প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে জীবনধারা। এখন এআই প্রযুক্তি, স্মার্টফোন, স্মার্ট ঘড়ি, স্মার্ট হোম ডিভাইস কিংবা নতুন প্রযুক্তির গ্যাজেটের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেড়েছে। আধুনিক সময়ে নির্মাণেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নির্মাণের ধারণাগত পরিবর্তন, নকশার ধরনের পরিবর্তন ছাড়াও সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা যায় আধুনিক নির্মাণ উপকরণে। সময়ের ব্যবধানে সাধারণ ইট, পাথর, বালুর পাশাপাশি উদ্ভাবন হয়েছে নির্মাণের স্মার্ট সব উপকরণ। স্মার্ট উপকরণগুলো অত্যাধুনিক ডিজাইন এবং নির্মাণের ভবিষ্যৎ। জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে পরিবেশের ওপর ফেলছে মারাত্মক প্রভাব। তাই ভবিষ্যতে কাঠামো নির্মাণের আগে কম জায়গায় এবং জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্মাণে স্মার্ট উপকরণ ব্যবহারের বিকল্প নেই।
আধুনিক স্থাপনা নির্মাণে বিষ্ময়কর স্মার্ট নির্মাণ উপকরণের হালহকিকত তুলে ধরছেন-রিগ্যান ভূঁইয়া
স্মার্ট উপকরণের কথন
নির্মাণে স্মার্ট উপকরণ হলো প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবিত বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল। এগুলো আবহাওয়া ও জলবায়ুসহিষ্ণু টেকসই নির্মাণ উপকরণ হিসেবেই বিবেচিত। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন স্মার্ট উপকরণ আবিস্কার করা হচ্ছে এবং অনেক গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। নির্মাণশিল্পে উদ্যোক্তা ও নির্মাতাদের টেকসই স্থাপনা নির্মাণে উৎসাহিত করতে উদ্ভাবকেরা এই উপকরণ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধও করেন। স্মার্ট উপকরণগুলো পরিবেশ-সংবেদনশীল এবং বিকশিত স্থাপত্যের ভবিষ্যৎ। স্মার্ট নির্মাণ উপকরণগুলো হলো উদ্ভাবনী উপকরণ, যা সা¤প্রতিক বছরগুলোতে আবির্ভূত হয়েছে। এগুলো শুধু নির্মাণশিল্পেই নয়, আরও অনেক শিল্পের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়। পরিবেশগত পরির্তনের সঙ্গে অভিযোজনের অনেক বেশি সক্ষম এ ধরনের উপকরণ। রয়েছে আকর্ষণীয় নানা বৈশিষ্ট্য। যেমন- প্রচন্ড চাপ সহনীয় ক্ষমতা, ব্যবহারের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, তাপমাত্রা, পিএইচ, আলো এবং যেকোনো আর্দ্রতার সঙ্গে নমনীয়তা প্রভৃতি। এ কারণেই অন্য সাধারণ উপকরণের তুলনায় এই নির্মাণ উপকরণগুলো বেশি সময়োপযোগী এবং স্মার্ট। তাই এই বিশেষ ধরনের উপকরণগুলোকে স্মার্ট উপকরণ বলা হয়।

স্মার্ট উপকরণগুলো কি আউটপুট দেবে বা সেগুলোর কার্যকারিতার ভিত্তিতে এগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শেপ মেমরি অ্যালয়, ম্যাগনেটোস্ট্রিকটিভ ম্যাটেরিয়াল, পাইজোইলেকট্রিক ম্যাটেরিয়াল, ইলেক্ট্রোরিওলজিক্যাল ফ্লুইড এবং ইলেক্ট্রোক্রোমিক ম্যাটেরিয়াল। এগুলোর বেশির ভাগই গত এক দশকে দিনে দিনে উন্নত হয়েছে।
স্মার্ট উপকরণের সুবিধা
শক্তিশালী, পরিবেশবান্ধব উপকরণ
বৈরী পরিবেশের জন্য প্রতিক্রিয়াশীল
দীর্ঘস্থায়িত্ব যা কাঠামোকে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখে
কম রক্ষণাবেক্ষণ উপকরণ
টেকসই উপকরণের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত
কর্মক্ষেত্রে সাবলীল প্রয়োগ এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য
আধুনিক যত স্মার্ট উপকরণ
বিশ্বে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও ব্যয়সাশ্রয়ী বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ উপকরণ উদ্ভাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, চলছে নানা গবেষণাও। এমন সব স্মার্ট উপকরণের মধ্যে সাড়া জাগানো কিছু উপকরণ সম্পর্কে তুলে ধরা হলো:
থার্মো বায়োমেটাল
নান্দনিক স্থাপনা নকশার পাশাপাশি নিজেদের আরাম আয়েশের জন্য কত কিছুই না করছি। এতে বিভিন্ন ধরনের এনার্জির ব্যবহার বাড়ছে, যা ক্ষতি করছে পরিবেশকে। পাশাপাশি বাড়ছে জীবনযাপন ব্যয়ও। তবে আধুনিক যুগে স্থাপনা নির্মাণের স্মার্ট উপকরণ দেবে বাড়তি সুবিধা, যা শুধু আরাম-আয়েশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। থার্মো বায়োমেটাল এমন একটি স্মার্ট উপকরণ, যা তাপমাত্রা/জলবায়ু অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীল। এটি সূর্যের তীব্র আলোকে প্রতিরোধ করে এবং ছায়াযুক্ত স্থান তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। সাধারণ উপকরণ সূর্যের তাপে গরম হলে সাধারণত কুঁকড়ে যায় এবং ঠান্ডা হলে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। থার্মো বায়োমেটাল এমন একটি তাপ প্রতিক্রিয়াশীল, যা অতি ঠান্ডায় বা গরমে কোনোভাবেই কুঁকড়ে যায় না। থার্মোবায়োমেটালে দুটি ধাতব শংকরের একটি দ্বি-স্তরযুক্ত সংমিশ্রণ থাকে, একটি যা অন্যটির তুলনায় তাপে দ্রুত প্রসারিত হয়। এই উপাদানগুলো ইনভার্ট শেডিং সিস্টেমের মাধ্যমে কোনো এনার্জি খরচ না করেই ভবনকে ঠান্ডা করতে পারে।
উদ্ভাবক সাউং, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া স্কুল অব আর্কিটেকচারে বহু বছর ধরে থার্মো বায়োমেটালের সঙ্গে কাজ করছেন, এই আশায় যে তারা ভবনের তাপমাত্রা কমাতে বা বাড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানি ও বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার যেন রোধ করা যায়। পরিসংখ্যান বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮% এনার্জি খরচ হয় আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবনের এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে।
হাইড্রো সিরামিক
হাইড্রো সিরামিক আরেকটি স্মার্ট নির্মাণ উপকরণ, যার মূল উপাদান কাঁদামাটি, হাইড্রোজেল এবং কাপড়। উপাদানটি ওঅঅঈ IAAC (The Institute for Advanced Architecture of Catalonia– ২০১৩ দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। হাইড্রো সিরামিক একটি যৌগিক উপাদান, যা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে দারুণ স্মার্ট। এই উপকরণটি হাইড্রোজেলের যৌগ ব্যবহার করে নিস্ক্রিয়ভাবে একটি ভবনের থার্মোডাইনামিক প্রক্রিয়াকে মোকাবিলা করে। IAAC-এর হাইড্রো সিরামিক প্রকল্পের সদস্যরা (ছাত্র) সিনিয়র ফ্যাকাল্টি সদস্যদের তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন, যাঁরা অভ্যন্তরীণ স্থানের তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে হাইড্রোজেলের ওপর পরীক্ষা করেছিলেন। পরীক্ষায় মাটির সিরামিক এবং ফেব্রিকের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে হাইড্রোজেলের বাষ্পীভবন এবং তাপীয় ভরকে একত্র করা হয়। বিকশিত এই যৌগিক উপাদান তাপ এবং জলের প্রতিক্রিয়াশীল নীতিকে ব্যবহার করে যেকোনো স্থানের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি কমাতে সক্ষম হয়েছে।

তারা এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেছে, যা দেয়ালকে ঠান্ডা করে, উচ্চ তাপমাত্রার দিনে তাপ কমাতে সাহায্য করে এবং এভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের খরচ কমায়। চূড়ান্ত উপকরণটির গঠন একটি স্যান্ডউইচের মতো। কাদামাটির একটি বাইরের স্তর দিয়ে শুরু হয় হাইড্রো সিরামিক, পৃষ্ঠটি শঙ্কু আকৃতির গর্ত দিয়ে ভরা হয়, যাতে হাইড্রোজেলে জল এবং বায়ু প্রবেশের সুযোগ থাকে। উপকরণটি দেখতে একটি ইট বা টাইলসের মতো, যা দেয়াল বা যেকোনো স্থাপনার সম্মুখভাগ তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হাইড্রো সিরামিকের উপকারিতা
বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে পারে ২৮% পর্যন্ত
কম খরচে বিকল্প বিল্ডিং প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যায়
কার্বন নির্গমন ৫৬.৫ কেজি পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে
শীতল করার কৃত্রিম পদ্ধতি কমাতে সাহায্য করে
বায়ো-কংক্রিট
বায়ো-কংক্রিট কংক্রিটের একটি স্বয়ংক্রিয় সংস্কার (মেরামত) ফর্ম, যা নিজস্ব ফাটল নিজেই মেরামত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটির উদ্ভাবক ডাচ গবেষক এবং মাইক্রোবায়োলজিস্ট হেন্ড্রিক জোনকার্স, একটি নিরাময়কারী এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এমন একটি অতিরিক্ত উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করেছেন। এই কংক্রিট একবার স্থাপন করার পর মেরামত করার জন্য কোনো মানুষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয় না। হেন্ড্রিকের উদ্দেশ্য ছিল একটি বায়োনিক পদ্ধতির বিকাশ করা, যা কংক্রিটের প্রসারণ শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্যগুলোকে উন্নত করা। হেন্ড্রিক জোনকার্স ভবিষ্যতের জৈব-কংক্রিট বিকাশের জন্য মূলত এই গবেষণা শুরু করেছিলেন। জৈব-কংক্রিটে চুনাপাথর উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়, যা একটি কংক্রিটের কাঠামোতে ২০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। কংক্রিট ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো জাগ্রত হয় এবং ফাটলগুলো বন্ধ করতে কাজ করে। ইউরোপে, যেখানে ৭০% অবকাঠামো তৈরি হয় কংক্রিটের মাধ্যমে তাদের জন্য বায়ো-কংক্রিট উদ্ভাবন করেন হেন্ড্রিক। এর ফলে কংক্রিট উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমানোর পাশাপাশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমবে অনেকাংশে।
কংক্রিট হলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী, যা আবহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতিতে ফাটল ধরে। ডাচরা এমন একধরনের কংক্রিট তৈরি করেছিল, যা নিজে থেকেই ফাটল বন্ধ করতে পারে। ব্যাসিলিস্ক কংক্রিট হলো নেদারল্যান্ডসে বিকশিত এমন একটি বায়ো-কংক্রিট। কংক্রিটের মিশ্রণটি মাইক্রোক্যাপসুলগুলোর সঙ্গে মিশ্রিত হয়, যা আঠার মতো ইপোক্সি রজন নির্গত করে। আঠালো এই রজন কংক্রিটে সৃষ্ট যেকোনো ফাটল বন্ধ করতে সক্ষম। এই ধরনের কংক্রিট রাস্তা, ফুটপাত ইত্যাদির জন্য দারুণ উপযোগী।

বায়ো-কংক্রিটের উপকারিতা
অনেক বেশি শক্তিশালী
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নেই বললেই চলে
দীর্ঘদিনেও নষ্ট হয় না ও টেকসই
আলো নিঃসরণকারী সিমেন্ট
আলো নিঃসরণকারী সিমেন্ট হলো একটি সবুজ নির্মাণসামগ্রী, যা বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেই হাইওয়ে, রাস্তা এবং সাইকেল লেনকে আলোকিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আলো নিঃসরণকারী সিমেন্ট দিনের বেলায় সৌরশক্তি শোষণ করে এবং রাতে আলো বিকিরণ করে। এই উদ্ভাবনী সিমেন্টটি মেক্সিকোর হিডালগোর সেন্ট নিকোলাসের মিচোয়াকান ইউনিভার্সিটি থেকে ড. হোসে কার্লোস রুবিও উদ্ভাবন করেছেন। গবেষণাটি সৌরশক্তি শোষণ করতে এবং অন্ধকারে আলো নির্গত করার জন্য সিমেন্টের মাইক্রোস্ট্রাকচার পরিবর্তন করার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
আলো নিঃসরণকারী সিমেন্টের নীতি
সিমেন্ট একটি অস্বচ্ছ উপাদান, যা আলোকে তার ভেতর দিয়ে যেতে দেয় না। যখন সিমেন্টে পানি দেওয়া হয়, তখন হাইড্রেশন প্রতিক্রিয়ার ফলে ক্রিস্টাল ফ্লেক্স তৈরি হয়। এই স্ফটিকগুলো সৌরশক্তি শোষণে বাধা দেয়। গবেষকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সিমেন্টের এই মাইক্রোস্ট্রাকচারকে পরিবর্তন করা, যাতে স্ফটিকগুলো দূর করা যায়। এই স্ফটিকগুলো দূর করা গেলে সূর্যের আলো সিমেন্ট বা কংক্রিটের কাঠামোর গভীরে প্রবেশ করতে পারে। সিমেন্টকেও ফসফরেসেন্ট করা হয়, যাতে সৌরশক্তি শোষিত হয় এবং নির্গত হয়।
আলো নিঃসরণকারী সিমেন্ট, পানির সঙ্গে মিলিত হলে সম্পূর্ণরূপে জেল আকারে পরিবর্তিত হয়, যাতে এটি সৌরশক্তি শোষণ করে এবং আলোর আকারে ছেড়ে দেয়। দিনের বেলায় আলো নিঃসরণকারী সিমেন্ট কাঠামো স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। এই সময়ে সিমেন্ট জেলের পুরো ভর সূর্যের আলোতে ভিজে যায় এবং ভরের মধ্যে থাকা ইলেকট্রনগুলো উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। রাতের বেলায় এই ইলেকট্রনগুলো তাদের আসল অবস্থায় ফিরে আসে, যার কারণে আলো নির্গত হয়। এই সিমেন্ট বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে একটানা ১২ ঘণ্টা আলো দিতে পারে।
আলো নিঃসরণকারী সিমেন্টের গঠন
বালু, সিলিকা, শিল্প বর্জ্য, ক্ষার এবং পানি দিয়ে আলোক নির্গত সিমেন্ট তৈরি হয়। এটিকে আলো নিঃসরণকারী হিসেবে তৈরি করতে উপকরণগুলোকে ঘরের তাপমাত্রায় (Room Temperature) সঞ্চালিত একটি পলিকনডেনসেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেওয়া হয়। এই কাঁচামালগুলোর মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি শক্তিশালী মিশ্রণ তৈরি করে, যা দেখতে জেলির মতো। এটি অনেক কম অবাঞ্ছিত ক্রিস্টাল ফ্লেক্স দেয়। এর উৎপাদনের পর অবশিষ্ট যা থাকে, তা হলো বাষ্প। এই ধরনের সিমেন্ট উৎপাদনপ্রক্রিয়াও শতভাগ পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে সবুজ বা নীল দুই রঙে পাওয়া যায় আলো নিঃসরণকারী সিমেন্ট।

প্লাস্টিকের তৈরি বেশির ভাগ ফ্লুরোসেন্ট উপকরণের মেয়াদকাল সাধারণত তিন বছর থাকে। তারা অতিবেগুনি রশ্মির শোষণের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কিন্তু ডা. রুবিও দাবি করেন আলো নিঃসরণকারী সিমেন্ট হলো একটি সূর্য-প্রতিরোধী সিমেন্ট, যা ১০০ বছর টিকবে।
ব্যবহারের সুবিধা
টেকসই উপকরণ
সম্পদের অপচয় রোধ করা যায়
বিদ্যুতের ব্যবহার বাঁচায়
পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান
সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে দারুণ কার্যকরী
কার্বন ফাইবার
কার্বন ফাইবার একটি পলিমার এবং কখনো কখনো গ্রাফাইট ফাইবার নামে পরিচিত। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী উপাদান, যা খুব হালকা। কার্বন ফাইবার স্টিলের চেয়ে পাঁচ গুণ শক্তিশালী এবং দ্বিগুণ শক্ত। তবে তা ইস্পাতের চেয়ে হালকা, তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনেক যন্ত্র, যন্ত্রাংশ এবং দামি উপকরণ ডিজাইন করতে কার্বন ফাইবারই ব্যবহার করা হয়। ফাইবারের অসাধারণ শক্তির কারণে নির্মাণের নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন কাঠামোতে প্রয়োগ করা হয়। এটি যেমন শক্তিশালী উপকরণ, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী। কার্বন ফাইবার হলো পাতলা কার্বন স্ট্র্যান্ড (মানুষের চুলের মতো), যা ডিজাইন অনুযায়ী বিভিন্ন আকারে বোনা হয়। যেহেতু এই স্মার্ট উপকরণটি অনেক বেশি নমনীয়, তাই যেকোনো পরিবেশগত পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই।

কার্বন (গ্রাফাইট) ফাইবারগুলো বিমানের কাঠামো এবং জেট ইঞ্জিনের অংশগুলোর জন্য পলিমার (সাধারণত ইপক্সি) ম্যাট্রিক্স কম্পোজিটগুলোতে ব্যবহƒত খুব শক্ত, শক্তিশালী এবং হালকা ফিলামেন্ট ব্যবহার করা হয়। কার্বন ফাইবার সমন্বিত পলিমার কম্পোজিটগুলোর কাঠামোগত অংশে অনেক বেশি হালকা। এটিা ইস্পাতের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী, তবুও পাঁচ গুণ হালকা। কার্বন ফাইবারগুলো নরম বা গলে যায় না। উচ্চ তাপমাত্রার অ্যাপ্লিকেশন যেমন তাপ নিরোধক টাইলস, বিমানের ব্রেক প্যাড এবং রকেট অগ্রভাগের জন্য ব্যতিক্রমী তাপ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকরণ হিসেবে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করা হয়। কার্বন ফাইবার অ্যাপ্লিকেশনগুলো ১৯৬০-এর দশকে প্রথম ব্যবহারের পর থেকে নাটকীয়ভাবে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অ্যালুমিনিয়ামের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বিমানের কাঠামোগত উপাদান হলো কার্বন ফাইবার।
কার্বন ফাইবারের উপকারিতা
শক্তি বা স্থিতিস্থাপকতা (স্টিলের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী)
হালকা ওজন (২/৩ গুণ কম ওজন)
টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী
ভালো রাসায়নিক প্রতিরোধক
উচ্চ প্রসার্য শক্তি
এয়ারজেল
এয়ারজেল হলো একধরনের জেল থেকে প্রাপ্ত সিন্থেটিক ছিদ্রযুক্ত আল্ট্রালাইট উপাদানের একশ্রেণির নির্মাণ উপকরণ। এই উপাদানে জেল-এ (Gel) থাকা জলীয় অংশ বিশেষ কৌশলে একধরনের গ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে জেলের কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই জলীয় অংশকে গ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপন করায় তা অনেক হালকা হয়ে থাকে। এর ঘনত্ব ও তাপ পরিবাহিতাও অনেক কম হয়। বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ থেকে এয়ারজেল তৈরি করা যেতে পারে। তবে সিলিকা থেকে উৎপাদিত এয়ারজেল স্পর্শে কিছুটা ভঙ্গুর হয়। এটি স্পর্শ করলে স্টাইরোফোমের মতো অনুভ‚তি হয়। ১৯৩১ সালে প্রথম এয়ারজেল তৈরি করেন স্যামুয়েল স্টিফেনস কিসলার। এর সূ²তা এতই বেশি, একটি কিউবিক ইঞ্চি এয়ারজেল পুরো ফুটবল মাঠে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এটি অগ্নিরোধী এবং তেল ও জল উভয়ই শোষণ করতে পারে। এয়ারজেলের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা ক্ষমতা অনেক। তা সত্ত্বেও কোনো কোনো উপাদানে তৈরি এয়ারজেল কার্যকর তাপনিরোধক হিসেবেও কাজ করে।

এত গুণাবলি থাকা সত্ত্বেও এয়ারজেল কেন জনপ্রিয় নয় বা এয়ারজেলের ব্যবহারও খুব বেশি চোখে পড়ার মতো নয়? এর আসল কারণ হলো এয়ারজেলের দাম। এয়ারজেলের দাম অনেক বেশি এবং এর উৎপাদন প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে একেকটি ব্যাচে খুব বেশি পরিমাণ এয়ারজেল তৈরি হয় না। প্রতি এক ঘন সেন্টিমিটার এয়ারজেল উৎপাদনের খরচ প্রায় ১ ডলার, যেখানে এক পাউন্ড উৎপাদন করতে প্রায় ২৩ হাজার ডলার খরচ হয়। কেউ কেউ তো বলেই থাকেন এয়ারজেল সোনার থেকেও দামি।
সময়োপযোগী এসব নির্মাণ উপকরণ নানাভাবে উপকারী এবং পরিবেশবান্ধব। দিন দিন ছোট হচ্ছে পৃথিবী। নির্মাণের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ হলেও ভৌত অবস্থান, পরিধি, কাঠামো সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। তাই নির্মাণ উপকরণ স্মার্ট এবং সময়োপযোগী না হলে নিকট ভবিষ্যতে এর জন্য আমাদের মূল্য দিতে হবে।
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬৪ তম সংখ্যা, মে ২০২৪