডুবে যাওয়া নৌযান উদ্ধারে পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি থাকার কথা বলা হলেও এর প্রকৃত চিত্র আসলে কী?
ওই যে বললাম, উদ্ধারে হয়তো প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু আসল চিত্র হলো একটা জাহাজের যে আইডেন্টিফিকেশন, একটা জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর কোথায় আছে সেটা বের করার যে প্রযুক্তি, সেটা কিন্তু আমি দেখছি না। পিনাক-৬ জাহাজটি অনেক দিন ধরে খোঁজার পরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বরং লম্বা সময় ধরে খুঁজতে হচ্ছে। অনেকে আবার লোকাল প্রযুক্তি কাপ্পা দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছে। যদি এভাবে তারা বের করতে পারে, তবে উন্নত সব প্রযুক্তি তো ফেল করবে। সুতরাং আমি আবারও বলছি, ঝড়ে বড় নদীতে জাহাজ দুর্ঘটনায় এটিকে অনেক লম্বা ডিস্টেন্সেও নিয়ে যেতে পারে, সে অনুযায়ী প্রযুক্তিকেও কাজে লাগাতে হবে। আমাদের একটা উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়ে হবে না। যদি কয়েকটি উদ্ধারকারী জাহাজ থাকত তবে সেগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে খোঁজা যেত। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত উদ্ধার জাহাজ নেই, তাই কাজটি ধীরে ধীরে করতে হচ্ছে। জাহাজের বডি যেহেতু পুরোটাই ধাতব স্টিলের তাই এটি সেন্সরের মধ্য আসার কথা। কিন্তু নদীর পলির কারণে সেটা যদি পলিমাটিতে আটকে গিয়ে পলিতে ডুবে যায়, তবে তা সেন্সরে ধরতে সমস্যাই হবে। সে জন্য আমাদের জাহাজ উদ্ধারে উন্নত প্রযুক্তি আনতে হবে।

আধুনিক কুরুজ ডিজাইন
আধুনিক ক্রুজ ডিজাইন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৌ-প্রকৌশল কী কী ভূমিকা রাখতে পারে?
নৌ-প্রকৌশল এক অর্থে অর্থনীতিরই চাবিকাঠি। যে দেশে যত নদী, সমুদ্র আর জাহাজ বেশি সে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ততই উন্নত। সিঙ্গাপুর সামান্য একটা সমুদ্রের কোনায় বসে পানি বেঁচে খাচ্ছে, সেখানে সবই জাহাজ। সেখানে কি ধান, পাট, খনিজ আছে? না। কিন্তু পানি আছে, সমুদ্র আছে। একটা দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হবে যখন তার নদী থাকবে, সমুদ্র থাকবে। তার জাহাজগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবে তখন। চীন বলুন, নেদারল্যান্ড বলুন, ইউকে বলুন, মালয়েশিয়া বলুন, ইন্দোনেশিয়া বলুন পৃথিবীতে যত মেরিটাইম দেশ আছে, তারা সবাই তাদের নদীকে ব্যবহার করে, সমুদ্রকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। 

বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় বুয়েটের নৌ-প্রকৌশল বিভাগের অবদান সম্পর্কে কিছু বলেন?
সম্প্রতি সরকার থেকে বুয়েটকে দুটো জাহাজ ডিজাইন করতে দেওয়া হয়েছে। প্যাসেঞ্জার ভেসেল, যেটা চিটাগাং থেকে বরিশাল যাবে। প্রথমবারের মতন ফুল ডিজাইনের জাহাজ আসছে। পাশাপাশি চলছে মাওয়া নৌপথের ডিজাইন। সঠিকভাবে আবহাওয়া, পানি- সবকিছুকে লক্ষ করে এটি বানাতে হবে। আমরা যেটা গবেষণা করছি সেটার ফল ডাইরেক্টলি অনেক সময় কাজে লাগাতে পারি না; সেটাকে ইন্ডাস্ট্রিতে কনভার্ট করে তারপর কাজে লাগাতে হয়। সুতরাং এই গবেষণাটা ইন্ডাস্ট্রিতে ইউজ হবে। তার মাঝখানে একজন থাকবে, যারা সমন্বয় করবে; যেমন-সরকার। তখন ব্যাপারটা আরও বেশি উন্নত হবে।

প্রকাশকাল: বন্ধন ৫৩ তম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top