যুগ যুগ ধরে বাড়ি নির্মাণে মানুষ ব্যবহার করছে স্টিল। আধুনিক যুগে অবকাঠামো নির্মাণসহ স্টিলের ব্যবহার লক্ষ করা যায় গৃহের আসবাব থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই। বাড়ির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো প্রবেশপথ। আর এ প্রবেশদ্বারের নির্মাণ উপকরণ স্টিল, যা নিরাপত্তার স্বার্থে নির্মিত। বিশাল এ স্টিলের গেট ডেকোরেশনের কথা চিন্তা করে তৈরি করা হয় অত্যন্ত কারুকার্যময় করে। এতে গেটগুলো দেখতে যেমন সুন্দর দেখায়, তেমনি তা কিন্তু দারুণ টেকসই। এবার আসা যাক বাড়ির বারান্দায়। বারান্দার রেলিংয়ের জন্য নানা ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের স্টিল ব্যবহার করা হয়। বর্ণিল ও নান্দনিক রেলিং করতে চাইলে পছন্দমতো ডিজাইন জানিয়ে অর্ডার দিতে পারেন। অর্ডারকৃত ডিজাইনে স্টিলের ফ্রেম তৈরি করে সঙ্গে কাচযুক্ত করে বাড়ির বারান্দাকে আরও সৌন্দর্যময় করে তোলা সম্ভব।
এরপর আসা যাক বাড়ির সিঁড়ি ঘরে। এখানে স্টিলের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি। আগে যেখানে প্রতিটি সিঁড়ির রেলিং তৈরিতে ব্যবহার করা হতো কনক্রিট আর কাঠ, যা দেখতে তেমন কারুকার্যময় নয় তা ছাড়া এগুলো অনেক ব্যয়বহুলও। প্রতিতলায় লাগে প্রায় ১৮ সিএফটি, যার বাজারমূল্য স্টিলের প্রায় দ্বিগুণ। তা ছাড়া এগুলো তেমন টেকসইও নয়। উত্তরার বাসিন্দা মিসেস রবিউল জানান, বিশেষ করে রাজধানীর মানুষ খুবই ফ্যাশনসচেতন। তাই ফ্যাশনপ্রিয় এ মানুষের রুচিরোধের ওপর ভর করে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্টিলের অনুষঙ্গ। স্টিল গাঠনিকভাবে খুব মজবুত ও শক্তিশালী তাই অতি সহজে নষ্ট হয় না। কাঠ এবং অন্য বিকল্প সব কিছুর থেকে কম দাম এবং মসৃণ হওয়ায় বাসার সিঁড়িতে স্টিল ব্যবহার করেছি। কনক্রিট ও কাঠের চেয়ে স্টিল আরামদায়ক। সিঁড়িতে ওঠানামার জন্য খুব সহজে শক্ত করে হাতল ধরা যায়। ফলে দুর্ঘটনাকে খুব সহজে এড়িয়ে চলা যায়।
স্টিলের কাজ করছে যাঁরা
বাসাবাড়িতে স্টিলের কাজগুলো সাধারণত গ্রিলমিস্ত্রিরা করে থাকেন। তবে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির নিজস্ব মিস্ত্রি ও যন্ত্রপাতি দিয়ে নিজেরাই কাজ করে। গ্রিল ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, ডেভেলপার কোম্পানির কাজ বড় বাজেটের হওয়ায় আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পক্ষে এত বড় বাজেটের কাজ করা সম্ভব হয় না বলে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো নিজস্ব মিস্ত্রি দিয়ে কাজগুলো করিয়ে থাকে।
যে ধরনের স্টিল ব্যবহৃত হয়
ডিজাইনের রকমফের হিসেবে স্টিল ব্যবহার করা হয়। ফ্ল¬াট করে এবং বক্স বার স্টিলগুলো জানালার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। গেটের জন্য প্রায় স্টিলের সব ধরনের বারই ব্যবহার করা হয় হয়ে থাকে, তবে পাইপ স্টিল বার এবং বক্স স্টিল বার বেশি ব্যবহৃত হয়। আগে গেটের জন্য সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হতো ফ্লাট স্টিল বার। এখনো ফ্লাট বারগুলো ব্যবহার করা হয়, তবে তা শুধু সাধারণ ডিজাইনের জন্য।
মিস্ত্রির কাজের দরদাম
মিস্ত্রিরা ফুট এবং কেজি হিসেবে কাজ করে। তবে এই কাজগুলো মিস্ত্রিরা ফুট হিসেবে বেশি করে থাকে। এগুলো স্কয়ার ফুট হিসেবে ধরা হয়।

স্টিল বাজারজাতকরণ কোম্পানি
আমাদের দেশে ১০০টিরও বেশি স্টিল কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিএসআরএম, কেএসআরএম, আরএসআরএম, বসুন্ধরা, বায়েজিদ স্টিল, জিপিএইচ, রহিম স্টিল মিল, একেএস ইত্যাদি।
কোম্পানিভেদে দাম
এসএস, জিপিএইচ, এসএসের প্রতি কেজি স্টিলের বাজারমূল্য ৭০ টাকা। তবে প্রতি বর্গফুট হিসাবে মিস্ত্রিরা সর্বনিম্ন ১২০-১৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০০-২৫০ টাকা হারে মূল্য নিয়ে থাকে।
মিলবে কোথায়
ঢাকায় হাতিরপুল, ধানমন্ডি, মহাখালী, পান্থপথ, গুলশানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এসব কারুকার্যপূর্ণ স্টিলের কাজগুলো করে এবং এসব স্টিল বিক্রি করে থাকে।
- শামস আহমেদ
প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৬ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১৩