নতুন বাড়ি নির্মাণে সবার পরে যে কাজটিতে হাত দেওয়া হয় তা হলো বাড়ির মেঝে ও দেয়াল। বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনে দেয়াল আর মেঝের ভূমিকা অপরিসীম। উচ্চবিত্তদের বিল্ডিং, বাণিজ্যিক অফিস, শোরুম, মসজিদের দেয়াল ও মেঝেতে গ্রানাইট পাথরের ব্যবহার এখন বহুল প্রচলিত। এ দেশে ইন্ডিয়ান, ইতালিয়ান ও চায়না গ্রানাইট পাথরের ব্যবহার বেশি লক্ষণীয়। গ্রানাইট ব্যবহার যদিও ব্যয়সাপেক্ষ তবু নিজের থাকার জায়গাটি মনোরম ও আকর্ষণীয় করে তুলতে অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধা নেই কারোরই। সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য ও চাহিদানুসারে নিজের থাকার জায়গাটি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়ে তোলে। আগে মানুষ গৃহসজ্জায় খুব একটা প্রাধান্য না দিলেও আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
গ্রানাইট ব্যবহারের ইতিকথা
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক প্রকৌশলী মো. আব্দুল হালিম বলেন, ভাস্কর্য (ইংরেজি : Sculpture) একধরনের শিল্পকলাবিশেষ। এটি অবশ্যই ত্রিমাত্রিক। অর্থাৎ, জ্যামিতিশাস্ত্রের ঘনকের মতো ভাস্কর্যের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা আছে। ভারত, বাংলাদেশ এবং চীনের ন্যায় বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ধরনের, বহুমুখী আকৃতির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়; যার নির্মাণ উপকরণ গ্রানাইট। রেনেসাঁ এবং আধুনিক-উত্তরকালে গ্রানাইট পাথরের ভাস্কর্য ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে। ভাস্কর্য থেকে এখন গ্রানাইট পাথর শোভা পাচ্ছে গৃহের মেঝে ও দেয়ালে।

গৃহসজ্জায় গ্রানাইট পাথর
গৃহসজ্জার ক্ষেত্রে প্রথমে লক্ষ রাখা উচিত, গৃহের মেঝের দিকে। এ ক্ষেত্রে গ্রানাইট পাথরের রং বাছাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কেননা রং সৌন্দর্যবৃদ্ধির অন্যতম অনুষঙ্গ। আর তাই মেঝের সৌন্দর্য বাড়াতে আকর্ষণীয় রঙের গ্রানাইট অথবা মার্বেল পাথর ব্যবহার করা উচিত, যা গৃহের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে দারুণভাবে। হালকা রঙের গ্রানাইট পাথরের ব্যবহারে ঘরটি আকারে বড় দেখায়। তবে শোবার ঘরে নীল, হালকা হলুদ, হালকা সবুজ রঙের গ্রানাইট ব্যবহারে পাল্টে যাবে ঘরের পুরো চেহারাই।
মার্বেল, টাইলস, গ্রানাইট ছাড়া অধুনা ঘরের সৌন্দর্য রূপ নেয় অসম্পূর্ণ ও বিবর্ণতায়। অত্যন্ত নান্দনিক ডিজাইন ও মানসম্মত হওয়ার কারণে গ্রানাইট পাথরের ব্যবহার এখন লক্ষণীয়। গ্রানাইট দেখতে বেশ সুন্দর এবং এর দাম টাইলসের চেয়েও বেশি। গ্রানাইট সাধারণত স্পেন, চীন, ইতালি, মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে গ্রানাইটের মধ্যে বেশি ব্যবহৃত হয় চায়না গ্রানাইট। অধিকাংশ অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক ভবনের ফ্লোরে চায়না গ্রানাইটের ব্যবহার বেশি। এখন মধ্যবিত্তের বাড়ির দেয়ালে শোভা পায় গ্রানাইট। চায়না গ্রানাইট বাথরুম ও কিচেনেও ব্যবহার করা হয়। তুলনামূলকভাবে দাম বেশি হওয়ায় এর রয়েছে নির্দিষ্টসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ডুপ্লেক্স বাড়ি ও চায়নিজ রেস্টুরেন্টে একই সঙ্গে দেয়াল ও ফ্লোরে গ্রানাইট ব্যবহার করা হয়। ওয়াল গ্রানাইটের বর্ডার ও ভেতরের নান্দনিকতার ওপরই এর বাজারমূল্য নির্ভর করে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য ও খোদাইকৃত কাজসহ ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের চেক সেট রয়েছে, যা ড্রয়িংরুমের ফ্লোর ও ওয়ালের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। এসব চক সেটের মূল্য সাধারণত ১২,০০০-২০,০০০ টাকা পর্যন্ত। কৃত্রিমভাবে মার্বেলের সৌন্দর্যবৃদ্ধি করে গ্রানাইট তৈরি করা হয়। গ্রানাইটের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা অনেক দিন পর্যন্ত রয়ে যায়।

দামটা কেমন
গ্রানাইটের বাজারমূল্য যথাক্রমে ১,২০০-২,০০০ টাকা ইন্ডিয়ান, ১,৪০০-১,৮০০ টাকা ইতালিয়ান, চায়না ১,২০০-২,০০০ টাকা, স্পেনিস ১,৬০০-৩,২০০ টাকা, মালয়েশিয়ান ১,৪০০-১,৮০০ টাকা প্রতি বর্গফুট।
যেখানে পাবেন
রাজধানী ঢাকার হাতিরপুল, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, গ্রিনরোড, গুলশান-১, গুলশান-২, মহাখালী, উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন সিরামিকের দোকানে গ্রানাইট পাথর পাওয়া যায়।
প্রকাশকাল: বন্ধন ৪৭ তম সংখ্যা, মার্চ ২০১৪