সৃষ্টি সুখের উল্লাসে

শুরুটা নাটকীয়ভাবেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ড. এমএ রশিদ হলে দুই বন্ধু রাজন ও রবিন আড্ডা দিচ্ছিলেন। কখন যে রাত গভীর হয়েছে কেউ টেরই পায়নি। হঠাৎ করেই একজনের মাথায় এলো নতুন এক আইডিয়া; যা স্থাপত্য জগতের কনসালটেন্সিতে আনবে নতুনত্বের ছোঁয়া। নিজেদের ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা, মেধা ও সৃষ্টিশীলতা দিয়ে ডিজাইন জগতে যোগ করবেন নতুন মাত্রা। অবশ্য ভাবনাটা তাদের জন্য মোটেও বিস্ময়কর বা আকাশ কুসুম কল্পনা নয়। কেননা তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

যেই ভাবা সেই কাজ। ২০০৯ সালের ৫ মে তাদের সাথে যোগ দিলেন মোঃ শরিফুজ্জামান সজল। ৩ জনের একটি টিম নিয়েই শুভ সূচনা করল কিউবইনসাইড নামক স্বপ্নের আর্কিটেক্ট ফার্মটি। ২০১০ সালে এসে যোগ দেন তাদের মেধাবী সহপাঠী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন রবিন। ৪ জনের পরিচালনা, কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতায় পরিপূর্ণতা পায় কিউবইনসাইড ডিজাইন লিমিটেড।

২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল মাত্র ২৫০ বর্গফুটের একটি ছোট্ট রুমের অফিস নিয়ে। এমনটাই জানালেন কিউবইনসাইডের চেয়ারম্যান আহমেদ রবিন। তবে অভিজ্ঞতার ঘাটতি তেমন ছিল না বললেই চলে। কারণ কিউবইনসাইড শুরুর আগে তারা প্রত্যেকে দেশের স্বনামধন্য কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ডিডব্লিউএম ফোর (DWM4), ভিসতারা (VISTAARA), সিনথেসিস (SYNTHESIS), এমটিএ (MTA) ফার্মে কাজ করে নিজেদের দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষরটা বেশ ভালোভাবেই রেখেছিলেন। আর সেই কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সৃষ্টির উল্লাস এবং সমন্বিত প্রচেষ্টাই কিউবইনসাইডকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

কম্পিউটার সার্ভিস লিঃ-এর একটি ছোট্ট কিন্তু চমৎকার কনসালটেন্সি দ্বারা হাতেখড়ি তরুণ এ ৪ উদ্যোক্তার। এর পর থেকে অনাবিল উদ্যমে ক্রমে সামনে এগিয়ে যাওয়া।

প্রায় ৪ বছর পর এসে কিউবইনসাইড কতটুকু সফল? জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জানালেন তাদের সফলতার আদ্যোপান্ত। সাভারের আমিন বাজারে স্বনামধন্য নর্দান ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ডিজাইনের কাজ করছে তারা। চট্টগ্রামের সাদ মুসা হাউজিং এবং এইচএনএস অটোমোবাইল লজের কর্পোরেট অফিসের কাজও চলমান। গাজীপুরের মাওনাতে রিদিশানিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, উত্তরার নিসর্গ প্রপারটিজ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, কুমিল্লার বিসিকে ফরিদ ফাইবার হাউজসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়াও নোয়াখালীতে ফরিদ ভ্যাকেশন হাউজ নামক একটি মনোমুগ্ধকর ভ্যাকেশন হাউজসহ আরো ৪টি কাজ করছে কিউবইনসাইড। কিউবইনসাইডের এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল প্রকল্পটি গাজীপুরের শালনাতে প্রায় সাড়ে ৩ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি ভ্যাকেশন হাউজ এবং জয়দেবপুরে ৮ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত আকর্ষণীয় ভ্যাকেশন হাউজ স্কাল্পচার হাউজ (SCULPTURE HOUSE) উল্লেখযোগ্য।

২০১২ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্যাভেলিয়ন বাংলালায়নের মেগা কনসালটেন্সির কাজটি হয়েছিল কিউবইনসাইডের তত্ত্বাবধানে। মতিঝিলের ৭২ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অগ্রণী ব্যাংক ভবন-২-এর কাজ করে ১ম স্থান অধিকার করে কিউবইনসাইড। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকমন্ডলী প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন কর্মদক্ষতা দ্বারা জয় করেছেন বিভিন্ন সম্মানসূচক পুরস্কার।

তবে তাদের অনেক সফলতার সাথে জড়িয়ে আছে কিছু সমস্যাও; যা তারা দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করছে। কিউবইনসাইডের অন্যতম উদ্যোক্তা খন্দকার রাজন জানালেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হলেও এখন পর্যন্ত এ দেশের মানুষের স্থাপত্য কিংবা স্থপতি সম্বন্ধে ধারণা একেবারেই নগণ্য। স্থপতি ও প্রকৌশলীদের মধ্যকার পার্থক্যটাই অনেকে জানে না। যে কোনো আবাসিক ভবন, অফিস, ভ্যাকেশন হাউজ, পার্ক, রেস্টুরেন্টসহ বিনোদনমূলক নানা নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণে স্থপতিদের দিয়ে যে ডিজাইন করানো হয়; এটাই বোঝেন না। অথচ একটি সামান্য দোকানও ডিজাইনাররা অসাধারণ করে তুলতে পারেন। এ ছাড়াও আমাদের দেশে ডিজাইনার বা ডেভেলপাররা বহির্বিশ্বের সব আধুনিক নির্মাণকল্প নির্মাণে অনেকটাই ব্যর্থ। কারণ আমাদের চর্চা করার তেমন কোনো যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দারুণ অভাব রয়েছে। কিন্তু এই খাতে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকলে আমরাও নিজেদের প্রমাণ করতে পারতাম।

কিউবইনসাইডের উদ্যোক্তারা জানালেন, এ খাতে যারা নতুন আসতে চান তারা সকলেই যেন যথাযথ পরিকল্পনা করে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে কাজে নামে। কারণ এ ধরনের কাজ অল্পদিনের নয়। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়াই লক্ষ্য হওয়া উচিত। সেই সাথে দরকার পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্যরে।

গ্রাহকদের উদ্দেশে কিউবইনসাইডের পরিচালকরা বলেন, অন্তত সকলে যেন একবার হলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাচাই করে এবং ভালোভাবে জেনে নেয় যে তিনি যাদের দ্বারা ডিজাইন করাবেন তারা প্রফেশনাল কিনা। আরো একটি বড় ব্যাপার, স্থাপত্য বিষয়টা মোটেও কিন্তু স্বল্পমেয়াদি বিষয় নয়। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি বিষয়, যা রূপ দেয় নান্দনিকতায়।

যোগাযোগের ঠিকানা

কিউবইনসাইড ডিজাইন লিমিটেড

৫২, লেক সার্কাস, ৪র্থ তলা, কলাবাগান, ঢাকা-১২০৫

ফোন- ৯১৩৩২৬৮ 

ইমেইল- [email protected]

এক নজরে পরিচালকবৃন্দ

আহমেদ ফিরোজ উল হক

ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার, বুয়েট

চেয়ারম্যান

খন্দকার আশিফুজ্জামান

ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার, বুয়েট; প্রাক্তন লেকচারার, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (AIUB) 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

শরিফুজ্জামান সজল

ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার, বুয়েট

পরিচালক

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার, বুয়েট; লেকচারার, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

পরিচালক

তাবাস্সুম জেরিন

ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার, বুয়েট; লেকচারার, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট আর্কিটেক্ট

সাদিয়া আলম

ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার, বুয়েট

অ্যাসোসিয়েট আর্কিটেক্ট

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৮ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top