নান্দনিকতায় ঢাকা আর্ট সেন্টারের “অজ” রেস্টুরেন্ট

আধুনিক ও নাগরিক এ জীবনে আধুনিক স্থাপত্যশিল্প ও স্থাপত্যকলা  মানে দামী পাথর, গ্লাস ও স্টিলের কাজ করবার। তখন ঢাকা ঢাকা আর্ট সেন্টারের ক্যাফে “অজ”আপনাকে বলবে এ ধারনা ভূল। প্রকুতির মাঝে পাওয়া এবং প্রকৃতির সহজ , সাধারন উপকরন দিয়ে যে কোন স্থাপনার অন্দর বাহির রাঙ্গিয়ে তোলা যায় তার সবচেয়ে সহজ উদাহরন ঢাকা আর্ট সেন্টারের ক্যাফে“অজ” বর্তমান সময়ে নিজেকে কোন জায়গায় খাপ খাওয়ানোটা অনেক দুঃসাধ্য। আমাদের উপস্থিতি, আমার বিচরন কোথায় হবে অবাধ ও সহজে গ্রহনযোগ্য এ ভাবনায়  আমরা প্রাই নিজেদের অযাচিত ও তুচ্ছ বলে মনে করি। কিন্তুু সেই সংকট দূর করতে ধানমন্ডিতেই তৈরী হয়েছে ঢাকা আর্ট সেন্টারের “অজ”। এই ক্যাফেটি যে কোন  আর্ট সেন্টারের পাশে বা ভেতরে অবস্থিত  তা ক্যাফেটির প্রবেশ থেকে শুরু করে পুরো সব  আয়োজনেই লক্ষ করা যাবে। জীবনকে সহজ ও সৌন্দর্য্যে ফুটিয়ে তোলার এ কাজটি  করেছেন ক্রিয়েটিভ পরিচালক খালিদ মাহমুদও স্থপতি নাহাস খলিল। এ দুজন মানুষের সৃষ্টিশীলতায় ও উদ্ভাবনী পরিবেশ ক্ষমতায় এ ক্যাফেতে তৈরী হয়েছে সহজ, সাধারন ও মায়াময় এক পরিবেশ। এখানে এলে আপনার নিজেকে কখনোই অনাহুত ভাবতে ইচ্ছে হবেনা, বরং মনে হবে আপনি এখানকার একজন, ঢাকা আর্ট  সেন্টারের প্রবেশমুখ থেকে প্রধান ভবনের চারপাশের পড়ে থাকা খালি অংশটার সেই আদি চেহারা, মাটির পাত্রে পানিতে ভেজানা সতেজ ফল, দুপাশের সবুজ গাছের সারি, লুকানো স্পট  লাইটের আলো। ঢালাই রাস্তার মাঝে মাথা উচুঁ করে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থাকা ও বাংলা কবিতার বিভিন্ন বিখ্যাত রাশিমালা আপনাকে অপনাকে স্বাগত জানতে  উদগ্রীব হয়ে রয়েছে। মনে হযে ওরা অপেক্ষায় রয়েছে আপনি কখন আসবেন, আপনার আগমনেই সফল হয়ে উঠবে এদের সুন্দর এদের সুন্দর নীরবতা। অপনার আগমনেই হয়তো এরা হয়ে উঠবে চঞ্চল। কবিতামালার পাশ ঘেঁষেই রয়েছে প্রদীপের উজ্জল মঙ্গল আলো। এই পথে মঙ্গল আলোকে দুপাশে রেখে আপনাকে সিন্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোথায় যাবেন। লোহার পাতের সিঁড়ি ভেঙ্গে মাটির দেয়াল ঘেঁষা রিল্যাাক্স ডাইনিংয়ে নাকি শহুরে সুড়ঙ্গ পাড়ি দিয়ে ফ্ল্যাট ক্যাজুয়ালে। 

পুরোনো জাহাজের কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে রেলস্টেশনের ওয়েটিং জোন, সহজ খাবার জায়গা। এখানে শেষ নয়। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পাবেন, আড্ডাবাজ তরুনদের জন্য রয়েছে খোলা একটি নির্দিষ্ট স্থান। খোলা আকাশের নিচে জায়গাটি তরুনদের পছন্দের জন্যই তৈরী  করা। যেন ইচ্ছে করলেই এখান থেকে আকাশ ছোঁয়া যাবে। এখান থেকে উপভোগ  করা যাবে আকাশের নীল আভা, রাতের পূর্ণিমা, খোলা এ জায়গাটির চারপাশে রয়েছে কয়েকটি  বড়  গাছ। এ বড় গাছগুলোর শাখা-প্রশাখা এসে তৈরী করেছে ঝাড়বাতিসদৃশ পরিবেশ। বলা যায প্রাকৃতিক ঝাড়বাতি। দেয়ালের পাশ ঘেঁষে নারিকেল গাছ, আর চর্তুদিকে ঘোরানো কচি সবুজ বাঁশ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, বসন্ত-বাতাস কখনোবা পূর্ণিমার আলো  উঁকি  দেয় এখানে। সহজ ভাষায় সংক্ষেপে বলতে গেলে এ হচ্ছে ঢাকা আর্ট সেন্টারের ক্যাফে “অজ” যেখানে রয়েছে সবার আন্তরিকতাপূর্ণ অংশগ্রহনের সুযোগ।

শুধু আর্ট সেন্টার সংলগ্ন ক্যাফে বলেই নয় মানুষ ও শিল্পের সঙ্গে সুনিবিড় সম্পর্ক তৈরী একটা মঞ্চ হিসেবে কাজ করেছে এখানকার পুরো পরিবেশ। এই ক্যাফের নকশা ভাবনায় ব্যবহৃত হয়েছে বস্তুতন্ত্র,স্থাপত্য পরিবেশ ও দর্শনের মিশেল। পুরনো জিনিসকে প্রক্রিয়াজাত করণের ভেতর দিয়ে সহজ  ও সাধারন ব্যবহারের মাধ্যমে ভিন্নরূপে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সাথে কাজ করেছে জেন জীবনাদর্শের প্রভাব । এ কাজের ভাবনার প্রেরনার উৎস ছিল আমেরিকার আরিজোনা রাজ্যেও  স্কুল অব অল্টারনেটিভ। এছাড়া এ ধরনের নাগরিক জীবনে ভিন্ন এ্র  প্রাকৃতিক ও মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে ভূটানের প্রাচীন রাজধানী ৪৮০ বছরের পুরানো বৌদ্ধমন্দির পুনাখাপং।

বহুদিনের লালিত স্বপ্ন, আকাঙ্খার সঙ্গে সংযোজন, বহু বিশ্লেষন আর উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে দিনে দিনে  তৈরী হয়েছে ঢাকা আর্ট সেন্টারের ক্যাফে“অজ” আর ভিন্নমাত্রার উপস্থাপনা অজ’র   পরিমন্ডলে এনেছে ক্যাবিক ও শৈল্পিক ভাব। ক্যাফে “অজ”র  ঐশ্বর্যের মূলে রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র, টেকসই ও দেশজ   বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই ক্যাফে “অজ’  কে অন্যান্য কাফে খেকে করেছে নান্দনিক ও মায়াময় শৈল্পিক। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হল:

খাবার তৈরী ও পরিবেশনে রয়েছে উন্মুক্ততা, যা পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে করেছে সুনিশ্চিত এবং বিশ্বস্ত।

আশ-পাশের জড় পরিবেশকে সর্বোচ্চ সতেজ ও প্রানোজ্জ্বল রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে মানানসই ও পরিকল্পিত সবুজ।

এখানকার দেয়ালগুলোতে ব্যবহৃত খসখসে টেকশ্চার যা একদিকে দেখতে প্রশান্তিময় আবার অন্যদিকে প্রানের সঙ্গে মানুষের সৃষ্টি করেছে সুনিবিড় সম্পর্ক।

পুরনো কেরোসিন কাঠের মাধ্যমে তৈরী  করা হয়েছে কাঠের টেকশ্চার, যা দেখতে সত্যেই প্রশান্তিময় ও নান্দনিক।

পুরো ছাদজুড়ে পুরনো দিনের কাঠের ঘরবাড়ি বা ল্যুভর তৈরী করা হয়েছে যাতে সহজেই প্রাকৃতিক আলো বাতাস পাওয়া যায়।

কৃত্রিম রং বা আসবাব ব্যবহারের কোন বালাই নেই। কিন্তুু নিজস্বতা প্রকাশে খাবার পরিবেশনে টেবিল ও অভ্যন্তরীন উপকরনগুলো বিশেষভাবে  তৈরী। লোহার তাওয়ার উপর ঢালাই করা “অজ” লেখা সৃষ্টি করেছে নিজস্ব ইমেজ। যা দেয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে।

রিল্যাক্স ডাইনিংয়ের ফলস্ সিলিং তৈরীতে  ব্যবহৃত হয়েছে শতরঞ্জি ফলে রংহীন পরিবেশে উজ্জ্বল রঙের  সমন্বয় ঘটেছে। পাশেই ডাকের  মধ্যে রাখা আছে নানা ধরনের শোপিস। যা নিজস্ব লিভিং রুমের আবহ তৈরী করেছে।

রিল্যাক্স ডাইনিংয়ের প্রবেশমুখের মাটির দেয়ালে ঝুলে আছে গাঢ় সবুজ মাল্টিপ্ল্যাস্ট।

সন্ধ্যার পর মশা নিরোধনের জন্য এয়ার ফ্রেশনার বা স্পের বদলে ব্যবহার হয়ে থাকে ধুপ ও ধুনো, যা সন্ধ্যার পর মায়াময় সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। এ সময়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে পরে পুরো ক্যাফে জুড়ে আর এ সুগন্ধে প্রশান্তি পায় আগত ভোক্তারা।

সেক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে বাদ দেওয়া মার্বেল টুকরোর কম্পোজিশন।

রিল্যাক্স ডাইনিংয়ের পাশে রয়েছে সবচেয়ে নান্দনিক ও আকর্ষনীয়  প্রাইভেট জোন প্যাটিও। বাঁকা ইটের দেয়ালের গাঁথুনী,  লুভ্যর ও দেয়াল বেয়ে লতানো সবুজ,  শীতের মিষ্টি রো বা রিমঝিম বৃষ্টি সৃষ্টি করেছে এক নান্দনিক  পরিবেশ।       

 ঠিকানা: বাড়ি নং # ৬০, রোড নং # ৭/এ, ধানমন্ডি ঢাকা-১২০৫। ০১৬১৩১৬১৬১৬।

-জিয়াউর রহমান চৌধুরী

প্রকাশকাল: বন্ধন ২২ তম সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top