স্থাপত্য অঙ্গন

‘স্থাপত্য অঙ্গন’, জড়িয়ে আছে নির্মাণ বা স্থাপনাবিষয়ক নানা ধরনের কাজের সাথে। প্রতিষ্ঠানটির নামকরণেও বোঝা যায় এর কর্মপরিধি। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের স্থাপত্যেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এদেশেও গড়ে উঠছে নান্দনিক চোখ ধাঁধানো সব স্থাপনা। দেশীয় ঐতিহ্যে বজায় রেখে, প্রাশ্চাত্যের স্থাপনার সাথে তাল মিলিয়ে যেসব ভবন এদেশে গড়ে উঠছে, নিঃসন্দেহে তার সফলতার দাবিদার এদেশের স্থপতি এবং প্রকৌশলীরা। তাদের মেধা, দুরদর্শিতা এবং ভাল কাজ করার ইচ্ছা থেকেই এই কাজগুলো সফল করা সম্ভব হচ্ছে। তবে তরুণ স্থপতি এবং প্রকৌশলীরাই এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। তারা তাদের মেধা এবং অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশকে তুলে ধরছেন বিশ্বের দরবারে। তাছাড়া সৃজনশীল কাজের জন্য সর্ব মহলের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে বেশ। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য পাশ করা স্থপতি এবং প্রকৌশলীরা গড়ে তুলছেন তাদের মনের মত বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ ফার্ম। যেখানে সংযোজিত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত প্রযুক্তি, ভাল কাজের মানসিকতা এবং সর্বোপরি দেশকে কিছু দেয়ার সংকল্প। ঠিক এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপত্য অঙ্গন। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ তরুন এবং একজন তরুণি মিলে গড়ে তুলেছেন তাদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘স্থাপত্য অঙ্গন’।

যেভাবে শুরু

২০১১ সালের ১ ফেব্রæয়ারি। বুয়েট থেকে পাস করা ইঞ্জিনিয়ার মো: শাহিনুর আলম, আর্কিটেক্ট মাসুম-উল হক, সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান, আর্কিটেক্ট আফরিনা হক, ইঞ্জিনিয়ার নিলয় দাস, ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নয়ন শরীফ এই ছয় জনের দক্ষ টিমের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে স্থাপত্য অঙ্গন লিমিটেড। উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনের উন্নয়ন করা এবং সেগুলোর একটা মানসম্মত ও কমপ্লিট সলিউশান দেয়া। তবে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা খুব সহজ ব্যাপার নয় সেটা তারা সবাই জানতেন। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে রূপ দিতে তাদের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসের জায়গা ছিল, তারা সবাই বুয়েটের শিক্ষার্থী। এছাড়াও তারা স্থপতি এবং বিভিন্ন বিষয়ে (সিভিল, ম্যাকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটার) পারদর্শী প্রকৌশলীদের একটা চমৎকার সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। যেটা পরবর্তীতে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে ভালভাবেই সাহায্য করছে।

কার্যক্রম

এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পেছনে তরুণ এ উদ্যোক্তাদের বেশকিছু লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল। তারা তাদের মেধা ও মনন দিয়ে স্থাপত্যের এ অঙ্গনে পা রাখতে চেয়েছিল। আর এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর থেকেই তারা সে পথই অনুসরণ করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটি যে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে সেগুলো হচ্ছে- 

কনসালটেন্সি

আর্কিটেক্টচারাল ডিজাইন

ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন

ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন 

সফ্টওয়ার এন্ড ওয়েবসাইট ডিজাইন।

এই সব সেবাসমূহ অফিস, গৃহ, রিসোর্ট, হোটেল, লন-লবি বা যে কোনকিছুর জন্যই হতে পারে। যারা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তাদের সবারই আলাদা ও স্বতত্র কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। ভিন্নতার কথা বলতে গেলে স্থাপত্য অঙ্গনের সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল ডিজাইনের সব ধরণের সলিউশান এখান থেকে দেয়া হয়। এখানে আসলে যে কেউ পেতে পারেন স্থাপত্যিক (এক্সটেরিয়র বা ইন্টেরিয়র) ডিজাইনের কমপ্লিট সলিউশান। এক কথায় মনের মত ডিজাইন যা আপনার সাধ্যের মধ্যেই।

সফলতা

একটা প্রতিষ্ঠানের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করে তাদের কার্যক্রম এবং গ্রাহক সন্তুষ্টির উপর। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কাজের মাধ্যমে তাদের যোগ্যতা প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেশ কিছু কাজ সফলতা ও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের রেসিডেন্স অব কাজী মাহামুদুর রহমান, নোয়াখালীর রেসিডেন্স অব সাইফুল ইসলাম, রাজধানী ঢাকার টিকাটুলিতে প্রতিষ্ঠিত সালাউদ্দিন হাসপাতাল, পল্টনের আইইআরবি ও তানশীর গ্রুপের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে স্থাপত্য অঙ্গন। এছাড়া বেশকিছু প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের শফিপুরে জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালের ইন্টেরিয়র ডিজাইন, রেসিডেন্স গাজীপুর, হাজী শরীফ কমপ্লেক্স নোয়াখালীর চন্দ্রগঞ্জ বাজার এবং বান্দরবনের স্কাই অ্যান্ড ভ্যালী। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আরও কিছু নির্মাণাধীন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, চট্রগ্রামের হালি শহরের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, বেগমগঞ্জ সমিতি, অ্যাপার্টমেন্ট দক্ষিণ খান, ঢাকা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন (জেআরসি) গ্রুপ, লালমাটিয়া। এত অল্প সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এতগুলো কাজ করতে পারা সত্যিই বেশ গর্বের বিষয়। তাদের এই সাফল্য প্রতিষ্ঠানটিকে আরো সামনে নিয়ে যেতে এবং নতুন স্থপতিদের এ কাজে আরো অধিক প্রেরণা যোগাবে।

সমস্যা ও বাধা

এসব সফলতা অর্জন যে এমনি এমনি এসেছে তা নয়। নানারকম সমস্যা মোকাবেলা করেই নিজেদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে তাদের। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং পার্টনার মাসুম উল হক এবং ডিরেক্টর মশিউর রহমান জানালেন তাদের সমস্যার কিছু কথা। তারা বললেন, আমাদের এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই খাতের উন্নয়ন বা পরিচালনার কোন নীতি নির্ধারণ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় না। যার  প্রেক্ষিতে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিরাও অভিজ্ঞতা ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোও ঠিকভাবে আমাদেরকে ঋণ সুবিধা দেয় না। শুধু তাই নয় গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যা রয়েছে এই খাতে। ফলে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনেক বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন নির্মাণ ও ডিজাইন সহায়ক সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে তাদের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এতসব কিছু সত্ত্বেও তারা সামনে এগিয়ে যাবে এটাই তাদের আশা।

তরুণদের উদ্দেশ্যে

এক সময়ে নতুন অবস্থায় তারা তাদের এই ফার্মটি গড়ে তোলে। এ সেক্টরে কাজ করতে কি কি প্রয়োজন, কিভাবে কাজ করতে হবে, কি ধরনের বাঁধা পেরোতে হবে,  সর্বোপরি কিভাবে সফলতা আনা সম্ভব ইতোমধ্যেই এসব কিছুর মুখোমুখি হয়েছেন তারা। এখানে সফলতা পাওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনা, ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট এবং অর্থ প্রয়োজন। এগুলোই এই সেক্টরের প্রাণ, জানালেন মশিউর রহমান। তিনি আরো বলেন, কেউ যেন এই ব্যবসাতে অপেশাদার হয়ে না আসে। কারণ অপেশাদারিত্বই এই সেক্টরের সবচেয়ে বড় হুমকি।

সেবাগ্রহীতাদের প্রতি আহ্বান

সেবাগ্রহীতা বা ক্লায়েন্টদের উদ্দেশে স্থাপত্য অঙ্গন জানলো, সবাই যেন কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দেয় এবং অন্তত যাচাই করেন যেন প্রতিষ্ঠানটি প্রফেশনাল জনবল দ্বারা পরিচালিত কিনা। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা পরিচালনাকারী আর্কিটেক্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি আছে কিনা।

এক নজরে উদ্যোক্তা পরিচিতি

মশিউর রহমান 

পরিচালক

       সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, বিএসসি, বুয়েট

ইঞ্জিনিয়ার মো: শাহিনুর আলম

ম্যানেজিং পার্টনার

     বিএসসি ইন সিভিল ইজ্ঞিনিয়ারিং, বুয়েট 

    এমএসসি ইন স্টিল স্ট্রাকচার

     সদস্য, ইনিস্টিটিউট অব ইজ্ঞিনিয়ারিং বাংলাদেশ 

স্থপতি মাসুম উল হক 

          ব্যাচেলর অব আর্কিটেক্ট, বুয়েট  

          সদস্য, ইনিস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ

স্থপতি আফরিনা হক 

          ব্যাচেলর অব আর্কিটেক্ট, বুয়েট 

          সদস্য, ইনিস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ

নিলয় দাস 

          বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইজ্ঞিনিয়ারিং, বুয়েট

নয়ন শরীফ  

         বিএসসি ইন মেকানিক্যাল ইজ্ঞিনিয়ারিং, বুয়েট 

         সদস্য, ইনিস্টিটিউট অব ইজ্ঞিনিয়ারিং বাংলাদেশ  

যোগাযোগের ঠিকানা

স্থাপত্য অঙ্গন লি:  

১৫২/৪, গ্রীন রোড, ৪র্থ তলা

ঢাকা- ১২০৫।

মোবাইল- ০১৯১৩৫৫৫০২৬, ০১৫৫৬৩০৫৩৩৮

[email protected]

মারুফ আহমেদ

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৫ তম সংখ্যা, মে ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top