ঢাকার ফার্নিচার পল্লী রোকেয়া সরণি

ঘর সাজাতে চাই ফার্নিচার আর তা হওয়া চাই মনের মতো! কিন্তু সবার পছন্দ তো আর এক নয়। কারও পছন্দ কাঠ, কারও বেত আবার কারও বা স্টিল কিংবা আয়রনের ফার্নিচার। তা ছাড়া কোণভেদে প্রয়োজনের ভিত্তিতে চাহিদানুযায়ী ফার্নিচারে সাজাতে হয় ঘর। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখনই, যখন ফার্নিচারের সঠিক হদিস বা প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে জানা না থাকে। একই স্থানে সব ধরনের ফার্নিচার পাওয়া যায় এমন একটি স্থান ঢাকার মিরপুরের রোকেয়া সরণি। সব ধরনের মনের মতো আসবাব পেতে হলে আপনাকে আসতে হবে বিখ্যাত এই ফার্নিচারপল্লিতে। 

ফার্নিচার যখন রোকেয়া সরণিতে

ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মিরপুরে অবস্থান রোকেয়া সরণির। বাংলাদেশের ফার্নিচারজগতের সবচেয়ে বড় মার্কেট এটি। আগারগাঁও তালতলা থেকে শুরু করে শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া হয়ে এর বিস্তৃতি মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত। রাস্তার দুই ধারে যত দূর চোখ যায় দেখা মেলে ছোট-বড় অনেক ফার্নিচারের দোকান। এখানে পাওয়া যায় ভিন্ন আঙ্গিকের বৈচিত্র্যময় সব ফার্নিচার। শোরুমগুলোতে দেশি-বিদেশি কাঠ, আয়রন, বেত, পার্টিকেল বোর্ড, স্টিলসহ সব ধরনের ফার্নিচার বিক্রি হয়। ১৯৬০ সালের শুরুর দিকে এখানে বসে প্রথম ফার্নিচারের দোকান। আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা ও বিক্রির চাহিদা বাড়ায় গড়ে ওঠে আজকের রোকেয়া সরণির ফার্নিচারপল্লি।

ক‍র্মব্যস্ততায় ফা‍র্নিচার শ্রমিকেরা

যা পাবেন

ফার্নিচারজগতের প্রায় সব ফার্নিচারই এখানে পাওয়া যায়। ছোট টুল থেকে শুরু করে চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, আলনা, পড়ার টেবিল, ডাইনিং টেবিল, সোফা, বুকশেলফ, রোলিং চেয়ার, কম্পিউটার টেবিল, কনফারেন্স টেবিল, ইজি চেয়ার, অফিশিয়াল ডেস্ক সবই রয়েছে এ পল্লিতে। এ ছাড়া বেত ও টিনের নানা আকর্ষণীয় ফার্নিচারও পাওয়া যায় এখানে। এগুলোর মধ্যে কাঠের ফার্নিচারে দেখা মেলে বৈচিত্র্যময় শৈল্পিক ছোঁয়ার নানা নকশার। খাটসহ অন্যান্য ফার্নিচারের কারুকার্য সত্যিই দেখার মতো। বাহারি সব নকশায় যে কারও মন কাড়ে সহজেই। কারিগরেরা প্রথমে কাগজে নকশা এঁকে ছাপ দেন কাঠে। এরপরই এর আদল ফুটে ওঠে ফার্নিচারে। পুরোনো ধাঁচের ফার্নিচার তৈরি হয় আরও বৈচিত্র্য নিয়ে। জাহাজে ব্যবহৃত ফার্নিচারের শোরুমগুলো আলাদা। ওয়েস্টার্ন ধাঁচের হওয়ায় এই ফার্নিচারের জনপ্রিয়তাও লক্ষণীয়। মাঝেমধ্যেই চোখ চলে যাবে বেতের ফার্নিচারের শোরুমগুলোতে। নান্দনিক এ ফার্নিচার যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরা খুব সহজেই কিনতে পারবেন এখান থেকে। মধ্যবিত্ত যাঁরা কাঠের ফার্নিচারের দামের সঙ্গে পেরে উঠছেন না, তাঁরা বেছে নিতে পারেন পার্টিকেল বোর্ডের ফার্নিচার। 

যেখান থেকে আসে বিদেশি ফার্নিচার

অনেক দেশ থেকেই আসে রেডিমেট ফার্নিচার। ইউরোপের পাশাপাশি চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ানের ফার্নিচার এ দেশে বেশি বিক্রি হয়। এগুলো জাহাজ কিংবা বিমানের মাধ্যমে আসে পার্ট বাই পার্ট আকারে। কিন্তু জাহাজে করে অর্থাৎ নৌপথে এগুলো বেশি আসে। প্রথমে বন্দরে খালাস হয়। পরিবহনের মাধ্যমে এগুলো দোকানে এনে পুরোপুরি সেটিং করা হয়। এরপর রাখা হয় বিক্রির জন্য।

এখানকার যত দোকান

রোকেয়া সরণিতে ছোট-বড় মিলিয়ে দোকানের সমারোহ কম নয়। এখানে দোকানের পাশাপাশি আছে কারখানাও। এখানে ফার্নিচার তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো ফার্নিচার মেরামতও করা হয়। সাধারণ শোরুমের পাশাপাশি ব্র্যান্ডের নানা শোরুম রয়েছে এখানে। যেমন- অটবি, আকতার, হাতিল, নাভানা, ব্রাদার্স, পারটেক্স ফার্নিচার প্রভৃতি। এগুলোতে সাধারণত একদামে ফার্নিচার বিক্রি হয়। তবে মাঝেমধ্যে থাকে বিশেষ ছাড়ের অফার। মাঝারি মানের ফার্নিচার দোকানের তালিকায় রয়েছে নাজমা ফার্নিচার, ডোস-ইন, কুমিল্লা ফার্নিচার, দেলোয়ার ফার্নিচার, রাফি ফার্নিচার ছাড়াও উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি দোকান। এ ছাড়া কিছু দোকানে পাওয়া যায় পুরোনো ফার্নিচারও। এর মধ্যে আজিজ, ফরিদপুর, রহিম ফার্নিচার উল্লেখযোগ্য। আর বেতের ফার্নিচার পাওয়া যায় আকাশ উডেন ফার্নিচারের শোরুমে। রোকেয়া সরণিতে ফার্নিচারের সঙ্গে এর আনুষঙ্গিক উপকরণও পাওয়া যায় এসব দোকানে।

পরিবহনব্যবস্থা

দোকান থেকে শুধু ফার্নিচার কিনলেই কিন্তু কাজটি শেষ হয়ে যায় না। সেগুলো বাসায় নিতে চাই পরিবহন। সাধারণত প্রায় প্রতি দোকানেরই নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলোর দরদাম অবশ্য নিজেকেই করতে হয়। তবে দূরে হলে অর্থাৎ ঢাকার বাইরে হলে চার্জটা একটু বেশি। তবে ফার্নিচার ঠিকই নিরাপদে আপনার বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।

ফা‍র্নিচার পরিবহন

দামটা যেমন

ফার্নিচার একদামেই বিক্রি হয় এখানকার শোরুমগুলোতে। তবে ক্ষেত্রভেদে কিছু ডিসকাউন্ট বা ছাড় পাওয়া যায়। এখানে কাঠের চেয়ার ২৫,০০০-৫৫,০০০ টাকা, খাট ১২,০০০-১৫,০০০, ডাইনিং টেবিল ১০,০০০-২০,০০০, ড্রেসিং টেবিল ২৫,০০০-৩৫,০০০, সোফা ২০,০০০-২৫,০০০ টাকায় বিক্রি হয়। বেতের ফার্নিচারের দাম রকমভেদে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি। বিদেশি ফার্নিচারের দাম দেশি ফার্নিচারের তুলনায় বেশি।

রোকেয়া সরণি ঘরের দরকারি আসবাব ফার্নিচারের জন্য যেমন বহুল পরিচিত, তেমনি দারুণ সমাদৃতও। তাই এ কথা বলাই যায়, এখানকার ফার্নিচার দেশসেরা। ঘর সাজানোর অন্যতম অনুষঙ্গ ফার্নিচার কেনার কথা ভাবলে আপনার বিবেচনায় রাখতেই হবে রোকেয়া সরণির ফার্নিচারপল্লিকে।

মো. ওয়ালিউর রহমান (অভি)

[email protected]

প্রকাশকাল: বন্ধন ৪৯ তম সংখ্যা, মে ২০১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top