রেমড আর্থে টেকসই স্থাপনা

মাটি, কাদামাটি, ঝুরামাটি, পাথর, বালু, পলি, নুড়ি প্রভৃতির সংমিশ্রণে নির্মিত স্থাপনাই রেমড আর্থ নামে পরিচিত। রেমড আর্থ পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাকৃতিক পদ্ধতির স্থাপনা নির্মাণপ্রযুক্তি, যার নির্মাণপ্রক্রিয়াও খুব সাধারণ; নেই প্রযুক্তিগত কোনো রকম জটিলতা। এ পদ্ধতিতে মাটি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে স্থাপনায় পুরু ও দীর্ঘস্থায়ী দেয়াল নির্মিত হয়। সাধারণত যেসব অঞ্চলের মাটি রোদে শুকানো ইট তৈরির অনুপযুক্ত, সেসব স্থানেই এ ধরনের কৌশলের সাহায্যে আবাসস্থল নির্মিত হয়। চীনের মহাপ্রাচীর নির্মাণেও রেমড আর্থ আর পাথর ব্যবহারের প্রমাণ মেলে। উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, যেখানে নির্মাণসামগ্রী হিসেবে মাটি ছাড়া অন্যকিছু তেমন সহজলভ্য নয়, এ রকম বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়েও নির্মাণকাজে রেমড আর্থের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। উষ্ণ বা শীতল সব পরিবেশের জন্যই সমান উপযোগী, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে রেমড আর্থ স্থাপনা নির্মাণ।

রেমড আর্থ নির্মাণ পরিচিতি
আর্থ অর্থ মাটি এবং রেমড আর্থ সংকুচিত করা। রেমড আর্থ বলতে বোঝায় প্রাকৃতিক কাদামাটি, ঝুরা মাটি, পাথর ও অন্যন্য উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে সংকোচন-প্রক্রিয়ায় সুবিধামতো আকার প্রদান করে দেয়াল নির্মাণ করা। এই অবকাঠামো হয় অত্যন্ত মজবুত ও ভারবাহী। রেমড আর্থ দিয়ে দেয়াল নির্মাণ কৌশল খুবই সহজ। খাড়া বোর্ডের ফ্রেমের মধ্যে মাটির মিশ্রণ ঢেলে দেওয়া হয় এবং শুকিয়ে গেলে বোর্ডের ফ্রেম সরিয়ে ফেললেই হয়ে গেল ঘরের দেয়াল। তবে দেয়াল মজবুত করতে সাধারণত মাটির সঙ্গে ৩-১০ শতাংশ হারে সিমেন্ট মেশানো হয়। এ কাজের জন্য আদর্শ মাটিতে ১০-৪০ শতাংশ কাদা ও পলি, ৩৫-৬৫ শতাংশ বালু এবং বাকিটা মিহি নুড়ি বা ঝুরা মাটির অংশ থাকতে হয়। বর্তমানে মাটির সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে কংক্রিটও। এই প্রক্রিয়ায় মজবুত ভারবাহী বা হালকা দুই ধরনেরই দেয়াল তৈরি করা যায়। এমনকি একাধিক তলার বাড়ি নির্মাণেও ব্যবহার করা যায়। যেকোনো পুরুত্বের দেয়াল নির্মাণ সম্ভব হলেও সাধারণ বাসগৃহ নির্মাণে তাপমাত্রা ও স্থায়িত্ব বিবেচনা করে সর্বনিম্ন ৩৫ সেমি পুরুত্বের দেয়াল নির্মাণ করা হয়। রেমড আর্থ কংক্রিট বা ইটের মতো আগে থেকেও তৈরি করা যায় এবং ইটের মতোই দেয়াল গাঁথার কাজে ব্যবহৃত হয়।

রেমড আর্থেও যত সুবিধা
রেমড আর্থে স্থাপনা নির্মাণের বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

  • তুলনামূলক ব্যয়সাশ্রয়ী। যাদের গৃহনির্মাণের জন্য আলাদা করে বিনিয়োগের সামর্থ্য নেই তারাও অনায়াসে রেমড আর্থ ভবন তৈরি করতে পারবে।
  • মূল নির্মাণ উপকরণ মাটি হওয়ায় এটি বেশ সহজলভ্য। স্থানীয় মাটি দিয়েই নির্মাণ কাজ করা সম্ভব। সিমেন্ট, কাঠ, স্ক্রু-নাট ইত্যাদি উপাদানের প্রয়োজন কম।
  • কোনো কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হয় না; পুরোটাই প্রাকৃতিক এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব।
  • নির্মাণকাজে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বা অভিজ্ঞ রাজমিস্ত্রির দরকার নেই। কেউ চাইলে নিজেরাই এটি নির্মাণ করতে পারে।
  • অগ্নিনিরোধক হওয়ায় আগুনের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ।
  • শব্দ ও অতিরিক্ত তাপ থেকে সুরক্ষারোধী। ফলে শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়া যায়, যা বসবাসের জন্য দারুণ উপকারী।
  • তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য খুবই আরামদায়ক। শীতপ্রধান অঞ্চলেও এটি ব্যবহারের উপযোগী।
  • নির্মাণকাজে পানির ব্যবহার স্বল্প বিধায় খরাপ্রবণ এলাকার জন্য এটিই উপযুক্ত নির্মাণকৌশল।
  • মজবুত এবং ভারবহনে সক্ষম।
  • উইপোকা বা অন্যান্য পোকামাকড়ে তেমন ক্ষতি হয় না।
  • নান্দনিক সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসগৃহের নিশ্চয়তা।
ইউন্ডহোভার কন্টেমপ্লেটিভ সেন্টার, স্ট্যানফোর্ড, যুক্তরাষ্ট্র

অসুবিধা

  • রেমড আর্থের সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে কিছু অসুবিধাও। যেমন-
  • নির্মাণকাজ বেশ শ্রমসাধ্য। নিজেরা করতে না পারলে শ্রমিকের সাহায্য নিতে হয়। যেসব অঞ্চলে শ্রম ব্যয়বহুল, তাদের জন্য এটি বাড়তি খরচের চাপ সৃষ্টি করে।
  • ফ্রেম তৈরির জন্য কিছু কিছু কাঠের কাজ জানা জরুরি।
  • রেমিং করা কিছুটা সময়সাপেক্ষ ও কায়িক পরিশ্রমের।

নির্মাণ প্রণালি
বর্তমানে আমরা যেকোনো প্রযুক্তি বা কাজের ক্ষেত্রে এফিসিয়েন্সি বা দক্ষতাকে বেশি বিবেচনায় নেই। অর্থাৎ, কাজ করার প্রক্রিয়ার থেকে দ্রুত ফলাফল পাওয়াটা জরুরি মনে করি। রেমড আর্থ দিয়ে নির্মাণকাজে অনেক কিছুই মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে। এখানে তাড়াহুড়ো বা দ্রæত ফলাফলের আশা করা বাতুলতামাত্র। আবহাওয়া, মাটির প্রকৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রয়োজনীয় মেশিনের পর্যাপ্ততা এমনকি নির্মাণশ্রমিকের আন্তরিকতাও এখানে বিবেচ্য বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই রেমড আর্থ তৈরির প্রক্রিয়া অত্যন্ত ভারী ও শ্রমসাধ্য। যদিও মেশিনের ব্যবহার যেমন উঁচুতে মাটি ওঠানোর জন্য ক্রেনের ব্যবহার অনেক কাজকেই সহজ করে দেয়, তবু এটি অনেক ধৈর্যের কাজ। রেমড আর্থ তৈরিতে যে ধৈর্য, পরিবেশের প্রতিকূলতা যেমন হঠাৎ অধিক বৃষ্টিপাতের মতো বিষয়গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সক্ষম হলে আর তেমন কোনো বড় বাধার সম্মুখীন হতে হয় না।

নির্মাণকৌশল
মাটি

রেমড আর্থ স্থাপনা নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই স্থানীয় মাটি ব্যবহার নিশ্চিত করা। মাটি যদি নির্মাণের উপযুক্ত না হয়, তবে অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে স্থানীয় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে এটি করা যায়। সে ক্ষেত্রে পরিবহন ও মাটি বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কাজের জন্য গর্ত করে তলার মাটি নেওয়াই উপযুক্ত কেননা ওপরের মাটি সাধারণত নির্মাণকাজের উপযুক্ত নয়। মাটি উপযুক্ত কি না সেটা যাচাই করে নেওয়াটা জরুরি। যে মাটিতে সব ধরনের উপাদানের উপস্থিতি আছে; যেমন- কাদামাটি, বালু, পলি, ঝুরামাটি, নুড়ি ইত্যাদি এটির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এতে রেমড আর্থের স্থায়িত্ব বাড়ে। মাটির উপযুক্ততা নির্ণয়ের জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা যায়। যেমন-

  • স্মেল টেস্ট (অর্গানিক মাটির উপস্থিতি): মাটির উপরিভাগ এবং অর্গানিক মাটিতে সোঁদা গন্ধ থাকে বিশেষত যখন এটি ভেজা বা টাটকা থাকে। এ ধরনের মাটি রেমড আর্থের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত।
    বাইটিং টেস্ট (বালু ও কাদার উপস্থিতি): সামান্য মাটি নিয়ে দাঁতের সাহায্যে এ পরীক্ষা করা যায়। মাটি যদি দাঁতের সঙ্গে ঘর্ষণে বেশি কিচকিচ করে, তাহলে বালুর পরিমাণ বেশি, সামান্য কিচকিচ করলে তাতে পলির উপস্থিতি বোঝা যায়। আর যদি সেটা আটা বা ময়দার মতো মিহি হয় তাহলে বুঝতে হবে মাটিতে কাদার উপস্থিতি বেশি।
    জার টেস্ট: একটি সিলিন্ডার আকারের কাচের জার বা বোতল নিন। এর এক-চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত মাটি দিয়ে পূর্ণ করুন, বাকিটা পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এবার ভালো করে ঝাঁকান যেন মাটি পানিতে সম্পূর্ণ গুলে যায়। এক ঘণ্টা এভাবে রেখে দিন। আবার ঝাঁকান। এবার দুই ঘণ্টার জন্য রেখে দিন। মাটির বিভিন্ন দানা আলাদা আলাদা গতিতে তলানিতে পড়বে। ভারী দানা দ্রুত এবং হালকা দানা ধীরে ধীরে তলানিতে আসবে। এভাবে আট ঘণ্টা পরে দেখা যাবে জারে মাটির দানা কেমন আলাদা আলাদা স্তর তৈরি করেছে। ভিন্ন ভিন্ন এলাকার মাটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন জার ব্যবহার করা উচিত। কেননা মাটির প্রকৃতি স্থানভেদে আলাদা হয়, এমনকি সামান্য দূরত্বেও মাটির প্রকৃতি ভিন্ন হতে পারে।
  • চিত্রে বাম পাশের জারের মাটিতে নুড়ির উপস্থিতি বেশি। এ ছাড়া রয়েছে সামান্য পলি, কাদা ও বালু। একেবারে ডান দিকের জারের মাটিতে পলি ও কাদার মিশ্রণ বেশি, সামান্য নুড়ি ও বালুর ভাগ রয়েছে। এ ধরনের মাটি নির্মাণকাজের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। বেশি ভালো হয় প্রথম ও তৃতীয় জারের মাটির মিশ্রণ ব্যবহার করলে। মাঝের জারের মাটিতে তলার দিকে নুড়ির উপস্থিতি তৃতীয় জারের চেয়ে বেশি।
    সিভ বা ছাঁকনি টেস্ট: এই পদ্ধতিতে মাটির উপাদানের পরিমাণ মাপা হয়। এটা জার টেস্টের চেয়ে জটিল। যেমন- মাটির যে উপাদানের আয়তন ০.১ মিমির কম, সেগুলো পরিমাপ করা বেশ কষ্টসাধ্য। বস্তুত, মাটির উপাদানের আকার ৫ক্র থেকে ১০ সেমি পর্যন্ত হতে পারে।
    চিত্রে ছাঁকনি টেস্টের ফলাফল মাটির বিভিন্ন উপাদানের শতকরা উপস্থিতির গ্রাফিক্স উপস্থাপনা দৃশ্যমান।
    সসেজ টেস্ট (কাদার উপস্থিতি): হাতের তালুতে কিছু মাটি নিয়ে তাতে পানি মিশিয়ে দলা তৈরি করুন। এবার এটাকে হাতের তালুর সাহায্যে পাকিয়ে ১২ মিমি ব্যাসের লম্বা সসেজ বা রোল তৈরি করুন। এখন আস্তে আস্তে এটাকে চাপ দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আরও চিকন লম্বা দড়ির মতো করার চেষ্টা করুন। সাবধানতার সঙ্গে কাজটি করুন। এবার দেখুন মাটিতে কোনো ভাঙন না ধরিয়ে এটি কতটুকু লম্বা করতে পেরেছেন। যদি না ভেঙে ৩ মিমি ব্যাসের ২৫ থেকে ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা করা যায়, তবে মাটিতে কাদার পরিমাণ অনেক বেশি। এ ধরনের মাটিকে ব্যবহারের উপযোগী করতে এর সঙ্গে কিছুটা বালু ও সিমেন্ট মেশানো জরুরি। তাতে স্থাপনার স্থায়িত্ব বাড়ে।
    চিত্র : সসেজ টেস্ট
    মাটির রোলটি যদি ৫ থেকে ১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা করা যায়, তাহলে এতে কাদার পরিমাণ কম এবং এটি নির্মাণকাজের জন্য উপযুক্ত।
    বল টেস্ট (মাটির আর্দ্রতা): মাটির ধরন পরীক্ষা করার পর যেটা জরুরি তাহলো মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করা। মাটি বেশি আর্দ্র হলে এটি বেশ নমনীয় হয় এবং কাঠামো তৈরিতে অসুবিধা হয়। আবার বেশি শুকনো হলে শক্ত দেয়াল তৈরি করতেও অসুবিধা, কাঠামো জোড়া না লাগার আশঙ্কা থেকে যায়। হাতের তালুতে মাটি ও সামান্য পাই নিয়ে দলা করে বলাকৃতি করুন। এবার কাঁধের দূরত্ব থেকে মাটির বলটি নিচে ফেলুন। মাটির আর্দ্রতাভেদে বলটি ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যেতে পারে আবার অক্ষতও থাকতে পারে। মাটির আর্দ্রতা কম হলে এমন চিন্তার কিছু নেই। কারণ, মাটির পানি নিষ্কাশনের থেকে এতে পানি দেওয়াটা সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ।
    স্যাম্পল (দৃঢ়তা): মাটি পরীক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মাটি দিয়ে যা বানাতে চাইছেন আর একটি স্যাম্পল তৈরি করা। একটি কাঠের ছোট ফ্রেম তৈরি করুন। এবার এর ভেতর বল টেস্টের মতো আর্দ্রতাসহ মাটি ফ্রেমের মধ্যে দিয়ে দেয়াল বা ব্লক তৈরি করুন। এক দিন ধরে প্রাকৃতিকভাবে শুকান। ফ্রেমটি সরিয়ে ফেলুন। এবার এর ওপর পরীক্ষা করে দেখুন বৃষ্টি, খরা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশে এটি কেমন আচরণ করে। এবার ভিন্নভাবে পরীক্ষা করুন। মাটির সঙ্গে সামান্য সিমেন্ট মিশিয়ে দেখুন কেমন ফলাফল দেয়।
    কাঙ্খিত ফল পেতে বিভিন্ন স্তরের মাটি দিয়েও আলাদা আলাদা বøক তৈরি করে পরীক্ষাটি করতে পারেন।
রেমড আর্থ ভবনের বর্ণিল দেয়াল ও মেঝে নির্মাণ কৌশল

মিশ্রণপ্রক্রিয়া
মাটির সঙ্গে কিছু সিমেন্ট মিশিয়ে নিন। এতে দেয়ালের স্থায়িত্ব, ধারণক্ষমতা ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। অপেক্ষাকৃত ধূসর সিমেন্ট ব্যবহার করা ভাল। এতে মাটির প্রাকৃতিক রং অক্ষুন্ন থাকে, মাটিকে আলগা ধূসর রং এনে দেয় না। মাটির সাধারণ ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকে। সিমেন্টের অনুপাত কেমন হবে সেটি আসলে মাটির ওপর নির্ভর করে। মাটি যদি ভালো হয় তবে সিমেন্টের ব্যবহার ছাড়াও এটি বৃষ্টি বা অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অপরিবর্তনীয় থাকে। তবে পানি থেকে সুরক্ষার জন্য সাধারণভাবে ১ থেকে ২ শতাংশ সিমেন্ট ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। যদিও কোনো নির্দিষ্ট মাপ নেই তবু ভালো মানের মাটির সঙ্গে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সিমেন্টের ব্যবহার উত্তম বলে ধরা হয়। মিশ্রণের জন্য মেশিনের ব্যবহার কাজটিকে সহজ করে দেয়। এতে মিশ্রণের অনুপাতও ঠিক রাখা সহজ হয়। রেমড আর্থ প্রক্রিয়া আসলে দীর্ঘ। নির্মাণের পুরো সময় ধরে একই গুণাগুণ বজায় রাখা তাই বেশ কঠিন। মেশিনের ব্যবহার সে ক্ষেত্রে সময় ও গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয় মিশ্রণের শেষ ধাপে। সরাসরি পাইপ দিয়ে পানি দেওয়ার থেকে ঝাঁঝরি ব্যবহার করা ভালো। এতে কোথাও বেশি বা কোথাও কম পানি দেওয়ার সমস্যা এড়ানো যায়। মিশ্রণ শেষে এটি বড় ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিলে রোদ বা বৃষ্টি থেকে মিশ্রণকে ভালো রাখা যায়।

পরিবহন ও উত্তোলন
মিশ্রণকে ফ্রেমের কাছে নেওয়া ও এর মধ্যে ঢালা সম্ভবত সবচেয়ে শ্রমসাধ্য কাজ। প্রতি মিটার দেয়াল উত্তোলনের সঙ্গে এই শ্রম আরও বাড়ে। এ ক্ষেত্রে মিশ্রণ টানার জন্য চাকাওয়ালা ঝুড়ির ব্যবহার কাজটিকে সহজ করে দেয়। উত্তোলনের জন্য ক্রেনের ব্যবহারও ভালো কাজে দেয়। লিভার ব্যবহার করে হাতে তৈরি ক্রেনও তৈরি করে নেওয়া যায়। অবশ্য আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে শ্রম অনেক সহজলভ্য সেখানে নির্মাতারা এসব নিয়ে তেমন ভাবেন না। মেশিনের ব্যবহার যদি ব্যয় বাড়ায় তাহলে সবাই সেটি এড়ানোর চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক।

ক্রেন তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন বেশি ভারী হয়ে না যায়। কারণ, এটি প্রায় সর্বক্ষণ ব্যবহার করা হয়। এটি খুব বেশি মজবুত হওয়ারও প্রয়োজন নেই, কাজের প্রয়োজনে যেটুকু দরকার সেটুকু হলেই চলবে। ক্রেনের ওঠানামা এবং নির্মাণকাজে অন্যান্য যন্ত্রাংশের ব্যবহারের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

দেয়াল ও কাঠামো নির্মাণ
রেমড আর্থ দিয়ে খুব সহজেই ভারবাহী ও একাধিক তলাবিশিষ্ট দেয়াল ও বাড়ির অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব। কেউ চাইলে এর সঙ্গে কাঠ, বিম ও আড়ার ব্যবহার করতে পারে। মূলত কী ধরনের নির্মাণ হবে সেটির ওপর নির্ভর করে দেয়ালের পুরুত্ব ও উচ্চতা কেমন হবে কিংবা এর সঙ্গে অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হবে কি না। বাজেটও এখানে একটা বড় ভূমিকা রাখে।

স্থাপনায় নান্দনিক দেয়াল

রেমড আর্থের মূল শক্র পানি। তাই ভিত্তিমূল এবং মেঝে তৈরির সময় এটিকে যথাসম্ভব পানিনিরোধী করে তৈরি করতে হবে। ইটের পাতলা একটা স্তর দিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করা যায়। ৭ সেমি পুরুত্বের ইটের আস্তরণই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। এই ধরনের দেয়াল সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ সেমি পুরু হয়ে থাকে। এর দুই পাশে এক ইটের আস্তরণ এবং ইট ও দেয়ালের মধ্যে কংক্রিটের পাতলা ঢালাই দিলে এর স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তা উভয়ই কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই ইট ও কংক্রিটের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক তার ও অন্যান্য কেব্লের জন্য জায়গা রাখা যায়। ফলে সেটি হয় বেশ নিরাপদ ও কার্যকর। দরজা বা জানালার কাঠের ফ্রেম বসাতেও সুবিধা পাওয়া যায়।

চিত্রে দেখা যাচ্ছে রেমড দেয়ালের মাঝে ইটের আস্তরণ দেওয়া আর পদ্ধতি এবং ইলেকট্রিক কাজের জন্য ও দরজার ফ্রেম বসাতে এটি কীভাবে সুরক্ষার কাজ করে।

ইট ও কংক্রিটের উপরিভাগে পানিনিরোধী পদার্থের (যেমন Alcor-আলকোর) প্রলেপ দিয়ে দিলে এটি উইপোকার মতো ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে দেয়ালকে সুরক্ষিত রেখে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে।

আলগা কাঠামো বা ফ্রেম নির্মাণ
এ কাজটিকেই জটিল অংশ ভাবা হয়। ফ্রেম এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তা রেমডের চাপ নিতে পারে। আকারে যথেষ্ট বড় হতে হবে যেন একই দেয়ালের জন্য খুব বেশি ফ্রেমের দরকার না হয় এবং এমনভাবে সেট করতে হবে যেন কাজ শেষে সহজেই খুলে নেওয়া যায়। উদাহারণস্বরূপ বলা যায়, একটি ২ দশমিক ২ মিটারের ছোট দেয়াল তৈরির ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৪ মিটারের এক জোড়া প্লাইউডের শিট (২০ মিমি পুরু, ১.২ x ২.৪ মি) ব্যবহার করা যায়। যখন এর প্রথম স্তর পুরোপুরি রেমডে প্রস্তুত হয়ে যাবে, এর ওপর পরবর্তী শিটের বাক্স স্থাপন করে দেয়ালের পরের অংশের নির্মাণ শুরু করতে হবে। সাধারণত এসব ফ্রেম উলম্ব আকারে সেট করা হয় (যেহেতু দেয়াল খাড়া হয়) তবে প্রয়োজনে আনুভূমিক করেও তৈরি করা যায়। দেয়ালের দৈর্ঘ্য যদি অনেক বেশি হয় (একাধিক শিটের প্রয়োজন হতে পারে) সে ক্ষেত্রে একধাপের কাজ শেষ হলে পরের ধাপের কাজ শুরু করা উচিত। ফ্রেমকে সেট করার জন্য প্রয়োজনীয় নাট, স্ক্রু ইত্যাদির ব্যবহার করা হয়।

চিত্র: পাইউডের ফ্রেম ও ব্যবহার্য নাট, স্ক্রু, জেড-বার, পাইপ ও কোণ এবং ব্রাকেট

রেমিংয়ের বিভিন্ন ধাপ ও বিভিন্ন ধরনের হাতে ব্যবহার্য রেমার

ফ্রেমের জন্য প্লাইউড কেনার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন এর দুই পাশই ব্যবহারের উপযোগী হয়, তবেই এটি হবে সাশ্রয়ী। প্লাইউডের উভয় পাশ মসৃণ হলে ভালো হয়, তাহলে এর গায়ে মাটি আটকে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে এবং পুনর্ব্যবহার করা যায়।
দেয়ালের পুরুত্ব একই রাখা বাঞ্ছনীয়। এ জন্য ফ্রেমিংয়ের সময় এটি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। দুই ফ্রেমের মধ্যে সমান দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারলে দেয়ালও সমান পুরুত্বের হবে। রেমিংয়ের চাপে এটি যেন স্থানচ্যুত না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

যখন ফ্রেমটি প্রস্তুত হবে এর ভেতরের অংশে তেলের প্রলেপ ব্যবহার করতে হবে, যেন গায়ে মাটি আটকে না যায়। তেলের প্রলেপ হিসেবে ক্যানোলার সঙ্গে তারপিন (১:১ অথবা ১:২ অনুপাতে) ব্যবহার করা যেতে পারে। রে‍মিংয়ের সময় এই প্রলেপ দেওয়া ভালো। বেশি আগে প্রলেপ দিলে সেটি খুব বেশি কার্যকর নাও হতে পারে।

রেমিং প্রসেস
ফ্রেমিং এবং মিশ্রণ তৈরির পরের ধাপ রেমিং। রেমিং বিভিন্নভাবে করা যায়, প্রযুক্তির সাহায্যে অথবা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে। এখানে এয়ার কম্প্রেসর এবং রেমারের সাহায্যে কীভাবে রেমিং করা যায়, সে সম্পর্কে বলছি। যখন মিশ্রণটি প্রস্তুত হবে এটি ফ্রেমের মধ্যে উচ্চ কম্পনের সাহায্যে বা ঠেসে রেমিং করা যায়। এয়ার কম্প্রেসরের সাহায্যে ঠাস বুননের মাধ্যমে রেমিং করা হয়। এর ফলে মাটি দৃঢ়ভাবে চেপে বসে। মাটির উপাদানগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ফাঁকও অবশিষ্ট থাকে না। রেমারের ব্যবহারের ফলে এয়ার কম্প্রসরের চাপ সরিয়ে নিলেও মাটি আর পুর্বাস্থায় ফিরতে পারে না। ফলে ফ্রেমের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট আকারে জমাট বাঁধতে শুরু করে। এভাবে পুরো দেয়ালের রেমিং শেষ করা হয়। কাজ শেষে প্রায়ই লক্ষ করা যায় প্রতিবার চাপ প্রয়োগের ফলে যে স্তর তৈরি হয়েছে, তার একটি সূক্ষ্ন ছাপ দেয়ালের গায়ে স্পষ্ট হয়ে আছে। যদিও অনেক সময়ই এটি দৃশ্যমান হয় না।

চিরায়ত রেমিং প্রসেস
নিচের চিত্রে দেয়ালের একাংশ দেখা যাচ্ছে, যেখানে দুটি কাঠের তক্তা (C) নিচের দিকে দেয়ালের (B) মধ্যে একটি দন্ড (E) দিয়ে আটকানো। এটি ইতিমধ্যে করা রেমড দেয়ালের (A) ওপরে বসানো হয়েছে। এক জোড়া খাড়া পোল তক্তার দুই পাশে দাঁড় করানো হয়েছে যেন এটা বেসের সঙ্গে আটকে থাকে এবং এর দুই পাশে কাঠের গোঁজ (H) দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে, যাতে দুই তক্তার মধ্যবর্তী দূরত্ব একই থাকে। একটি ছোট কাঠের দন্ড (ঊ) ওপর দিকের দড়ির (ঋ) নিচে যেটা পোল দুটোকে একসঙ্গে ধরে রেখেছে, সেটা তক্তাদ্বয়ের মধ্যে সমান দূরত্ব রাখতে সাহায্য করছে। এ চিহ্নিত কাঠিটি দড়িটিকে টানটান রাখতে এবং সাইড পজিশন ঠিক রাখতে সাহায্য করছে।

নিচের চিত্রটি (Auvergne, France থেকে সংগৃহীত) রেমিংয়ের জন্য দরকারি বিভিন্ন যন্ত্রের। এই চিত্রে রেমিংয়ের বিভিন্ন ধাপ দেখা যাচ্ছে। লক্ষ করুন, এখানে ফ্রেম তৈরির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কাঠের টুকরা জোড়া লাগিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। কাঠের গোঁজের গভীরতা ও অবস্থান দেয়ালের পুরুত্ব নির্দেশ করে।

ওয়েস্টলেক হিল, আমেরিকা, ওয়েস্টলেক হিল, আমেরিকা ও হাক্কা ডুয়েলিং, চীন (উপরে বা থেকে)

নির্মাণের বিভিন্ন ধাপ: ধ) প্রথমে পাথরের বেসমেন্ট তৈরি করা হয়, এটি পরবর্তী বিভিন্ন ধাপের ভিত্তিপ্রস্তর; ন) কাঠের তক্তা লাগানো হয় এবং মর্টার দিয়ে নিচের দিক আটকে দেওয়া হয়; প) দুই তক্তার মাঝে নিচের দেয়াল রেমড করা হচ্ছে; ফ) বেলচা দিয়ে রেমড করা অংশ পিটিয়ে পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে; ব, ভ, ম) একইভাবে পরের অংশ রেমড করা হচ্ছে; য) দেয়ালের পরের অংশের কাজের জন্য বেস তৈরি করা হচ্ছে।

সুরক্ষাব্যবস্থা
রেমড আর্থ পানির প্রতি অতি সংবেদনশীল। তাই নির্মাণ শেষে দেয়াল সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পর এর বহির্দেয়ালে পানিনিরোধী প্রলেপ দেওয়াটা জরুরি। পানিতে দ্রবণীয় সিলিকন বেসড প্রলেপ দেওয়া যায়। এ ছাড়া তিসির তৈলও প্রলেপের কাজে ব্যবহার করা যায়। ভেতরের দিকে দেয়ালে ডাস্ট সিলার ব্যবহার করা যায়। ডাস্ট সিলারের কারণে ঘরের মধ্যে দেয়াল থেকে ধুলা ঝরে পড়ার আশঙ্কা দূরীভূত হয়। নির্মাণকালীন আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে দেয়াল প্লাস্টিক বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা উত্তম। এতে দেয়াল ধসে পড়া বা ক্ষয় থেকে রক্ষা পায়।

নির্মাণব্যয়
রেমড আর্থের খরচ স্থানভেদে ভিন্ন হয়। যেখানে মাটির পর্যাপ্ততা রয়েছে অর্থাৎ মাটি বাবদ আলাদা খরচ নেই এবং শ্রম তুলনামূলক সহজলভ্য, সেখানে রেমড আর্থ খুবই ব্যয়সাশ্রয়ী। সে ক্ষেত্রে মূল খরচ ফ্রেম ও ক্রেন তৈরি, সিমেন্ট ক্রয়, আনুষঙ্গিক উপকরণ ক্রয় ইত্যাদিতে।

রক্ষণাবেক্ষণ
রেমড আর্থ ভবনের ক্ষেত্রে যে ধরনের ক্ষতি দেখা যায়; তা হলো-

  • দেয়ালের গায়ে ফাটল
  • খড়ি ওঠা
  • ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণী দ্বারা গর্ত সৃষ্টি
  • পানির সংস্পর্শে দেয়ালে ধসে পড়া
  • দেয়ালের অসমাঞ্জস্যতা ইত্যাদি।

অন্যান্য ভবনের মতো রেমড আর্থ ভবনেরও পরিচর্যার প্রয়োজন। দেয়ালে ফাটল বা খড়ি ওঠার সমস্যায় যে ধরনের মাটি দিয়ে (মাটির ধরন, রং, মিশ্রণ ইত্যাদি ঠিক রেখে) ফাটলের জায়গায় ফিলিং করে দিলেই হয়। এ ছাড়া দেয়ালের বাইরে পানিনিরোধী প্রলেপের ব্যবহার দেয়াল ধসে পড়া বা পানির কারণে অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। দেয়ালকে আরও মজবুত ও দৃঢ় করার জন্য দেয়াল নির্মাণের সময় রেইনফোর্সমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে দেয়ালের গঠন ও অবকাঠামোগত অসমাঞ্জস্যতা রোধ করা যায়।

হিলটপ নাপাভ্যালি, যুক্তরাষ্ট্র ও মিনিমালিস্ট চ্যাপেল, জার্মানি

রেমড আর্থ ভবনের জন্য খুব বেশি মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। অন্যান্য ভবনের মতোই সাধারণ কিছু পরিচর্যা করলেই হয়। তবে দীর্ঘদিন পরিচর্যাবিহীন থাকলে অন্যান্য ভবনের থেকে রেমড আর্থ ভবনের ক্ষতি হয় একটু বেশিই। তাই এ ব্যাপারে সর্তকতার প্রয়োজন।

রেমড আর্থের বিখ্যাত যত স্থাপনা
আমেরিকার টেক্সাসে অবস্থিত ওয়েস্টলেক হিলের বাড়িটি রেমড আর্থ হাউসের অনন্য উদাহরণ। ৫ হাজার বর্গফুটের এই বাড়িটির ডিজাইনার স্থপতি লো কিম্বল। দুই ফুট পুরুত্বের দেয়ালের এই বাড়িটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট এবং সিটি অব অস্টিন গ্রিন বিল্ডিং কর্তৃক এনার্জি রেটিংয়ে পাঁচ তারকা সম্মাননাপ্রাপ্ত।

চীনের হাক্কা ডুয়েলিংয়ের (Hakka dwellings) বাড়িগুলো সতেরো শতকে নির্মিত হলেও এখনো পর্যন্ত এগুলো টিকে আছে সগৌরবে। হাক্কার অধিবাসীরা প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে দুর্গ হিসেবে এগুলো নির্মাণ করেছিলেন। এ ধরনের বাড়িতে মাত্র একটিই প্রবেশপথ আর নিচতলায় নেই কোনো ধরনের জানালা।

তাতিনা এবং রিচার্ড লিয়ের হিলটপ নাপাভ্যালি প্রাকৃতিক পরিবেশের সান্নিধ্যে আধুনিক রেমড আর্থ ভবনের এক অনন্য উদাহরণ। এটি মূলত চারটি একতলা দালানের সারি। লি দম্পতির মেয়ে এবং জামাই এই সুন্দর ভবনের নকশাকার।

স্থপতি পল ওয়েনারের নকশায় তৈরি এই বাড়িটির মূল উপাদানও রেমড আর্থ। রেমড আর্থের সুবিধা হলো এটি একাধারে তাপ, শব্দ ও অগ্নিনিরোধক। সেই সঙ্গে এর নির্মাণব্যয় স্বল্প, পরিবেশবান্ধব এবং দৃশ্যত সুন্দর।

পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির পুনর্মিলনের স্মারক হিসেবে গণ্য হওয়া বার্লিনের মিনিমালিস্ট চ্যাপেলটিও একটি রেমড বিল্ডিং। এটা বার্লিনের প্রথম পাবলিক বিল্ডিং এবং এটিই একমাত্র চার্চ, যেটি রেমড আর্থ দিয়ে নির্মিত।

পল ওয়েনারের রেমড আর্থ বাড়ি, কানাডা ও ডিজেনি মসজিদ, মালি

আফ্রিকার মালিতে অবস্থিত ডিজেনি মসজিদটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মাটির তৈরি ভবন। ১৯০৭ সালে নির্মিত এই মসজিদের নির্মাণে রেমড আর্থের সঙ্গে দ্যালের রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দেলেব পামের কাঠ (deleb palm wood) ব্যবহার করা হয়েছিল।

মহুয়া ফেরদৌসী

প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৪ তম সংখ্যা, জুন ২০১৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top