বর্ষার সাজে নতুন অন্দর

পৃথিবীর বুকে সবুজ কানন বাংলাদেশ। ষড়্ঋতুর এ দেশটিতে সব ঋতুই বৈচিত্র্যময়। তবে বর্ষার সৌন্দর্য অতুলনীয়। বর্ষার অপরূপ দৃশ্য আমাদের মনে জাগায় অনাবিল কুহক। সময়টা এখন ভরা বর্ষার। এ সময়টা সব গৃহিণীই চায় ঘরে পরিবর্তন আনতে; প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে। বর্ষার মেঘকালো আকাশ নয় বরং ঘরজুড়ে উৎসবের রং লাগাতে চাইলে প্রস্তুতিটা শুরু করতে হবে আগে থেকেই। ঘর সাজাতে নতুন সামগ্রী আর আসবাব কিনতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। পুরোনো আসবাবকে নতুন করে বার্নিশ করিয়ে আনা যায় নতুন আমেজ। বিছনার চাদর, পর্দা, কুশন কভার ইত্যাদিতে ক্রিয়েটিভ চিন্তা মুহূর্তেই বদলে দিতে পারে আপনার সাধের অন্দরের চিরচেনা দৃশ্যপট।

সাদার স্নিগ্ধতা
ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে রঙের জুড়ি নেই। সাদা রং অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকলেও অনেকেই আজকাল সাদা রঙের সঙ্গে অন্যান্য রংকে প্রাধান্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন অন্দরের সৌন্দর্য। ঘরের পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন কভার যা-ই হোক না কেন গরমে সাদা রঙের জুড়িমেলা ভার। অনেকে বলেন, সাদা রঙের কাপড় দ্রুত ময়লা হয় এবং তাপ প্রতিরোধক নয়। কিন্তু গরম মানেই প্রথমে মাথায় আসে সাদা কিংবা অফ হোয়াইট রং। কেননা এটা দেখতে যেমন শুভ্র, তেমনি এ রঙের কাপড় তাপ শোষণ না করায় ঘর গরম হয় কম। একে তো গরম তার ওপর বর্ষা মানেই বৃষ্টি, তাই পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন কভার ইত্যাদিতে সাদা রঙের ওপর নীল, সবুজ, আকাশি, গোলাপি, হলুদ এই ধরনের রঙের মিশ্রণে রঙিন করে তুলুন সাদা ক্যানভাসকে। সে ক্ষেত্রে ব্লক, বাটিক, টাইডাই ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিতে পারেন। আকাশ মেঘলা থাকে বলে নীল রং এবং বৃষ্টিতে ভিজে চারপাশের সবুজ আরও সতেজ ও জীবন্ত হয়ে ওঠে বলে সবুজ রং। অন্য রংগুলোকে সহযোগী রং হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আবার যাঁদের গাঢ় রং বেশি পছন্দ, তাঁরা নীল, সবুজ, আকাশি, ফিরোজা ইত্যাদি রঙের কাপড়ের ওপর সাদা রংকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন শৈল্পিক ছোঁয়ায়।

অন্দরে স্নিগ্ধ কোমল পরিবেশ

সজীবতায় সবুজ
সবুজের প্রাণবন্ত উপস্থিতি ঘরের ভেতরের স্যাঁতসেঁতে বিষন্ন আবহাওয়াকে বদলে দিতে পারে এক লহমায়। একটু লক্ষ করলে দেখবেন একই গাছের পাতায় সবুজের নানামাত্রিক শেড। কখনো গাঢ় সবুজ, কখনো হালকা সবুজ আবার কখনো কলাপাতার রং। বর্ষার আগমন ঘরের ভেতর নিয়ে আসুন প্রকৃতির ছোঁয়া। সবুজের জোড়া রং বারান্দা ও লনের গন্ডি পেরিয়ে আপনার বসার ঘরের কোণে, খাবার ঘরের দেয়ালে, শোয়ার ঘরের জানালার পাশে অথবা বাথরুমের শেলফে উপস্থিত হয়, তবে তো কথায় নেই। প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরে উঠবে আপনার সবুজ অন্দর। গাছের পাতার থেকে রং বেছে নিয়ে ছড়িয়ে দিন ঘরের বিভিন্ন জায়গায়, ফেব্রিক তো আছেই, তার সঙ্গে ফ্লোরে রাখা কার্পেট, শতরঞ্জি এমনটি ম্যাটেও ছড়িয়ে দিন সবুজের ছোঁয়া। প্রকৃতির সঙ্গে খাবারে স্বাদ উপলব্ধি করতে ডাইনিং টেবিলের ফুলদানিতে রেখে দিন তাজা কদম ফুল। কদম ফুলের সৌন্দর্য বর্ষার আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এ ছাড়া আপনার পছন্দের তালিকায় যেসব ফুল রয়েছে, সেগুলো দিয়েও সজীবতায় এবং সুগন্ধিতে ভরে তুলুন আপন অন্দর।

রঙিন টেবিল
খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন যেমন একটা শিল্প, ঠিক তেমনি খাবার টেবিলকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে নান্দনিকতায় উপস্থাপন করাটাও একটি শিল্প। শুধু তো খাবার খেলেই হবে না, এর সঙ্গে তৃপ্তির বিষয়ও রয়েছে। তাই খাবার ঘর হওয়া চাই পরিচ্ছন্ন। তার সঙ্গে যদি যোগ হয় নান্দনিকতা, তবে তো কথাই নেই। নতুন ডাইনিং টেবিল সেট দিয়ে যে ঘর সাজাতে হবে তার কোনো মানে নেই। আপনার পুরোনো ডাইনিং টেবিলে সাজসজ্জা বদলে একে দিতে পারেন ভিন্ন মাত্রা। অনেক ধরনের ক্রোকারিজ, টেবিল বাজারে পাওয়া যায়। তার মধ্যে থেকে যেটা আপনার ঘরের সঙ্গে এবং প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই, এমনটা বেছে নিন। যেহেতু বর্ষাকাল তাই টেবিল ন্যাপকিন, টেবিল ম্যাট এবং টেবিল রানার ব্যবহারে ঋতুকে মাথায় রেখে রং নির্বাচন করুন। বর্ষাকালে সাধারণত আমরা নীল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি বেশি। কেউ যদি চান তবে নিজেই ব্লক টাইডাই ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন সুন্দর সুন্দর ন্যাপকিন, টেবিল রানার এবং টেবিল ম্যাট। ঘরের পর্দাও যদি এর সঙ্গে ম্যাচিং করে নেন তাহলে তো কথাই নেই। ব্যস, সাজানো হয়ে গেল আপনার খাবার টেবিলসহ খাবার ঘর। ক্রোকারিজের জন্য বেছে নিতে পারেন চীনামাটির জিনিসপত্র। সাদা, নীল ইত্যাদি ক্রোকারিজ বর্ষার আমেজকে ফুটিয়ে তুলবে দ্বিগুণ।

বসার ঘরে খোলামেলা পরিবেশ ও বর্ষায় ছিমছাম গৃহকোণ

হোম ডেকর
বাজারে আজকাল অনেক ধরনের ডেকর আইটেম পাওয়া যায়, আর তা দিয়ে অতি সহজে সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার ঘরটি নান্দনিকভাবে। একটু খানি পরিবর্তন করে দেখুন কীভাবে ছবির মতো পাল্টে যাবে আপনার সাধের অন্দর। নান্দনিক শোপিস, পেইন্টিং, ফ্লাওয়ার ভাঁজ, ঘড়ি, লাইট ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে তুলুন আপনার ঘরকে। কোন ঘরে কী ধরনের জিনিস ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করবে আপনার ঘরের চারপাশের পরিবেশের ওপর। আপনার ঘর যদি মডার্ন ধাঁচের হয়, সেক্ষেত্রে শোপিস আইটেম; যেমন- ক্রিস্টাল, গ্লাস, স্টোন ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিতে পারেন। আর আপনার ঘর যদি বাঙালিয়ানা হয় সে ক্ষেত্রে মাটি, বাঁশ, বেত ইত্যাদি বেছে নিন। যেহেতু বর্ষাকাল, সেহেতু দেয়ালের পেইন্টিংয়ে বর্ষাকালের সঙ্গে যায় এমন সব পেইন্টিং নির্বাচন করুন। তা ছাড়া আপনি চাইলে আপনার পছন্দের পেইন্টিংও বেছে নিতে পারেন। পুরোনো পেইন্টিং সরিয়ে নতুন পেইন্টিং টাঙিয়ে দেয়ালটি পাল্টে ফেলুন এক নিমিষে। এ ছাড়া কোনো খালি দেয়াল থাকলে নানা ধরনের ফটো ফ্রেম দিয়েও সাজাতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের লাইট, ল্যাম্পশেড পাওয়া যায়, চাইলে সেগুলোর মাধ্যমেও ঘরকে দিতে পারেন নতুনত্বের ছোঁয়া। যদি সম্ভব হয় একটু ভিন্নতা আনতে দেয়ালে লাগিয়ে নিন ওয়াল পেপার। বিভিন্ন শেপ আর আকৃতির টেরাকোটায় সাজাতে পারেন দেয়ালের খালি অংশ। সিঁড়ির প্রবেশমুখে অতিথি আপ্যায়নের জন্য নানা ধরনের পটারি আর গাছেও সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার অন্দরে ঢোকার জায়গাটিকে।

ফারজানা গাজী
চিফ অপারেটিং অফিসার, ইকো ইনোভেটরস
[email protected]

প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৬ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top