শাটারিং

শাটারিং একটি অস্থায়ী ছাঁচ, যা ঢালাইকৃত কংক্রিটকে পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন করা পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থানে ধরে রাখে। শাটারিং কংক্রিট স্ট্রাকচারকে অস্থায়ী সাপোর্ট প্রদান করে। শাটারিংকে সাধারণত সেন্টারিং ও ফর্মওয়ার্কও বলা হয়। সাধারণত ঢালাইয়ের খরচের ৩০ শতাংশ এবং সময়ের ৬০ শতাংশ শাটারিঙের পেছনে খরচ হয়।

শাটারিঙের প্রকারভেদ 

কাঠের শাটার : কাঠের শাটার বহুল ব্যবহৃত এবং সর্বত্র পাওয়া যায়। এই শাটার কাঠের তক্তা, ব্যাটেন, স্ট্রাটস এবং রানার ব্যবহার করে তৈরি হয়। এই শাটার করতে সাধারণত ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি কাঠের তক্তা ১ ইঞ্চি x ১.৫ ইঞ্চি কাঠের ব্যাটেন ও ২ ইঞ্চি x ৩ ইঞ্চি কাঠের রানার ব্যবহার করা হয়। কাঠের শাটারে খাড়া ও আড়াআড়ি খুঁটি হিসেবে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে সর্বত্র কাঠের শাটার ব্যবহার করা হয়।

স্টিল শাটার

স্টিল শাটার অ্যাঙ্গেল, টিউব, জয়েন্ট ফ্লাট, প্লেট এমএস প্লেট ইত্যাদি দ্বারা তৈরি করা হয়। স্টিল শাটারে ১৬‍ মি থেকে ১০ মি স্টিল প্লেট ব্যবহার করা হয়। ১.৫ ইঞ্চি x ১.৫ ইঞ্চি অথবা ২ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি এমএস অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করা হয়। স্টিল শাটারে খাড়া এবং আনুভূমিক সাপোর্ট হিসেবে স্টিল props ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে স্টিল শাটার মূলত কলাম ও বিমে ব্যবহার করা হয়।

প্লাইউড শাটার : মসৃণ এবং সুন্দর ফিনিশ পাওয়ার জন্য কাঠের প্লাইউড শাটার তৈরি করা হয়। ফেয়ার ফেইস কংক্রিটিং করতে প্লাইউড শাটার ব্যবহার করা হয়।

জিপসাম বোর্ড শাটার : কারুকার্যপূর্ণ এবং শৈল্পিক কংক্রিট তৈরি করার জন্য জিপসাম বোর্ড দ্বারা এই শাটার তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এই শাটারের অল্প কিছু ব্যবহার রয়েছে।

প্লাস্টিক শাটার : PVC neoprene এবং polyester-এর সাথে গ্লাস ফাইবার মিশিয়ে প্লাস্টিক শাটার তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক শাটার মডুলার সাইজে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এই শাটারের ব্যবহার নেই বললেই চলে।

প্রকারভেদে শাটারের সুবিধা ও অসুবিধা 

কাঠোর শাটার 

সুবিধা :

ওজনে হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য।

প্রাথমিক খরচ কম এবং সহজলভ্য।

কর্মক্ষেত্রেই সুবিধামতো তৈরি করা যায়।

অসুবিধা :

ঢালাইয়ের বহিরাবরণ মসৃণ হয় না।

একই শাটার বারবার ব্যবহার করা যায় না।

কাঠের শাটার কংক্রিটের পানি শোষণ করে।

স্টিল শাটার

সুবিধা :

ঢালাইয়ের বহিরাবরণ মসৃণ হয়।

একই শাটার একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।

প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও অনেক বার ব্যবহার করা যায় বলে এটা লাভজনক।

অসুবিধা :

প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন।

ভারী। তাই নাড়াচাড়া করা কষ্টকর

শাটারিং করতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ লোকের প্রয়োজন।

প্লাইউড শাটার 

সুবিধা :

ঢালাইয়ের বহিরাবরণ মসৃণ ও সুন্দর হয়।

প্লাইউডের সাইজ নির্দিষ্ট। তাই শাটার তৈরি করা সহজ।

অসুবিধা :

একাধিক বার ব্যবহার করা যায় না।

বর্ষা মৌসুমে ব্যবহার করা যায় না।

জিপসাম বোর্ড শাটার 

সুবিধা :

শোভাপ্রদ কংক্রিট বহিরাবরণ পাওয়া যায়।

সহজে বহনযোগ্য।

অসুবিধা :

একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না।

অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল প্রয়োজন হয়।

প্লাস্টিক শাটার :

সুবিধা :

নির্দিষ্ট মডুলার সাইজে তৈরি করা হয়। তাই স্থাপন করা খুবই সহজ।

ওজনে হালকা। তাই সহজে বহনযোগ্য এবং শাটার রাখার জন্য অল্প জায়গা প্রয়োজন হয়।

অসুবিধা :

আগুন হতে সাবধান থাকতে হয়।

একই মাপের না হলে অন্যত্র ব্যবহার করা সম্ভবপর হয় না।

বাংলাদেশে সাধারণত স্টিল শাটার ও কাঠের শাটার বেশি ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যকার তুলনামূলক পার্থক্য হলো : (বক্সে পাশাপাশি হবে)

স্টিল

স্টিল শাটার শক্ত দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী।

স্টিল শাটার স্থাপন করা এবং পুনরায় খুলে ফেলা সহজ।

কংক্রিট বহিরাবরণ মসৃণ হয়।

কংক্রিট হতে পানি শোষণ করে না।

সংকোচন ও প্রসারণ নেই।

কাঠের শাটার

কাঠের শাটার তুলনামূলক নরম এবং স্থায়িত্ব কম।

কাঠের শাটার স্থাপন করা এবং পুনরায় খোলা সময় সাপেক্ষ।

কংক্রিট বহিরাবরণ অমসৃণ হয়।

কংক্রিট হতে পানি শোষণ করে।

সামান্য পরিমাণ সংকোচন ও প্রসারণ রয়েছে।

নিজের বাড়ি নিজেই তৈরি করতে চাইলে শাটারিং করার সময় আপনি নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ লক্ষ করুন।

শাটারিং করার সময়

শাটার পরিষ্কার হতে হবে। কাঠের শাটারের ক্ষেত্রে কোনোরূপ ঢালাইয়ের কণা, রূপবান শিটের অংশ ইত্যাদি এবং স্টিল শাটারের ক্ষেত্রে মরিচা, সিমেন্টের খোলা ইত্যাদি থাকতে পারবে না।

শাটারে শাটার অয়েল অথবা মবিল ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত তেল মবিল তুলে ফেলতে হবে।

স্টিল শাটারের নাট বোল্টগুলো টাইট থাকতে হবে এবং কাঠের শাটারের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পেরেক দ্বারা আটকানো থাকতে হবে।

উলম্ব এবং আনুভূমিক লাইনগুলো যাচাই করে দেখাতে হবে এবং আর্কিটেকচারাল ড্রইং অনুসারে।

শাটারের উলম্ব লেভেল ওলন দ্বারা এবং আনুভূমিক লেভেল ওয়াটার লেভেল দ্বারা মেপে দেখাতে হবে।

শাটার পানি নিরোধক কিনা যাচাই করতে হবে।

শাটারের উলম্ব খুঁটিগুলো সঠিক স্থানে এবং দৃঢ় কিনা যাচাই করতে হবে। শাটারের উলম্ব খুঁটিগুলো সাধারণত ২৪ ইঞ্চি-৩০ ইঞ্চি পরপর দেওয়া হয়।

ঢালাইয়ের পর শাটার খোলার সময় :

শাটার স্লাবের মধ্য অংশ হতে খোলা শুরু করতে হবে। ক্যান্টিলিভার স্লাবের ক্ষেত্রে ক্যান্টিলিভার অংশের শেষ প্রান্ত হতে খোলা শুরু করতে হবে।

বিমের ক্ষেত্রে প্রথমে বিমের সাইড তারপর বিমের স্লাবের সাথে সংযুক্ত অংশ এবং শেষে বিমের তলা খুলতে হবে।

শাটার খোলার সর্বনিম্ন সময়সমূহ :    (টেবিল ঠিক করতে হবে)

ক্রমিক নং বিবরণ সময়

০১ ওয়াল, কলাম ও বিমের খাড়া অংশ ১ থেকে ২ দিন

০২ ছাদ (সাইড) ৩ দিন

০৩ বিমের সাইড ৭ দিন

০৪ স্লাবের তলা

৪.৫ মিটার পর্যন্ত ৭ দিন

৪.৫ মিটার অপেক্ষা বেশি ১৪ দিন০৫ বিমের তলা ১৪ দিন

প্রকাশকাল: বন্ধন ২২ তম সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top