শীতের আমেজ চারপাশজুড়ে। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় স্থবির জনজীবন। এর মাঝে থেমে নেই জীবনের কর্মচাঞ্চল্য। সবাই ব্যস্ত স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে। ব্যতিক্রম নয় ইটভাটাগুলোও। এখানে চলছে মৌসুমের নতুন ইট তৈরির ব্যস্ততা। মালিক পক্ষসহ শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে খুশির আমেজ। নতুন মৌসুমে কাজের চাপ থাকলেও আনন্দের কমতি নেই এতটুকু।
ইট তৈরি হয় যেভাবে
ইটের ভাটায় নতুন মৌসুম এলেই শুরু হয় অন্য রকম উৎসবের আমেজ। মহিলা ও পুরুষ সবাই একসঙ্গে কাজ করে নব উদ্যমে। কারও বসে থাকার উপায় নেই। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই চটজলদি কাজে লেগে পড়ে সবাই। অনেকেরই বসবাস ভাটার আশপাশে। প্রথমেই কেটে আনা মাটি ঝুড়িতে একত্র করে রাখা হয়। এরপর কাটা মাটির সঙ্গে কাঁচামাল মিশিয়ে পানি দেওয়া হয় এতে। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় বক্সাইড, ইউরিয়া সার। এরপর এগুলো ভালোভাবে মেশানো হয় বড় আকৃতির ক্রেন-জাতীয় বাক্সে। অতঃপর মেশানো কাঁচামাল একটি ইটের সাইজকৃত বাক্সে বসিয়ে সারি সারি লোহার বাক্সে ইটগুলোকে সাজানো হয়। এরপর দেওয়া হয় চুল্লিতে।

সময় নিয়ে সেখানে ইটগুলো পোড়ানো হয়। এতে রাখা হয় নিয়ন্ত্রিত মাত্রার তাপমাত্রা। এরপর সেখান থেকে ইটগুলোকে বের করে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে অদল-বদল করা হয়। যে ইটগুলো পুড়ে লাল হয় সেগুলোকে নিচের সারিতে রেখে নিচের ইটগুলো রাখা হয় উপরের সারিতে। এভাবে পাঁচ-ছয় দিন ধরে চুল্লিতে পোড়ানো হয়। এরপর ইটগুলো বের করে রোদে শুকানো হয়। এ পর্যায়ে ইটগুলোকে আবার ভাগ করা হয়। ভালো ইটগুলো লালচে রঙের; একে বলা হয় ১ নম্বর ইট। এ ছাড়া থাকে পিকেট বা ঢালাই ইট। এগুলো আলাদা আলাদাভাবে সারিবদ্ধ করে সাজানো হয়, যা পরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। তবে ইটের ডাইস ভালো হলে ইটের সাইজ ও আকৃতি সুন্দর হয়। ইট মূলত সাজানো হয় স্তর স্তরে। এভাবে ইট স্তর করে সাজিয়ে রাখলে সহজেই ইটের ধরন বোঝা যায়। কোনটি ১ নম্বর আর কোনটি পিকেট ইট। তবে কিছু ইটের রং হয় কালো ও দানাদার। এগুলোকে আলাদা করা হয়, কেননা এসব ইটে মাটির সঙ্গে কাঁচামাল ভালোভাবে মেশানো হলেও এটি ভালো ইট নয়, বরং পিকেটের কাজে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এভাবেই মূলত ভাটায় তৈরি হয় ইট।
ইট তৈরির মাটি
ইট তৈরি করা হয় মূলত দো-আঁশ মাটি দিয়ে। এই মাটিতে ইট খুব ভালো হয়। আর এই মাটি সাধারণ গ্রামাঞ্চলে বা ছোট শহরে বেশি পাওয়া যায়। তবে সিরামিক ইট তৈরিতে লাল মাটি ব্যবহার করা হয়।
ইটের দরদাম
ইটের এ মৌসুমে নতুন একটি ইটের দাম ৬-৭ টাকা, যা ১ নম্বর ইট বলে পরিচিত। তবে পিকেট ইট বিক্রি হয় ৫ টাকা দরে।

বাড়ি তৈরির আগে
১ নম্বর ইট বাড়ির মূল স্তম্ভ। আর বাড়ি তৈরিতে উন্নতমানের ইট ব্যবহার করা উচিত। কারণ, ইট এমন নির্মাণসামগ্রী, যা বাড়িতে লাগানোর পর আর বদলানোর সুযোগ নেই। তাই নিশ্চয় আপনি চান আপনার ভবিষ্যৎ তথা মাথাগোঁজার ঠাঁয়টি হোক সুরক্ষিত ও নিরাপদ। আর তাই এমন বাড়ি করতে চাই খাঁটি মাটির খাঁটি মানের ইট। যদি টাকা একটু বেশি লাগে তবুও বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করুন ভালো মানের ইট। আর তাই যদি সম্ভব হয় কষ্ট করে হলেও ইট ভাটায় গিয়ে ইট যাচাই করে ভালো মানের ইট কিনুন। এতে যেমন নিশ্চিত হবে আপনার ভবিষ্যৎ তেমনি আপনার বাড়িটিও থাকবে নিরাপদ।
মো. ওয়ালিউর রহমান (অভি)
[email protected]
কৃতজ্ঞতায় : আল-আমিন ইটভাটা, আমিনবাজার
প্রকাশকাল: বন্ধন ৪৬ তম সংখ্যা, ফেবু্রুয়ারি ২০১৪