সেলফ লেভেলিং এপক্সি (Self Leveling Epoxy) একধরনের মসৃণ ফ্লোর কোটিং, যা কংক্রিট মেঝের ঝা চকচকে ভাব এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই এপক্সি কোটিংকে সেলফ লেভেলিং বলা হয়। কারণ, এটি মেঝের ওপর মসৃণ প্রলেপ বা টেক্সার তৈরি করে। যেমন, রোলার বা স্কুইজির সাহায্যে দেওয়া সাধারণ এপক্সির প্রলেপে থাকে একটু খসখসে ভাব। এটি স্বল্প রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ে কংক্রিটের মেঝের স্থায়িত্ব বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, ফাটল ধরা বা ক্ষয়িষ্ণু কংক্রিটের মেঝের ওপর এই কোটিং খসখসে ও পুরোনো ভাব দূর করে এনে দেয় মসৃণতা। পাতলা এই এপক্সি মেঝের ফাটলগুলোর মাঝে অনেকটা পুডিংয়ের মতো কাজ করে, যা ফাটল ও অমসৃণ জায়গাকে সমান করে ওপরে সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী মসৃণের প্রলেপ দেয়।
সেলফ লেভেলিং এপক্সি নতুন ও পুরোনো সব ধরণের মেঝেতেই ব্যবহার করা যায়। এটি খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং শক্ত আবরণ তৈরি করে ফলে সময় লাগে কম। তবে এটি তুলনামূলক রোলার বা স্কুইজিইং কোটিংয়ের থেকে ব্যয়বহুল।
সাধারণত সেলফ লেভেলিং এপক্সি ২-৩ মি.মি. পুরুত্বের হয়ে থাকে।

এপিক্লোরহাইড্রিন (Epichlorohydrin) থেকে বাণিজ্যিকভাবে রেজিনের উৎপাদন শুরু হয় ১৯২৭ সালে। আমেরিকায় ১৯৩৬ সালের দিকে সম্মিলিতভাবে সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী ড. পিয়েরি কাসান (Dr. Pierre Castan) এবং আমেরিকার ড. এস ও গ্রিনলি (Dr. S O Greenlee) বিসফিনল-এ-বেসড (Bisphenol-A-based) এপক্সি রেজিন তৈরিতে সক্ষম হন। আমেরিকায় ১৯৫৫ সালে চার ধরনের মৌলিক এপক্সি উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সম্প্রতি বিসফিনেল-এ-বেসডের পাশাপাশি ওয়াটার বেসড এপক্সি রেজিনের উৎপাদনও শুরু হয়েছে। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ৬০ ধরণের সাইক্লোফ্যাটিক এপক্সি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, যেমন- ফেনলিক রেজিন (Phenolic Resin), পলিবুটাডিন রেজিন (Polybutadiene Resin), গ্লাইসিডাল ইস্টার এপক্সি রেজিন (Glycidyl Ester Epoxy Resin), গ্লাইসিডাল অ্যামাইন এপক্সি রেজিন (Glycidyl Amine Epoxy Resin) ইত্যাদি।
এপক্সি রেজিনের অসাধারণ মেকানিক্যাল বৈশিষ্ট্য, ইলেকট্রিক্যাল ইনসুলেশন, নিরোধক ক্ষমতা এবং দৃঢ়তা একে কোটিং, কাস্টিং ম্যাটেরিয়াল, মল্ডিং ম্যাটেরিয়াল, অ্যাডহেসিভস, লেমেনেটিং ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদি হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ব্যবহার উপযোগিতা দিয়েছে। সেলফ লেভেলিং এপক্সি হিসেবে এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা তাই দিন দিন বাড়ছে। সেলফ লেভেলিং এপক্সিও ট্রাওয়েলেবল ফ্লোরিং (Trowelable Floorings)-এর মতো এপক্সি রেজিন দিয়েই তৈরি করা হয়। তবে এখানে ফিলার কন্টেন্ট এবং বাইন্ডারের অনুপাত ৪:১-এর মতো। এই পাতলা মিশ্রণটি মেঝেতে ১/”৮” -র মতো পুরু প্রলেপ তৈরি করে সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর উচ্চমাত্রার রেজিন উপাদান মেঝের উপর ব্যতিক্রমী রাসায়নিক নিরোধক একধরনের স্বচ্ছ ও ঝকঝকে মসৃণ কোটিং তৈরি করে। পিচ্ছিলতারোধে এর সঙ্গে মেশানো হয় কিছু মিনারেল ফিলার। যেমন-কোয়ার্টজ স্যান্ড।
সেলফ লেভেলিং এপক্সি জনপ্রিয় হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। যেমন- মসৃণ মেঝে পরিষ্কার করা সহজ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং সহজে ময়লা বা ব্যাকটেরিয়ার মতো ক্ষতিকর জীবাণু জমতে পারে না। সেলফ লেভেলিং এপক্সি মেঝেকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। মেঝের উজ্জ্বল স্থানটিতে বেশ খোলামেলা একটা ভাব এনে দেয়। সেলফ লেভেলিং এপক্সি শুধু শিল্পেই নয়, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক ভবনেও ব্যবহার করা হয়। সাধারণত যেসব জায়গায় এটি বেশি ব্যবহৃত হয়; তা হলো-
- উৎপাদনকাজে নিয়োজিত শিল্প
- ওয়্যারহাউস
- শো-রুম
- বাণিজ্যিক গ্যারেজ
- বাণিজ্যিক রন্ধনশালা
- হাসপাতাল
- প্রদর্শনী গ্যালারি
- বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার (যেখানে বিমান রাখা হয়)
- জিমনেশিয়াম ও অ্যাথলেটিক ফ্লোর প্রভৃতি।

যেসব ক্ষেত্রে উঁচুমানের নান্দনিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি অতি ঘর্ষণজনিত ক্ষয়রোধ এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ সেসব ক্ষেত্রে সেলফ লেভেলিং এপক্সি সবচেয়ে উপযোগী। এপক্সি ফ্লোরিংয়ের স্থায়িত্ব অত্যধিক বেশি এবং এই শক্তিশালী প্রলেপের আরও বেশ কিছু উপযোগিতা রয়েছে। যেমন-
দাগ ও ঘর্ষণজনিত যেকোনো ধরনের প্রভাবমুক্ত
রাসায়নিক ও তাপরোধক
পিচ্ছিলতা নেই, এমনকি ভেজা মেঝেতেও পিচ্ছিলভাব থাকে না
ঝকঝকে এবং আকর্ষণীয় ফিনিশিং
সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম
আকর্ষণীয় এবং উজ্জ্বল রং ব্যবহারের সুযোগ
প্রয়োজন ও ইচ্ছানুযায়ী পুরুত্বে ব্যবহার করা যায়।
মহুয়া ফেরদৌসী
[email protected]
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৬ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৬