‘গ্রীন বিল্ডিং’ নির্মাণকল্পে বর্তমানে সারা বিশ্বে যে বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা হলো পুরনো কিংবা Hazardous উপকরণগুলোর যথেষ্ট ব্যবহার বা পুনরায় ব্যবহার (Reuse Material)। কারণ বীরংঃরহম নঁরষফরহমগুলোকে ভেঙে ফেলে যদি সেখানে নতুন কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয় সে ক্ষেত্রে উপকরণের পুনঃব্যবহার একাধারে যেমন cost effective ঠিক তেমনি পরিবেশবান্ধবও বটে। কারণ পুরনো উপকরণকে যদি ফেলে দেওয়া হয় কিংবা সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয় তা হলে energy consumption বাড়বে এবং waste (আবর্জনা) তৈরি হবে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ওয়ার্ল্ড গ্রীন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন মোতাবেক যদি পুরনো কোনো স্থাপনার উপকরণ ৬৫% ব্যবহার করা হয় তাহলে রেটিংয়ে ১ পয়েন্ট এবং ৮৫% উপকরণ ব্যবহার করা হলে ২ পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব। সাধারণত নির্মাণ সাইটে যে সব উপকরণ পুনরায় পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা সম্ভব সেগুলোর মধ্যে ইট, কাঠ, সিরামিক টাইলস, প্লাইউড, জিপসাম, ডিনাইন টাইলস, কংক্রিট ক্যাú, বাথরুম, কিচেন ফিটিংস, মেটাল ফিটিংস, মেটাল (লোহা) ইত্যাদি। তাই প্রথমেই যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে সেটা হচ্ছে পুরনো উপকরণগুলোকে প্রথমেই ব্যবহার অনুযায়ী গ্রæপে ভাগ করা এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন (Documentation) যেমন ব্যয়, পরিমাণ, প্রকারভেদ সম্পর্কে অবগত হওয়া। নতুন উপকরণ এবং পুরনো উপকরণগুলো ব্যবহারের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে পুরনো উপকরণগুলো ব্যবহারের পূর্বে Recycling (Treatment) করে নেওয়া, যা সব ক্ষেত্রে নতুন উপকরণের জন্য প্রয়োজন হয় না।
এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের সাথে নিযুক্ত স্থাপনাকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমন একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যপারটিকে আরো স্বচ্ছ করা যাক।
ছবি-১
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পূর্বের ইটগুলোকে পরিকল্পিত নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে partition wall-এর ভেতরের অংশে ইটগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে; তবে সে ক্ষেত্রে সব ধরনের উপকরণ ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলা একান্ত জরুরি।
ছবি-২
এখানে দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় coating কিংবা বার্নিশের মাধ্যমে উপকরণগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং দেয়াল কিংবা মেঝেতে ব্যবহার করা সম্ভব।
বর্তমানে World Green Building Council উপকরণ এবং রিসোর্সের প্রাধান্য দিচ্ছে
- Waste Management
- Life Cycle Assessment
প্রকল্প পুনঃব্যবহার রেটিং পয়েন্ট
৫৫% ১
৭৫% ২
৯৫% ৩
‘গ্রীন বিল্ডিং’ রেটিং পয়েন্ট (LEED-এর তথ্য মতে)
অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যে আবর্জনা (Waste) তৈরি হয় সেগুলো দিয়ে অনেক সময় Landfill (মাটি ভরাট) করা হয়ে থাকে, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাটির উর্বরতা শক্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং স্থাপনার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিংবা ড্রেনেজ সিস্টেমকে ব্যাহত করতে পারে।
সে ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে
ঠিকাদার নিজেই নির্মাণ সাইটে উপকরণগুলোকে আলাদা করে বাছাই করতে পারে এবং অন্যত্র বিক্রি কিংবা পুনরায় অন্য কোনো সাইটে ব্যবহার করতে পারে। তবে একজন শ্রমিক কিংবা নির্মাণের সাথে জড়িত কাউকে সার্বক্ষণিকভাবে এ কাজে নিযুক্ত করলে সব থেকে ভালো।
নির্মাণ সাইটে নির্দিষ্ট নরহ কিংবা জায়গা করে সুশৃঙ্খলভাবে সেগুলোকে রাখা যেতে পারে, যা পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় ব্যবহার করা যাবে।
পূর্বের ব্যবহৃত দরজা জানালার কাঠ অথবা অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম নতুনভাবে ডিজাইন করে ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পূর্বের ব্যবহৃত কার্পেটকে সরাসরি কোনো কার্পেট ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে দিয়ে Carpet Scraps হিসেবে পুনরায় উৎপাদন করা যেতে পারে।
কোনো উপকরণ নতুনভাবে ক্রয় করার সময় বিক্রেতা কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে Reuse/Recyle-এর কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা বিষয়টির দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এবং যতদূর সম্ভব হয় স্থানীয় উপকরণ (Local material) ক্রয় করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে নির্মাণ সাইট থেকে উপকরণ প্রাপ্তিস্থান যেন ৫০০ মাইলের মধ্যবর্তী কোনো স্থানে হয়; সে ক্ষেত্রে যদি ১০% স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করা হয় তা হলে গ্রীন বিল্ডিং রেটিংয়ে ১ পয়েন্ট এবং ২০% ব্যবহার করা হলে ২ পয়েন্ট প্রাপ্ত হবে। অন্যদিক থেকে স্থানীয় উপকরণগুলোকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্যকরণ অনেক সুলভ এবং সহজ হবে। যদি স্থাপনায় অধিক পরিমাণে কাঠের প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই অনুমোদিত কাঠ (Certified wood) কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ :
- সহজে প্রাপ্ত উপকরণ (Local Material)
- হালকা এবং সহজে পরিবহনযোগ্য
- পুনঃব্যবহার করলে পরিবেশের উপর এর প্রভাব কম পড়বে
- সহজে fabrication করা যায়
- নির্মাণের সময় ব্যবহার কার্যে কম পানির প্রয়োজন হয়।
- অগ্নিনির্বাপক ক্ষমতা বিদ্যমান
সবশেষে একটু ভেবে দেখুন, প্রতিদিনই তো আমরা প্রচুর পরিমাণ কাগজ একটু ব্যবহার করে ফেলে দিই। শুধু কাগজই নয় নিত্যব্যবহার্য নানা উপাদান আমরা মাত্র একবার ব্যবহার করি। কিন্তু সেগুলো কি আবার অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যায় না? আপনার স্বপ্নের বাড়িটি যেখানে তৈরি হচ্ছে সেখানে কি পূর্বের উপকরণগুলো অনাদরে পড়ে আছে? সেগুলোকে নতুন রূপে ব্যবহার করা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়?
স্থপতি সজল চৌধুরী
শিক্ষক, স্থাপত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৯ তম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০১২