পরিবেশ বাঁচলে আমরা বাঁচব
পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের করণীয়

আমাদের যাপিত জীবনে পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সুসংগঠিত নিয়মের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে সুবিশাল প্রকৃতি। অদ্ভুত এক অদৃশ্য পরিচালনা একই নিয়মে যুগ-যুগান্তর, শত-কোটি মিলিয়ন বছর ধরে চলছে। এর একটুখানি ব্যত্যয় ঘটলে অবসান ঘটে একটি পুরো সভ্যতার বা সময়ের। লাখো বছর ধরে গড়ে ওঠা একটি কাল বিলীন হয়ে যায়। এই বিলুপ্তির গোড়াপত্তনে যুক্ত এই ব্রহ্মান্ড বসবাসকারী প্রতিটি জীব। 

প্রকৃতির সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর ন্যস্ত পৃথিবী পরিচালনার দায়ভার। বিশেষ করে মানব প্রজাতির ওপর তা বহুলাংশেই বর্তায়। কারণ, মানুষ প্রতিনিয়ত তার নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা, টিকে থাকা, জীবন সংগ্রাম ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে বদল করে নিচ্ছে বা পরিমার্জিত করছে পরিবেশ তথা প্রকৃতি। 

মানুষের এই টিকে থাকার লড়াই কতটুকু সফল হচ্ছে বা এই পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ ফলাফলের অঙ্ক কতটা মেলাতে পারছে, মিললেও নিজেরা সচেতন হচ্ছে কি না তা স্পষ্ট না হলেও পরিবর্তনের জাঁতাকলে যে পড়ছে অসংখ্য প্রাণী, তা অস্পষ্ট নয়। প্রাণীমাত্রই বনের সন্তান, কিন্তু বর্তমান পৃথিবীর প্রাণীকুল দ্রুত হারে হারাচ্ছে মায়ের কোল, আর কোলহারা সন্তান এই প্রাণীকুল মারাও পড়ছে অকাতরে। কিন্তু আমরা জানি, জীববৈচিত্র্য পরিচালনায় ক্ষুদ্র মশা বা কালো কাদার কদাকার কৃমিও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার একটি অংশ। একটি অদৃশ্য অণুজীব, একটি সরীসৃপ, একটি প্রাণী অন্যটির পরিপূরক।

আমাদের শিশুরা; উন্নত নগর সভ্যতার এক একটি বন্দী প্রাণ। যারা বাস করে ইট-কাঠের নির্বিকার বদ্ধকক্ষে, বাবা-মা, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে, বহু দিন, বহু মাস অথবা কোনো দিন সবুজ দেখে না চোখে। তারা জানে না পানা পুকুরের মধ্যে কচুরিপানার ওপর কীভাবে রোদ তাপায় নীরব কচ্ছপ। তারা জানে না সাপ-বেজির তুমুল লড়াই চলে বনঝোপের নির্জনে, তারা জানে না বট-পাকুড়ের মাথায় শত শত টিয়ে পাখির সরব কলতান চলে গোধূলির সীমা পর্যন্ত। তারা শোনে না সাপ কী করে জমির ইঁদুর খেয়ে চাষিকে সাহায্য করে। তারা কোনো দিন শোনে না বর্ষার ডোবায় বৃষ্টি-ডাকা ব্যাঙের ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙ, তারা ঘৃণা করে কেঁচো, যে কি না নরম ঝুরঝুরে মাখনের মতো করে রাখে কৃষকের জমি, যেখানে বেড়ে উঠে কচি সবুজ চারা। যদিও তারা জীববিজ্ঞানের একটি বিশাল অংশ গড়গড়িয়ে মুখস্থ করে জীববিজ্ঞানে পারদর্শী ছাত্র হয়ে ওঠে কিন্তু সেই জীবনগুলোর সঙ্গে গড়ে ওঠে না তাদের কোনো ঘনিষ্ঠতা। নেই কোনো বাস্তব সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা। বইয়ের পাতার সাদাকালো ছবিনির্ভর জ্ঞান দিয়ে তারা জয় করে ফেলতে পারে পরীক্ষার খাতা, শিক্ষকের মন, কিন্তু ভালোবাসতে শেখে না। ফলে জন্মায় না প্রাণীজগতের প্রতি নিখুঁত কোনো দায়বদ্ধতা। বরং থেকে যায় ক্ষুদ্র প্রাণীটির প্রতি নাক কুঁচকানো ঘৃণা, ভয়, এড়িয়ে চলার প্রবণতা কিংবা থেকে যায় দশম শ্রেণীর বাধ্যতামূলক ল্যাব ওয়ার্ক করার সময়কার চিৎপাত আরশোলার পাকস্থলীর বোঁটকা গন্ধ থেকে বাঁচতে চেষ্টা করা কুঁচকানো নাকের স্মৃতির অভ্যাসটুকু। 

শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে তাদেরই সচেতন করে তুলতে হবে। কারণ, চারাগাছই একদিন সুবিশাল বৃক্ষ হবে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন অনুসারে মানবশিশুর প্রাথমিক শিক্ষা সূচনা হওয়া উচিত স্বাভাবিক নিটোল প্রকৃতির মধ্যে। সেখানে প্রকৃতি প্রাণ স্পর্শবর্জিত এই ছেলেমেয়েরা হয়ে উঠছে এক একটি নিরুৎসাহ, নিষ্প্র্রাণ মানবযন্ত্র। চলে-ফিরে বেড়ানো, হড়হড়িয়ে ইংরেজি বলতে পারা, ভীতু আর আগ্রহ হারানো একঘেয়ে মানুষে। এঁদের নিয়ে যেতে হবে বাস্তব অভিজ্ঞতার কাছে। মিডিয়া যেখানে শিক্ষক হিসেবে কাজ করবে, তাদের ভেতরে কৌত‚হল, জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করবে। পরিবেশ ও প্রাণীজগৎ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ এমনভাবে সাজিয়ে তাদের জন্য উপস্থাপন করবে যেন এতে করে তারা নিজেরাই উদ্দীপিত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য চিন্তা করে। তারা ভালোবাসতে শিখবে, উপকারিতা সম্পর্কে জানবে এবং তাদের সংরক্ষণের কথা ভাববে। 

পৃথিবী রক্ষার দয়িত্বে যারা প্রায়ই শব্দহীন, নির্জন, নীরব। প্রারম্ভিকতায় দেশীয় ভূখন্ড সীমার মধ্যে বসবাসরত ও বিচরণরত প্রাণীকুলের প্রতি বৈজ্ঞানিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে মানুষের মধ্যে, যেখানে প্রচারে হাত বাড়বে, সংবাদমাধ্যম। অত্যাধুনিক দ্রুতগতি সম্পন্নমাধ্যম, যারা নিমেষে পৌঁছে যায় লাখ লাখ মনে। 

বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার পাখি, পশু, সরীসৃপ প্রভৃতি। তার কটির নাম জানি আমরা? একজন মানুষকে ধরে বসলে বড় জোর ১০/১১টি পাখির নাম বলে থেমে যাবেন তিনি। সেই বাল্যকালে হাতেখড়ির সময় পরিচয় ঘটেছিল ‘ঈ’-তে ঈগল পাখির সঙ্গে। কালে কালে তা বিস্মৃত হয়ে কোলাহলের শহরে হঠাৎ কোনো কবিতায় নামগুলো ফিরে পেয়ে হয়তো একটু ভাবে মানুষটি, পরক্ষণে আবার ভুলে যায়। তেমনই এ দেশের অধিকাংশ মানুষ পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পরিপূর্ণ রূপের সঙ্গে পরিচিত নয়। অথচ এই প্রাণীটি বহন করে চলেছে ‘বেঙ্গলের’ গৌরব দেশ-বিদেশে। তাই প্রচারে আসতে হবে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর বৈজ্ঞানিক পরিচিতি। 

জনসংখ্যা বাড়ছে বনাঞ্চল কমছে, সমতল ঢাকা পড়ছে। বিস্তার শুধু বনে নয়, জলাধার মুদে যাচ্ছে, মাটির তলাও নিস্তার পায় না, সেখানে ঢুকে যাচ্ছে কংক্রিট, লৌহকাঠিন্য। প্রাণীকুল দ্বিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য, বনের নির্জনতা নেই, সেখানে বৃক্ষ উজাড় হা হা খোলা প্রান্তর অথবা মানব বসতি, মাটির তলায় গর্তের স্থান নেই, মাথা ঠুকে যায় সাপ-বেজির জলাশয়ের তথা নদীর প্রাণীগুলোও পলায়নপর। নদী দখল সম্পন্ন আর মাত্র কয়েক পা দূরে। বাসস্থানের অভাবে দিন দিন বৈরী প্রতিবেশে প্রাণীজগৎ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, আর এই পরিস্থিতির ফলাফল অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি। 

এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রাণীর বিভিন্ন রকম বাসস্থানের পরিচিতি এবং তাদের সংরক্ষণ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিভিন্ন পথকে আলোকিত করতে পারে সংবাদমাধ্যম অর্থাৎ প্রাণীজগতের বাসস্থান সর্ম্পকিত যাবতীয় তথ্যর সঙ্গে পরিচিতি। সেই সঙ্গে জীবের খাদ্য গ্রহণ, খাদ্যের জোগানব্যবস্থা, খাদ্যের প্রতুলতা-অপ্রতুলতা, খাদ্যাভাবের কারণ ইত্যাদি তুলে ধরবে তারা। 

এ দেশে বন্যপ্রাণীর চিকিৎসার পথ খুব সুগম নয়। দেশে যে কটি সরকারি এবং বেসরকারি পশু হাসপাতাল আছে তাতে চিকিৎসার মান খুব উন্নত নয় এবং সাধারণ মানুষের ভেতর প্রাণীর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত দৌড়ানোর বিড়ম্বনার চেয়ে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকতে বেশি পছন্দ বিধায় হাসপাতালগুলো নিষ্কর্মই পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায়ই মফস্বল এলাকার পশু হাসপাতালের সরকারি দালানগুলো নীরব, নির্জন খাঁ খাঁ করতে দেখা যায়। 

এ ছাড়া উপযুক্ত এবং সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পশুচিকিৎসকের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভালোবাসা নিয়ে পশুপাখির চিকিৎসাসেবার খুব বেশি উদাহরণ এ দেশে নেই। অথচ এই উদাহরণ প্রায়ই দেখতে পাই উন্নত দেশগুলোর পশুচিকিৎসাকেন্দ্রে। সেখানে তাদের রয়েছে সর্বাধুনিক ব্যবস্থাপনা। তারা গহিন বনে ঢুকে খুঁজে বেড়ায় আহত, মুমূর্ষু বন্যদের, ধরে এনে সেবা দেওয়ার জন্য, সেখানে এ দেশে এমন চিন্তা হাস্যকর। ডানাভাঙা কোনো অতিথি পাখিকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে জবাই করে খাওয়াই যেখানে সুখের বিষয়, সেখানে তার ডানায় ওষুধ-পট্টি লাগিয়ে ফের আকাশে ফেরত পাঠানোর সংস্কৃতিটাই তো এ দেশে গড়ে ওঠেনি। তাই এ ভাবনা হাস্যকর হবে এটাই হয়তো স্বাভাবিক। 

চলছে মাঠ পর্যায়ের জীব বৈচিত্র গবেষণা

এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম পশুপাখির চিকিৎসাবিষয়ক আধুনিক ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাকেন্দ্রসমূহের নিয়ম-অনিয়ম, বিভিন্ন প্রকার রোগের পরিচিতি, প্রতিকার, জনগণকে আগ্রহী করে তোলা, ডাক্তারদের ট্রেনিং সেন্টার, প্রশিক্ষণের দুর্বল-সবল দিক, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদি বিষয়ক তথ্যাবলি প্রচার করতে পারে। 

বাড়ছে মানুষ কমছে বন। গাছ কাটা পড়ছে, সেখানে ঘরের দরকার, অক্সিজেনের চেয়ে বাসস্থান বড়। কারণ, অক্সিজেনের মজুত অদৃশ্যমান। কাটা গাছের মগডালটা মাটি ছোঁয়ার আগেই গিরগিটিগুলো মাটিতে পড়ে কিংবা কাঠবিড়ালিগুলো অথবা কোটরে আশ্রয় নেওয়া সাপের জোড়া। বাস্তুহারা এসব প্রাণ বাসস্থানের অভাবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু প্রাণী এখন শুধুই ছবি। অথচ এদের সংরক্ষণের নেই কোনো জোরদার ব্যবস্থা। চেনার বাইরে একটু ব্যতিক্রম কোনো প্রাণী দেখলে লোকজন তাকে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, নয়তো ভয় পেয়ে মেরে ফেলে। তাই বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত রোধে করণীয় বিষয়সমূহ এবং তাদের সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা কী, তার তথ্যসমূহ প্রচার করা সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব ও কর্তব্য। 

এ দেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষই বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়ের নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। কারণ, এই বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো ব্যাপক আলোচনা তারা কোথাও পায়নি। বরং দেখা যায় ধীরে ধীরে ধনী হয়ে ওঠা কিছু মানুষ একসময় নিজের বাড়িতে বণ্যপ্রাণী রেখে বাড়ির শোভা বাড়ানোর প্রতি মনোযোগী হয়ে ওঠে। তারা আদৌও কতটুকু সরকারি নিয়ম মেনে এসব প্রাণী বাড়িতে এনে তোলেন তার হিসাব নেওয়ার কথা কারও মাথায় আসে না। আমরা দেখেছি, সাবেক অনেক সরকারি আমলার বাড়িতে এমনসব চিড়িয়াখানা। হয়তো এই আমলারাই ভালোবাসেন মানুষকে অন্ধকারে রাখতে, তাই প্রচার হয় না বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয় নীতিমালাসমূহ। সংবাদমাধ্যমগুলো আলোকপাত করতে পারে এই বিষয়। 

এখনো চামড়ার লোভে খুন হয়ে যাচ্ছে বাঘ, হরিণ, গুইসাপ ইত্যাদি আরও অনেক প্রাণী। জলদস্যু নামের পাচারকারীরা, যারা সুন্দরবনের গাছ কেটে বিক্রি করে পার্শ্ববর্তী দেশে, তারাই পাচার করে এসব মহামূল্যবান চামড়া। বনের গভীরের খবর কজন সচেতন নাগরিক রাখতে পারে বা রাখে। এসব পাচারকারী রোধে সংবাদমাধ্যমকে অনেক সাহসী তথ্য তুলে আনতে হবে এবং তা প্রচার করতে হবে। 

পাহাড়ী নদী

বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী বা সব প্রাণী নিয়ে উন্নত দেশের প্রাণীবিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলেছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের প্রাণীবিজ্ঞানীদের গবেষণাগুলো তুলে ধরতে হবে। সেগুলো হয়তো লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে আছে যুগের পর যুগ। কলেজ ইউনিভার্সিটির বিষয়সংশ্লিষ্ট কিছু সীমিত শিক্ষার্থী সেগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে পারে কিন্তু এর বাইরে ব্যাপক একটি সংখ্যা এসব গবেষণাকাজ সম্পর্কে জানতেও পারে না। মনে পড়ে, বিয়াম লাইব্রেরিতে ‘বাংলাদেশের সাপ’ নামে একটি বই  প্রথম তুলে দিয়েছিলাম অথচ বইটি কয়েক বছর ধরে শেলফে পড়ে আছে একদম অনড় হয়ে। 

অন্যান্য আলোচনার মধ্যে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসবে তা হচ্ছে বাংলাদেশের চিড়িয়াখানার অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিড়িয়াখানা আছে, থাকবে। যদিও কোনো প্রাণের এভাবে বন্দীজীবন কাম্য নয়। তথাপি এটি একটি শিক্ষামূলক স্থান এবং মানবজাতির সঙ্গে বন্যদের সান্নিধ্য স্থাপনের একমাত্র উপায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভাবতে হবে, বন্দী হলেও তাদের কতটা স্বস্তিতে রাখা যায়। কতটুকু বেশি প্রকৃতির কাছাকাছি পরিবেশ দেওয়া যায়। এবং এ ক্ষেত্রে বন্দীদের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় রেখে পুনরায় তাকে বনে ফিরিয়ে দেওয়া যায় কি না ইত্যাদি। 

এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চিড়িয়াখানাগুলো সত্যিই জেলখানা এবং বলা যায় নরককুÐ। পশুগুলোর শরীর মোতাবেক ছোট্ট ছোট্ট খুপরি জেলখানা যেখানে তারা ২০ কদমও হাঁটতে পারে কি না সন্দেহ, নোংরা পানি, শ্যাওলা, কাদায় ভরা, প্রাণীগুলো যেন ধুঁকছে, ঝিমোচ্ছে, কারো বা ছাল বাকলা ক্ষয়ে গেছে, কোনো কোনো খাঁচার ভেতর থেকে আসছে দুর্গন্ধ। কোনো খাঁচার সামনে আবার নাম পরিচিতি ঠিকই আছে কিন্তু খাঁচা ধু ধু। কিছুই নেই, মারা গেছে। বছরের পর বছর ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। 

তাই, চিড়িয়াখানা হওয়া উচিত আরও বিশাল জায়গা নিয়ে, তাদের জন্য অবাধ, খোলামেলা, অনেক বেশি প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক, সংবাদমাধ্যম এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। 

বিভিন্ন রকম পশুপাখি সরীসৃপ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে নানা রকম কুসংস্কার, বানোয়াট গল্প। সাপ, লক্ষ্মীপেঁচা এর চমৎকার উদাহরণ। এসব কুসংস্কার থেকে বের করে আনতে হবে, ভেঙে দিতে হবে সব ভুল ধারণা, যা অল্প সময়ে একসঙ্গে লাখো মানুষের মনে ছড়িয়ে দিতে পারে সংবাদমাধ্যম। 

তাই আগামী প্রজন্ম এবং চলমান প্রজন্ম সবার স্বার্থেই প্রাণীজগৎকে বিস্তৃত পরিচয়ে তুলে আনতে হবে। শুধু প্রাণীজগৎকে কেন্দ্র করে চলে বিদেশি কিছু জনপ্রিয় চ্যানেল। তেমনি আমাদের দেশের প্রাণীজগৎ নিয়ে আমরাও গড়ে তুলতে পারি তেমনি চ্যানেল, অনুষ্ঠান বা প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যম। যে চ্যানেল কথা বলবে প্রাণীদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা, ভালো-মন্দ নিয়ে। 

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল

কারণ কীটপতঙ্গ, তৃণলতা ইত্যাদি যে আমাদের পর নয়, আত্মীয়। ভ্রাতৃত্বের Recapitulation Theory থেকে জানা যায়, একটি উন্নত জীব অভিব্যক্তির যে যে স্তরের ভেতর দিয়ে এসেছে, গর্ভে অবস্থানকালে তার ভ্রুণকে সেই সেই অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। প্রথমে সরীসৃপ, তারপর মৎস্য তারপরে পাখি, পরিণামে মানব শিশুরূপে সে আত্মপ্রকাশ করে। এভাবে দেখতে গেলে দেখা যায়, মানুষের সঙ্গে যে, তৃণলতা-গুল্ম ও পশুপাখির সঙ্গে আত্মীয়তা রয়েছে তা শুধু কবির কল্পনা নয়, বৈজ্ঞানিক সত্য। 

হোসেন সোহল : বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টেলিভিশন

<[email protected]>

প্রকাশকাল: বন্ধন ৪০ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top