স্কুলের কথা মনে হলেই যে কেউ হারিয়ে যাবেন সাদা কালো এক স্মৃতির দুনিয়ায়। চোখের সামনে ভেসে উঠবে বিশাল মাঠের এক কোণে সাদা বা হলদে রংয়ের একটি ভবন। নানারকম আকিবুকি আঁকা সাদা রংয়ের একটি ক্লাসরুম।
বেশকিছু কাঠের বেঞ্চ, একটি টেবিল, একটি চেয়ার ও কালো রং করা একটি বোর্ড। শিক্ষকদের কড়া অনুশাসন, আর ক্লাস শেষে ছুটে যাওয়া খোলা মাঠে, মেতে ওঠা এক অনাবিল দুরন্তপনায়। তবে বর্তমান চিত্রটা ততটা সুখকর নয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। বিদ্যালয়ের পরিসর হয়েছে সংকুচিত। গ্রামে যদিও কিছুটা ব্যতিক্রম, তবে ঢাকাসহ দেশের সব শহরগুরোতে নির্দিষ্ট একটি ভবনের মধ্যেই স্কুলের পরিসর সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি মানুষের বিকাশ শিশুকাল থেকেই শুরু হয়ে যায়। স্কুল সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে। উন্নত দেশগুলো ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বৈচিত্রময় ক্লাসরুম, আধুনিক গবেষণাগার, সেমিনার ও অডিটোরিয়াম, সাংস্কৃতিক নানা ব্যবস্থা ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার ব্যাপারেও তারা কম যায় না। কারণ খেলাধুলা ও শরীরচর্চা শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের পূর্ব শর্ত। ফলে উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীরা বড় হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা গ্রহণে এসব সুবিধা থেকে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। এদেশে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বলতে গাদাগাদা বই, লেকচার শিট, থিসিস পেপার ইত্যাদি। তবে আশার কথা দীর্ঘদিন পর হলেও পরিবর্তন সাথে নতুনত্ব আসছে এদেশের শিক্ষাদানেও। রাজধানী ঢাকার অদূরে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন একটি স্কুল, একই সাথে স্পোর্টস একাডেমী।
৬ বছর আগের কথা। প্লেজ হারবার স্কুল অ্যান্ড স্পোর্টস একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সাইদুল আলম একটি আন্তর্জাতিকমানের স্কুল ও স্পোর্টস একাডেমী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। যেখানে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধূলাকেও প্রাধান্য দেয়া হবে। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব কতটা। আর এ জাতীয় কোন বোর্ডিং স্কুল দেশে না থাকায় বাংলাদেশের ছেলেরা পাড়ি জমায় বিদেশে। ফলে এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যায়। এসব কিছুই চিন্তা করেই তিনি এই বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। এর ফলে একদিকে যেমন এদেশের শিক্ষার্থীরা দেশের মধ্যেই বিশ্বমানের শিক্ষা ও খেলাধূলার সুযোগ সুবিধা পাবে। পাশাপাশি তারা তাদের মেধা চর্চা করে বিশ্বের কাছে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ডিরেক্টর এবং প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োজিত আছেন মার্টিন এফ মাই।
চমৎকার নির্মাণশৈলী সমৃদ্ধ এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার মাওনা থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার ভেতরে সিংহারদিঘীতে। ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এখানে রয়েছে আন্তজার্তিক মানের আবাসিক স্কুলের সকল সুবিধা। আছে আকর্ষণীয় ক্লাসরুম, বিশাল লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, আধুনিক ল্যাব ইত্যাদি। স্কুলের নামের পাশে যেহেতু স্পোর্টস একাডেমী আছে, সেহেতু আরো রয়েছে খেলাধূলার সুপরিসর আউটডোর ও ইনডোর স্টেডিয়াম, সুইমিংপুলসহ আরো নানা আয়োজন। শুধু শিক্ষাদীক্ষা বা খেলাধূলা ছাড়াও এখানে রয়েছে সংস্কৃতি চর্চার নানা সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। তবে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত আধুনিক শিক্ষাই নয়, সৃজনশীল শিক্ষার প্রতিও প্রতিষ্ঠানটি সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্লেজ হারবর স্কুল অ্যান্ড স্পোর্টস একাডেমী কেমব্রিজ কারিকুলাম ভিত্তিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলটি সুদক্ষ দেশি-বিদেশি শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। যাদের হাতে তৈরি হবে এই দেশের প্রজন্ম, যে প্রজন্ম নেতৃত্ব দিবে বিশ্বকে। এই স্কুলের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব আত্মিক, মানসিক ও শারীরিক বিকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। কেননা তারা পাবে অত্যাধুনিক শিক্ষা সুবিধা। তাদের আবশ্যিক শিক্ষা কার্যক্রম, তাত্তি¡ক জ্ঞান, চিন্তা, দক্ষতা, গভীরতা, গবেষণামূলক স্বাতন্ত্রিকতা এনে দেয়।
ক্যাম্পাস
এই স্কুলটির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুই হলো এর বিশাল ক্যাম্পাস। প্রায় ২৭ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সবুজে ঘেরা এর ক্যাম্পাসটি। এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা, সুইমিংপুল, আবাসিক ব্যবস্থা ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র ধারণ ক্ষমতা ১০৮০ (ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ১:২০)।
খেলার মাঠ
খেলাধুলা মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ। এর মধ্যে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিকমানের ক্রিকেট মাঠ ও একটি ফুটবল স্টেডিয়াম। এছাড়াও দুইটি সাধারণ ফুটবল মাঠ ও একটি মিনি আউটডোর মাঠও রয়েছে এখানে। আউটডোর মাঠ ছাড়াও ইনডোর মাঠকেও বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একটি ইনডোর ফুটবল মাঠও গড়ে তোলা হয়েছে এখানে। দুইটি বাস্কেটবল কোর্ট (একটি ইনডোর ও একটি আউটডোর), ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ও হ্যান্ডবলের জন্যেও রয়েছে সুনির্ধারিত খেলার কোর্ট।
সুইমিংপুল
ছেলেদেরকে সাঁতার শিক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে এখানে তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় সুইমিংপুল। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এটির আয়তন ২৫ মিটার ও ১০ লেন বিশিষ্ট।
গেমস রুম
এখানে অন্যান্য গেমস সুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে দুইটি পুল টেবিল, চারটি টেবিল, পিএসপি ও এক্সবক্স।
অন্যান্য সুবিধা
সুবৃহৎ লাইব্রেরি এবং তথ্যপ্রযুক্তি সম্পন্ন ল্যাব
সুবিশাল সেমিনার কক্ষ।
ডাইনিং হল ও অডিটোরিয়াম।
ইন্টারনেট সুবিধা।
প্রফেশনাল ফুটবল ও ক্রিকেট কোচ।
আবাসিক ডাক্তার ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা।
দলীয় দর্শনার্থী ও স্টাফের জন্য আবাসন সুবিধা।
স্কুল কর্তৃপক্ষের যোগ্যতা
প্লেজ হারবারের প্রশাসনিক অবকাঠামো এবং শিক্ষকবৃন্দ প্রত্যেকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্রিকতায় ও সুবিন্যস্ত পাঠ্যক্রমে সুসংগঠিত। প্লেজ হারবারের সম্মানিত পরিচালক ও প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল এবং পাঠ্যক্রম তত্ত্বাবধায়কগণ প্রিস্টনের নিউজার্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সার্ভিস (আইএসএস) থেকে আসার ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে সুদৃঢ়তা। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষকগণ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওভারসীন রিক্রুয়েটিং ফেয়ার (টিওআরএফ) কানাডা এবং ইউনির্ভাসিটি অব নর্দার্ন আই ও ডাব্লিউ এ টিচার রিক্রুয়েটিং ফেয়ার থেকে আগত।
প্লেজ হারবারের প্রতিটি শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটির আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার আলোকে দিনে দিনে হয়ে উঠবে একজন অনুসন্ধানী, বিদ্বান এবং সুদক্ষ চিন্তাবিদ। এছাড়া তারা তাদের চরিত্রগত দিক দিয়ে হয়ে উঠবে নীতিবান, উদার মনমানসিকতা সম্পন্ন, যত্মশীল, ঝুঁকি গ্রহণকারী, ভারসাম্য রক্ষাকারী ও পরিণামদর্শী। আর এসব কিছুই সম্ভব হবে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, ক্যাম্পাসের বিশালতা, নানান সুযোগ সুবিধা এবং শিক্ষকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে।
– মারুফ আহমেদ
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৫ তম সংখ্যা, মে ২০১২