আসবাবে নকশার শৈল্পিক ছোঁয়া

ঘর সাজাতে আমাদের রয়েছে নানা চেষ্টা। সে চেষ্টার তালিকায় থাকে নানা আয়োজন। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে চাই আসবাব। আসবাব দিয়ে ঘর সাজানোর আয়োজনটাও বেশ পুরনো। নানা রকমের আসবাবপত্র দিয়ে ঘরকে সাজিয়ে রাখতে চান বাড়ির গৃহিণীরা। আসবাবগুলো দেখতেও ভিন্ন আর বৈচিত্র্যময়, যা বাড়িয়ে দেয় ঘরের শোভা। আর সে আসবাব যদি নকশাদার না হয় তাহলে কেমন হয় বলুন তো! কাঠের আসবাবে নকশা থাকলেও লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবে নকশাহীন সাদামাটা স্বচ্ছ ভাবটাই ক্রেতাদের শেষ ভরসা। সময় বদলের সাথে সাথে বদলাচ্ছে মানুষের পছন্দ। প্রতিনিয়তই চাই নতুন আর ভিন্ন কিছু। কিন্তু ঘরের লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবে সেই নতুন আর ভিন্নতার সুযোগটা কই? নকশাবিহীন আসবাবগুলো কেমন যেন প্রাণহীন মনে হয়। 

নকশার আভিজাত্যটা এতদিন কাঠের আসবাবের একক আধিপত্যেই ছিল। তবে নকশা ছাড়া লেমিনেটেড বোর্ড আসবাবের দিন বুঝি ফুরিয়ে এসেছে। সময় এসেছে নিজেকে এখন নতুনের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার। কারণ দেশের আসবাবপত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান অটবি প্রথমবারের মতো গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারে নিয়ে এসেছে নকশাদার লেমিনেটেড বোর্ডের গ্রুভআর্ট প্রযুক্তির আসবাব। এক সময়ের সাদামাটা আসবাবগুলোকেই এখন মনে হবে আরো বেশি বর্ণিল আরো নান্দনিক ও প্রাণময়। অটবির প্রচলিত সাধারণ লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবগুলোকেই এখন নিয়ে আসা হয়েছে নকশা দিয়ে। আলমারির কথাই ধরা যাক। সাদামাটা আলমারির দরজাগুলো খুলতে গেলেই মনে হতো, ‘আহ! যদি দরজাগুলোতে সুন্দর কিছু নকশা থাকত!’ এ রকম দীর্ঘশ্বাস ফেলার সুযোগ এখন আর নেই। আলমারির দরজাগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে গাছের ডালপালা আর পাতার নকশা। আবার কোনোটাতে পাওয়া যাবে ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজের নকশার কারুকাজ। সব মিলিয়ে আসবাবগুলোতে চোখ না ফেলে কোনো উপায় নেই।

গ্রুভআর্ট আসবাবের নানা কথা

পৃথিবীতে নানা দেশে নানা ধরনের আসবাবপত্রের প্রচলন রয়েছে। তবে স্টিল, বেতের আসবাবপত্রে ব্যবহারটা থাকলেও তুলনায় কাঠের আসবাবপত্রের ব্যবহারই বেশি। বিশ্বজুড়ে এখন বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে মানুষ নিজেকে নতুন করে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সে রকম বিশ্বজুড়ে আসবাবের ব্যবহারেও নানা পরিবর্তন এসেছে। এক সময়ের সাদামাটা সাধারণ কাঠের আসবাবের জায়গায় এলো লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবপত্র। এতে অবশ্য ভালোই হলো আসবাব ব্যবহারকারীদের জন্য। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে নতুনত্বের ছোঁয়ার লেমিনেটেড বোর্ড আসবাবকে সাদরে গ্রহণ করলেন ব্যবহারকারীরা। কিন্তু বিপত্তি বাধল অন্য জায়গায়। প্রযুক্তির উৎকর্ষে ভালো মানের আসবাব মিলল কিন্তু তাতে নেই কোনো আভিজাত্যের ছোঁয়া। লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবপত্রে নকশার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। গ্রাহক যেখানে নতুন নতুন নকশার সব আসবাবের খোঁজ করছে তখন লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবগুলো ক্রেতাদের সুখবর দিতে পারল না। শুরু হলো আসবাবপত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আর এ বিষয়ক গবেষকদের গবেষণা। রাত-দিন খেটে তারা চেষ্টা করলেন গ্রাহকদের লেমিনেটেড বোর্ডে নকশাময় আসবাব উপহার দিতে। কাজটা অবশ্য এত সহজ ছিল না। বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সুদিন এলো। লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবের উপর বিশেষ প্রযুক্তির আর দক্ষতায় করা হলো নকশা। তবে বিপত্তি ঘটল এখানেও। লেমিনেটেড বোর্ডের স্থায়িত্ব সাধারণ কাঠের চেয়ে অনেক কম। এর গঠনগত প্রক্রিয়া ও বহন সুবিধার কারণে লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবকে একটু হালকা করে বানানো হয়। কিন্তু এ আসবাবে যদি কোনো ধরনের নকশা বা খোদাই করা হয় তাহলে লেমিনেটেড বোর্ড আসবাবপত্রের স্থায়িত্ব কমে যায়। স্থায়িত্ব কমে গেলে তো ক্রেতা সেই আসবাব কিনতে আগ্রহী হবেন না। তাই শুরু হলো আবার কাজ ও গবেষণা। এবার লক্ষ্য লেমিনেটেড বোর্ডের উপর নকশা করার পরও এর স্থায়িত্ব ও শক্তি অটুট রাখা। গবেষণার পর ভালো ফল পাওয়া গেল। কম্পিউটার প্রযুক্তির আর বিশেষ পদ্ধতিতে কাজ করা গেলে লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবে নকশা করার পরও এর স্থায়িত্ব আর শক্তি দুটোই অটুট থাকবে। ব্যস, অপেক্ষার পালা শেষ। লেমিনেটেড বোর্ডের উপর নকশাময় গ্রুভআর্ট সিরিজের প্রচলন শুরু হলো উন্নত বিশ্বে। আর বদলে গেল নকশাহীন লেমিনেটেড আসবাব বোর্ডের ইতিহাস। চালু হলো আসবাবপত্রের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। 

বাংলাদেশে গ্রুভআর্ট সিরিজের আসবাব

বিশ্বের বহু দেশে লেমিনেটেড বোর্ডের নকশাদার গ্রুভআর্ট সিরিজের আসবাবের প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে এমন ধরনের আসবাব ছিল না এই তো ক’দিন আগেও। অটবির বদৌলতে দেশে এসেছে গ্রুভআর্ট সিরিজের নকশাময় আসবাব। নকশাময় আসবাব বা গ্রুভআর্ট সিরিজের আসবাবের বিষয়ে দেশের অন্যতম আসবাব নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অটবির পরিচালক সোহানা নূর বলেন, ‘লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবে কয়েক বছর ধরে বিশেষ কোনো নতুনত্ব ছিল না। এ কারণে আমরা ভোক্তাদের নতুন কিছু উপহার দিতে চেয়েছিলাম। বেশ কয়েক মাস ধরে গবেষণা করে দেশে এ ধরনের আসবাব আনতে পেরেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আসবাবগুলোতে সূ² নকশার কাজ কম্পিউটার নিউমারি কন্ট্রোল (সিএনসি) নামক বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে করা হয়ে থাকে। সাধারণত লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবে নকশা করতে গেলে শক্তিমাত্রা ও স্থায়িত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সিএনসি প্রযুক্তিতে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে বোর্ডের শক্তিমাত্রায় কোনো প্রভাব না পড়ে। নয় মাস ধরে ডায়ামিটার ও ব্লেডসহ নানা পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হয়েছে।’

অটবির প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন আহমেদ জানান, ঘরের আসাবাবের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা ছিল নকশা। গ্রুভআর্ট প্রযুক্তির নকশা মূলত আধুনিক প্রযুক্তি আর শৈল্পিকতার সংমিশ্রণ। এখানে জ্যামিতিক আসবাবে রৈখিক ছন্দ তৈরি করা হয়েছে। নতুন কারিগরি নকশার এ আসবাবগুলোর চাহিদা এখন তুলনামূলক বেশি।

ক্রেতা কারা

সোহানা নূর আরো জানান, মূলত মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী ও নবদম্পতিরা লেমিনেটেড বোর্ড আসবাবের প্রধান ক্রেতা। তবে আমাদের বিশেষ নকশার আসবাবগুলো এখন উচ্চবিত্তদেরও আকৃষ্ট করছে। গ্রুভআর্ট সিরিজের নতুন প্রযুক্তির নকশাময় আসবাব কিনতে এসেছেন নতুন দম্পতি সাঈদুর রহমান ও মনিরা সুলতানা। মনিরা সুলতানা নতুন ধরনের এ আসবাব কেনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঘরের সাজে বৈচিত্র্য আনতে প্রত্যেকেই চায় ভিন্ন কিছু করতে। সাধারণ কাঠের চেয়ে তাই লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবই বেশি চলে। আমরাও প্রথমে ভেবেছিলাম লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাব কিনব। পরে দেখলাম লেমিনেটেড বোর্ডের আসবাবপত্রে কোনো নকশা বা এ ধরনের কিছু নেই। একবারে সাদামাটা, নকশাহীন। তবে গ্রুভআর্ট সিরিজের এ আসবাবগুলো বেশ পছন্দ হয়ে গেল। নকশাও আছে আবার লেমিনেটেড বোর্ডে তৈরি। সব মিলিয়ে আমাদের সাথে বেশ মানিয়ে গেল।’

মিলবে কোথায় আর দামটা কেমন

মোট তিন ধরনের নকশা আর দুটি ভিন্ন রঙে অটবির গ্রুভআর্ট সিরিজের নতুন নকশার এ আসবাবগুলো পাওয়া যাবে। এগুলোর মধ্যে আছে ডবল খাট, আলমারি ও ড্রেসিং টেবিলসহ তিনটি শোবারঘর সেট ও ডাইনিং টেবিল, ডিনার ওয়াগন ও সাইডবোর্ডসহ ড্রয়িংরুম সেট। তবে সেট ছাড়াও আলাদাভাবেও কেনা যাবে এগুলোর প্রতিটি। প্রতিটি খাটের দাম পড়বে ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ড্রেসিং টেবিল আট হাজার ৫০০ থেকে ১১ হাজার টাকা। আর আলমারি কিনতে খরচ করতে হবে ১৮ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। ঘরের সাজ আর আসবাবে নতুনত্ব ও নান্দনিকতার ছোঁয়া পেতে বেছে নিতে পারেন এ ধরনের আসবাব। পাওয়া যাবে অটবির সব শোরুমে।

জিয়াউর রহমান চৌধুরী

প্রকাশকাল: বন্ধন ৩২ তম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top