নিত্য-নতুন চাহিদা আর অভাব পূরণের জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত ছুটতে হয় কাজের পেছনে। পুব আকাশে সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয়ে যায় এই কর্মব্যস্ততা। সেই সকাল থেকে শুরু করে প্রায় রাত পর্যন্ত মানুষকে কাটাতে হয় নিজ অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। যেহেতু দীর্ঘ একটি সময় সেখানে কাজ করতে হয় সেহেতু সেখানকার পরিবেশ যদি মনের মতো না হয় তাহলে যে কোনো ব্যক্তির কাছেই তা হতে পারে বিরক্তির কারণ। তাই সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে চাই আলোকিত ও আরামদায়ক পরিবেশ। অফিসে কোমল ও নরম আলোর ব্যবহার যেমন বৃদ্ধি করে অফিসের সৌন্দর্য, তেমনি কাজের পরিবেশকেও করে তোলে আকর্ষণীয়।
যে জন্য অফিসে লাইট
ছোট বড় যে কোনো ধরনের অফিসে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে প্রয়োজন একটি সুন্দর কাজের পরিবেশ। আর এই পরিবেশটাকে সুন্দর করতে শুধু দামি দামি ফার্নিচার সাজিয়ে রাখলেই সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। দরকার পড়ে প্রাকৃতিক অথবা কৃত্রিম আলোর। যেখানে দিনের আলো সরাসরি আসে সেখানে একটু কম এনার্জি সম্পন্ন লাইটই যথেষ্ট। কিন্তু যেখানে দিনের আলো প্রবেশের সুযোগটা কম সেখানে লাইটের ব্যবহারের প্রয়োজনটা একটু বেশিই পড়ে। আবার এই লাইটগুলো শুধু ব্যবহার করলেই হবে না, এর জন্য প্রয়োজন ব্যবহারের সঠিক পরিকল্পনা। কোন্ জায়গায় কোন্ ধরনের এবং কোন্ রঙের লাইট ব্যবহার করতে হবে সেদিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান অথবা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার।
অফিসে লাইটের ব্যবহার
অন্ধকার দূর করতে প্রয়োজন আলোর। আর অফিসকে আলোকিত করতে দিনের পর দিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের লাইট। অফিসে লাইট ব্যবহার করা হয় এর আয়তন এবং ওই নির্দিষ্ট জায়গায় কতজন লোক কাজ করবে এর উপর ভিত্তি করে। যে জায়গাটায় বসে একজন ব্যক্তি কাজ করবে ঠিক তার মাথার উপরে লাইট থাকলে তার কাজের ক্ষেত্রে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। বেড়ে যেতে পারে উষ্ণতা, আবার আলোটাও সরাসরি চোখে লাগতে পারে। তাই এখানে থাকতে পারে লুকানো বা হিডেন আলোর ব্যবস্থা। পয়েন্ট ওয়ান ইন্টেরিয়রসের সিইও এবং ডিজাইনার এমডি জহির উদ্দীনের কাছে অফিসে লাইটের ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘লাইটের মূল কাজ হচ্ছে জায়গাটাকে আলোকিত করা এবং বিষয়বস্তুটাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। তাই অফিসকে ফোকাস করতে বা ফার্র্নিচারগুলোকে হাইলাইট করতে লাইট ব্যবহারের সময় লাইটের অ্যাঙ্গেলের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
অফিসের ভিন্নতায় লাইটের ব্যবহার
ওপেন অফিসগুলোতে সাধারণত ছোট সাইজের লাইট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে ফলস সিলিং অথবা ডিফিউজ অ্যাঙ্গেলে লাইট ব্যবহার করলে আলোর বিস্তারটা বেশি হয়। এ ছাড়া এসব অফিসে ওয়াল লাইট, এলইডি লাইট অথবা স্পটলাইটও ব্যবহার করা যেতে পারে। ওয়াল লাইট ব্যবহারের ফলে যে পাশে লাইট ব্যবহার করা হবে তার বিপরীত দিকে আলোটা বেশি পড়বে। স্পটলাইটগুলো আবার নির্দিষ্ট জায়গাটাকে বেশি আলোকিত করবে। আবার ক্লোজ অফিসে কোনো কিছু পড়ালেখা অথবা কম্পিউটারে কাজ করার জন্য একমুখী কিছু লাইট ব্যবহার করলে মন্দ হয় না। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন লাইটের আলোটা সরাসরি কম্পিউটারের স্ক্রিনে প্রতিফলিত না হয়। টেবিলে বসে ছোটখাটো কাজের জন্য টেবিল লাইটও ব্যবহার করা যেতে পারে।
অফিসের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে লাইট
মানুষ সাধারণত পুরো অন্ধকার অথবা সরাসরি আলোর দিকে তাকালে কিছু দেখতে পারে না। তখনই কিছু দেখা সম্ভব যখন আলোটা কোনো কিছুর সঙ্গে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই অফিসের বাণিজ্যিক লুক দিতে লাইটের ব্যবহারটা এমন হতে পারে যেগুলোর মাধ্যমে ওই অফিসের কার্যক্রমকে উপস্থাপন করে। অফিসের রিসিপশনগুলোতে লাইটের ব্যবহার এমন হতে পারে যে, কোনো গ্রাহক এলেই অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা পায়। কখনো কখনো অফিসগুলোতে ডেকোরেটর/ডেকোরেটেড গ্লাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে লাইটিং এমন হতে পারে যে গ্লাস ভেদ করে আলোটা বাইরে আসতে পারে। আনেক সময় অফিসে থাকে বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং। এ পেইন্টিংগুলোতে স্পটলাইট ব্যবহারের ফলে এটি হয় আরো উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয়।
অফিসে এমডি, চেয়ারম্যান অর্থাৎ বিশেষ ব্যক্তিদের রুমে বিভিন্ন ডিজাইনের সিলভার, শ্যাডো, লাল অথবা হালকা রঙের টিউব লাইটগুলো ব্যবহারে একটু বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। তবে বেশি রঙিন লাইট ব্যবহার করলে নষ্ট হতে পারে কাজের মন-মানসিকতা। আবার অফিসে বিভিন্ন ধরনের ব্রাকেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব জায়গায় ঝুলন্ত লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে আলোটা সরাসরি আসবে না কিন্তু দেখতে সুন্দর লাগবে। বড় বড় অফিসে ব্যবহার করা যেতে পারে বিভিন্ন রঙের ঝাড়বাতি। তবে অফিসের লাইটগুলো সেটিংয়ের সময় সুইচের ব্যবহারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
বাসার অফিসে লাইটের ব্যবহার
অনেকে নিজেদের বাড়িতেই অফিস করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তারা যদি কেবিন ব্যবহার করেন তবে কেবিনের নিচে লাইটটা সেট করলে আলোটা সরাসরি ডেস্কে পড়বে। এতে দেখতেও সুন্দর লাগবে আবার কাজটাও আরামদায়কভাবে করতে পারবে। আবার অফিসটাকে একটু সুন্দর দেখাতে ব্যবহার করা যেতে পারে সাদা আলোর পাশাপাশি রঙিন আলোও। তবে এ ক্ষেত্রে এনার্জি সেভিং লাইটগুলো ব্যবহারের কিছুটা বেশি সুবিধা পাওয়া যায় ।
প্রাপ্তিস্থান
শান্তিনগর, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, গুলশান, বারিধারা ছাড়াও রাজধানীর যে কোনো স্থানের ইলেকট্রিক দোকান থেকে পাওয়া যেতে পারে ছোট বড় বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন সাইজের লাইট। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শহর থেকেও তা সংগ্রহ করতে পারেন। যদি কোথাও আপনার মনের মতো ডিজাইনের লাইট না পান তবে অর্ডার দিয়ে আনিয়ে নিতে পারেন। তবে কোনো ইন্টেরিয়র ফার্মের সাথে পরামর্শ করলে তারাই এনে দেবে আপনার মনের মতো ডিজাইনের লাইট।
দরদাম
যে কোনো জিনিসের দাম নির্ভর করে তার আকার এবং গুণগতমানের উপর। সাধারণত অফিসে ব্যবহৃত টিউব লাইটগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে অন্যান্য লাইটের থেকে কম। তবে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকার লাইটও ব্যবহার করা হয় অফিসগুলোতে।
তানজিনা আফরিন ইভা
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৮ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১২