ডেকোরেটিভ গ্লাস আর্ট

নতুন ফ্ল্যাটে উঠলেন দম্পতি মৌ-আরমান। ফ্ল্যাটে ওঠার পর পরই আত্মীয়স্বজন ও ক’জন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা। সাজানো নতুন ফ্ল্যাট দেখে মুগ্ধ সবাই। ফ্ল্যাটের নানা অংশ জুড়ে কাচের অপরূপ কারুকাজ। একটা সময় কাচের ব্যবহার বলতে ছিল দরজা, জানালা আর টেবিলের ওপরের অংশে। কিন্তু বর্তমানে গৃহসজ্জার  গুরুত্বপৃর্ণ অনুষঙ্গ রঙিন কাচ। কাচের ওপর রঙ-তুলির আঁচড় দিয়ে কিংবা খোদাই করে সাথে ধাতব পাত ও স্টোন বসিয়ে সাজানো হচ্ছে মেঝে, সিঁড়ি, ফলস ছাদ, পার্টিশন, এমনকি রান্নাঘরের কেবিনেট পর্যন্ত। শুধু জানা দরকার কোথায় কিভাবে সাজাবেন এই ডেকোরেটিভ গ্লাস। শুধু নতুন ফ্ল্যাটই নয়, পুরনো ফ্ল্যাটও সাজাতে পারেন ডেকোরেটিভ গ্লাস দিয়ে। বাড়ি তৈরির উপকরণ হিসেবে অন্যান্য সব কিছুর পাশাপাশি আজকাল কাচের, বিশেষ করে চটকদার কাচের বেশ কদর। হোক সেটা স্বচ্ছ কাচ অথবা আয়না। 

ডেকোরেটিভ গ্লাস বা নকশাদার কাচ হলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাচের গায়ে নকশা বা ডিজাইন করা। এই নকশা মূলত করা হয় কখনো শুধু রঙ দিয়ে, কখনো কাচ কেটে কেটে, কখনো বা একটি কাচের ওপর নানা রঙের ছোট কাচের টুকরো বসিয়ে। কাচের ভেতর তামার পাতলা পাত বসিয়েও নকশা করা হয়। এ ছাড়াও ব্যবহার করা যেতে পারে বিভিন্ন রঙের রঙিন স্টোন, যা কিনা সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ।

গ্লাস ডেকোরেশন করা বা আর্ট করা খুব কঠিন কিছু নয়। আপনি নিজে খুব সহজেই আপনার পছন্দমতো ডিজাইন করে রাঙিয়ে তুলতে পারেন যে কোনো কাচের পাত্র বা আয়না। এর জন্য দরকার শুধু গ্লাস আর্ট সেট। এতে লাগবে একটি লাইনার এবং রঙ। প্রথমে একটি ডিজাইন পছন্দ করতে হবে। এরপর লাইনার দিয়ে আউটলাইনগুলো এঁকে দিতে হবে। এরপর আপনার পছন্দমতো রঙ দিয়ে ডিজাইনের মাঝে মাঝে তুলি দিয়ে পূরণ করতে হবে ।

এভাবে আপনি ছোট ছোট গ্লাস পিস ডেকোরেশন করে তৈরি করে নিন শোপিস। কিন্তু বড় কোনো গ্লাস যেমনÑ জানালার কাচ কিংবা দরজায় গ্লাস আর্ট করতে অভিজ্ঞ বা প্রোফেশনালদের সাহায্য নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা গ্লাস আর্ট করে থাকে। ছোট-বড় সব ধরনের  গ্লাসই তারা ডেকোরেশন করে থাকে।

এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দমতো ডিজাইন জানিয়ে অর্ডার দিতে পারেন। তারা মেশিনের মাধ্যমে গ্লাসে আর্ট করে থাকে। তাদের কাছ থেকে খুব দ্রুতই আপনি এ সুবিধা পেতে পারেন। পেইন্টিং, ল্যাম্প, শেড, গ্লাস পার্টিশন এগুলো সহজেই তৈরি করে আপনার বাড়িটি বর্ণিল করে তুলতে পারেন।

ইন্টেরিয়র হাউস অন্দরসজ্জার ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রুমানা আফজাল খান বলেন, শুধু বাসা-বাড়িতে নয় অফিস, রেস্টুরেন্ট, রিটেইল আউটলেট, সুপার শপেও ব্যবহার করতে পারেন ডেকোরেটিভ আর্ট গ্লাস। আরো বেশি নান্দনিকতা বাড়াতে শাওয়ার এনক্লোজার, অ্যাকোরিয়াম ও টিভি ইউনিটেও এটি ব্যবহার করা যায়।

সিলিকা আর্ট গ্লাসের স্বত্বাধিকারী মোঃ ইমরান হাসান বলেন, প্রতিনিয়তই কাচের নিত্যনতুন ডিজাইন আসছে। এর আছে নানা ধরনের ব্যবহারও। পার্টিশন ও দরজা-জানালা থেকে শুরু করে যে কোনো আসবাব, তাক, এমনকি দেয়ালের পেইন্টিং হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ব্যবহারের ধরন ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কারুকাজের পদ্ধতিও বদলে যায়। কিছু কাচ এত পুরু যে এগুলোর ওপর দিয়ে হাঁটাও যায়। মেঝে এবং সিঁড়ি তৈরি হয় এসব কাচ দিয়ে। ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী কাচের পুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়। দেয়াল বা পার্টিশন এবং দরজা-জানালায় সাধারণত ছয় থেকে আট মিলিমিটার পুরু কাচ ব্যবহার করা হয়। পাঁচ ছয় মিলিমিটার পুরু কাচ ব্যবহার হয় যে কোনো আয়নার জন্য। তবে চার মিলিমিটার পুরু কাচই যথেষ্ট। মেঝে ও সিঁড়িতে ১০-১১ মিলিমিটার পুরু কাচ ব্যবহার করা হয়।

নকশার রকমফের 

কাচের জনপ্রিয় নকশাগুলো হলো এচিং, এনগ্রেভিং, পেইন্টিং ক্রিস্টাল, এচিং টেক্রার, ফ্রস্টেড, ভি গ্রুপিং শিরা কাচিং, ফিউশন ইত্যাদি। এসব ডিজাইন আবার কালারফুল ও কালার ছাড়া পাওয়া যায়। আবার কেউ চাইলে কাচের ওপর নিজের বা যে কোনো কিছুর ছবিও ফুটিয়ে তুলতে পারেন। একে বলে ফিগার ডিজাইন।

বাহারি ব্যবহার 

রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরীন চৌধুরী বলেন, ইন্টেরিয়রে সর্বত্রই ব্যবহার করা হয় এসব ডেকোরেটিভ গ্লাস। এর কিছু ব্যবহার হলো

যে কোনো ধরনের পার্টিশনের ক্ষেত্রে দেয়ালের পরিবর্তে কাঠ, স্টিল বা থাই যে কোনো ফ্রেমেই ব্যবহার করা যায় এ গ্লাস আর্ট। 

ছাদের বিমের ওপর ডেকোরেটিভ গ্লাস বসিয়ে করে তুলুন আকর্ষণীয়।

কলাম যদি ঘরের মাঝে বা এক পাশে হয়, সেখানেও ডেকো গ্লাস দিয়ে সুন্দর করে সাজানো যেতে পারে। 

বসার ঘরের আর্চে ব্যবহৃত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাঠ দিয়ে ক্লাডিং করে মাঝে মাঝে নকশাদার কাচ দিয়ে ডিজাইন করলে ভালো লাগবে। 

যে কোনো আয়নার বর্ডার করে ডেকোরেটিভ গ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে। 

খাবার টেবিল বা সেন্টার টেবিলের টপ হিসেবে ডেকো গ্লাস ব্যবহার করা যায়। আবার  মাটির পটারির ওপর এক টুকরো নকশাদার কাচ বসিয়ে সুন্দর একটা কর্নার টেবিল হতে পারে। 

বসার ঘরের মেঝেতে টাইলসের মাঝে মাঝে কয়েকটি নকশাদার গ্লাস বসিয়ে তার নিচে লাইট এবং সিলিংয়ের ক্ষেত্রে লাইটের ব্যবহারে বসার ঘরের আভিজাত্য ফুটে উঠবে। 

ফলস সিলিংয়ের মাঝখানে বা কর্নারে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

যে কোনো দরজা বা জানালায় ব্যবহৃত হতে পারে। 

বসার ঘরের শোকেস কিংবা ঘরের কোণে শেলফের তাক হতে পারে ডেকোরেটিভ গ্লাস দিয়ে। 

আলমারির পাল্লা বা রান্নাঘরের কেবিনেটের পাল্লায় ব্যবহার করা যেতে পারে। 

মাছের অ্যাকুয়ারিয়ামেও এ ধরনের কাচ ব্যবহার করলে ভালো লাগবে। 

যে কোনো একটি দেয়ালকে সাজাতে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির নকশাদার কাচ ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে প্যাসেজ এবং সিঁড়ির দেয়ালে।

খরচ কেমন 

বাইরের দেশের কাচের দাম তুলানমূলক বেশি। আবার প্রতিষ্ঠানভেদে ডিজাইনের দামও আলাদা হয়। বর্গফুট হিসেবে এসব নকশাদার কাচের দাম ধরা হয়। সাধারণ এচিং প্রতি বর্গফুট ৩৫০-৫০০ টাকা, ক্রিস্টাল এচিং ১০৫০-১২৫০, এনগ্রেভিং ৭০০-১০০০, টেক্সার ৭০০-৯৫০, ফ্রস্টেড ৫০০-৮০০, পেইন্টিং ৬০০-৮৫০, ফিউশন ৫০০-৭৫০, ভি গ্রুপিং ৮০০-১২৫০ এবং স্টোন ডিজাইন ১৮০০-২০০০ টাকায় পাওয়া যাবে। 

কোথায় পাবেন

ঢাকায় ধানমিন্ড, মহাখালী, পান্থপথ ও গুলশানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এসব নকশাদার কাচ বিক্রি করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সিলিকা আর্ট গ্লাস অ্যান্ড ট্রেডার্স’, ৫৭৯ পূর্ব কাজীপাড়া, বেগম রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা। ফোন : ৯০১২০৮৮, ০১৭১৩০২৭৮৬১।

ফারজানা গাজী, স্বত্বাধিকারী ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার

ফারজানা’স ব্লিস

প্রকাশকাল: বন্ধন ২২ তম সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top