টাইটেনিয়াম নাইট্রেড কঠিন সিরামিক উপাদান। বর্তমান বিশ্বে স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামে মেটাল নাইট্রেড ফিল্ম কোটিং ব্যবহৃত হচ্ছে। কেননা মেটালের ওপর হরেক রঙের প্রলেপকৃত এ উপকরণ এখন চালু রয়েছে শিল্প-কারখানায়ও। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। শক্ত নিরাপত্তাজনিত প্রলেপে কিংবা সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে অর্থাৎ চারদিকে ছড়িয়ে পড়া রোধক স্থানে এবং স্বচ্ছ আয়না তৈরিতে এর রয়েছে বহুল প্রচলন।
বিগত বছরে বৈজ্ঞানিক কার্যকরণে ক্রমেই বাড়ছে এর ব্যবহার। কেননা এর কাঠিন্য, স্থিতিস্থাপকতা, তাপীয় প্রসারণ ও স্থানান্তর মাত্রা, চৌম্বকীয় আবেশ একে বিশেষত্ব দান করেছে। বিশেষ করে ন্যানোইলেকট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং ইচিং প্রসেস অব ডাই-ইলেকট্রিকসে। তা ছাড়া মেটাল অক্সাইড-সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে রয়েছে এর সমান প্রয়োজনীয়তা। এ ছাড়া অন্যান্য গুণাগুণের মধ্যে শোভাবর্ধক প্রলেপক হিসেবে এর ব্যবহার বেশি। এটির বিশেষ সুবিধা হচ্ছে পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব। আর বাড়তি সুবিধা হলো বড় আকৃতির বস্তুতে এক স্থানে ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট ব্যবহার করে সিলিন্ড্রিকেল রি-অ্যাকটিভ ম্যাগনেট্রন স্পাটারিং পদ্ধতিতে টাইটেনিয়াম নাইট্রেডের প্রলেপ দেওয়া সম্ভব। এটি আবার আংশিক চাপ, তাপমাত্রা, আর্গন, ভোল্টেজ, নাইট্রোজেন গ্যাসের অনুপাত ও গ্যাসের চাপের ওপর নির্ভরশীল। তবে দরকারি বিষয়গুলোর মধ্যে ভৌত গুণাগুণসম্পন্ন কোটিং বিশেষভাবে নির্ভর করে নাইট্রোজেনের আংশিক চাপের ওপর। এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ রাখা হয় ৫৫০-৬০০ ভোল্টের মধ্যে। আর্গন নাইট্রোজেন গ্যাসের আংশিক চাপ খুব কম হলে নীল রঙের ফিল্ম তৈরি হয়। রঙের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, বাড়ে নাইট্রোজেন গ্যাসের চাপ। গাঢ় উজ্জ্বল স্বর্ণের মতো হলুদ রঙের ফিল্ম কোটিং বেল মেটালের ওপর দেখা যায় যদি নাইট্রোজেন এবং আর্গন গ্যাসের চাপ থাকে ১ : ১। এবং সম্পূর্ণ গ্যাসের চাপ হয় 0.002 Torr । (1 Toor = বায়ুমণ্ডলের চাপ ১-৭৬০ মি.মি.)। নাইট্রোজেন গ্যাসের আংশিক চাপের জন্য সোনালি রঙের ফিল্ম বা আবরণী ফ্যাকাসে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

কপার ও টিনের আলোকে বেল মেটাল বলা হয়, যা বিশেষ ধরনের শোভাবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রঙের স্বচ্ছতা নির্ভর করে বাহ্যিক দিক থেকে কেমন দেখানোর পাশাপাশি এর নিজস্ব গুণাগুণের ওপর। যেমন- রঙের সূক্ষ তারতম্য নির্ভরশীল আলোর ওপর। রংকে লাল, নীল, সবুজ ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি রঙের তারতম্যের মাত্রা বিবেচনা করা হয় রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে বিপরীতে। আলোর স্বচ্ছতা নির্ভর করে আলোর প্রখরতার ওপর, যা আনুপাতিক হারে প্রতিসরিত হয়ে চোখে এসে পড়ে। সচরাচর ধরা হয় সাদা রং বাদামি রং থেকে উজ্জ্বল আবার বাদামি রং কালো রং থেকে বেশি উজ্জ্বল এবং কালো রং হচ্ছে সবচেয়ে উজ্জ্বল। সম্পৃক্ততা (Saturation) রঙের সূক্ষ তারতম্যের মধ্যে বিশুদ্ধতার প্রমাণ দেয়, বোঝায় রঙের শক্তিমাত্রা। রঙের বর্ণ ছড়ানো নির্ভর করে রঙের সম্পৃক্ততার ওপর। যত বেশি বর্ণের সম্পৃক্ততা ঘটবে তত বেশি বাড়বে রঙের উজ্জ্বলতা। এ জন্য আলোর পৃথক্করণ যত বেশি দেখা যাবে তত বেশি মনে হবে বেল মেটালের ওপর টাইটেনিয়াম নাইট্রেডের কোটিং ভালো হয়েছে। এতে প্রধানত দুই ধরনের কাজ হয়। একটি মেটালের শোভাবর্ধনের স্থায়িত্ব বাড়ায়। অপরটি মেটালের নিরাপত্তাজনিত শক্ত কোটিং নিশ্চিত করে। মেটালের ওপর রঙের তারতম্য নির্ভর করে নাইট্রোজেন গ্যাসের আংশিক চাপ ও চুম্বক আবেশের ওপর।

টাইটেনিয়াম নাইট্রেড কোটিং প্রলেপন
বেল মেটাল ব্যবহার করা হয় যাতে টাইটেনিয়াম নাইট্রেডের প্রলেপ খুব ভালোভাবে করা যায়। অর্থাৎ আয়নার মতো চকচকে হওয়ার জন্য একটি ভেরিয়েবল স্পিড পলিসিং মেশিন স্টেপ থাকে। এর গতিবেগ ২০০০ rpm. পরবর্তী সময়ে আয়নার মতো মসৃণ মেটালকে পলিস করা হয় 0.25um ডাইমোল্ড পেস্ট দ্বারা। এরপর স্বচ্ছ মেটালটিকে আল্ট্রাসনিকেলে ধোয়া হয় প্রপেন-২ জৈব দ্রবণ দিয়ে। পরে এটি শুকানো হয়। যাকে টাইটেনিয়াম ক্যাথোডের নিচে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ৯৯.৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ টাইটেনিয়াম দ্বারা পরিষ্কার করা হয় মেটাল কোটিং। এটিকে এভাবে প্রায় ১০ মিনিট রাখা হয়। কারণ, অক্সাইড বা কোনো দূষিত পদার্থ মেটালের উপরিভাগকে নষ্ট করে দিতে না পারে। পৃষ্ঠদেশের উপরিভাগে আলট্রাভায়োলেট স্প্রেকট্রোফটোমিটার দ্বারা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয় এতে রঙের কোটিং পড়েছে কি না।

এটি সাধারণত সোনালি রঙের হওয়ায় কসমেটিক জুয়েলারির পাশাপাশি নিকেল ও ক্রোমিয়াম প্লেটেট বস্তুতে ব্যবহার করা হয়। বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও রেডিও অ্যাকটিভ কারে রয়েছে এর বহুল ব্যবহার। মেডিকেলসামগ্রী স্কারপেল, ব্লেড, ছুরি ও অর্থোপেডিক সার্জারি সামগ্রী তৈরিতে রয়েছে এর কার্যকর ব্যবহার।
পরিশেষে
টাইটেনিয়াম নাইট্রেডের ফিল্ম কোটিংয়ের স্থায়িত্ব শোভাবর্ধক উপকরণের ওপর নির্ভর করে। বেল মেটালের ওপর টাইটেনিয়াম নাইট্রেডের হালকা আবরণ বা ফিল্ম দ্বারা আবৃত করা নির্ভর করে বিভিন্ন প্লাজমা পৃথক্করণের ওপর। বিশেষ করে নাইট্রোজেন এবং আর্গন গ্যাসের আংশিক চাপের ওপর, যা সিল্ড্রিকেল ম্যাগনেট্রন স্পাটারিং পদ্ধতি দ্বারা পরীক্ষিত।

নাইট্রোজেন গ্যাসের চাপ পরিবর্তনের জন্য বেল মেটালের পৃষ্ঠের রং পরিবর্তিত হয়। যখন গ্যাসের চাপ 0.002 Torr থাকে। আর্গন ও নাইট্রোজেন গ্যাসের অনুপাত ১ : ১ থাকে তখন টাইটেনিয়াম নাইট্রেডের গাঢ় উজ্জ্বল সোনালি রং পাওয়া যায়। যখন রঙের কোটিং দিতে সময় বেশি লাগে তখন ফিল্ম কোটিং পাউডার হয়ে বেল মেটাল থেকে সরে যায়। পরে যে টার্গেটে পৌঁছার কথা তা আর হয়ে ওঠে না। এই পদ্ধতির পরীক্ষায় দেখা গেছে, যত বেশি টাইটেনিয়াম নাইট্রেডের প্রলেপ বেল মেটালের ওপর পড়বে, তত বেশি তা পুরুত্ব পাবে।
sehematic diagram of the enperimental set up.
E = electric field, B = magnetic field, ER = end reflectars.
LP = Tangmuir parle. Ep = Emissire prole, MM = meghetic field call, Ps-Dc = discharge power supply, R = Resestance.
প্রকৌশলী মহিউদ্দীন আহমেদ
সাবেক অতি. প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন
প্রকাশকাল: বন্ধন ৪৫ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০১৪