আবাসন সমস্যা বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাটি শহরমুখী। শহরে সাধারণত জনসংখ্যা বেশি কিন্তু ভূমির আয়তন কম। অন্যদিকে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের আবাসন নিশ্চিত করাও একটি চ্যালেঞ্জ বটে। সেক্ষেত্রে ভূমির প্রকৌশলী/স্থপতিগণ স্বল্প পরিসরে বিশেষভাবে ভবন নির্মাণ করে থাকে। নির্মাণে তারা বহুতল ভবনকেই প্রাধান্য দেয় বেশি। রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর তুলনায় এখানকার আবাসন সুবিধা সীমিত। জায়গা স্বল্পতাজনিত কারণে প্রতিটি ভবন আকাশের দিকে বেড়ে চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, যত বহুতল ভবন রাজধানী এবং এর আশপাশে তৈরি হচ্ছে তা দিয়ে কেবলমাত্র ২৫% থেকে ৩০% আবাসন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যেহেতু বহুতল ভবন তৈরি করা এখন রাজধানীসহ আশপাশ এলাকায় প্রয়োজন। তাই বহুতল ভবন নির্মাণ স্থানের ভূ-পৃষ্ঠের মাটির ভিত্তি শক্ত হওয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি দরকার তা পরিবেশ বান্ধব হওয়া। বর্তমানে ছিদ্রকরণের মাধ্যমে পাইলিং পদ্ধতির প্রযুক্তি প্রয়োগ করে মাটির ভিত্তি শক্ত করে বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে; কিন্তু এ কাজটি করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সাধারণত মাটির নিচে যেসব স্থানে গ্যাস লাইন, পানির লাইন এবং বিশেষ করে ভূগর্ভের প্রবাহমান পানির ধারা বিদ্যমান থাকে সে বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু নিয়ম এবং ভূমির পরিবেশ বর্ণনা করা হয়েছে। এটা অনেকটা পরিবেশবান্ধন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং যেখানে দূষিত মাটিতে পাইলিং করা হয় সেখানকার ভূমির অবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে বাস উপযোগী করা সম্ভব।
সূচনা
পাইল হচ্ছে একটি কলাম বা লম্বাভাবে তৈরি একটি কাঠামো যা মাটির নিচে প্রবেশ করানো হয়। যেসব স্থানে মাটির ভার বহন করার ক্ষমতা উচ্চতর ভবনের ভার বহন করতে অক্ষম সেসব স্থানে এ পদ্ধতির মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটিতে পাইল প্রবেশকরণ পদ্ধতিতে মাটির কম্প্রেসিভ শক্তি উন্নত করা হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম বন্ডিং সম্পন্ন মাটির বন্ধন শক্তি বাড়ানো এবং পরিশেষে মাটিতে শক্ত ভিত্তি তৈরি করা হয়।
ভূগর্ভস্থ যে স্থানগুলোতে পানির প্রবাহমান ধারা অব্যাহত থাকে সেখানে পরিবেশবিদরা পাইলিং না করে তার বদলে ভাসমান ভিত নির্মাণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রেখে পাইলিং নকশাটি এমনভাবে করা উচিত যাতে ঝুঁকি কম থাকে এবং পরিবেশ বান্ধব হয়। ভিত্তির স্তরে ঝুঁকির সম্ভাবনা কতখানি তা পরিসংখ্যানের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পাইলিং কার্যক্রম নিচে বর্ণিত উপায়ে করতে হবে।
- পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সে দিকটা বিবেচনায় রেখে পাইলিং প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে।
- তদারকি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- চিহ্নিত সমস্যা এবং অনিশ্চিত প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- সুপ্ত অবস্থায় যে শক্তিগুলো বিদ্যমান থাকতে পারে, পাইলিং করার পূর্বে নকশা করার সময় তা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
পাইলিং এবং ভূমি স্তুপিকরণ প্রযুক্তি:
মাটিতে পাইলিংসহ ছিদ্রকরণে উন্নত প্রযুক্তি প্রধানত: যন্ত্রাদি স্থাপন এবং মাটির গুনাগুণের ওপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পরবর্তীতে পাইলিংকে আরো উপ-ভাগে ভাগ করা হয়েছে কাঠামোগত এবং যন্ত্রাদি স্থাপনের নিয়ম অনুযায়ী যা সরনি-১ এ বর্ণিত হলো।
মাটি স্থানান্তরের মাধ্যমে পাইলিং
মাটি স্থানান্তরের মাধ্যমে পাইলিং করার প্রযুক্তিকে ড্রাইভিং পাইলিং বলে। এ পদ্ধতিতে ভূগর্ভ থেকে মাটি না সরিয়ে ভূতলের মাটি আড়াআড়িভাবে সরিয়ে পাইল করার জন্য যে স্থানটুকু প্রয়োজন হয় তা করা হয়। এতে পাইলিং এর চারদিকের মাটির ঘনত্ব বাড়ে; কিন্তু মাটিতে পাইল প্রবেশ করানোর ক্ষমতা কমে যায়। সামান্য মাটি সরানোর জন্য পাইল সাধারণত: স্টিল সিট দ্বারা তৈরিকৃত (এইচ বা আই ক্রস সেকশন সম্বলিত) ফাপা টিউব জাতীয় কোন হাইব্রিড, যেমন বেশি পরিমাণ মাটি সরানোর জন্য প্রি-কাস্ট কংক্রিট জাতীয় কাঠামো তৈরি করা হয় যেখানে পাইলের শেষ প্রান্তে স্টিল টিউব/কাঠের গুঁড়ার মতো শক্ত অথবা ঢালাইকৃত ভেতরে ফাপাসহ বাইরে শক্ত কাষ্ট আয়রণ যন্ত্রাংশ তৈরি করে তা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মাটি স্থানান্তর না করে পাইলিং
মাটি স্থানান্তর না করে পাইলিং করার পদ্ধতিকে অনেক সময় বোর পাইলিং বলা হয়ে থাকে। মাটিতে ছিদ্র করে সেখান থেকে মাটি উত্তোলন করা হয় এবং খালি স্থানটিতে সচরাচর লোহার খাচাসহ ঢালাই কংক্রিট দ্বারা ভরাট করা হয়। পাইলিং চলাকালীন পাইলিং এর আশপাশে মাটিগুলো ক্ষণস্থায়ী উপকরণ দ্বারা ঠেকানো হয়ে থাকে।
ভূমি ছিদ্রকরণের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ভূমির উন্নত করা
কমপক্ষে ৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটি ছিদ্রকরণ পদ্ধতিতে মাটির ঘনত্বেও উন্নত করা যায়। মাটির ঘনত্ব এবং দানাদার পাথরের মিশ্রণে ভূগর্ভস্থ মাটির ভৌত গুণাগুণের পরিবর্তনের ফলে পাথরের মতো শক্ত কলামের জন্ম দেয়। পরবর্তীতে দানাদার ইমারত সামগ্রী যে স্থানে পাইলিং এর জন্য গর্ত করা হয় সেখানে ফেলে ভূ-গর্ভস্থ মাটির ভিত্তি শক্ত করা হয়।
সরনি-১: পাইলিং এবং মাটি ছিদ্রকরণের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার সাপেক্ষে
সাধারণ পদ্ধতি যা সামগ্রিক ভাবে প্রযোজ্য
বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী বিবেচনায় প্রযোজ্য
স্থানান্তরিত পাইল
পূর্ব তৈরী নীরেট পাইল
পূর্ব তৈরী ফাপা পাইল
পাইলিং স্থানে ঢালাইকৃত পাইল।
অস্থানান্তরিত পাইল
স্থানান্তর না করে সরাসরি ঢালাইকৃত পাইল।
আংশিক পূর্ব তৈরীকৃত পাইল
গ্রাউট বা কংক্রিট মিশ্রিত পাইল
উন্নতি প্রযুক্তিতে মাটি
ছিদ্রকরণ পদ্ধতি
প্রতিস্থাপিত ভাইব্রো পাথর দ্বারা তৈরী কলাম
উন্নত ভাইব্রোফ্লোটেশন পদ্ধতি
ভাইব্রো কংক্রিট কলাম
সংকটাপন্ন দিকসমূহ চিহ্নিতকরণ:
পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে
স্থান বিশেষের উপর নির্ভর করে ভূতল উন্নয়নের কাজ বিশেষ করে পাইলিং সংক্রান্ত হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সাথে পাইলিং সংক্রান্ত কার্যক্রমের সমন্বয় করা প্রয়োজন। পরিবেশে যেসব বস্তু মাটিকে দূষিত করে বা যার সংস্পর্শে পানি দূষিত হয় এবং পরবর্তীতে ভূগর্ভস্থ মাটিতে প্রবাহিত হয়ে মাটির অনুগুলোর পারস্পরিক ধরে রাখার ক্ষমতা সীমিত হয় এ সমস্ত প্রাথমিক তথ্য জানা বিশেষ প্রয়োজন।
নিম্নের বিষয় সমূহ মাটিতে পাইলিং করার পূর্বে বা ভূগর্ভে মাটির শক্ত ভিত্তি তৈরি করার সময় বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
দূষিত পদার্থ থাকতে পারে পাইলিং স্থানের আশপাশে এবং কাজ করার সময় ওই সমস্ত দূষিত আবর্জনা সরিয়ে ফেলতে হবে।
পাইলিং করার স্থানটির ভূগর্ভস্থ প্রবাহমান পানির ধারা যা আগের ধারার সাথে মিশে যেতে পারে।
পাইলিং করার ফলে ভূতলে পানির প্রধান প্রবাহমান পানির ধারা অপেক্ষাকৃত কম ধাবমান পানির ধারার সাথে মিশে যেতে পারে।
পাইলিং করার স্থানটি এমনভাবে নির্বাচিত করতে হবে যেন ভূগর্ভে প্রবাহমান পানির উৎসটি কাছাকাছি এবং সুরক্ষিত স্থানে থাকে।
ভূতলের পানি প্রবাহের ধারাটি যদি খুব সামান্য থাকে এবং সে স্থানে পাইলিং করা হলে পানি প্রবাহের ধারাটি বাধাগ্রস্ত হয়।
পাইলিং করার পর ভূ-পৃষ্ঠের মাটি ভারসাম্যতা নষ্ট হতে পারে যা পরবর্তীতে ফাঁটল দেখা দিতে পারে।
পাইলিং কাজটি যদি ভূ-পৃষ্ঠের পানির স্তরের কাছাকাছি করা হয়। তবে পানি দূষণের পরিমাণটা বেড়ে যায়।
পরিবেশ সংস্থার মতে, যে স্থানে পাইলিং করা হবে সে স্থানটি যদি দূষণযুক্ত থাকে তাহলে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি মাত্রায় থাকে। তাছাড়া স্পর্শকাতর স্থানে মনিটরের মাধ্যমে পাইলিং করা কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ তা প্রথমেই ভূ-পৃষ্ঠের পানির স্তরের গভীরতা দেখে নেয়া দরকার।
যে স্থানগুলোতে পাইলিং করার উপযুক্ত নয় পরিবেশ রক্ষা সংস্থা মোট ৫টি এমন স্থানের পাইলিং এর চিত্র উপস্থাপন করেছে।
দূষণ চিত্র-১
যে স্থানে পাইলিং করা হয়, সেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানি নতুন তৈরিকৃত রাস্তার (যা পাইলিং করার সময় হয়েছে) সাহায্যে পানির স্তরের সাথে দূষিত বস্তু মিলিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উৎস : ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষিত হওয়ার উৎস হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠে তৈরি বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থের সাথে মিশে পানি দূষিত হয় এবং পরবর্তীতে মাটি চুইয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রবাহের উৎসের সাথে মিশে যায়।
দূষিত ভূতল
পাথর মিশ্রিত কলাম
কম পরিমাণ
পানি প্রবাহের
প্রবেশ পথ
পানির স্তর
পাইলিং করার স্থানের একাংশ
পথ: পাইলিং করার সময় আশপাশে দূষিত পানি পাইল এবং মাটির সংযোগ স্থান থেকে নিচে ধাবিত হয়।
দূষিত পানির গ্রহিতা : ভূগর্ভস্থ পানির চলমান প্রবাহকে এখানে দূষিত পানির গ্রহিতা হিসেবে ধরা হয়েছে। যে স্থানে পাইলিং করা হয় সেখানে পাইলের গা বেয়ে ভূ-পৃষ্ঠের দূষিত পানি ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রবাহের সাথে মিশে যায়।
যে বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা নিম্ররূপ:
যেসব বর্জ্য পদার্থ দ্বারা পানি দূষিত হওয়ার আশংকা থাকে।
ভূ-পৃষ্ঠে পাইলিং করার সময় দূষিত পানি গর্ত করা স্থানের মাধ্যমে মাটির নিচে প্রবাহমান পানির সাথে মিশে যেতে পারে।
ভূ-পৃষ্ঠে পাইলিং করার পর ভূ-পৃষ্ঠের মাটির স্তরের উন্নতি হয়েছে কিনা অথবা দূষিত পানি মাটির গা বেয়ে প্রবাহমান ভালো পানির সাথে মিশে তাকে দূষিত করছে কিনা।
ভূপৃষ্ঠের মাটির সাথে দূষিত পদার্থ মিশে পাইলিং করার সময় ভূ-গর্ভে চলে গিয়ে প্রবাহমান পানির সাথে মিশে যেতে পারে।
পাইলিং করার মাধ্যমে পাইলিং সামগ্রী ও ভূ-গর্ভস্থ পানির ধারার সাথে মিশে যেতে পারে।
পাইলিং করার পর ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটি উন্নত হওয়া সত্ত্বেও দূষিত মাটি যদি পাইলিং চলাকালীন ভূ-গর্ভে চলে গিয়ে পানির স্তরে মিশে যায়।
দূষণ চিত্র-২
পাইলিং করার স্থানের একাংশ
পাইল জপপ
অথবা পাথরের
কলাম।
পরিত্যক্ত এবং
দূষিত গ্যাস
সমৃদ্ধ মাটি
ভূগর্ভস্থ
স্তরে ভিত্তি
ভূ-গর্ভস্থ পানি অপেক্ষাকৃত কম দূষিত হতে পারে যদি ভূপৃষ্ঠের স্তর কম মাটি দ্বারা ভরাট থাকে এবং তাতে মাটি থেকে উৎপন্ন গ্যাস ও দূষিত উদ্বায়ী পদার্থ উৎক্ষিপ্ত হয়। যে স্থানে পাইলিং করলে খুব সহজেই মাটিতে প্রবেশ করার একটি রাস্তা তৈরি হয় যা ভূ-গর্ভের অভ্যন্তরে মাটি থেকে উৎপন্ন গ্যাস অথবা দূষিত বাস্প জাতীয় উপাদান ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে সহজেই চলে আসতে পারে। উপরের দূষণ চিত্র-২ নং অনুযায়ী স্থানে সাধারণত: পুরানো ভরাটকৃত মাটি বা পরিত্যক্ত জমি যা দীর্ঘকাল থেকে ব্যবহার ছাড়া পড়ে আছে সেসব স্থানে পাইলিং করা হলে দেখা গেছে মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় গ্যাস, পেট্রোলিয়াম জাতীয় দাহ্য পদার্থ বা উচ্চচাপ বায়ুর উদগীরণ হয়। পাইলিং করা অবস্থায় মাটির গাত্র বেয়ে এ ধরনের উচ্চচাপের গ্যাস বের হতে দেখা যায় এবং ভূমির উপরে পরিবেশ দূষিত হয়।
দূষণ চিত্র-৩
চিত্রানুযায়ী, যে স্থানে পাইলিং করা হয় সে স্থানের ভূ-গর্ভস্থ মাটি উপরে ফেলা হয় এবং উত্তোলিত মাটি পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নষ্ট করে। এতে ভূগর্ভে বাহিত পানির প্রবাহ, দূষিত মাটি বা বর্জ্যরে একাংশ পাইলিং করার সময় উপরে চলে আসতে পারে। ভূপৃষ্ঠে অবস্থানরত পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া যদি এমন অবস্থানে পাইলিং হয় যে স্থানে পানির প্রবাহমান স্তর আছে তবে সেখান থেকেও অনবরত পানি এসে পরিবেশ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ ধরনের পরিস্থিতি হলে নিচের বিষয়গুলোর উপর লক্ষ্য রাখতে হবে:
দূষিত বস্তু ভূ-গর্ভের অনেক নিচ থেকে উত্তোলিত হয় বিধায় এতে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকাতে মানুষের শরীরের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে অথবা ভূ-পৃষ্ঠের পরিবেশ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লক্ষ্য রাখতে হবে পাইলিং করার পর যে মাটি ভূ-পৃষ্ঠে উত্তোলন করে রাখা হয় তাকে আগে থেকে দূষিত বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
যে দূষিত মাটির স্তুপ পাইলিং এর পর ভূ-পৃষ্ঠে জমা করা হয়েছে তা সঠিক স্থানে বা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে স্ত’পাকারে রেখে দিতে হবে।
দূষণ চিত্র-৪
পাইলিং করা স্থানের একাংশ
পরিত্যক্ত
বর্জ্য দ্বারা
তৈরি দূষিত
মাটির
স্তর
এই চিত্রানুযায়ী, পাইল যদি সরাসরি কোন অবকাঠমোর মধ্যে পড়ে যায় তা হলে পানি বা অন্য কোন তরল পদার্থ দ্বারা তা দ্রবীভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই দ্রবীভূত পদার্থ পাইলিং করার সময় মাটির গা বেয়ে ভূ-পৃষ্ঠে উঠে যেতে পারে এবং ভূ-পৃষ্ঠের পরিবেশ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো পাইলিং করার পূর্বে সে স্থানের মাটিতে কোন দ্রবণশীল পদার্থ আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
দূষণ চিত্র-৫
পাইলিং করার স্থানের একাংশ
উপরোক্ত চিত্রানুযায়ী, মাটিতে পাইলিং করা স্থানে ভূ-পৃষ্ঠের দূষিত শক্ত মাটির খন্ড চাপে মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এতে যে স্থানে পাইলিং এর ভিত্তি হবে সে স্থানেই দূষিত শক্ত মাটির খন্ড বা এ ধরনের শক্ত পদার্থ যা মাটি দূষণে সাহায্য করে তা ভেতরে প্রবেশ করে প্রবাহমান পানির ধারাকে দূষিত করে। এ ধরনের পাইলিংকে সাধারণ কাট ইন্ড পাইলিং নামে পরিচিত এবং ভূ-পৃষ্ঠের শক্ত দূষিত মাটি চাপের মাধ্যমে পাইলিং এর শেষে প্রান্তের মাটির ভিত্তিকে শক্ত করে।
আবর্জনা দ্বারা ভরাটকৃত স্থানে পাইলিং
ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকা শহরের অনেক নিচু অঞ্চল যা প্রথমত আবর্জনা দ্বারা ভরাট করা হয় এবং পরবর্তীতে উক্ত আবর্জনা অপসরণপূর্বক ভবনের ভীত নির্মাণ কাজ করা হয়। উল্লেখ্য যে উক্ত আবর্জনা গ্যাস ও দূষিত তরল পদার্থ প্রচুর পরিমাণে নিঃসরণ ঘটায় যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এমনিতেই ঢাকা শহর পানি, বায়ু, মাটি ও শব্দদূষণে মারাত্বকভাবে আক্রান্ত। তদুপরি নির্মাণ সংক্রান্ত কার্যক্রম এই মাত্রা আরো বৃদ্ধি করছে। আবর্জনা দ্বারা ভরাটকৃত জমিতে পাইলিং শুরু করার পূর্বে উক্ত স্থানের নিঃসরিত গ্যাস এবং চুয়ানো (ষবধপযরহম) দূষিত পানির বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় ভ‚গর্ভস্থ পানি এবং বায়ুমন্ডল ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
– ড. প্রকৌশলী মো: জাহিদ হোসেন খান
পিএইচডি (পরিবেশ বিজ্ঞান)
সিনিয়র ফ্যাকাল্টি, ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৫ তম সংখ্যা, মে ২০১২