আর মাত্র ক’দিন পরেই আসছে মহা উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। ঈদের সজ্জায় ব্র্যান্ড নিউ লুক কে না চায়? ভাবনাটা শুধু নিজেকে ঘিরেই নয়, সাধের অন্দরমহলের জন্যও। ঈদে বাড়ি আসবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব। কিভাবে ঘরটা সুন্দর থেকে আরেকটু সুন্দর করা যায়, এ সময়টায় এটাই থাকে ভাবনায়। আপনার বেডরুমটা বিবর্ণ বা একঘেয়ে দেখাচ্ছে, বসার ঘরের সোফার কুশনগুলো কেমন যেন পুরনো, বাথরুমটারও একটু রেনোভেশন করালে ভালো হতো এ রকম সব চিন্তাভাবনা যদি এ মুহূর্তে আপনার মাথায় ঘুরতে থাকে, তা হলে বলব এটাই আপনার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। ঘরজুড়ে উৎসবের রঙ লাগাতে চাইলে প্রস্তুতিটা শুরু করতে হবে এখনই। এ ক’টা দিনের মধ্যে যদি নিজের অন্দরমহলে একটা জমজমাট মেকওভার আনতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই! খরচ নিয়ে ভাবছেন? ইন্টেরিয়র পরিবর্তন মানেই তো ঘরে রঙ করানো, ফার্নিচার কেনা, মেঝের টাইলস বদলানো নানান ঝক্কিঝামেলা। এবার যদি বলি এর কোনোটিই না করেও নান্দনিক ইন্টেরিয়র পেতে পারেন। কেমন করে? এ ক্ষেত্রে কিছুটা সৃজনশীলতা আর সদিচ্ছার যুগলবন্দিই হয়ে উঠতে পারে আপনার প্রধান সহায়।
বেডরুম
বেডরুম মেকওভারের সবচেয়ে সহজ উপায় ঘরের আসবাব একটু এদিক ওদিক সরিয়ে নতুন রূপে সাজানো। নতুন পোশাক কেনার পাশাপাশি নতুন বিছানার চাদর, পর্দা, কুশন কভার ইত্যাদি পরিবর্তনে আপনার শোওয়ার ঘরটি হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়। যেহেতু ঈদ তাই প্রতিটি ঘরকে আপনি সাজাতে পারেন আপনার পছন্দের রঙটি বেছে নিয়ে থিমবেজড আয়োজনে। শোওয়ার ঘরের বিছানার চাদরটি হওয়া চাই একটু গর্জিয়াস, সাথে ম্যাচিং পর্দা ও নানা রঙের কুশন দেবে বাড়তি সৌন্দর্য। তবে লক্ষ রাখবেন, একঘেয়েমি ভাবটা দূর করতে কন্ট্রাস্ট রঙ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নতুন শতরঞ্জি কিংবা রাগস ফ্লোরে বিছিয়ে দিন। বিছানার পাশের সাইড টেবিলে রেখে দিন কিছু তাজা ফুল। যার মৌ মৌ গন্ধ অতিথির মনকে ভরিয়ে তুলবে। সম্ভব হলে দেয়ালের রঙ পরিবর্তন করুন। একটু ভিন্ন মাত্রা দিতে বেডের মাথার কাছে দেয়ালে লাগিয়ে দিন ওয়ালপেপার। তবে লক্ষ রাখবেন, যে ফেব্রিকই বেছে নেন না কেন তা যেন ঘরের রঙ এবং আসবাবের সাথে মানানসই হয়। খাটের সঙ্গে জুড়ে থাকা বেডসাইড টেবিলের ল্যাম্প দুটোতে নতুনত্ব আনুন।
বেডরুমের জন্য পর্দা নির্বাচন করুন ঘরের অবস্থান অনুযায়ী। রাস্তার কাছাকাছি হলে একটু ভারী ফেব্রিকের পর্দা বেছে নিন। যাতে বাইরের আলো এবং শব্দ অতিমাত্রায় না আসতে পারে। যদি বেডরুমে বাইরের আলো তেমন না আসে, তা হলে ট্রান্সপারেন্ট নেট, মসলিন বা জর্জেটের পর্দা বেছে নিন যাতে কিছুটা আলো ভেদ করে ঘরে ঢুকতে পারে।
বসার ঘর
বসার ঘর অতিথি আপ্যায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আপনার পছন্দ এবং রুচিবোধকে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয়, ভিক্টোরিয়ান, মডার্ন এই তিন রকম স্টাইলে সাজাতে পারেন ড্রইংরুম বা বসার ঘরকে। যদি কাঠের কারুকার্যময় আসবাব আপনার পছন্দের তালিকায় থাকে তবে নিঃসন্দেহে সেটা ভিক্টোরিয়ান স্টাইল। তাই আরেকটু গর্জিয়াস করতে চাইলে ফার্নিচারের পাশাপাশি ঘরের পর্দাতেও নিয়ে আসুন ভিক্টোরিয়ান স্টাইল। বিভিন্ন ধরনের ড্রেপিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করে নিন জানালার পেলমেট, সাথে ম্যাচিং ঝালর অথবা লেস। দুই লেয়ারে তৈরি করুন পর্দা। পেলমেটের সাথে মিল রেখে ভারী পর্দা নির্বাচন করুন আর সাথে ম্যাচিং অথবা কন্ট্রাস্টিং নেট অথবা মসলিনের শেয়ার দেবে ভিন্ন মাত্রা। সেন্টার টেবিলে একটি বড় ক্রিস্টালের পাত্রে পানি দিয়ে রেখে দিন তাজা ফুলের পাপড়ি, সাথে ফ্লোটিং ক্যান্ডেল। ঝুলন্ত লাইটের ব্যবস্থা থাকলে সেগুলোকে পরিবর্তন করে নতুন ডেকোরেটিভ লাইট ঝুলিয়ে দিন। সেন্টার টেবিলের নিচের অংশ জুড়ে বিছিয়ে দিন সিনথেটিক কার্পেট। কেউ যদি ইকেবানা শৌখিন হন তা হলে বিদেশি ফুল গোলাপ, লিলি, জারবেরা দিয়ে তৈরি করুন নান্দনিক ফুলের বুকে।
কর্নার শোকেসে রাখা কিছু পুরনো শোপিস সরিয়ে নতুন শোপিস যোগ করুন। দেয়ালের ঘড়িটি, সেটিই বা বাদ যাবে কেন। ঘরের অন্যান্য সামগ্রীর সাথে মিল রেখে বাজার থেকে নিয়ে আসুন পছন্দের ঘড়িটি এবং টাঙিয়ে দিন দেয়ালে। আজকাল বাজারে এমন কিছু ঘড়ি পাওয়া যায়, যা ওয়াল ডেকোরেশন পিস হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। পুরনো পেইন্টিংটি সরিয়ে নতুন পেইন্টিং লাগিয়ে নিন।
মডার্ন ফার্নিচারে সাথে মডার্ন চিন্তাভাবনাটাই তো স্বাভাবিক। তাই পুরো ঘরের ফার্নিচার নির্বাচন করুন সিম্পল ও জ্যামিতিক ফর্মের। মডার্ন কনসেপ্টের জন্য বেশি গর্জিয়াস পর্দা নয় বরং সিম্পল ডিজাইনের পর্দা বেছে নিন। শোপিস অথবা সেন্টার পিস যা-ই বলুন না কেন লক্ষ রাখুন সেটা যেন মানিয়ে যায় পুরো ঘরের সাথে। মডার্ন ফার্নিচারের ক্ষেত্রে সোফার কভারে ফ্লোরাল ডিজাইনের ফেব্রিকস এড়িয়ে চলুন। এ ক্ষেত্রে এক রঙের সোফার কভারের সাথে কন্ট্রাস্টিং কুশন কভার শুধু সৌন্দর্যের বহির্প্রকাশই নয় বরং বহন করবে সিম্পলি নান্দনিক লুক। ঘরের কর্নারে রেখে দিন কিছু ইনডোর প্লান্টস।
দেশীয় আমেজ আনতে বাঁশ, বেত, রট আয়নের ফার্নিচারের সাথে খাদি কাপড়ের পর্দা ও কুশন কভার ব্যবহার করুন। ব্লক, বাটিক, টাইডাই অথবা কাতান পাড় লাগিয়ে তৈরি করে নিন আপনার পছন্দসই পর্দা। ঘরের এক কর্নারে মাটির চাড়িতে পানি দিয়ে রেখে দিন কিছু ফুল এবং ফুলের পাপড়ি সাথে মোমবাতি। দেয়ালে তামা, মাটি ও পিতলের মুখোশ ঝোলানো যায়, তা ঘরের দেয়ালকে আরো সুন্দর করে তোলে। মেঝেতে বিছিয়ে দিন শতরঞ্জি অথবা শীতল পাটি। ঘরের চারপাশের বিভিন্ন সাইজের মাটির পটারি দিয়ে সাজান।
খাবার ঘর
খাবার ঘরটি অতিথিদের মন জয় করার জায়গা। তাই এ ঘরটিতে শুধু সুন্দর করে খাবার পরিবেশনই নয়, আশপাশের আয়োজনও হওয়া চাই খাবারের মতো আকর্ষণীয়। খাবার ঘরের পর্দা হালকা সবুজ রঙের হলে ভালো, এতে ফ্রেশ একটা ভাব থাকে। টেবিলে নতুন টেবিলক্লথ বিছিয়ে দিন। যদি কাপড়ের টেবিলক্লথ হয় তা হলে টেবিলক্লথের উপরে পাতলা ট্রান্সপারেন্ট পলিথিন ব্যবহার করুন খাবার পরিবেশনের আগে।
কাচের গ্লাস টপ টেবিল হলে বিছিয়ে দিন টেবিল রানার, টেবিল ম্যাট এবং ম্যাচিং ন্যাপকিন। টেবিলের মাঝখানে রেখে দিন আকর্ষণীয় ফলের ঝুড়ি, তাতে রাখুন তাজা কিছু ফল।
প্রয়োজনীয় টিপস
- ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই সব ঘরের ঝুল ঝেড়ে ফেলুন।
- ক্যাবিনেটের কাপড় ঝেড়ে গুছিয়ে রাখতে হবে। তবে কাপড়ে যেন পোকা কিংবা কীটপতঙ্গের আক্রমণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ন্যাপথলিন, নিমপাতার শুকনো ডাল অথবা কালো জিরা একটা কাপড়ে বেঁধে ক্যাবিনেটে রেখে দিন।
- অগোছালো অবস্থায় থাকা বুক সেলফটি একটু যত্ন নিয়ে গুছিয়ে ফেলুন।
- ঘরের ইনডোর প্লান্টসগুলো একদিন আগে ধুয়ে বা মুছে পরিষ্কার করে নিন।
- বাথরুম, ওয়াশ এরিয়াতে সাবানের পরিবর্তে লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন। অবশ্যই একটি পরিষ্কার তোয়ালে রাখতে ভুলবেন না।
- বাথরুমে ঢোকার মুখে অথবা ডাইনিং রুমের আয়না নষ্ট হয়ে গেলে সেটা পরিবর্তন করুন। তোয়ালে ঝোলাবার জন্য রিং বা টাওয়েল রেল বসাতে ভুলবেন না।
- সব সময় ব্যবহৃত ট্রে পরিবর্তন করে খাবার পরিবেশনের জন্য নতুন ট্রে ব্যবহার করুন।
- বিভিন্ন রুম এবং বাথরুমের সামনে রাখা পাপোশ অথবা রাগস পরিবর্তন করুন।
- প্রবেশপথে অবশ্যই স্যু-র্যাক রাখতে ভুলবেন না।
- সিঁড়ির দেয়ালে ঝুলিয়ে দিন ইনডোর প্লান্টস, মুখোশ, ডেকোরেটিভ আয়না অথবা নিজের পছন্দের কোনো ছবি ফ্রেমে বাঁধাই করে।
- বাচ্চাদের ঘরের পুরনো সফট টয়েস সরিয়ে নতুন সফট টয়েস দিয়ে সাজিয়ে নিন বিছানাটিকে।
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৮ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১২