সোনামণির রঙিন ভূবন

আপনি নিশ্চয় চান আপনার প্রিয় আদরের সন্তানটি বেড়ে উঠুক নান্দনিক ও বর্ণিল পরিবেশে। আপনার বাড়ির সেই ছোট্ট সদস্যটির জগতটা কেমন হবে তা হয়তো অনেকটাই নির্ভর করে তার বইতে দেখা রূপকথার কল্পনার রাজ্যের ওপরেই। স্বপ্নের এই রাজ্যের ছবি হতে পারে অনেকটা অ্যালিস-ইন-ওয়ান্ডারল্যান্ড অথবা সিনড্রেলিনার গল্পের মতো। বাচ্চারা সাধারণত একটু বেশিই কৌতুহলী। তারা পছন্দ করে নানারকম খেলনা দিয়ে খেলতে, রঙ-তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে, কার্টুন ছবি দেখতে ইত্যাদি। তাই তাদের জগতটাও কিছুটা ছবিময় হওয়া চাই। সোনামণিদের ঘরটি যদি গল্পময় করে তোলা যায় তাহলে তাদের মানসিক গঠনটাও হয় চমৎকার। আসুন জেনে নেই বাচ্চাদের ঘরের ইন্টেরিয়রের নানা কথা।  

বাচ্চার ঘরের সাজ কেমন হবে, সেটা নির্ভর করে শিশুটি ছেলে না মেয়ে তার ওপর । মেয়েদের ঘরের ইন্টেরিয়র করার সময় বারবিডল, ডিজনি প্রিন্সেস, টেডি বিয়ার এবং ছেলেদের ঘরের জন্য ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যান, মিকিমাউস ইত্যাদি চরিত্রকে প্রাধান্য দেয়া ভালো। সব চেয়ে ভালো হয় যদি বাচ্চার তৈরি জিনিসপত্র দিয়েই গড়ে তোলেন ওর ক্রিয়েটিভ ইন্টেরিয়র। ওর আঁকা ছবি মজার ফ্রেমে ভরে টাঙিয়ে দিন দেয়ালে। স্কুলে ওয়ার্ক এডুকেশনের ক্লাসে তৈরি টুকিটাকি সাজিয়ে দিতে পারেন বুক শেলফে। একটা খালি দেয়াল বেছে নিন, যেখানে সাজিয়ে রাখুন ওর বিভিন্ন মুডের ফটোগ্রাফি, যা কিনা মুহূর্তে বদলে দেবে ঘরের পরিবেশকে। লক্ষ্য রাখবেন, বাচ্চাদের ঘরে অবশ্যই যেন কোন উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা হয়। কারণ রঙের প্রভাব বাচ্চাদের মনে বিশাল ছাপ পড়ে। যদি বাচ্চাদের ঘরে মনমরা রঙ ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটা তাদের আনন্দময় পরিবেশের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যেহেতু বেশির ভাগ সময় তারা ঘরেই কাটায় তাই ছোট সোনামণিটির ঘরটি এমনভাবে সাজাতে হবে, যা তাদের কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে। একটা দিক অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত, সোনামণিদের ঘরে যেন যথেষ্ট পরিমাণে আলো-বাতাস আসে। তাদের ঘর অন্ধকার হওয়া মোটেই কাম্য নয়। আর বাচ্চাদের ঘর কালার স্ক্রিম থিম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার দারুণ জায়গা। এছাড়াও ইচ্ছে হলে ঘরের দেয়ালে লাগিয়ে দিতে পারেন মজার কিছু ওয়াল পেপার। ওয়াশেবল ওয়াল পেপার লাগালে ধোয়ামোছা করতে সুবিধা হবে। বাচ্চাদের ঘর ডিজাইন করার সময়ে খেয়াল রাখবেন ঘর যেন বেশি ক্রাইডেড না হয়। তাদের ঘরে বেশি ফার্নিচার না রাখাই ভাল। ফার্নিচার ডিজাইন করার সময় সাধারণত কার্টুন মোটিফের রঙচঙে আসবাবকে প্রাধান্য দিন। বেড, কেবিনেট, পড়ার টেবিল, খেলনার বাক্স, চেয়ারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাবের নকশা এবং শেপ এ তার প্রিয় কার্টুনগুলোর চরিত্রের মুখায়বের আদল ফুটিয়ে তুলুন। আজকাল বাজারের বিভিন্ন ধরনের বোর্ড এবং মেটেরিয়াল পাওয়া যায়, যা দিয়ে খুব সহজেই এগুলো করা সম্ভব। ফার্নিচারের ক্ষেত্রে হলুদ, বেগুনি, নীল, লাল, গোলাপি, লেমন, ইয়ালো এই রংগুলো প্রাধান্য দিতে পারেন। ফার্নিচারের রঙয়ের সাথে মিল রেখে নির্বাচন করে নিন ঘরের রঙ এবং পর্দা। ফার্নিচার যদি গাঢ় রঙের হয় সেক্ষেত্রে দেয়ালের রঙ হালকা করুন আর ফার্নিচারের রঙ যদি হালকা হয় তখন দেয়ালের রঙ গাঢ় করে নিন। দেয়ালের রঙ করার সময় দেয়ালের তিন পাশ হালকা রঙ করে একটা পাশ গাঢ় করলে ভালো দেখাবে। এছাড়াও যেকোনো একটা দেয়ালে রূপকথার একটি কাহিনীর পুরো চিত্রটি একজন শিল্পীকে দিয়ে আঁকাতে পারেন। পর্দায় লাগিয়ে দিতে পারেন বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রের ছবি। খেলনা রাখার জন্য ব্যবহার করুন বড় সাইজের বাহারি বাস্কেট, যাতে খেলা হয়ে যাওয়ার পর খেলনাগুলো তুলে রাখতে সুবিধা হয়। তবে বই, পুতুল, বা ছোট ছোট খেলনা গাড়ি সাজিয়ে রাখার জন্য একটা টানা লম্বা র‌্যাক বানিয়ে দেয়াই ভালো। যেসব বাচ্চাদের দেয়ালে আঁকাআঁকির বা পোস্টার লাগানোর শখ আছে, তাদের ঘরের দেয়াল জুড়ে লাগিয়ে দিন হোয়াইট বোর্ড এবং সফট বোর্ড। ঘরে জায়গা থাকলে একপাশে বিছিয়ে দিন মোটা তোশক অথবা বানিয়ে দিন লো-হাইট ডিভান, যেখানে সে সাজিয়ে রাখতে পারবে তার পছন্দের খেলনাগুলো। আসবাব ডিজাইন করার সময় চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব মাল্টি পারপাস ইউনিটের আসবাব বানাতে। একই ঘর যদি দুজনকে শেয়ার করতে হয় তখন দুটো আলাদা বেডের ব্যবস্থা করা না গেলে বানিয়ে নিন বাঙ্কবেড। কাঠের আসবাবের মধ্যে কেরোসিন কাঠের আসবাব বাচ্চাদের ঘরের জন্য ভালো। এতে খরচও কম পড়ে এবং সফট একটা লুকও থাকে। এছাড়া পারটেক্স দিয়ে বানিয়ে তাতে বিভিন্ন রঙের বার্নিশ, ডুকো অথবা এনামেল পেইন্টও করে নিতে পারেন। বাচ্চাদের ঘরের বাথরুমের টাইলস কেনার সময় লক্ষ্য রাখবেন সেটা যেন বেশি স্লিপারি না হয়। বিভিন্ন মজাদার ল্যাম্প শেড অথবা ঝুলানো বাতি দিয়ে সাজাতে পারেন ঘরটিকে। আলোর মজাদার লুক দেয়ার জন্য সম্ভব হলে ফলস সিলিং বানিয়ে নিন। ফলস সিলিংয়ের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন রঙের কালার ফুল মজাদার লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করুন। বিছানার চাদর, বেডকভার, কুশনকভার সব কিছুতেই থাকতে পারে মজাদার কার্টুন চরিত্র। বিছানায় রেখে দিন মাছ, টমেটো, তারা, মরিচ, স্ট্রবেরি ইত্যাদির কুশন। মেঝেতে বিছিয়ে দিন কালারফুল ম্যাট। এ সবকিছুর সামঞ্জস্য রেখে যদি আপনি আপনার শিশুর ঘরটি ইন্টেরিয়র করতে পারেন তাহলে দেখবেন সেই ঘরটি শিশুর কাছে হয়ে উঠবে আকর্ষণীয় এবং সবচেয়ে পছন্দের জায়গা।

ফারজানা গাজী

সত্বাধীকারী ও  ডিাজইনার  

ফারজানাস ব্লিস www.farzanasbliss.com

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৬ তম সংখ্যা, জুন ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top