রংয়ে রাঙ্গানো অন্দরমহল

রং হল অনুভূতি, মনের অনুভূতির এক অন্যরকম প্রকাশ রং। রং ছাড়া সৌন্দর্য অপরিপূর্ণ। ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে রং এর ভূমিকা অপরিসীম সেটা দেয়ালের রংই হোক কিংবা ঘরে ব্যবহৃত ফেব্রিক্সের, পর্দার কাপড়, সোফার কভার, বিছানার চাদও বা কুশন কভার রং এর সঠিক ব্যবহারে আপনার অন্দরমহল হয়ে উঠবে শৈল্পিক ও আভিজাত্যপূর্ণ। প্যাটার্ন, টেক্সার এর সাথে রংয়ের সামঞ্জস্য নির্ধারণ করার জন্য কালার স্কিম অত্যন্ত জরুরী।

শোবার ঘর:

সারাদিনের পরিশ্রম বা কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে আমরা বিশ্রামের জন্য শোবার ঘরেই যাই। তাই শোবার ঘরের রং এমন হতে হবে যাতে নিজেস্বতা খুঁজে পাওয়া যায়। বেডরুমের জন্য উপযুক্ত রং অফহোয়াইট, বেজ, লাইট ইয়োলো, এ্যাস এবং আকাশী। যদি ছোট হয় তাহলে ফার্ণিচারের রং হালকা রাখার চেষ্টা করুন এবং দেওয়ালেও হালকা রং করান। এতে ফার্ণিচারের আয়তন ছোট দেখায় এবং ঘরে একটা খোলা মেলা ভাব তৈরি হয়। রুম বড় হলে আপনার পছন্দসহ গাঢ় রংয়ের শেড ব্যবহার করতে পারেন।

তবে এক্ষেত্রে একটি দেয়াল গাঢ় রং করান এবং উপরে পলিইরেথাইন দিয়ে কোট করুন। এতে আলোর রিফ্লেক্ট করবে ফলে ঘর রড় ও উজ্জ্বল দেখাবে। যদি আপনি একটু ডার্ক রং যেমন- সানসেট অরেঞ্জ, পিংক বা ম্যাট রেড পছন্দ করেন তাহলে একটা দেয়ালে সেই রং করে অন্য দেয়ালগুলোতে নিউট্রাল শেড করান। তবে খেয়াল রাখবেন ঘরে সূর্যের আলো যদি কম ঢোকে তবে দেয়াল গাঢ় রং করা কখনোই উচিত নয় এতে ঘর আরো অন্ধকার দেখাবে। সেক্ষেত্রে উজ্জ্বল হলুদ, ল্যাভেন্ডার, বেজ রং বেশি ভাল লাগবে। কনট্রাস্ট রং এর ব্যবহার ঘরের স্যাতস্যাতে এবং মন মরা ভাব দূর করে দেয়া। কালার ফুল এবং ব্রাইট মুড সেট করার জন্য কনট্রাস্ট রং এর কুশন কভার অথবা পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। বর্ণিল বা হালকা রং যাই হোক না কেন অন্দরসাজে নিমিষেই পরিবর্তন আনতে পর্দার জুড়ি নেই। পুরানো রঙিন শাড়ি কেটে অথবা খাদি কাপড়ে কাতান পাড় বসিয়ে তৈরি করে নিন নিজের পছন্দসই পর্দা। তাছাড়া সাদা বা অফহোয়াইট পর্দাতে ব্লক বাটিক অথবা টাইডাই করিয়ে নেয়া যেতে পারে। আর নেট, টিস্যু ও জর্জেটের কাপড়ের শেয়ার সাথে ভারী সিল্ক অথবা সুতি পর্দা, সৌন্দর্য দিতে তৈরি করে নিন ম্যাচিং অথবা সুতির পর্দা, বাড়তি সৌন্দর্য দিতে তৈরি করে নিন ম্যাচিং অথবা কনট্রাস্ট ভালেন্স অথবা পেলমেট। আকর্ষণীয় এবং নান্দনিকতার ছোঁয়ার জন্য ঘরের রংয়ের সাথে মিলিয়ে পর্দা তৈরি করুন এবং এনে নিন বৈচিত্র্য।

বসার ঘর:

যেহেতু বাড়িতে আসা অতিথিদের ড্রইংরুমেই স্বাগত জানান হয় তাই বসার ঘরের রঙ নির্বাচনের সময় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অতিথি আপ্যায়ন কক্ষ ‘বসার ঘরকে’ হতে হবে উজ্জ্বল এবং উৎফুল্লময়। ঘরের আসবাবের সাথে মিল রেখে বেছে নিন হালকা একটি রঙ। একটু বৈচিত্র্য আনতে ঘরের তিন দেযালে ব্যবহার করুন হালকা শেডের একটি রং এবং অপর দেয়াল রাঙিয়ে তুলুন গাঢ় শেডের একটি রং এ। হালকা রং এ আপনি বেছে নিতে পারেন অফহোয়াইট, অ্যাপল হোয়াট, বেজ এবং গাঢ় রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল কমলা, লাল, উজ্জ্বল হলুদ ইত্যাদি। এই বসার ঘরটির তিন দেয়ালে অফহোয়াইট অপর দেয়ালটিতে কমলা রং করা হয়েছে। সাদা কালোশেডের সোফা এবং ম্যাচিং পর্দা সাথে কমলা রঙের কন্টাস্ট এনে দিয়েছে বৈচিত্র্য। আর দেয়াল জুড়ে তৈরি করা হয়েছে কাঠের ফ্রেম যেখানে আপনি ধরে রাখতে পারেন আপনার পছন্দের বিশেষ মুহূর্তের কোন স্মৃতি।

ফেব্রিক বা দেয়ালের রঙ পরিবর্তের সময় যাই পছন্দ করেন না কেন লক্ষ্য রাখতে হবে ঘরের আসবাবপত্রের দিকে। আপনার বসার ঘর যদি দেশীয় ফার্ণিচার দিয়ে সাজানো থাকে তাহলে জুট বা টেরাকোটার কালারফুল ল্যাম্পশেড এনে দিবে ভিন্ন আমেজ। আর যদি মর্ডান ফার্ণিচার হয় তাহলে কালারফুল পেইটিং আপনার বসার ঘরের শোভা বাড়িয়ে দিবে দ্বিগুণ।

ডাইনিং রুম:

ডাইনিং রুমের মুল অংশটা হচ্ছে খাবার টেবিল। খাবার ঘরে পুরনো রং তুলে ফেলে দেয়ালকে রাঙিয়ে তুলুন নতুন রূপে। ফার্ণিচার পুরনো হয়ে গেলে নতুন করে পলিশ করে নিন। একটু খরচ বাড়িয়ে ডুকু অথবা লেখার কালারও করতে পারেন। অনেকদিনের পুরানো দেয়ালের গদির কাপড় পাল্টে ফেলে দিতে পারেন নতুন আমেজ। যেহেতু খাবার ঘর মানেই খাবারের সংঙ্গে সম্পৃক্ত একটা বিষয় তাই খাবার ঘরের রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে লাইট গ্রিন, পেষ্ট অথবা করলে গ্রিনকে প্রাধান্য দিতে পারেন। দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দিতে পারেন বাধাই করা রাজস্থানী কাজের ওয়ালমেট এবং টেবিলের উপর বিছিয়ে দিন ম্যাচিং টেবিল রানার। আরেকটু ডেকোরেটিভ করতে খাবার টেবিলের উপর বিছিয়ে দিন কালারফুল ফুলদানি অথবা ফলের ঝুড়িতে নানা ধরনের ফল। এছাড়াও ফ্রিজ এর উপর ডেকোরেটিভ ভাস রাখতে পারেন।

শিশুর ঘর 

বাচ্চাদের ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে রং নিয়ে খেলা যায় নানান খেলা। বাচ্চারা কাল্পনিক হয়, তারা বাস করতে ভালবাসে তাদের কল্পনার রাজ্যে। তাই তাদের রাজ্য সাজিয়ে দিতে পারেন তাদের কল্পনার রং এ। বাচ্চার খাটের শেপ থেকে শুরু করে তার রুমের ওয়ালের রং। ফার্ণিচার এবং পর্দা সবকিছুই তার মনমত হতে হবে এবং এমন ভাবে সবকিছু থাকতে হবে যাতে রুমটা কিছুদিন পর তার কাছে বেরিং না হয়ে যায়। মেয়ে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত পিংক রং এর বিভিন্ন শেড এবং ছেলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হালকা নীল রং এর বিভিন্ন শেড বেছে নেওয়া যায়। তাছাড়া উজ্জ্বল রং এর কম্বিনেশনের মাধ্যমেও তৈরি করে নিতে পারেন আপনার শিশুর স্বপ্নের ঘরটিকে।

রান্নাঘর:

রান্নাঘরের আয়তন এবং ব্যবহারিক প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে সাধারণত এর অন্তঃ সাজ। রান্নাঘরে যেকোন হালকা রং ব্যবহার করা উত্তম। আজকাল যেহেতু টাইলস এর প্রচলন তাই রান্নাঘরে দেয়াল জুড়ে ৭ ফিট উচু টাইলস লাগিয়ে দিতে পারেন। টাইলেসের রং এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্যাবিনেটের রং নির্বাচন করুন। সাদা টাইলস ব্যবহারে নানা রং এর ক্যাবিনেট রান্নাঘরে কালার ফুল আমেজ এনে দিতে পারে।

আজকাল শুধু অভিজাত এলাকার বাড়িঘর সাজিয়ে তোলা ইন্টিরিয়র ডিজাইনারের কাজ নয় বরং মানুষের শখ এবং সাধ্যকে মাথায় রেখেই তারা সাজাচ্ছেন ইন্টিরিয়র ডেকোরেশন। ব্যায় বহুল ইন্টিরিয়র ডেকোরেশন নয় রং ঘর সাজানোর খুটিনাটি বিষয়াদি জেনে আপনার অন্দরমহলে আনতে পারেন নান্দনিকতার ছোয়া।

অন্দর সজ্জায় টিপস:

আপনার প্রিয় রং বলেই তা দেয়ালে ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং ক্রিম বা বেজ রং এর দেয়াল দিয়ে আসবাব বা পর্দায় প্রিয় রং ব্যবহার করতে পারেন। দেখতে ভাল লাগবে।

গোলাপী রং ফেমিনিন মুড তৈরি করে আপনার ঘরে রোমান্টিক আবহ তৈরি করতে গোলাপী ও হালকা নীল রং জুড়ি নেই।

 আপনার ঘর উত্তরমুখী হলে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করুন। দক্ষিনমুখী ঘর হলে হালকা সবুজ, হালকা নীল, হালকা হলুদ বা অফহোইয়াই রং ব্যবহার করতে পারেন।

পূর্বে ও পশ্চিম মুখী ঘরে সাধারণত পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ঢোকে তাই একটু গাঢ় রং ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ সি-গ্রীন, টারকোয়জ, গাঢ় নীল, গাঢ় গোলাপী ইত্যাদি।

ঝক ঝকে সাদা রং পছন্দ হলে ল্যাকারড ফিনিশ এনামেল ব্যবহার করতে পারেন। মুক্তোর ঔজ্জ্বল্য পাবেন।

একটু ইনোভেটিভ চাইলে প্যাটার্ন পেনিং করাতে পারেন। টেক্সচারড ওয়াল ও এখন খুব সুন্দর ওয়াল পেপার পাওয়া যাচ্ছে যা আপনার অন্দরমহলের শোভা বাড়াবে।

ঋতু অনুযায়ী ঘরের সাজ বদলানো যদি আপনার ফ্যাশন হয় তবে দেয়ালের রং অবশ্যই ক্রিম বা এগশেল হোয়াইট রাখুন। কারণ এ সকল রং যে কোন ধরনের রং, প্রিন্ট এবং ফেব্রিকের সাথে মানানসই।

 অন্দর সাজে সবুজের ছোয়া দিতে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করুন ইনডোর প্লান্টস।

লেখক: ফারজানা গাজী

স্বত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনার, ফারজানা’স ব্লিস।

প্রকাশকাল: বন্ধন ২১ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top