অফিসের সৌন্দর্যে ডেস্ক

কর্মব্যস্ততার এই যুগে অফিস অনেকটা নিজের ঘরেরই মতন। সারাদিন, এমনকি রাত পর্যন্তও সময়টা সেখানেই কাটে। অফিসের বাইরে যত কাজই করা হোক না কেন, অফিসিয়াল মিটিং কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো জরুরি কাজগুলো করা হয় অফিসেই। তাই অফিসে কাজের পাশাপাশি সৌন্দর্যের দিকটাও গুরুত্ব পায়। আর তাই অফিসের কাজের অন্যতম অনুষঙ্গ ডেস্ক বা টেবিলকে সাজানো হয় নান্দনিকতায়। দফতরবিহীন প্রতিষ্ঠান আর টেবিল ছাড়া অফিস প্রায় একই কথা। টেবিলের ডিজাইন প্রকাশ করে একটি অফিসের সামগ্রিক কার্যক্রমকে। ক্লায়েন্টের মনোযোগ আকর্ষণ করতেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তাই অফিসে ডেস্ক ব্যবহারে দরকার একটু সচেতনতার। 

ডেস্কের ব্যবহার 

প্রতিটি অফিসে ডেস্ক থাকবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে আর তার সাইজ কেমন হবে এটা নির্ভর করে অফিসের যে রুমে ডেস্কটি সেট করা হচ্ছে সেই রুমটির আয়তনের উপর। ছোট রুমের জন্য প্রয়োজন ছোট টেবিল, এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে ছোট সাইড টেবিল, সঙ্গে একটি ড্রয়ার। বড় রুম কিংবা কনফারেন্স রুমের জন্য প্রয়োজন বড় সাইজের টেবিল। এর অবস্থান সম্পর্কে যে বিষয়টা খেয়াল রাখা জরুরি তা হলো রুমে ডেস্কটির অবস্থান। কারণ সঠিকভাবে এবং সঠিক জায়গায় ডেস্ক স্থাপন করা না গেলে তা হবে বেমানান। ফলে অফিসের সৌন্দর্যহানি ঘটবে। এ সম্পর্কে ইন ডিজাইনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর কায়সার হোসেন বলেন, ‘ওয়ার্কিং এবং কনফারেন্স রুমসহ যে কোনো অফিস রুমের একটি বিশেষ দিক ফোকাস করতে এবং টেবিলে বসে যে কাজ করবে তার অবস্থানকে বোঝাতে টেবিলটি দরজার মুখ বরাবর রাখা ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে ব্যক্তির পেছন দিকটা যেন না দেখা যায় এবং প্রাইভেসিটাও ঠিক থাকে।’ ডেস্কের পেছনে থাকতে পারে দেয়াল অথবা জানালা। ফাইল বা কাগজপত্র রাখার জন্য জানালা থাকলে লো-হাইট কেবিনেট তৈরি করা যেতে পারে। 

রিসিপশনে ডেস্ক

যে কোনো অফিসে গেলেই প্রথমে যে রুমটিতে একজন দর্শনার্থী যায় সেটি হলো রিসিপশন রুম। যেখান থেকে ঐ অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। রিসিপশন টেবিলের গুরুত্ব অন্যান্য ডেস্ক থেকে কম নয়। এই ডেস্কের ডিজাইনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের লোগো বা ফলক ব্যবহার করে ব্র্যান্ডিং পরিচিতিটা তুলে ধরা যেতে পারে। এখানে দু’টি প্রান্ত থাকে, এক প্রান্তে রিসিপশনিস্ট তথ্য দেয় এবং অন্য প্রান্তে দর্শনার্থী তথ্য সংগ্রহ করে। তাই এই ডেস্কের উচ্চতা অন্যান্য টেবিল থেকে ভিন্ন হয়। সাধারণত এর দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৫ ফুট হয়। তবে পাবলিক সার্ভিস অফিসের জন্য ডেস্কটি আরও বড় মাপের হয়। তথ্যপ্রদান কাজে প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে ডেস্কে থাকতে পারে একটি কমপার্টমেন্ট। সহজে পরিষ্কারের জন্য দেওয়া যেতে পারে গ্লাস, মার্বেল এবং গ্রানাইট ।

ম্যানেজারিয়াল ডেস্ক

অফিসের প্রধানদের ব্যবহৃত টেবিলই হলো ম্যানেজারিয়াল ডেস্ক। এই ডেস্কগুলো অভিজাত ও গাম্ভীর্যপূর্ণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে জমকালো এবং দামি কিছু মেটেরিয়াল। যেমন মূল্যবান কাঠ, গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল ইত্যাদি। বর্তমানে দেশীয় ছাড়াও চীন ও মালয়েশিয়া থেকে কাঁচামাল আনা হচ্ছে এ ধরনের ডেস্ক তৈরি করতে। এ ধরনের ডেস্কে অনেকগুলো ড্রয়ার থাকে। তবে ড্রয়ার ইউনিটটি একসঙ্গে না বানিয়ে আলাদা করে বানালে রুমের অন্যান্য ডেকোরেশনের সঙ্গে মিল রেখে বসানো যায়। এই টেবিলটি একটু বড় হলেই ভালো, যাতে একসঙ্গে ৩-৫ জনের সঙ্গে কথা বলা যায় এবং ইচ্ছা অনুযায়ী ফাইল রেখে কাজ করা যায়। আকার ভেদে এটির দৈর্ঘ্য ৫-৭ ফুট ও প্রস্থ ৩ ফুট হয়।

ওপেন ও অন্যান্য অফিসের ডেস্ক

ওপেন অফিসের ব্যবস্থাপনা শুরু হয় ১৯৬০ সাল থেকে। এই অফিসগুলোতে ব্যবহার করা হয় ভিন্নধর্মী ডেস্ক, যাতে দু’টি ডেস্কের মাঝে ব্যবহার করা হয় পার্টিশন। তাই এই টেবিলের সাইজ একটু ছোট হয়। ওয়ার্ক স্টেশনের ডেস্কগুলো কাস্টমাইজ করে এর টপ এবং সাইড ড্রয়ার দিয়ে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যেখানে কম্পিউটার, মাইক্রোফোনের শেপের সঙ্গে মিল রেখে ফল সিলিং করে নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি দু’জন ব্যক্তি কাজ করার জন্য একটা ডেস্কের মাঝে সেট করা যেতে পারে ড্রয়ার। ঐ ডেস্কের সামনের দিকে একটু বেশি জায়গা থাকলে দু’টি সোফা ও একটি টি-টেবিল রাখা যেতে পারে। যেখানে ভিজিটর কিংবা ক্লায়েন্টের জন্য রাখা যাবে ম্যাগাজিন কিংবা অফিসের তথ্য সম্পৃক্ত কাগজপত্র।

কনফারেন্স রুমের ডেস্ক

অফিসের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে এবং কোনো প্রকল্প তুলে ধরতে কনফারেন্স রুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসের আয়তন বা জনবলের উপর ভিত্তি করে টেবিলটির সাইজ নির্ধারিত হয়। যে রুমে এই ধরনের ডেস্ক রাখা হবে সেখানে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান বা মিস্ত্রি দিয়ে ফলস সিলিং করে নেওয়া ভালো। আর এটি এমনভাবে করতে হবে যেন লাইটের আলো টেবিলে পড়ে, কারও উপরে নয়। কনফারেন্স রুমটি আকারে একটু ছোট হলে রাউন্ড ডেস্ক সেট করা যেতে পারে। রুমটি মাঝারি কিংবা বড় হলে রেকটেনগুলেট, বোট, ভি শেপসহ ট্রাপিজ, ষড়ভুজ অথবা অষ্টভুজ আকৃতির ডেস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক সময় ভি শেপ করে ডেস্কটিকে তিন-চার ভাগ করা যেতে পারে। এতে প্রয়োজনানুযায়ী তা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো যায়। এতে প্রত্যেকের জন্য থাকতে পারে স্পিকার এবং কম্পিউটারের ব্যবস্থা। কনফারেন্স রুমের ডেস্কটির উপরিভাগই বেশি দেখা যায়, তাই এর মেটেরিয়ালটা একটু ভালো হলে পুরো রুমটির চেহারা বদলে যেতে পারে। কনফারেন্স রুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ড্রিম সারফার ডিজিটাল আর্টিস্টসের প্রধান নির্বাহী ফরিদুজ্জামান রূপমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কনফারেন্স টেবিলে বসেই অভ্যন্তরীণ সভা কিংবা ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সভা করা হয়। টেবিলটি সঠিকভাব সেট করে প্রজেক্টরটা এমনভাবে সেট করতে হবে যেন টেবিলে বসা প্রত্যেকটি ব্যক্তিই দেখতে পারে।’ তিনি কনফারেন্স রুমের টেবিলের সাইজ সম্পর্কে জানান, ‘সাধারণ টেবিলগুলোর দৈর্ঘ্য পাঁচ-ছয় ফুট থেকে শুরু করে প্রস্থে আড়াই কিংবা তিন ফুট হয়। কিন্তু কনফারেন্স টেবিল আট থেকে শুরু করে আটাশ ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ তিন ফুট থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।’

রঙবেরঙের ডেস্ক

দেয়ালের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেবিলে ভিন্ন ভিন্ন রঙ করা যেতে পারে। নেচার, ক্রিম, লাইট, অফ হোয়াইট ইত্যাদি রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে রঙের ক্ষেত্রে ডার্ক কম্বিনেশন ব্যবহার না করাই ভালো। ডার্ক রঙ ব্যবহার করলে রুমটি ছোট মনে হতে পারে। 

প্রয়োজনীয় টিপস

  • ডেস্কে খুব বেশি কাগজ অথবা ফাইল না রেখে অন্য জায়গায় স্টোর করে রাখা যেতে পারে। 
  •  ডেস্কের গ্লাসের নিচে ভিজিটিং কার্ড না রাখাই ভালো। 
  • ব্যবহৃত ফাইলের রঙ বিবেচনায় আনা উচিত। 
  • কলমদানি, টেলিফোন, পেপার ক্লিপ ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
  • সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ফ্রেশ ফুল রাখতে পারেন।
  • ডেস্কে থাকতে পারে দুই একটি ফটো ফ্রেম।
  • ইজি ক্লিনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে টিস্যু পেপার বা নরম কাপড়। 

প্রাপ্তিস্থান ও দরদাম

পান্থপথ, রোকেয়া সরণি, স্টেডিয়াম মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সহজেই পেয়ে যাবেন অফিস ডেস্ক। তবে ব্র্যান্ডের মধ্যে অটবি, নাভানা, হাতিল ইত্যাদি ফার্নিচার হাউসগুলো থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের আধুনিক ডেস্ক পেতে পারেন। কিছু এলাকায় রেডিমেড আমদানিকৃত ডেস্কও পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরির দোকানে অর্ডার দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন আপনার পছন্দের ডেস্ক। সাধারণত এর দাম দশ হাজার থেকে শুরু করে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তানজিনা আফরিন

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৯ তম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top