ওয়াটার রিপেলেন্ট

ওয়াটার রিপেলেন্ট (Water Repellent) হলো একটি রাসায়নিক দ্রব্য যার প্রয়োগের ফলে পানি কোন বস্তুর পৃষ্ঠতল থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে বাধাগ্রস্ত হয়। তবে এটি সম্পূর্ণরূপে পানিনিরোধক নয়। মূলত ওয়াটার রিপেলেন্ট পানি ও কংক্রিটের পৃষ্ঠতলের মধ্যে একটি অদৃশ্য আবরণ তৈরি করে যার ফলে পানি ভেতরে ঢুকতে পারে না; কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাষ্প বের হতে পারে।

ওয়াটার প্রুফ (Water proof) এবং ওয়াটার রিপেলেন্টের (Water repellent) মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। Water proof রাসায়নিক দ্রব্যগুলো সাধারণত পৃষ্ঠতলের ওপর অস্বচ্ছ একটি আবরণ সৃষ্টি করে। এ দ্রব্যগুলো পানির প্রবেশ বন্ধ করে। ওয়াটার প্রুফ অনেকটা সাদা পেইন্টের মতো দেখায়, ফলে পৃষ্ঠতলের প্রকৃত রঙের পরিবর্তন ঘটে।

অপরদিকে ওয়াটার রিপেলেন্ট একটি বর্ণহীন রাসায়নিক দ্রব্য। এটি পৃষ্ঠের উপরিভাগে একটি স্বচ্ছ আবরণ তৈরি করে কংক্রিটের natural look অর্থাৎ প্রকৃত রং বজায় রাখে। অপরদিকে কংক্রিটের সূ² রন্ধ্রগুলোকে কমিয়ে পানির প্রবেশের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

ওয়াটার রিপেলেন্টের একটি বিশেষ গুণ হলো এটি ব্যবহার করার পরে এর বাহ্যিক উপস্থিতি উপলব্ধি করা যায় না, ফলে Fairface constmection-এর ক্ষেত্রে ওয়াটার রিপেলেন্ট একটি আশীর্বাদস্বরূপ।

ওয়াটার রিপেলেন্টের প্রয়োজনীয়তা

বাইরের concept ও masonry অনাবৃত থাকায় পানির বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সহজগ্রাহী হয়। কংক্রিট সূক্ষ্ম রন্ধ্রযুক্ত হওয়ায় সহজেই পরিবেশ থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়, এক্ষেত্রে আমরা একটি স্পঞ্জকে উদাহরণস্বরূপ নিতে পারি এবং অবাঞ্চিত পানি কংক্রিটের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আর্দ্রতার ফলে efflorescent অর্থাৎ দেয়ালের প্লাস্টার ফুলে ওঠতে পারে। অধিক আর্দ্রতার ফলে অভ্যন্তরীণ রডে (reinforcement) মরিচা ধরতে পারে। দেয়ালে পানি প্রবেশের ফলে দেয়ালের জীবনীশক্তি ক্ষয় হয় এবং সৌন্দর্য বিলুপ্ত হয়। এছাড়াও এসিড রেইন ও ছত্রাকের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে বিল্ডিংকে রক্ষা করতে ওয়াটার রিপেলেন্টের ভূমিকা বর্ণনাতীত।

ওয়াটার রিপেলেন্টকে বিল্ডিংয়ের তথা নির্মাণের সিলার (sealer) হিসেবে বেছে নিলে তা কংক্রিটের প্রাকৃতিক রঙকে আরো সুন্দর দেখায় এবং এ সিলার ব্যবহার করে কংক্রিটকে উজ্জ্বল, অধিক উজ্জ্বল অথবা অনুজ্জ্বল করা সম্ভব। অর্থাৎ ওয়াটার রিপেলেন্ট কংক্রিটকে যেমন কেটশই করে তেমনি এবং বাহ্যিক সৌন্দর্যও ফুটিয়ে তোলে।

প্রকারভেদ

বাজারে অনেক ধরনের ওয়াটার রিপেলেন্ট পাওয়া যায়, তবে মূলত সাতটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওয়াটার রিপেলেন্ট তৈরি করা হয়-

  1. Silence
  2. Silicate
  3. Silicon ate
  4.  Siloxane
  5. Silicone
  6.  Acrylic
  7. Polymer resis

এর মধ্যে প্রথম তিনটি penetrating concrete sealer এবং পরের চারটি coating based concrete sealer.

Silicone concrete sealer; এটি তুলনামূলক কম স্থিতিশীল জৈব। যার সাধারণ রাসায়নিক সংকেত [Rsion]n যেখানে জ=জৈবিক পদার্থ যেমন মিথাইল ইথাইল এবং ফিনাইল। সিলিকন UV রশ্মিতে অর্থাৎ অতিবেগুনি রশ্মিতে অস্থিতিশীল। তাই বাইরের দেয়াল সূর্যরশ্মিতে উন্মুক্ত হওয়ায় এ সিলার প্রতি এক থেকে তিন বছর অন্তর অন্তর পুন:প্রয়োগ করতে হয়।

Saline concrete sealer; এগুলো সাধারণত অ্যালকালাইন হাইড্রোকার্বনের সিলিকন এনালগ, যার সাধারণ ফর্মূলা [SinH2n+2]  তবে এই যৌগটি অক্সিজেন দ্বারা প্রভাবিত হয়। যদি কংক্রিটে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয় (গ্যালন প্রতি ৫০ থেকে ৮০ বর্গফুট) তাহলে আবরণটি ৫-৮ বছর স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Silicate concrete sealer:

সিলিকেট কংক্রিটের অভ্যন্তরীণ Cash এর সাথে বিক্রিয়া করে স্থায়ীভাবে কংক্রিটের সাথে মিলে যায়, ফলে এ সিলারের স্থায়িত্ব বেশি। অভ্যন্তরীণ বিক্রিয়ার ফলে কংক্রিটের porosity কমে আসে। তবে সিলিকেটের অণু ক্ষুদ্রাকার হওয়ায় সম্পূর্ণ পৃষ্ঠ আবৃত করতে অধিক পরিমাণে সিলারের প্রয়োজন হয় (প্রতি গ্যালন ৭৫ থেকে ১০০ বর্গফুট এলাকা)।

Silicon ate concrete sealer; এই সিলারটি Silicate concrete sealer এর মতই Caoh এর সাথে বিক্রিয়া করে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা আবরণ সৃষ্টি করে। তবে Silicon ate অনুগুলো আকারে বড় হওয়ায় পরিমাণে কম লাগে (গ্যালন প্রতি ২০০ বর্গফুট)।

Silozane concete scaler; মূলত silicon থেকে উৎপন্ন হয়, এর বৈশিষ্ট্য silicon concrete এর অনুরূপ।

Acrylic concrete sealer; এটি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। পানি অথবা রাসায়নিক দ্রাবকে methylmethacrylate- এর সিন্থেটিক পলিমার দ্রবীভূত করে উৎপন্ন হয়  acrylic concrete sealer সাধারণত এই সিলারটির দুইবার আবরণ দেয়া হয়। প্রথম আবরণে প্রতি ২০০ বর্গফুট এলাকায় এক গ্যালন এবং দ্বিতীয় আবরণে প্রতি ৩০০ বর্গফুট এলাকায় এক গ্যালন সিলার ব্যবহার করা হয়। আবরণটি তিন থেকে ছয় বছর স্থায়ী হয়।

সঠিক দ্রব্যটি নির্বাচন করুন

প্রথমত আপনাকে ঠিক করতে হবে যে অস্বচ্ছ Water Proof নাকি স্বচ্ছ Water Repelleht ব্যবহার করে আদ্রতা প্রভেদ বন্ধ করবেন।

দ্বিতীয়ত যে কংক্রিটে সিলার ব্যবহার করবেন তার বৈশিষ্ট্য ও কংক্রিটের (porority) সরন্ধ্রতা নির্ণয় করতে হবে। এটি দন্ডায়মান কংক্রিট কাঠামোর (vertical concrete structure) সরন্ধ্রতা নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি হল rilem tube test যা একটি নিম্রচাপযুক্ত টিউবের সাহায্যে করা হয়।

অত:পর কংক্রিটের বৈশিষ্ট্য, সরন্ধ্রতা ও বাহ্যিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে সঠিক সিলারটি নির্বাচন করতে হবে।

প্রয়োগ পদ্ধতি

সিলারটি কংক্রিটে স্প্রে করে অথবা রোলারের সাহায্যে রোল করে প্রয়োগ করা হয়।

স্প্রে করার জন্য বিশেষ হড়ুুষব ব্যবহার করা হয় এবং প্রয়োগকারীকে অবশ্যই চশমা, মাস্ক ও হাতমোজা পড়তে হবে। রোলার ব্যবহার করে সিলারটি লাগানো ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে রোল করতে হবে যেন কোনো এলাকা বাদ না যায় এবং প্রয়োগকারীর সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য হাতমোজা ব্যবহার করা উচিত।

রক্ষণাবেক্ষণ

Concrete-কে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। কিছু কিছু রাসায়নিক দ্রব্য, তেল বা মাছের আবর্জনা দীর্ঘসময় ওয়াটার রিপেলেন্ট ব্যবহৃত পৃষ্ঠে পড়ে থাকলে এর গুণাবলী নষ্ট করে দিতে সক্ষম। তাই concrete প্রয়োজনে মৃদু ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। এছাড়াও water repellent ব্যবহৃত কাঠামোর সিলারের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার পূর্বেই গুণ প্রয়োগ করা উচিত।

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৪ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top