ঘর সাজাতে প্রতিনিয়ত নানা আয়োজন করছি আমরা। ঘরের সৌন্দর্যের কথা ভাবলে প্রথমে আসে ঘরের ভেতরকার রঙের কথা। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের চিন্তা, রুচি ও পছন্দ। মানুষ প্রতিনিয়তই চাইছে নতুন কিছু। চাহিদায়ও রয়েছে ভিন্নতা। আজকের যুগে সবকিছুতে লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। অফিস, বাসা কিংবা ফ্যাশন হাউস সর্বত্রই এখন রঙের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন শৈল্পিক নকশাযুক্ত ওয়ালপেপার, যা পাল্টে দিচ্ছে সনাতন ঘরের এখনকার রূপ। ঘর রং করতে গেলে মনের মতো রং অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। মনের মতো হলেও রংটি ফুটবে কি না তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। এ কথা মাথায় রেখে চাহিদা বেড়েছে বৈচিত্র্যময় ডিজাইন ও রঙের ওয়ালপেপারের। ওয়ালপেপারগুলো আকর্ষণীয় ডিজাইনের হওয়ায় ঘরের সৌন্দর্যবর্ধনে এর জুড়ি নেই।
পুনম ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ওয়ালপেপার রঙের চেয়ে দেখতে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আমার ঘরের দেয়ালে প্রথমে রং করিয়েছিলাম। রং করার পর দেয়ালটি দেখতে তেমন ভালো লাগছিল না। এরপর বন্ধুর পরামর্শে দেয়ালে ওয়ালপেপার লাগালাম। এতে আমার ফ্যাশন হাউস আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়।’

‘সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের চাহিদা। রুচিতে এসেছে পরিবর্তন। সবকিছুতে এখন নতুনত্বের ছোঁয়া। বিলাসবহুল বাড়ি, অফিস, রেস্টুরেন্ট, নামীদামি ফ্যাশন হাউস সবখানে রঙের পরিবর্তে এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ওয়ালপেপার। ওয়ালপেপারের সৌন্দর্য ও দামে রয়েছে ভিন্নতা। তবে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে অফিস এবং ফ্যাশন হাউসগুলোয়’, জানালেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইসমাত রহমান। বাংলাদেশে ওয়ালপেপার নিয়ে তিনি কাজ করছেন দীর্ঘদিন।
তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অফিসে সাধারণত একটু ভিন্ন ধরনের ওয়ালপেপার ব্যবহার করা হয়। যেমন, হালকা ধরনের ওয়ালপেপারগুলো অফিসের জন্য ভালো। অফিসের কার্পেট কিংবা ফার্নিচারের রঙের সঙ্গে মিল রেখে ওয়ালপেপার ব্যবহার করা হয়। বাড়ি, ফ্যাশন হাউস কিংবা রেস্টুরেন্টে গাঢ় রঙের ওয়ালপেপারের ব্যবহার বেশি। রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত হয় লাল কিংবা হলুদ রঙের ওয়ালপেপার।
বাড়ির বেডরুমের জন্য বেছে নেওয়া হয় একটু লাল কিংবা খয়েরি রঙের ওয়ালপেপার। আবার বসার রুমের সোফা কিংবা কার্পেটের সঙ্গে মিলিয়েও নির্বাচন করা হয় ওয়ালপেপার। বাচ্চাদের ঘরের জন্য ভালো লাগবে বিভিন্ন গাছ, লতাপাতা ও পাখির ছবিযুক্ত রঙিন ওয়ালপেপার, যা খুব সহজে বাচ্চাদের মন কাড়ে।

মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবারই এখনকার পছন্দ ওয়ালপেপার। নতুন নতুন ফ্ল্যাটে ওয়ালপেপার এখন বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বিশেষ নকশাযুক্ত এ ওয়ালপেপারগুলো এখন উচ্চবিত্তদের বেশি আকৃষ্ট করছে। আর এর দামও একটু চড়া।
এই ম্যাট ওয়ালপেপারগুলো রঙের মতো দেয়ালের সুরক্ষায় কাজ করে। এগুলো প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত দেয়ালকে সুরক্ষিত রাখে। এই পেপারগুলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি বলে সহজেই রঙের পরিবর্তন হয় না।
দরদাম
ওয়ালপেপারগুলো সাধারণত বর্গফুট হিসেবে বিক্রি হয়। আর আপনি যদি অনেক বেশি পরিমাণে কিনতে চান, তাহলে কিনতে হবে রোল হিসেবে। প্রতি বর্গফুটের দাম সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন এক হাজার ৪০০ টাকার মতো। রঙের চেয়ে এর খরচ প্রায় ৫ থেকে ১০% বেশি।
পাবেন যেখানে
নকশাযুক্ত হাজারও রকমের ওয়ালপেপার পাওয়া যাবে ইন্টেরিয়র সামগ্রী বিক্রির দোকানসহ বিভিন্ন রেকসিনের দোকানে। ঢাকার নিউমার্কেটের বেশ কিছু দোকানে পাওয়া যায় এসব ওয়ালপেপার। এ ছাড়া পাওয়া যায় মহাখালীতে। বাংলাদেশে এই ওয়ালপেপারের একমাত্র পরিবেশক মহাখালীর ‘ভাই ভাই ইন্টোরিয়াম’।

ইন্টেরিয়র হাউস ও রঙের দোকানের কারিগরেরা ওয়াল ও গ্লাস পেপারগুলো লাগিয়ে থাকেন। প্রতি রোলের জন্য নেন ৬০০ টাকা।
শামস আহমেদ
প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৫ তম সংখ্যা, মার্চ ২০১৩