টাইলসের জন্মকথা
টাইলস তৈরির গল্প

প্রতিটি ভবন নির্মাণে অধুনা টাইলসের ব্যবহার লক্ষণীয়। টাইলসের ব্যবহার নির্মাণের সৌন্দর্য্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। টাইলসের উৎপত্তি মিসরীয়  ব্যাবিলন ও অ্যাসিরিয়ান জনগোষ্ঠীর সময় থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালে মিসরে নির্মিত হারো ডোসারের পিরামিডে রঙিন চকচকে টাইলস ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে ইউরোপ ও আমেরিকায় টাইলস তৈরি করা হয় এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে শিল্পায়নের প্রয়োজনে প্রচুর পরিমাণে টাইলস উৎপাদন করা হয়। ১৯১০ সালে টানেল চুল্লির আবিষ্কারে টাইলসের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা হয়।

কাঁচামাল

টাইলস নির্মাণের মূল কাঁচামাল হল মাটি, তবে টাইলসের আকৃতি ধরে রাখার জন্য কিছু রাসায়নিক অ্যাডেটিভের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ফ্লোর ও ওয়াল টাইলসের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত কাঁচামাল হচ্ছে-

i) কাদামাটি (Ball clays)

ii)  বালি sands)

iii) খনিজ সমৃদ্ধ বালি (Feldspathic sand)

iv) কেলাসিত খনিজ সিলবিশেষ (feldspars)

এছাড়াও টাইলসে সাদাভাব ফুটিয়ে তুলতে চিনামাটি ব্যবহার করা হয়। টাইলসকে রঙিন করতে সাধারণত নিম্নের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়-

i) অক্সিজেনসমৃদ্ধ রঞ্জক পদার্থ (Oxide pigments) টাইলসের মিশ্রণে ব্যবহার করা হয়।

ii) টাইলসের পৃষ্ঠদেশে রঙিন পলিমারের আবরণ ব্যবহার করা হয়।

iii) রঙিন সিমেন্টের অর্ধতরল মিশ্রণ (Slurry) ব্যবহার করা হয়।

iv) রঙিন গানিউলস ব্যবহার করেও টাইলসকে রাঙিয়ে তোলা যায়।

নির্মাণ

টাইলস নির্মাণের সাধারণ প্রক্রিয়ায় কিছু ধাপ রয়েছে যথা-

i) কাঁচামাল প্রস্তুত

ii) আকৃতি গঠন

iii) বাষ্পীকরণ

iv) গেøজিং

v) জুড়ানো

vi) পৃথকীকরণ

vii) মোড়ক বাঁধাই

i) কাঁচামাল প্রস্তুত

কাঁচামাল মূলত দুই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়-

ক) শুকনো পদ্ধতি

খ) ভেজা পদ্ধতি

ক) শুকনো পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঁচামালকে হ্যামার বা পেন্ডুলাম মিলের মাধ্যমে গুঁড়ো করা হয়। তবে পার্টিকেল সাইজের ওপর নির্ভর করে অন্য মিলও ব্যবহার করা হয়। অত:পর চালনির মাধ্যমে সঠিক আকারের পার্টিকেল সমন্বয় করা হয়।

খ) ভেজা পদ্ধতি: ভেজা পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট মাটি, বালি ও খনিজ পদার্থকে মাটির সাথে একটি বড় সিলিন্ডারকৃতির মিলে মিশানো হয়। এখানে উৎপন্ন ঘন মিশ্রণকে স্লিপ (silp) বলা হয়। এই মিশ্রণকে চালনির মধ্যদিয়ে এবং চুম্বকের উপর চালনা করানো হয়, ফলে বড় আকৃতির অণু ও চৌম্বকীয় পদার্থ থাকলে তা দূর হয়। এরপর ফিল্টার প্রেসিং এবং স্প্রে ড্রায়িংয়ের মাধ্যমে মিশ্রণটিকে শুকনো করা হয়।

ii) আকৃতি গঠন

নির্দিষ্ট আকৃতির ছাঁচের মধ্যে শুকনো কাঁচামালগুলো দিয়ে যান্ত্রিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত ৩৫০০-৭২০০ টন চাপ প্রয়োগ করা হয়। ফলে কাঁচামাল টাইলসের আকৃতি পায়। এরপর অধিক চাপ প্রয়োগে বিশেষ আকার দেয়ার পদ্ধতি ব্যবহার করে অনিয়মিত আকারের টাইলস তৈরি করা হয়। অধিক সরু টাইলস নির্মাণেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

iii) শুকানো

টাইলসের আকৃতি গঠনের পর শুকানোর জন্য কয়েকদিন ধরে শুকাতে হবে। পানি বাষ্পীকরণের হারের কারণে যেন টাইলসে কোনো ধরনের ফাঁটল না সৃষ্টি হয়। অবিশ্রাম অথবা সুড়ঙ্গ চুিল্লর ব্যবহার করে টাইলস শুকানো হয়। সাধারণত চুল্লিতে তেল, গ্যাস, ইনফ্রারেড বাতি অথবা মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা হয়। পাতলা টাইলসের জন্য ইনফ্রারেড বাতি এবং পুরু টাইলসের জন্য মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার অধিক উপযোগী।

iv) গেøজিং

গেøজিংয়ের মূল উপাদান হলো সিলিকন এছাড়াও অন্যান্য যৌগ থাকে। টাইলসের মধ্যে গেøজিংয়ের কাঁচামালও নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশ্রিত করে দেয়া হয়। অত:পর ঘন তরল মিশ্রণ উৎপন্ন করা হয়। টাইলসে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে গেøজ প্রয়োগ করা হয় যথা- স্প্রে করে, টাইলস ডুবিয়ে, স্কিন প্রিন্টিং করে ওয়াটারফল তৈরি করে।

অনেক সময় টাইলসের উপর ব্যবহৃত তরল গেøজের উপর পুনরায় শুকনো গেøজ পদার্থ ছিটিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে যখন টাইলস পুরনো হয় তখন এই শুকনো পদার্থগুলো গলে আরেকটি আবরণ তৈরি করে।

v) পোড়ানো

অত:পর টাইলসে অধিক তাপমাত্রায় পোড়াতে হয়। এই পদ্ধতিটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ টাইলসের যান্ত্রিক শক্তি, আকৃতিগত দৃঢ়তা, রাসায়নিক প্রতিরোধ ক্ষমতা, অগ্নি প্রতিরোধক্ষমতা নির্ভর করে এই ধাপের ওপর।

সাধারণত টানেল চুল্লিতে একটি বেøটের উপর দিয়ে টাইলসগুলো পরিচালনা করা হয় এবং চুল্লির দেয়াল থেকে গরম গ্যাস অথবা বাষ্প দিয়ে টাইলসকে পোড়ানো হয়। রন্ধযুক্ত ওয়াল টাইলসের ক্ষেত্রে ১০০০ সে: থেকে ১০২০ সে: তাপমাত্রায় ৪০ মিনিট রাখা হয়।

পরীক্ষাকরণ (Inspection) ও মোড়ক বাঁধাই

টাইলস তৈরির পর মোড়ক বাঁধাই করার আগে পরিদর্শন করে দেয়া হয়। সাধারণত ঊঘ অথবা অঝঞগ এর স্ট্যান্ডার্ড টেস্টের মাধ্যমে টাইলসের মাপ পরিক্ষা করা হয়। অবশেষে প্যাকেটিং করে টাইলস বাজারজাত করা হয়।

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৬ তম সংখ্যা, জুন ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top