পরিবেশ দূষন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি। এ সমস্যা সমাধানে বড় বড় দেশগুলো গ্রহন করছে নানান উদ্যোগ। সারা বিশ্ব এক হয়ে খুজঁছে এ সমস্যার সমাধান। সেভ দ্যা আর্থ শিরোনামে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের বেশ কিছু শিক্ষার্থী সময়ের আলোচিত এ বিষয়টি নিয়ে তাদের ফাইনাল প্রজেক্ট করেছে। যেহেতু প্রজেক্টটিতে বিপন্ন পরিবেশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে সেহেতু প্রজেক্টটিতে এ সম্পর্কে পাঠকের জন্য চমৎকার এক বার্তা রয়েছে। এবার প্রজেক্ট সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বন্ধনের পাঠকের কাছে উপস্থাপন করা হলো।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে উঠে এসেছে পরিবেশ দূষনের নানা কারণ এবং তার সমাধানের নতুন নতুন ধারনা। তরুন স্থপতিদের মধ্য থেকে সমস্যা এবং সমাধান তুলে ধরাই ছিল এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। আর যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করা হয়েছে সেটা হল, প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্ত ধারনাকে শিক্ষার্থীরা যেন বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেন সে বিষয়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান।
এখানে আশার কথা, একজন স্থপতি তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে আরো সচেতন হবেন এই প্রকল্পের কাজের মধ্য দিয়ে। এটি একটি বড় প্রকল্প হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচজন। প্রকল্পের শুরুতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ধারনা চাওয়া হয়। প্রত্যেকটি গ্রুপ আলাদা আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। তাদের কাজের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করে দেওয়া হয়। সাথে দেওয়া হয় কিছু নীতিমালা। এই প্রকল্পগুলো যেন সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের দুজন শিক্ষক- সজল চৌধুরী ও সজিব পাল শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করেন। দিয়েছেন তাদের নানা জটিলতার সমাধান। প্রয়োজনে শিক্ষকরা তাদের নিজের চিন্তাকেও ভাগাভাগি করেছেন শিক্ষার্থীদের সাথে।
এই গ্রুপগুলোর একটির সাথে কাজ করার সুযোগ হয় আমার। আমাদের টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলো- পিয়াস, অনুপম, বিন্তি এবং নুমু। শুরু থেকেই আমরা চেষ্টা করেছি ইকোলজি নিয়ে কাজ করতে। ইকোলজির বিভিন্ন ধাপের উল্লেখ রয়েছে আমাদের প্রজেক্টে। পরিবেশের উপরে এর প্রভাব কেমন হতে পারে বা কি ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। খুজেঁ বের করি পরিবেশের নানান সমস্যা।
এক্ষেত্রে অত্যন্ত ঘন করে গাঁথা পেরেকের মাধ্যমে অপরিকল্পিত নগরায়ন, বিচ্ছিন্নভাবে কমে আসা সবুজ অ্যাক্রেলিক দিয়ে বনভূমির স্বল্পতা, স্বচ্ছ অ্যাক্রেলিকে অসংখ্য ছিদ্রের মাধ্যমে ওজন স্তর ফুঁটো হয়ে যাওয়া এবং মরিচা ধরা বল্টু দিয়ে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের প্রকাশ রয়েছে। প্রতিটি বিষয় একটির সাথে অন্যটি সম্পর্কযুক্ত এবং এটা বোঝানোর জন্য এদের মাঝে কিছু চেইন প্রবাহ রাখা হয়েছে।
এ সকল সমস্যার কারনে পৃথিবী দূষণে হচ্ছে যন্ত্রনাকাতর যা বোঝানোর জন্য হলুদ রঙের একটি গোলক ব্যবহার করা হয়েছে। গোলকটি আবার পৃথিবীর আর্তনাদের বহিঃপ্রকাশ। সবুজ গাছ যেমনি ভাবে আলো এবং পুষ্টির অভাবে হলুদ হয়ে যায়। এ পৃথিবীও তাই। বিশুদ্ধ পরিবেশের অভাবে আমাদের এই পৃথিবী মৃত প্রায়। আমাদের সচেতনতা এবং উপলব্ধিই বাঁচাতে পারে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে। নিরাপদ রাখতে পারে আগামী প্রজন্মকে।
সেভ দ্যা আর্থ প্রকল্পে পৃথিবীকে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন, বৃক্ষনিধন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালনকারী গ্রীনহাউজ এর মত ঘাতক সমস্যা এবং এ সমস্যার ফলে পৃথিবীর দূর্দশার রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
সীমিত সময়ের মধ্যে হলেও সাধারনের কাছে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় কি করনীয় এ সম্পর্কিত একটি বার্তা পৌঁছে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে।
-সিয়াম
প্রকাশকাল: বন্ধন ২১ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০১২