সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুন্দর আবাসন, সুন্দর পরিবেশ। পাশাপাশি স্থায়িত্বের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের মতো জটিল বিষয়টি আপনি না বুঝলেও দেশের খ্যাতনামা প্রকৌশলীগণ ঠিকই তা সুনামের সাথে করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, দেশের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন স্থাপনা, বড় বড় কল-কলকারখানা ইত্যাদির নির্মাণ কাজও পরিচালনা করেন তারা। এসব প্রকৌশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নির্মাণ বিষয়ক দিকনির্দেশনা প্রদানসহ নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)। প্রকৌশলীদের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ স্বীকৃত প্রকৌশলী হতে হলে প্রয়োজন হবে এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ।
পরিচিতি
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৌশলীদের বাস্তবিক কাজ সফল করতে, তাদের পেশাগত দক্ষতাকে নিশ্চিত করতে এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরের অন্যান্য পেশাজীবীদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। এখানে প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার ও অন্যান্য যাবতীয় কর্মকাÐ পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার সূচনা অনেক পুরাতন না হলেও একেবারে নতুনও নয়। সব মিলিয়ে বলতে গেলে প্রকৌশল শিক্ষার শুরু থেকে এ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনেক। দেশের পুরাতন এবং সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম নাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ।দেশের প্রকৌশলীদের জন্য সকল নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে এই প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এখনে রয়েছে প্রায় ২৫,০০০ প্রকৌশলী। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ সহযোগী সদস্য, ৬০ শতাংশ সাধারণ সদস্য এবং বাকিরা অন্যান্য সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। এখানে শুধু পেশাজীবী প্রকৌশলীরাই সদস্য নয়, রয়েছে প্রকৌশল বিভাগের সেরা শিক্ষার্থীরাও। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সংস্থার সদস্য। এগুলো হলে: World Federation of Engineers Organizations (WFEO), Federation of Engineering Institutions of South and Central Asia (FEISCA), Federation of Engineering Institutions of Islamic Countries (FEIIC), Federation of Engineering Institutions of Asia and the Pacific (FEIAP) এর কার্যকরী সদস্য। এছাড়াও Commonwealth Engineers Council (CEC), Corresponding Member- the American Association for Advancement of Science (AAAS), Ges Engineers Mobility Forum (EMF)-Gi Provisional সদস্য।
পটভূমি
উন্নত জগৎ গঠন করুন এ সুমহান আদর্শকে সামনে রেখে জাতীয় উন্নয়ন তথা দেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৮ সালে ৭ মে এই প্রতিষ্ঠানটি পথচলা শুরু করে। শুরুর দিকে এর নাম ছিল দি ইনিস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় দি ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কিছু বিচক্ষণ প্রকৌশলী উদ্যোগ নেয় ইঞ্জিনিয়ারদের প্রফেশনাল ফোরাম গঠনের জন্য। তাদের উদ্দেশ্যকে সফল করতে এবং পেশাজীবী প্রকৌশলীদের কাজের পথকে সুগম করতে এগিয়ে আসেন অনেকে। শুরুতেই এগিয়ে আসেন প্রকৌশলী এমএ জব্বার, হাতেম আলী খান, আব্দুল লতিফ প্রমুখ। এছাড়া ড. এমএ রশিদ, ড. এফআর খান, ড. জহুরুল ইসলামের ভূমিকাও ছিল অপরিসীম। তারা তাদের মেধা, যোগ্যতা আর সৃজনশীলতা দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষা এবং পেশাকে আজকের এ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন।
সাংগঠনিক কাঠামো
প্রতিষ্ঠানটির সাংগঠনিক কাঠামো একটি নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমানে আইইবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা। এছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্টে (অ্যাক.ও আন্ত) প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রশাসন ও অর্থ) মেজবাহুর রহমান টুটুল, ভাইস প্রেসিডেন্টে (এইচআরডি) প্রকৌশলী মো. কবির আহমেদ ভূঁইয়া এবং সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর। তাছাড়াও সদা পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সাথে সংগতি রেখে নতুন প্রকৌশলীদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদে কাজ করে যাচ্ছেন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীগণ। এখানে মূলত দুই ধরনের সদস্য রয়েছে-
কর্পোরেট
প্রতিষ্ঠানটির নির্বচনে শুধু কর্পোরেট সদস্যদের ভোটাধিকার রয়েছে। কর্পোরেট মেম্বারগণ আবার দুই ভাগে বিভক্ত ।
ফেলো
সদস্য
নন-কর্পোরেট
নন-কর্পোরেট সদস্যগণ পাঁচ ভাগে বিভক্ত
১. অনারি সদস্য
২. এ্যাসোসিয়েট সদস্য
৩. শিক্ষার্থী
৪. এফিলিয়েটস এবং
৫. সাবস্ক্রাবার্স
কার্যক্রম
ইঞ্জিনিয়ারিং সাইন্সের মাধ্যমে আইইবি সদস্যদেরকে মানসম্মত পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সুনিপুণভাবে। এক কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের জাতীয় ফোরামই বলা চলে আইইবিকে, যেখানে প্রকৌশলীদের সাধারণ সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হয়। আইইবি সরকারের বিভিন্ন সময়ে পাওয়ার সেক্টর রিফর্ম, ট্রাফিক সমস্যা, জাতীয় পে-স্কেল, তথ্য প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা জনসমস্যা নিয়েও কাজ করে থাকে। দেশকে নির্মাণে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ প্রদর্শকের দায়িত্বও পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার বাস্তবায়নে আজ বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আইইবি বিভিন্ন ধরনের জার্নালও প্রকাশ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- জার্নাল অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্নাল অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্নাল অব কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্নাল অব ম্যাকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্নাল অব এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্নাল অব ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মল্টিডিসিপ্লিনারি জার্নাল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রমের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো হলো:
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন।
নদী শাসন ও ভূ-উপরিস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার।
আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা এশিয়ান রেলওয়ে।
ইন্টারনেট কানেকটিভিটি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রভৃতি ।
দীর্ঘদিন যাবত আইইবি অগওঊ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যা স্নাতক প্রকৌশলের সমতুল্য। আইইবির এই সনদ নিয়ে যে কোন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার প্রতিষ্ঠিত কোনো কোনো প্রকৌশল ও প্রযুক্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম ও মানক্রম পরিমাপ করার জন্য আইইবি Board of Accreditation for Engineering & Technical Education (BAETE) প্রতিষ্ঠা করেছে। ইতোমধ্যে IEB-র মাধ্যমে Accreditation দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।
আইইবির সদস্য প্রকৌশলীগণ নিজ পেশায় কতটা দক্ষতা অর্জন করেছেন উন্নত বিশ্বের আদলে তা যাচাই করার জন্য ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনগুলোর অনুরূপ প্রক্রিয়ায় অতি কঠোর নিয়ম অনুসরণে ২০০৩ সাল হতে Bangladesh Professional Engineers Registration Board (BPERB) চালু করা হয়েছে। বিপিইআরবি হতে এ পর্যন্ত ৩০১ জন পেশাগত সনদ চঊহম. প্রাপ্ত হয়েছেন। কৃতকার্য প্রকৌশলীগণ দেশে ও বিদেশে চাকরিতে ও কর্মে সফলতা দেখিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ (ইএসসিবি)
সদা পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সাথে সংগতি রেখে মেঘনা-গোমতী সেতুর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশলী ও অন্যান্য পেশাজীবীদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য পেশাজীবী জনসম্পদ তৈরি করছে। ইএসসিবি অনাবাসিক ও আবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে আসছে। ইতোমধ্যে ৫০০টিরও বেশি স্বল্পমেয়াদি অনাবাসিক কোর্স পরিচালনা করা হয়েছে। এতে প্রকৌশলী, বিজ্ঞানি, প্রযুক্তিবিদ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য পেশাজীবীসহ অংশগ্রহণকারী আট হাজারের বেশি। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ প্রকৌশলী এবং অবশিষ্টের মধ্যে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীসহ অন্যান্য পেশাজীবীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
প্রকৌশল শিক্ষার মান উন্নয়ন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধন
বিশ্বের নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাথে প্রকৌশলীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া
বিদেশি প্রযুক্তিকে দেশ উপযোগী করে প্রয়োগ
বিভিন্ন কারিগরি ইস্যুতে সরকারকে পরামর্শ দেয়া
প্রকৌশলীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ সাধনে সহায়তা এবং
প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান উন্নয়ন।
ব্যবস্থাপনা
প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ পরিষদ কর্পোরেট মেম্বার গঠন করে এবং একটি বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক রিপোর্ট ও বার্ষিক বাজেটের মতো বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করা হয়। কখনো কখনো সাময়িকভাবে অতিরিক্ত সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল বিষয় বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থাপন করা হয়। সংবিধান ও আইনের সকল নিয়ম মেনে আইইবি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। দুটি বার্ষিক সভার আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা বিষয়টি প্রদর্শিত হয়, যেখানে একজন প্রেসিডেন্ট, চারজন ভাইস প্রেসিডেন্ট, সম্মানিত জেনারেল সেক্রেটারি, চারজন সম্মানিত এসিস্টেন্ট জেনারেল সেক্রেটারি দু বছরের জন্য নির্বাচিত হয় এবং চল্লিশ জন কার্যকরী সদস্য থাকে।
কেন্দ্রসমূহ
ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঘোড়াশাল, বগুড়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাঙ্গাদিয়া, যশোর ও আশুগঞ্জ।
উপকেন্দ্রসমূহ
ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, কাপ্তাই, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী, ভোলা, জামালপুর, তারাকান্দি, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, টঙ্গী, সাভার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বড়পুকুরিয়া, নীলফামারি, পঞ্চগড়, নাটোর, বাঘাবাড়ি ও বাগেরহাট।
বিদেশে আইইবি
কাতার, এআইটি ব্যাংকক, কুয়েত, রিয়াদ, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমান ছাড়াও আইইবির নিয়মিত ৯টি ওভারসিস চ্যাপ্টার, সাতটি প্রকৌশলী বিভাগীয় কমিটি, পরীক্ষা কমিটি ও চারটি বোর্ড রয়েছে ।
যোগাযোগ
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ
সদর দপ্তর, রমনা, ঢাকা-১০০০
ফোন :৯৫৫৯৪৮৫, ৯৫৬৬৩৩৬, ৯৫৫৬১১২
ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৯৫৬২৪৪৭
ই-মেইল : [email protected](office)
ওয়েবসাইট :
তানজিনা আফরিন ইভা
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৬ তম সংখ্যা, জুন ২০১২