ব্যবসা শিখে ব্যবসা করুন

বয়সে তখন দুজনই কিশোর। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ভ্যারাইটি স্টোরে কাজ দুজনের। স্টেশনারি দোকানটিতে ক্রেতা-সমাগম প্রচুর; বেচাকেনার ফাঁকে দম ফেলার ফুরসত নেই এতটুকু। তবুও নিজ কাজে দারুণ মনোযোগী। সততা, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের কারণে সবারই প্রিয়পাত্র। কাজের সূত্রেই দুজনের মাঝে গড়ে ওঠে সখ্য। ১০ বছর একসঙ্গে কাজ করার পর সহজ উপলব্ধি- এই শ্রম ও মেধা যদি নিজের ব্যবসায় লাগানো যায়, তবে নিশ্চিত হবে সুন্দর আগামী। যেমন ভাবা তেমন কাজ। অংশীদারির ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জের শ্যামলীপাড়া বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন বাজার রোডে মেসার্স উল্লাপাড়া ভ্যারাইটি স্টোরের ব্যানারে শুরু দুজনের স্বনির্ভর ব্যবসার। সমন্বিত প্রচেষ্টায় সহজেই আসে সাফল্য। নিজ উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায় ব্যবসায়িক এ সফলতা যাঁদের হাত ধরে এসেছে, তাঁরা মো. রুহুল আমিন ও মো. রতন আলী। আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা বিশ্বাসের সহায়তায় ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে এবারের সফলমুখ তাঁরাই।

২০০৮ সালে প্রায় সাত লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু ব্যবসার। ব্যবসায় বিনিয়োগ যথেষ্ট না হলেও দীর্ঘ ১০ বছরের অর্জিত অভিজ্ঞতা ও ব্যবসায়িক কৌশলই এ ক্ষেত্রে সহায়ক মূলধন। এ ছাড়া স্বনামধন্য কোম্পানির সঙ্গে তাঁদের পূর্বপরিচয়টাও ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ব্যবসায় আসার কথা জেনে অনেক কোম্পানিই এগিয়ে এসেছে তাঁদের সহজ শর্তে পণ্য সরবরাহে। এভাবেই ব্যবসা পেয়েছে ছন্দময় গতি। ধীরে হলেও ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে রড, সিমেন্ট, টায়ার, এলপি গ্যাস, হার্ডওয়্যার সামগ্রীসহ নানা পণ্য। স্বল্প মুনাফা, গুণগতমানের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সহজেই ক্রেতাদের মন জয় করেছেন তাঁরা। কয়েক বছরের মধ্যেই এলাকায় স্বীকৃতি পান সফল ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী হিসেবে। স্ব স্ব অবস্থান উন্নয়নের পাশাপাশি এখন তাঁরা উল্লাপাড়ার দেশসেরা ও ব্যান্ডেড সব সিমেন্ট কোম্পানির ডিলার। বিভিন্ন ধরনের নির্মাণপণ্য বিক্রিতে অত্র অঞ্চলে তাঁদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ২০১৩ সালে আকিজ সিমেন্ট বিক্রিতে এলাকায় ছিল সর্বোচ্চ বিক্রেতা। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নির্মাণপণ্য বিক্রির স্বীকৃতিস্বরূপ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তরফ থেকে পেয়েছেন টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, ঘড়ি, নগদ টাকাসহ নানা উপহার ও সম্মাননা। ভ্রমণ করেছেন সুন্দরবন ও  কক্সবাজার। এ বছরই আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির সৌজন্যে আবারও ঘুরতে যাচ্ছেন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে।

ব্যবসার ক্ষেত্রে দুজনেরই রয়েছে চমৎকার বোঝাপড়া ও আন্তরিকতা। একজন দোকান সামলালে অন্যজন বাইরের কাজ করেন। তাই সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনায় কোনো রকম সমস্যা হয় না। একসময় স্বল্প মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন তা বেড়েছে কয়েক গুণ। বাজারে তাঁদের নগদ পাওনা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ব্যবসার সূত্রে গড়ে উঠেছে একটা শোরুম ও দুটি গোডাউন। এ ব্যবসার সুবাদে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কিছু কর্মচারীর। তাঁদের আজকের এ অবস্থার পেছনে রয়েছে সততা, বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। এলাকায় সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কাজে রয়েছে সক্রিয় সম্পৃক্ততা। এ সুবাদে মসজিদ, এতিমখানা ও মাদ্রাসায় নিয়মিত অনুদান দেন।

ব্যবসা প্রতিযোগিতার। বৃহৎ পরিসরে ব্যবসা করতে চাইলে দরকার অর্থের। ব্যবসায় নিজ অবস্থান সুদৃঢ় হলেও পরিসর বাড়িয়ে আরও ভালোভাবে ব্যবসা করতে চাই অর্থ। ব্যবসার মাধ্যমে সে চেষ্টাটাই করছেন তাঁরা। তরুণ উদ্যোক্তা যাঁরা ব্যবসায় আসতে চান, তাঁদের প্রতি আহ্বান না শিখে কিংবা না বুঝে ব্যবসায় আসবেন না; আবার টাকা থাকলেই কিন্তু ব্যবসায় সফল হওয়া যায় না। 

সপরিবারে ব্যবসায়ী রুহুল আমিন

মো. রুহুল আমিনের জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার আগকয়ড়া গ্রামে, ১৯৭৭ সালের ১৮ জুন। বাবা হাজি মাওলানা মো. আমির হোসেন ও মা মোছা. রাহিলা খাতুন। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ১৯৯৩ সালে কয়ড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বিয়ে করেন ২০০৪ সালে।  স্ত্রী মোছা. রাশিদা খাতুন। দুই মেয়ে; বড় মেয়ে রুবাইয়া খাতুন নার্সারিতে আর ছোট মেয়ে সুরাইয়ার বয়স মাত্র দেড় বছর। সারা দিনের কর্মব্যস্ততা ব্যবসাকে ঘিরে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া তেমন কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না। ফুটবল তাঁর প্রিয় খেলা। খেতে পছন্দ করেন গরুর মাংস। সততাই এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আগামীর স্বপ্ন তাঁর দুই মেয়েকে ঘিরে।

মো. রতন আলীর জন্ম ১৯৮০ সালের ৫ মার্চ, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খালিয়াপাড়া গ্রামে। বাবা মো. মোতালেব হোসেন ও মা রাহাতুন্নেসা। স্ত্রী মোছা. আঁখি খাতুন। সুখী এ দম্পতির ছেলে আরাফাত হোসেন আরাফ-এর বয়স মাত্র পাঁচ মাস। ব্যবসায়িক নানা ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় চলমান ব্যবসাটিকে প্রতিষ্ঠা করতে চান আরও ভালোভাবে। এ লক্ষ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর প্রচেষ্টা, করছেন প্রচুর পরিশ্রম।

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ৪৭ তম সংখ্যা, মা‍র্চ ২০১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top