বাংলার কালো রত্ন : নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ

প্রাচীন বাংলার দুই প্রাদেশিক রাজধানী পুন্ড্র বর্তমান বগুড়া ও বরেন্দ্র বর্তমান রাজশাহীর মধ্যবর্তী স্থানে আত্মগোপন করে আছে বাংলার কালো রত্ন নামে খ্যাত ছোট্ট একটি স্থাপত্য নিদর্শন। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থানে এলে রাস্তার উত্তর পাশে অবস্থিত মসজিদটি কোনো বাসযাত্রী বা পথচারীর চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না। কুসুম্বা গ্রামে এ মসজিদ অবস্থানের কারণে সকলের নিকট এটি কুসুম্বা মসজিদ নামে পরিচিত। আয়তনে ছোট হলেও স্থাপত্য কৌশলের উৎকর্ষের কারণে এ মসজিদটি সকল ঐতিহাসিকের কাছে প্রাক মুঘল স্থাপত্যের মধ্যমণি হিসেবে পরিচিত। মসজিদের মধ্য প্রবেশদ্বারের উপরিভাগে স্থাপিত একটি শিলালিপি ফলকের অনুবাদ অনুযায়ী উক্ত মসজিদটি সুলতান গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহর শাসন আমলে (৯৬৬ হিজরি/১৫৫৪-৫৯ খ্রিস্টাব্দ) সোলায়মান নামক এক দানবীরের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মাণ হয়।

প্রত্নতাত্তি¡ক নিদর্শন থেকে অনুমান করা হয়তো ভুল হবে না যে, মুসলিম পর্বের পূর্বে বর্তমান কুসুম্বা গ্রাম কবি সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রাম চরিতমে উল্লিখিত সামন্ত রাজা দ্বোরপ বর্ধনের রাজধানী ছিল। ১৫৫৮ সালে শেরশাহ শুরের বংশধর প্রথম গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহর রাজত্বকালে জনৈক সোলায়মান কুসুম্বা মসজিদ নির্মাণ করেন। কুসুম্বা মসজিদের পশ্চিমে ৩শ’ গজ দূরে আরও একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। কিংবদন্তি অনুসারে কুসুম্বা মসজিদ নির্মাণ করেন সবর খাঁ এবং তার স্ত্রী সোনা বিবির নামে নির্মিত হয় এই সোনা বিবির মসজিদ।

প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের স্থাপত্যশৈলী সেই ভৌগোলিক অবস্থানে প্রাপ্ত উপাদান বা উপকরণ দ্বারা সৃষ্টি হয়। বাংলা একটি ব-দ্বীপ হওয়ার কারণে সর্বত্রই কাদামাটি পাওয়া যায়, যা ইট তৈরিতে ব্যবহার হয়। তাই প্রাচীন সভ্যতা পুন্ড্র নগর হতে শুরু করে অদ্যাবধি ইট বা পোড়া মাটি, বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যের উপকরণ হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।

এ দেশে পাথর খুব দুষ্প্রাপ্য ছিল, তাই দেয়ালের গাঁথুনিতে পাথরের ব্যবহার ও পদ্ধতি বাঙালির কাছে খুব অপরিচিত। মাঝে মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে পাথর আনা হতো। ফলে পাথর দ্বারা দালান নির্মাণ ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু মূর্তি ও ভাস্কর্য তৈরিতে পাথরই ছিল প্রধান সম্বল, এ পাথর কষ্টি পাথর নামে পরিচিত। তবে সবচেয়ে মূল্যবান স্থাপত্য কর্মে কিছু কিছু পাথরের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়, যা তাদের প্রাচুর্যের বহির্প্রকাশ। যেমন মুঘলরা তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সমাধি স্থাপত্যে নানা দেশ হতে দামি পাথর আমদানি করে ব্যবহার করত। যুক্ত বাংলায় মাত্র ৬টি মসজিদ পাথর দ্বারা তৈরি হয়। তার মধ্যে একমাত্র কুসুম্বা মসজিদটি ছাদ ও দেয়ালসহ সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় (সংস্কারকৃত) টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।

এ মসজিদের দেয়ালে ব্যবহৃত কষ্টি পাথরগুলো (Black basalt) বাংলার তদানীন্তন রাজধানী গৌড়ের পার্র্শ্ববর্তী প্রদেশ বিহারে রাজমহল নামক পাহাড় হতে সংগ্রহ করে নদী পথে উক্ত স্থানে আনয়ন করা হয়েছিল। সনাতন কষ্টি পাথরের চেয়ে এখানে ব্যবহৃত পাথরগুলোর রঙ একটু গাঢ় ছিল।

বাংলায় গ্রামের বা একটি বসতি পত্তন শুরু হয় দীঘি খননের মাধ্যমে। দীঘি হতে প্রাপ্ত মাটি দিয়ে দীঘির চারপাশে তৈরি হতো উঁচু ভিটি ও ঘরবাড়ি। পুকুরের পানি মাছ চাষ ও দৈনিক গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হতো। এমনকি ধর্মীয় প্রয়োজনে এক পাড়ে বানানো হতো মন্দির বা মসজিদ। এই রীতি অনুসরণ করে কুসুম্বা গ্রামে বিশাল এক দীঘির (যার দৈর্ঘ্য ৩৮১ মিটার এবং প্রস্থ ২৭৪ মিটার) পশ্চিম তীরে মসজিদটি অক্ষত অবস্থায় এখনও দাঁড়িয়ে আছে, চারপাশের বসতবাড়ির অস্তিত্ব এখন আর নেই। দীঘির পশ্চিম পাড়ে ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে বা অক্ষে ছোট সীমানা দেয়াল দিয়ে মূল মসজিদটি ঘেরাও করে রাখা আছে। দক্ষিণ ও উত্তর দিক হতে ছোট খোলা গেট দিয়ে মসজিদের সামনের খোলা চত্বরে প্রবেশ করা যায়। এ ধরনের চত্বরকে ইসলামী স্থাপত্যে অনাচ্ছাদিত শান (SHAN) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সাধারণত আরব দেশীয় শান ছিল প্রস্তর দ্বারা আচ্ছাদিত, কিন্তু বাংলার মসজিদের সামনের চত্বর ছিল সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত; যা শুধু শুক্রবারের জুমা এবং দুই ঈদের নামাজের সময় ব্যবহৃত হয়। চারদিকের নিচু সীমানা দেয়াল একদিকে নামাজের স্থান হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অন্যদিকে পবিত্রতা সংরক্ষণের স্বার্থে প্রাণিকুলকে বাধা প্রদান করত।

প্রাক মুঘল ইসলামী যুগের প্রথা অনুকরণে এই মসজিদটি ছিল আয়তাকৃতি একটি চার দেয়াল দিয়ে ঘেরা দালান। পরিসরের দেয়ালের প্রস্থ হলো ২.২৬ মিটার। বর্তমানে মসজিদের অভ্যন্তরে পাথর দ্বারা আচ্ছাদিত। চারপাশের দেয়ালের নিচের স্তর বা পিলারের দৃশ্যমান ভিত্তি পাথর দেখে অনুমান করা যায়, আসল মেঝের লেভেল বর্তমান লেভেল হতে উঁচুতে ছিল। অভ্যন্তরীণ স্থান দুটি বে (Bay) এবং তিনটি আইল (Aisle) দ্বারা ৬টি সমান বর্গাকৃতি অংশে ভাগ করা হয়। এই পবিত্র স্থানটিতে পূর্ব দেয়ালে অবস্থিত তিনটি প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করা যায়। তিনটি প্রবেশদ্বারের মাঝে মধ্যবর্তী দ্বারটি প্রস্থ ও উচ্চতায় অপেক্ষাকৃত বড়; যা মসজিদের কেন্দ্রীয় অক্ষকে সকলের দৃষ্টিগোচর করে। প্রত্যেক প্রবেশ পথ আবার তিনটি আর্চ বা খিলান দ্বারা গঠিত। মাঝের খিলানে লাগানো ছিল কাঠের তৈরি দু’পাল্লার দরজা বা কপাট। যার উপর ও নিচের অংশ দেয়ালের সাথে লাগানো ছিল। পাল্লাগুলো Pivoted দরজা আদলে তৈরি করা ছিল। দরজার কাঠ খোলা অবস্থায় খিলানের অভ্যন্তরে লুকানো থাকত। ফলে নামাজীদের চলাচলের সময় দরজার কপাট বাধার কারণ হতো না। তবে উপরে পাথরের তৈরি রিং ও নিচের গর্ত করা পাথরের প্রমাণ ছাড়া দরজার কিছুই অবশিষ্ট নেই। উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দেয়ালে প্রত্যেকটিতে ২টি করে জানালা ছিল। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল উত্তর-দক্ষিণের মৌসুমী বাতাস চলাচলের সুযোগ করা, একই সাথে আলো প্রবেশ নিশ্চিত করা। উত্তর ও দক্ষিণে দেয়ালের জানালাগুলো একই অক্ষে যা কিবলা দেয়ালের আড়াআড়ি, নামাজের কাতার সোজা তৈরি করার ব্যাপারেও সাহায্য করে। এ জানালাগুলো ছিদ্রযুক্ত পাথরের তৈরি গ্রিল দ্বারা বন্ধ করা ছিল। আলো-বাতাস নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। এ জানালাগুলোর লিন্টেলের উপরিভাগ যা ঞুসঢ়ধহঁস নামে পরিচিত, পাথরের গাঁথুনি দ্বারা বন্ধ ছিল।

কিবলামুখী বা পশ্চিমের দেয়ালে অবস্থিত মিহরাবগুলো মসজিদের পূর্ব দেয়ালে অবস্থিত প্রবেশদ্বারের একই অক্ষপথে বিদ্যমান। অর্থাৎ প্রবেশদ্বার দ্বারা মসজিদের ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথেই সামনে সরাসরি মিহরাব বা NICHE দেখা যায়। পশ্চিমের দেয়ালে তিনটি মিহরাব ছিল, কিন্তু ইসলামী অনুসারে ইমাম থাকে একজন, অতএব ১টি মিহরাবই যথেষ্ট। তাই বহু মিহরাবের প্রচলনের প্রমাণ আরবীয় ইসলামী স্থাপত্যে পাওয়া যায় না। সুলতানী আমলে এই বহু মিহারাবের ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ঐতিহাসিকরা এ বহু মিহরাবকে বৌদ্ধ স্থাপত্যে বুদ্ধের জন্য তৈরি নিশের (NICHE) সাথে তুলনা করেছেন। বৌদ্ধমন্দিরে প্রতিটি প্রবেশদ্বারের বিপরীতেই একটি করে নিশ থাকে। এখানেও প্রতিটি প্রবেশদ্বারের বিপরীতে একটি মিহরাব। তবে মাঝের মিহরাব আয়তনে ও উচ্চতায় একটু বড়। এমনকি কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাইরে থেকে প্রাধান্য পাওয়া বা বোঝানোর জন্য শুধু এই অংশটুকুতে পুরু দেয়াল বানানো হয়। মসজিদের ভেতরে দন্ডায়মান অবস্থায় চারটি পাথরের তৈরি পিলার দেখা যায়। যা ৬টি অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ ও ছাদের ভার বহন করে। প্রতিটি পিলারের বেজ ও ক্যাপিটালের ডিজাইনে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। আর মধ্যবর্তী অংশটুকু ১২ বাহু বিশিষ্ট বহুভুজ একটি মনোলিথিক পাথর হতে তৈরি। চারটি পিলার ও দেয়ালে লুকানো আটটি পিলার, ইটের তৈরি খিলান দ্বারা একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে ছয়টি বর্গাকৃতি তৈরি করে, যা ৬টি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত।

গম্বুজগুলো চার দেয়াল তলদেশ হলো বৃত্তাকার আর খিলান দিয়ে গঠিত স্থানটি হলো বর্গাকৃতি। এই বর্গাকৃতি স্থানকে বৃত্তে রূপান্তরিত করার জন্য বাংলার স্থপতিরা এ বিশেষ ধরনের পেনডেনটিভ ব্যবহার করে। যা বাংলার স্থাপত্যে একটি নতুন সংযোজন। ইট দিয়ে হিন্দু স্থাপত্যের করবেলিং এবং মুসলিম স্থাপত্যের পদ্ধতির সংমিশ্রণ এই বাঙালি পেনডেনটিভের সূচনা হয়। পেনডেনটিভ দ্বারা গঠিত বৃত্তাকার স্থানের উপর ইট দ্বারা তৈরি হয় অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজ, যার পুরুত্বের কোনো পরিবর্তন নেই।

ছাদ হতে বৃষ্টির পানি সহজে ও দ্রুত নিষ্কাশন করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলার স্থপতিরা এক নতুন ধরনের স্থাপত্যের বিকাশ ঘটান, যা বাঙালির স্থাপত্য বলে সারা বিশ্বে সমাদৃত। বাংলার এ সৃষ্টি কুঁড়েঘরের আদলে নির্মিত হয় স্থায়ী স্থাপত্যের বক্রাকৃতি কার্নিশ। ছাদে জমাকৃত পানি বক্রাকৃতির কারণে সহজেই উত্তর ও দক্ষিণ পাশে অবস্থিত ছয়টি স্পাউট (SPOUT) দ্বারা নিষ্কাশিত হয়। মসজিদ স্থাপত্যেই নয়, বরং সারা ভারতের হিন্দু, মুঘল ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্যেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

মসজিদ স্থাপত্যে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো মিনার, মিনার উৎপত্তির প্রধান তিনটি প্রয়োজন ছিল প্রথমত উচ্চ স্থানে দাঁড়িয়ে আজান দেওয়ার জন্য, দ্বিতীয়ত অনেক দূর হতে মসজিদকে চিহ্নিত করার জন্য এবং সর্বশেষে সমাজের উপর ইসলামের আধিপত্যের বহির্প্রকাশের প্রয়োজনে।

বাংলায় মসজিদ পাড়া বা ছোট বসতির জন্য তৈরি হয়, তাই আজান সহজেই শোনা যায়। অনেক দূর হতে হেঁটে মসজিদে আসে। ঘন বনজঙ্গল ও সমতল ভূমির দেশ বলে দূর হতে মিনার দেখার সুযোগ নেই এবং এ দেশে ইসলাম প্রচার হয় শাসকদের দ্বারা নয়, বরং সূফী, দরবেশদের দ্বারা। যাদের শক্তি প্রমাণের প্রয়োজন ছিল না। উপরোক্ত ব্যবহারিক প্রয়োজন না থাকায় বাংলার মিনারকে মসজিদ স্থাপত্যের একটি উপাদান হিসাবে গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু মিনারের পরিবর্তে বাংলায় মসজিদে কর্নার টারেট (TURRET) তৈরি করা হয়। মসজিদের প্রত্যেক কর্নারে একটি করে টারেট বসানো আছে। কুসুম্বা মসজিদেও চার কোনায় চারটি অর্ধভুজ আকৃতির কর্নার টারেট লক্ষ করা যায়। যাকে অনেকগুলো ধাপে ভাগ করা হয়। এই টারেটগুলো মূল দেয়ালের সমান উঁচু। কোথাও কোথাও ছোট একটি গম্বুজ দিয়ে ঢেকে পরিপূর্ণতা আনে। কুসুম্বা মসজিদে এই ছোট ঈটচঙখঅ বা গম্বুজের অস্তিত্ব এখন আর নেই।

কুসুম্বা মসজিদে পরিলক্ষিত হয় ইসলামী স্থাপত্যের এক ব্যতিক্রমধর্মী নিদর্শন। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোনায় অবস্থিত একটি উঁচু প্লাটফর্ম, যা নিচতলা হতে একটি একধাপ উঁচু বিশিষ্ট সিঁড়ি দ্বারা সংযুক্ত। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিচতলায় নামাজ পড়তেন। সকল ঐতিহাসিকের মতে, এই উঁচু জায়গাটি মহিলাদের নামাজ পড়ার স্থান ছিল। ভারতের আহমেদাবাদের ইসলামী স্থাপত্যে এমন অনেক নিদর্শন আছে। তবে সেখানে উপরে ওঠার সিঁড়ি ছিল মসজিদের মূল নামাজের জায়গা হতে বাইরে, যে কারণে সাধারণ পুরুষ নামাজী কখনও মহিলাদের ওঠা-নামার সময় দেখতে পেত না। এমনকি সিঁড়ি ও দোতলার প্লাটফর্মটি চারদিকে পাথরের তৈরি গ্রিল দ্বারা আবৃত ছিল সকলের দৃষ্টির আড়ালে নেওয়ার জন্য। কিন্তু কুসুম্বা মসজিদের এই প্লাটফর্ম আহমেদাবাদের মতো জেনানা বা মহিলা গ্যালারি বলা যাবে না। কেননা এখানে পুরুষ নামাজীদের জন্য নির্ধারিত স্থানের মধ্য দিয়ে সিঁড়ি শুরু হয় এবং দোতলায় গ্রিল দ্বারা আচ্ছাদন করার কোনো আলামতও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এতে প্রতিপাদ্য হয় যে, এই স্থানটি হয়তো রাজা বা উচ্চ বংশীয় পুরুষ লোকদের জন্য নির্ধারিত স্থান ছিল। অবশ্য ইসলামী আদর্শবিরোধী এ ধরনের ‘শাসকদের গ্যালারি’র গুটি কয়েক প্রমাণ আছে তুর্কিতে। কিন্তু বাংলায় এই একটি মাত্র শাসক গ্যালারি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে। এই অক্ষত গ্যালারির জন্য মসজিদ স্থাপত্যে কুসুম্বা একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।

বাংলায় বাঙালির স্থাপত্য ধারা বলতে আমরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী স্থাপত্য বা ইসলামী ও হিন্দু স্থাপত্যকে বুঝি। তারই মাঝে আবার সুলতানী শাসন আমলকেই বাংলার স্বর্ণযুগ বা রেনেসাঁ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ সময়েই হয় বাংলা ভাষা প্রথম রাষ্ট্রভাষা। শিক্ষা, সাহিত্যে ও স্থাপত্যে অনেক অবদান এ সময়ে আর এভাবে তৈরি হয় বা শুরু হয় বাংলার মন্দির স্থাপত্য ধারা। আর এই কুসুম্বা মসজিদে পরিলক্ষিত হয় ইসলামিক সময়ের সকল বৈশিষ্ট্য সংবলিত উপাদান, যা ঐ সময়কে প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন রাজাদের গ্যালারি, কর্নার টারেট, বক্রাকৃতি কর্নিশ, বাঙালি পেনডেনটিভ। বহু মিহরাব, পাথর, স্তম্ভ, সমতল গম্বুজ ইত্যাদি। আর উপসংহারে বলা যায় বাংলার সুলতানী স্থাপত্য ধারার জীবন্ত সাক্ষী বা প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘কালো রত্ন’ নামক এই মসজিদটি। 

মেহেদী হাসান

ই-মেইল- [email protected]

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৮ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top