যানজট থেকে মুক্তি পেতে থামাবে না গাড়ি এক সেকেন্ডও

যাপিত নাগরিক জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী যানজট নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। দেশের বড় শহরসহ রাজধানী ঢাকায় যানজটের তীব্রতা প্রকট। মাঝে মাঝে এ যানজট বিস্তৃত হয় চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা, ঢাকা, টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা সেতু অবধি। বিশেষত ঈদে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে। যানজটে পড়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ হারাচ্ছে তাদের মূল্যবান সময় ও কর্মঘণ্টা। পুড়ছে গাড়ির জ্বালানি; বাতাসে কার্বনসহ ক্ষতিকর পদার্থ মিশে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আর্থিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কবলে পড়ছে দেশ। যানজটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগীর আর্তনাদ, অগ্নি নির্বাপন কিংবা জরুরি কোনো কাজে নিয়োজিত গাড়ির করুণ হর্ন কোনো কিছুতেই পরোয়া নেই যানজট নামের দানবটির। সবার এখন একটাই জিজ্ঞাসা, এ থেকে কি রক্ষা পাওয়ার কোনোই উপায় নেই?

যে কারণে যানজট

যখন এক বা একাধিক গাড়ি রাস্তায় এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, তখনই সৃষ্টি হয় যানজটের। এ ছাড়া যানজট সৃষ্টির ছোটখাটো অনেক কারণ রয়েছে। যেমন- সড়ক দুর্ঘটনা, মিছিল, সমাবেশ কিংবা আন্দোলন। কিন্তু এগুলো হরহামেশা ঘটে না। যানজট সৃষ্টির প্রধান কারণ মূলত বিপজ্জনক মোড় (Danger Cross).

রাজধানীর অসহনীয় যানজট

কী এই বিপজ্জনক মোড়? 

বিপজ্জনক মোড় এমন একটি মোড় বা জংশন যেখানে একাধিক গাড়ি একই সময়ে চলতে চাইলে দুর্ঘটনা ঘটার সমূহ আশঙ্কা থাকে। প্রচলিত মোড় ও ইউটার্নগুলোতে মূলত বিপজ্জনক মোড় দেখা যায়। প্রচলিত মোড় ব্যবস্থাপনায় এক দিকের গাড়িকে চালু রাখতে অন্য এক বা একাধিক দিকের গাড়িকে থামিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের। উদাহরণস্বরূপ ১ নম্বর চিত্র (Figure-1)-এর কথা বলা যায়। এখানে ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর রোড একটি মোড়ে মিলিত হয়েছে। প্রতিটি রোড আবার লেন A ও লেন B -তে বিভক্ত। লেন অ দিয়ে গাড়ি মোড়ে এসে প্রবেশ করে আর লেন B দিয়ে মোড় ত্যাগ করে। এ মোড়ে রয়েছে মোট আটটি লেন। প্রতিটি লেন আবার একাধিক সাবলেনে বিভক্ত। যখন ১ নম্বর রোডের অ লেন দিয়ে গাড়ি মোড়ে  প্রবেশ করে তখন ২, ৩, ও ৪ নম্বর রোড দিয়ে কোনো গাড়ি মোড়ে প্রবেশ করতে পারে না। যদি করে তবে ওদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। কাজেই এটা একটি বিপজ্জনক মোড় বা Danger Cross. আবার যখন ২ নম্বর রোড দিয়ে গাড়ি মোড়ে প্রবেশ করে তখন ১, ৩ ও ৪ নম্বর রোড দিয়ে কোনো গাড়ি মোড়ে প্রবেশ করতে পারে না। একইভাবে যখন ৩ নম্বর রোড দিয়ে গাড়ি মোড়ে প্রবেশ করে তখন ১, ২ ও ৩ নম্বর রোড দিয়ে কোনো গাড়ি মোড়ে প্রবেশ করতে পারে না। আবার যখন ৪ নম্বর রোড দিয়ে কোনো গাড়ি মোড়ে প্রবেশ করে তখন ১, ২ ও ৩ নম্বর রোড দিয়ে কোনো গাড়ি মোড়ে প্রবেশ করে না। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে যে একটি রোডের গাড়িকে মোড়ে প্রবেশ করার সুযোগ দিতে গিয়ে অন্য তিনটি রোডের গাড়িকে থামিয়ে রাখতে হয়। অর্থাৎ এক গুণ গাড়ি চলার সুযোগ পেলে তিন গুণ গাড়ি রোডে আটকে যায়। ফলে দীর্ঘ হয় যানজটের সারি। 

প্রচলিত ইউটার্র্নগুলোতেও Danger Cross দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ ২ নম্বর চিত্র (Figure-2)-এর কথা ধরা যাক। এখানে একটি রোড আছে যা লেন A ও লেন B-তে বিভক্ত। দুই লেনের মাঝখানে সড়ক বিভাজক (Road Divider) আছে। গাড়ি যখন লেন A থেকে B অথবা B থেকে A-তে যেতে চায়, তখন তাকে ডিভাইডারের কাটা অংশের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ধরা যাক, কোনো গাড়ি লেন A থেকে B-তে যাবে। তাহলে একে কাটা অংশের মধ্য দিয়ে খুব ধীরগতিতে লেন B-তে যেতে হবে। লেন B-তে প্রবেশের সময় গাড়িখানা রোডের সঙ্গে অনেকটা আড়াআড়িভাবে থাকে। আড়াআড়ি অবস্থান থেকে এর গতিমুখ যথাযথ অবস্থায় নিয়ে আসতে লেন B-এর অনেকটা অংশ জুড়ে একে ঘুরতে হয়। এ সময় লেন B-তে ধাবমান গাড়িকে থেমে থাকতে হয়। অন্যথায় এদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। A থেকে B-তে প্রবেশকারী গাড়ির সংখ্যা যদি বেশি হয়, তাহলে B-তে থেমে থাকা গাড়ির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়ে যানজট বাড়ে। একই ভাবে যখন কোনো গাড়ি লেন B থেকে A-তে যেতে চায় তখনো যানজটের সৃষ্টি হয়।   

সমাধান যেভাবে 

যানজট নিরসনে কিছু পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে- 

১. প্রচলিত বিপজ্জনক মোড় বন্ধ করতে হবে। এ জন্য চিত্র ১ ও ২-এর প্রচলিত মোড়কে যথাক্রমে চিত্র ৩ ও ৪ নম্বরের মতো মোড়ে রূপান্তরিত করতে হবে।

২. মোড় থেকে কিছু দূরে (এক কিলোমিটার, আধা কিলোমিটার বা অন্য কোনো সুবিধাজনক দূরত্বে) প্রশস্ত ইউটার্র্ন (৪ নম্বর চিত্রের মতো) তৈরি করতে হবে। কোনো গাড়ি যদি ডান দিকে বা বিপরীত দিকে ঘুরতে চায় তবে তাকে শুধু ইউটার্র্নের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিভাজক (Road divider বা island) বিশিষ্ট কোন দীর্ঘ সড়কের মাঝে মাঝেও এই ইউটার্ন তৈরি করা যেতে পারে।

৩. যখন দুইটি জঁহধিু (লেন) একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হয় তখন ওরা পরস্পর প্রায় সমান্তরালভাবে মিলিত হয়।

বিষয়টির ব্যাখ্যা  

৩ নম্বর চিত্র (Figure-3)-এর কথা ধরা যাক। এখানে একটি গাড়ি X. যা ৩ নম্বর রোডের  A লেন থেকে ৪ নম্বর রোডের B লেনে যেতে চায়। এ ক্ষেত্রে গাড়িটি 3A থেকে প্রথমে 2B লেনে প্রবেশ করবে। 2B লেনে 1A থেকেও গাড়ি আসবে। এখানে 3A ও 1A থেকে আগত গাড়িগুলো 2B-তে পরস্পরের সঙ্গে সমান্তরালভাবে মিলিত হবে বলে একের গতিবেগ অন্যের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবে না। এবার X গাড়িটি তার সমান্তরালে চলমান অন্য গাড়ির সঙ্গে গতিবেগের পার্থক্য তৈরি করবে। ধরা যাক, অন্য গাড়িটির গতিবেগ ১৮ ফুট/সেকেন্ড (প্রায় ২০ কিমি/ ঘণ্টা)। এখন X গাড়িটিকে কিয়ৎক্ষণের জন্য এই  গতিবেগের চেয়ে কম বা বেশি গতিতে চলতে হবে। ধরা যাক তার গতিবেগ ১৪ ফুট/ সেকেন্ড (প্রায় ১৬ কিমি/ ঘণ্টা)। তাহলে X গাড়িটি ও অন্য গাড়িটির মধ্যে ১ সেকেন্ডে আপেক্ষিক দূরত্ব সৃষ্টি হবে ১৮-১৪ = ৪ ফুট। ২ সেকেন্ডে আপেক্ষিক দূরত্ব সৃষ্টি হবে ৪X২ = ৮ ফুট। ৩ সেকেন্ডে আপেক্ষিক দূরত্ব সৃষ্টি হবে ৪X৩ = ১২ ফুট। একই ভাবে ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ইত্যাদি সেকেন্ড পর আপেক্ষিক দূরত্ব সৃষ্টি হবে যথাক্রমে ১৬, ২০, ২৪, ২৮, ৩২, ৩৬, ৪০ ও ৪৪ ফুট। এখন দেখা যাচ্ছে ১১ সেকেন্ড পর গাড়িদ্বয়ের আপেক্ষিক দূরত্ব ৪৪ ফুট। এই ৪৪  ফুট থেকে অপর গাড়িটির দেহের দৈর্ঘ্য বাদ দিলে অবশিষ্ট দূরত্বই হবে X গাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গা। যেমন- অপর গাড়িটির দৈর্ঘ্য ২০ ফুট হলে X গাড়িটির সামনে ফাঁকা জায়গা দাঁড়াবে ৪৪-২০ = ২৪ ফুট। এই ২৪ ফুট ফাঁকা জায়গার মধ্য দিয়ে X গাড়িটি ওর প্রয়োজনীয় সংকেত প্রদানপূর্বক চলমান অবস্থায় ক্রমেই ডান দিকে চাপতে থাকবে। এরপর উহা সম্মুখের ইউটার্নের মধ্য দিয়ে গতিমুখ পরিবর্তন করে 2A লেনের ডান দিকে প্রবেশ করবে। অতঃপর তা আগের মতো গতিবেগের পার্থক্য ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় সংকেত প্রদানপূর্বক ক্রমান্বয়ে বাম দিকে চাপতে থাকবে। শেষে সামনের মোড়ে এসে সরাসরি 4B লেনে প্রবেশ করবে। 

তুলনামূলক চিত্র 

যানজট নিরসনের জন্য সাধারণত উড়ালসেতু, বিকল্প সড়ক, পার্শ্বসড়ক, পাতাল পথ, মেট্রো রেলপথ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এসব তৈরি করতে বিপুল অঙ্কের অর্থ, সময় ও জায়গার প্রয়োজন। বিনিময়ে যানজট নিরসনে এগুলো কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে কিংবা আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে কি না তা কিন্তু ভেবে দেখার বিষয়। 

সারণি: প্রস্তাবিত পদ্ধতি ও প্রচলিত পদ্ধতিসমূহের ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র 

প্রসঙ্গ ঢাকা শহর

ঢাকা শহর অভ্যন্তরস্থ সড়কের মোড়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই তুলনামূলকভাবে খুব কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত। এসব ক্ষেত্রে প্রতিটি মোড়ের জন্য আলাদা ইউটার্ন তৈরি না করে প্রতি এক কিলোমিটার দূরত্বে ইউটার্ন তৈরি করা যেতে পারে। ঢাকা শহরের একেক ধরনের রাস্তায় একেক ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য অনুমোদিত। এখানে অনুমোদিত সব রাস্তায় পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যাবে। এ পদ্ধতিতে দুটি স্থানে অতিরিক্ত জায়গা প্রয়োজন। একটি হলো রাস্তার মোড়ে, অপরটি হলো ইউটার্নে। রাস্তার মোড়গুলোর প্রায় সবগুলোতেই প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জায়গা রয়েছে। এখন সামান্য অতিরিক্ত জায়গা প্রয়োজন পড়বে শুধু ইউটার্নগুলোতে। কারিগরি হিসাব বলছে, কোনো রাস্তার প্রস্থ ১০০ ফুট হলে ইউটার্নের জন্য ওই স্থানে রাস্তার উভয় পাশ থেকে অতিরিক্ত তিন গজ জায়গা নিতে হবে।

রাস্তার পাশে মার্কেট, বিপণিবিতান, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় সাধারণত বাস থামে। এ জায়গাগুলো এমনিতেই অন্যান্য স্থানের চেয়ে প্রসারিত থাকে গাড়ি দাঁড়ানোর জন্য। যদি প্রশস্ত নাও থাকে কিংবা যদি এসব নির্দিষ্ট জায়গা ব্যতীত রাস্তার পাশে অন্য যেকোনো জায়গায় গাড়ি থামতে চায়, তবুও সমস্যা নেই। কারণ, ঢাকা শহরের সব রাস্তাই একাধিক লেনে বিভক্ত। এসব লেনের একটিকে গাড়ি থামানো বা যাত্রী ওঠানামার কাজে Slow Lane বা Off Lane হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। অবশিষ্ট লেনগুলোতে গাড়ি চলমান থাকবে। 

পথচারী পারাপারে

উপরিউক্ত পদ্ধতিটি বাস্তবায়িত হলে পথচারী পারাপারের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হবে না। পথচারী পারাপারের জন্য বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিগুলোই বহাল থাকবে। যেমন- ওভারব্রিজ, ভূনিম্নস্থ পথ, জেব্রা ক্রসিং ইত্যাদি। নতুন পদ্ধতিতে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পারাপারের ঝুঁকি বর্তমানের চেয়ে অনেক কমে আসবে। কারণ এ পদ্ধতিতে গাড়ির গড় গতিবেগ বাড়বে ও রাস্তায় গাড়ির ঘনত্ব কমবে। অর্থাৎ একটি গাড়ি থেকে অন্য গাড়ির গড় দূরত্ব বেশি হবে। হাইওয়েগুলোতে যেমন হয়ে থাকে। দুই গাড়ির আগমনের মধ্যবর্তী সময়ে পথচারীরা তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে রাস্তা পার হতে পারবে। 

বহু লেন ভিত্তিক সড়ক ব্যবস্থাপনা

আনুষঙ্গিক সুবিধা

যানজট থেকে মুক্তি পেলে পাওয়া যাবে আনুষঙ্গিক সুবিধাসমূহ : 

ক) জ্বালানি সাশ্রয় হবে : ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি জ্বালানি অকারণে পুড়ছে। যানজট না থাকলে এসব শহরে জ্বালানি খরচ এক-তৃতীয়াংশেরও নিচে নেমে আসবে। যা দিয়ে দেশের অন্যান্য জ্বালানির চাহিদা মেটানো যাবে। 

খ) কমবে পরিবেশদূষণ : জ্বালানি দহনের ফলে বাতাসে কার্বনসহ যেসব ক্ষতিকর উপাদান প্রতিদিন যোগ হচ্ছিল তার মাত্রাও ব্যা পক হারে কমবে। ফলে উন্নত হবে পরিবেশ। 

গ) দুর্ঘটনা কমবে : যানজটে ব্যয়িত সময়কে কিছুটা পুষিয়ে নিতে অবশিষ্ট সময়ে চালকেরা বেপরোয়া গাড়ি চালান। ফলে ঘটে দুর্ঘটনা। যানজট থেকে মুক্ত হলে কমবে এ ধরনের দুর্ঘটনা। 

ঘ) রাস্তার মোড়ে লাগবে না সিগন্যাল : বর্তমান ব্যবস্থায় Danger Cross-এ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক সিগন্যাল বা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নব উদ্ভাবিত এ ব্যবস্থায় কোনো Danger Cross (বিপজ্জনক মোড়) নেই। ফলে রাস্তার মোড়ে কোন সিগন্যালেরও প্রয়োজন নেই। 

ঙ) যানবাহনে ফিরবে স্বস্তি : বর্তমানে প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক গাড়িকে গড়পরতা নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী বহন করতে হয়। ধরা যাক, ৫০ সিটের একটি গাড়িকে দৈনিক ৫০০ জন যাত্রী বহন করতে হয়। স্বাভাবিক গতিতে চললে গাড়িটি ১০ ট্রিপ দিতে পারে। প্রতি ট্রিপে যাত্রীসংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০ ভাগ ১০ = ৫০। অর্থাৎ ৫০ সিটের জন্য ৫০ জন যাত্রী। তাই সবাই সিটে বসে আরামে ভ্রমণ করতে পারে। কিন্তু যানজটের কারণে বাসটি দৈনিক ১০ ট্রিপ দিতে পারে না। ৩, ৪ বা ৫ ট্রিপ দিতে পারে। ৪ ট্রিপ সম্পন্ন করলে প্রতি ট্রিপে যাত্রীসংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০ ভাগ ৪ = ১২৫। অর্থাৎ ৫০টি সিটের জন্য যাত্রী ১২৫ জন। এক্ষেত্রে ৫০ জন যাত্রী বসতে পারবে। বাকি ১২৫-৫০ = ৭৫ জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। ফলে অস্বস্তি  বাড়বে। যানজটমুক্ত হলে গাড়ির ট্রিপসংখ্যা বাড়ায় স্বস্তি ফিরবে ভ্রমণে।  

চ) বাঁচবে কর্মঘণ্টা : সমীক্ষায় দেখা যায়, যানজটের কারণে প্রতিদিন শুধু ঢাকা শহরেই শতাধিক কোটি টাকার কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা। যানজট থেকে মুক্ত হলে প্রতিদিন কয়েক শ কোটি টাকার কর্মঘণ্টা বাঁচবে। 

ছ) চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি রক্ষা পাবে সম্পদ : দুর্ঘটনার সময় যানজটের কারণে যথাসময়ে অ্যাম্বুলেন্স, মেডিকেল টিম, উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না। ফলে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। যানজট থেকে মুক্তি পেলে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবে অনেকাংশে। 

জ) নগরায়ণ বৃদ্ধি পাবে ও  জনঘনত্ব কমবে : দূরে থাকলে যানজটের কারণে যথাসময়ে কর্মস্থলে হাজির হওয়া সম্ভব হয় না। ফলে শহরাঞ্চলের মানুষেরা তাদের কর্মস্থলের খুব কাছাকাছি বাস করায় ওই এলাকার জনঘনত্ব হয় বেশি। যানজটমুক্ত হলে মানুষজন দূরে থাকলেও যথাসময়ে কর্মস্থলে হাজির হতে পারবে। এতে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে জনঘনত্ব কমায় নগরায়ণ ছড়িয়ে পড়বে তুলনামূলক দূরবর্তী অঞ্চলে। 

ঝ) কমবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন : যানজটের কারণে প্রতিটি গাড়িকে দীর্ঘ সময় রাস্তায় আটকে থাকতে হয়। প্রতিটি গাড়ি থেকেই তাপ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এর ফলে বাড়ে তাপমাত্রা। যানজট কমে গেলে কমবে তাপ নির্গমনও। এটা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে সাহায্য করবে। 

উন্নতদেশের পরিকল্পিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা

পরিশেষে

প্রস্তাবিত এ পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে আশা করা যায়, নগণ্য জোগানের বিনিময়ে স্বল্প সময়ে রেল ক্রসিং পয়েন্ট ব্যতীত সম্পূর্ণ নগর হবে যানজটমুক্ত। আর যদি রেল ক্রসিংয়ে ঊর্ধ্বসেতু নির্মাণ করা যায়, তাহলে যানজট শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। এক সেকেন্ডের জন্যও থামতে হবে না কোনো গাড়িকে। নগরবাসী পাবে যানজটমুক্ত সমৃদ্ধ এক ঢাকাকে।

প্রকৌশলী কামরুল হাসানইমেইল: enkamrul@gmail.com

প্রকাশকাল: বন্ধন ৫১ তম সংখ্যা, জুলাই ২০১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top