২০ শতকের স্থাপত্যের ইশতেহার

২০ শতকের স্থাপত্য কেমন হবে বা হওয়া উচিত তা নিয়ে অনেক আগেই দর্শনচর্চায় সাড়া ফেলেছে নানা তত্ত¡। তারই কিছু জানার প্রয়াসে এই রচনা। এখানে চিন্তক ও স্থপতির মিলন ঘটেছে। খুব রূপক ও হেঁয়ালি কথার আড়ালে মহান চিন্তকেরা যা বলেছেন, তা আজকের স্থাপত্যমহলে চিন্তার খোরাক জোগাবে। কারণ এই কথাগুলো কোথাও না কোথাও আধুনিক স্থপতিদের মনে আজও বাজে। ২০ শতকের স্থাপত্যের ইশতেহার নিয়ে লিখেছেন স্থপতি সুপ্রভা জুঁই

হেনরি ভ্যান-দে-ভেলদের চিন্তা-১৯০৩

গ্রিকদের সময়ে তাঁরা যেমন আকার বা ফর্ম, উপাদান বা ম্যাটেরিয়ালের ব্যবহারের কারণ নির্ধারণ করে কলাম নির্মাণ করতেন, আমাদের সেই জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারতে হবে। কারণ এখন অনেক কিছুই আমরা করে থাকি, কেন করছি সে বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান রাখি না। টেবিল, চেয়ার এবং একটি বাড়ির আকার আসলে কেমন হওয়া উচিত, সে পর্যন্ত চিন্তা করে এ পর্যায়ে আসতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। গ্রিকদের যে নান্দনিক মন এবং আলো ও উপকরণের মাধ্যমে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় স্থান বা স্পেসকে তারা যে মাত্রায় নিয়ে ভাবতে পেরেছে, সেখান থেকে নির্যাসটুকু নিয়ে বর্তমানের কাজের চিন্তায় প্রয়োগ করে নিজেদের আরও দক্ষ করে তুলতে পারি। যৌক্তিক চিন্তা ও শৈল্পিক সংবেদনশীলতা গঠনের মাধ্যমে কেবল স্থাপত্য নয়, আমরা ব্যক্তি জীবনেও লাভবান হওয়ার ক্ষমতা রাখি। তাহলে নতুন যে সামাজিক আবহাওয়া আসছে তার সঠিক বিনির্মাণে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।  

দে স্তিজলের ইশতেহার-১৯১৮

দে স্তিজল বা দ্য স্টাইল হলো ডেনমার্কের একটি শিল্প আন্দোলন, যেখানে স্থপতি ও চিত্রশিল্পীর মিলন ঘটেছিল। ১৯১৭ সালে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। এর মুখ্য ভাবনা ছিল-

বর্তমান সময়ে এসে আমরা অতীত থেকে যা পাচ্ছি তা ব্যক্তির চিন্তা এবং ভবিষ্যৎ থেকে পাচ্ছি বৈশ্বিক চিন্তা। অর্থাৎ বৈশ্বিক চিন্তাই হলো আগামীর চিন্তা এবং এই আগামীর চিন্তাটা আমাদের এখনই করতে হবে ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রয়োজনে। ব্যক্তির সঙ্গে  বৈশ্বিক চিন্তার এই গোলযোগ বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশ্বশিল্প দুই ক্ষেত্রেই দেখা যাবে।

যুদ্ধ আগের পৃথিবীর সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলেছে; নতুন করে ব্যক্তিস্বতন্ত্র্য তাই সর্বত্র চোটপাট নিচ্ছে। 

নতুন শিল্প এই সময়ের নতুন চেতনাকে ধারণ করছে; ব্যক্তি এবং বিশ্বের সমন্বয় সেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে। 

পূর্বের কুসংস্কার এবং আধুনিক চিন্তাশৈলীর দ্ব›দ্ব অনুভবে জোরালো প্রভাব ফেলছে। 

গ্রæপিয়াস/টওট/বেহনে: স্থাপত্যের নতুন চিন্তা-১৯১৯ 

স্থাপত্য আসলে কী? এটা কি আসলে মানুষের উন্নত চিন্তা, তার মানবিকতা, বিশ্বাস ও ধর্মের একটি বহিঃপ্রকাশ মাত্র? স্থাপত্য একসময় এটাই ছিল। কিন্তু এই চিন্তা আসলে অভিশাপের মতো আমাদের তাড়া করে ফিরেছে এই সময়ে এসেও, যখন আমরা আত্মা ও প্রকৃতির মাঝে একটা সমন্বয় করতে চাইছি। রাস্তা দিয়ে নিজ শহরে হেঁটে চলার সময়, ময়লার ভাগাড়, অপরিকল্পিত স্থাপনা ইত্যাদি কি আমার জাতির পরিচয় বহন করবে? তাহলে এই লজ্জাজনক উপায় থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তি দেওয়ার উপায় হলো সেই শিল্প, যার নাম স্থাপত্যবিদ্যা। ইউরোপের স্থাপনা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে একেবারে নিজেদের শিকড়ের সন্ধানে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এবং হতেই পারে এর ফল দেখার সৌভাগ্য আমাদের হবে না কিন্তু এতটুকু সান্ত¦না অন্তত থাকবে যে এর জন্য আমরা কিছু অবদান রেখে যেতে পেরেছি। এই চিন্তার কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। কারণ ছাড় দেওয়া মানেই হলো চিন্তার মৃত্যু ঘটা। তাই স্থপতি, ভাস্কর, চিত্রশিল্পী সবার সঙ্গে এক হয়ে আমাদের সেই রূপকথাকে বাস্তবে রূপ দানে নেমে পড়তেই হবে।

লে করবুজিয়ার: একটি নতুন স্থাপত্যের দিকে: গাইডিং প্রিন্সিপাল- ১৯২০ 

প্রকৌশলীর নন্দন-জ্ঞান এবং স্থাপত্য হলো দুটি ভিন্ন বিষয়, যারা এক হয়ে একে অপরকে রূপ দিয়ে সাহায্য করে। এর মাঝে যেকোনো একটি সফল হলে অন্যটিতে খামতি থেকে যায়। একজন প্রকৌশলী অর্থনীতি, সরকারের নীতিমালা এবং গাণিতিক হিসাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করে থাকেন। এভাবে একটি বৈশ্বিক আইনের মধ্য দিয়ে কাজটিকে তিনি আকার দেন। ফলে তিনি একটা ভারসাম্য অর্জন করতেও সক্ষম হন। অপর দিকে একজন স্থপতি সে ক্ষেত্রে তাঁর নিজের চিন্তামতো আকার বা ফর্মগুলো সাজিয়ে থাকেন এবং কীরূপে সাজালে তারা সর্বোচ্চ মাত্রার ফল দেবে, সেটা একেবারেই স্থপতির আত্ম-ভাবনা থেকে প্রসূত হয়। তিনি এই বিশ্বকে যেভাবে দেখেন সেটার একটা ছাপ তার কাজের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার হৃদয়ের ভাব-ভালোবাসার আন্দোলন ধ্বনিত হয় তার কাজে এবং তখন তা থেকে যে অভিজ্ঞতা আমরা লাভ করি সেটাকেই প্রকৃত অর্থে সৌন্দর্যের অনুভূতি বলা হয়।

স্থপতির জন্য তিনটি মনে রাখার বিষয় 

ম্যাস বা ভবনের মোট গুরুভার

আমাদের চোখগুলো এমন, যা কোনো কাঠামোতে আলো পড়ার পর প্রতিফলিত হয়ে রেটিনায় ধরা দিলে আমরা দেখতে পাই। ভবনের সাধারণ যে প্রাথমিক আকার বা প্রাইমারি স্ট্রাকচার আছে, সেগুলো খুবই সুন্দর, কেননা তাদের চোখের দেখায় সহজেই আমরা মেনে নিতে পারি। আজকালকার স্থপতিরা এই সহজ বিষয়টি আর তাঁদের কাজে ফুটিয়ে তুলতে পারছেন না বা চাচ্ছেন না। জ্যামিতিকভাবে কাজ করা, প্রকৌশলীর গাণিতিক সমাধানে থেকে কাজ করা আমাদের চোখের জন্য আরামদায়ক একটা আকৃতিতে নিয়ে যেতে সক্ষম। এভাবে জ্যামিতি এবং গণিত বুঝে কাজ করার মাধ্যমে সরাসরি সুন্দর শিল্পকর্ম নির্মাণ করা সম্ভব।

সারফেস বা পৃষ্ঠদেশ

একটি ম্যাস আসলে এর যে সারফেস, সেটি দ্বারা মুড়িয়ে থাকে। তাই ম্যাসের লাইন থেকে উদ্ভূত এই সারফেসটা কিন্তু মূলত ভবন আর মাটির মাঝের সংজ্ঞাটা নির্মাণ করে দুটো জায়গাকে পরিচয় প্রদান করে, সেটা স্থপতিদের খেয়াল করা খুব জরুরি। 

ইনডিভিজ্যুয়ালিটি বা স্বতন্ত্রতা

আজকাল স্থপতিরা সারফেসে জ্যামিতিক আকার নিয়ে বেশ ভীত। আধুনিক সময়ে স্থাপত্যে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ নিঃসন্দেহে এর জ্যামিতিক সমাধান নির্ণয় করা। ফলে স্বতন্ত্রতার স্বর আমরা হারিয়ে ফেলছি। 

স্থাপত্য নাকি বিপ্লব

ভবন এবং নির্মাণের বিরাট খেলা গোটা বিশ্বজুড়ে তুমুলভাবে শুরু হয়ে গেছে: নতুন অর্থনৈতিক চাহিদার জোগান দিতে বৃহৎ আকারে নির্মাণ এবং নানা ডিটেলিংয়ের দিকে নজর দেওয়াও শুরু হয়েছে। ফলে এই দুই ক্ষেত্রেই আশানুরূপ ফলাফল দেখা যাচ্ছে। অতীতের সঙ্গে  বর্তমানের এই ঘটনা মেলালে দেখা যাবে যে এ নিঃসন্দেহে এক বিপ্লব। এভাবে সচেতন কিংবা অসচেতনভাবে হলেও আমাদের মন একের পর এক চাহিদা প্রস্তুত করে তাকে পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এতে সামাজিক বৈষম্য হচ্ছে, সেটা হয়তো আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না অথবা আমরা ইচ্ছে করে দেখব না বলে ঠিক করেছি। যাঁরা এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞে নিরলসভাবে কাজ করছেন, তাঁদের আবাসস্থলের গুণগত মানের মৌলিক শর্তগুলো অপূর্ণ রেখে দিয়েছে। তখন প্রশ্ন জাগে, তাহলে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এখনকার সমাজে যে অস্থিরতা বিরাজমান, তার আসল কারণ কি স্থাপত্য নাকি এই বিপ্লব?

লুডিং মিস ভ্যান দার রোহ: ফর্ম এবং স্থাপত্য-১৯২৭

আমি আকার বা ফর্মের বিরোধিতা করি ব্যাপারটা তা নয়, তবে ফর্ম যদি হয় একমাত্র উদ্দেশ্য তাতে আপত্তি আছে। কারণ ফর্মের কথা আমি ভাবি সেই প্রকল্পের অন্তর্নিহিত অনেক বিষয়ের একটা গাণিতিক সমীকরণ দ্বারা। ফর্ম যদি একমাত্র লক্ষ্য হয়, তাহলে দিনশেষে তা কেবলই ফর্মকেন্দ্রিক একটি কাঠামোতে পরিণত হয় এবং তা ভেতরের দিকে পৌঁছাতে পারে না। বরং বাহ্যিক রূপ নিয়েই তার ভাবনাচিন্তাটা বেশি থাকে। অথচ যে মানুষ সেই বাড়ির ভেতরে থাকবে তার জন্য তো বাড়ির ভেতরের স্পেসটাই বেশি জরুরি। অথচ আমরা ভুলে যাই যে একটি জীবন্ত অভ্যন্তরীণ স্পেসেরই একটি জীবন্ত বাহ্যিক অবস্থা থাকতে পারে। একমাত্র জীবনের আধিক্য একটি ফর্মকে আরও জীবন্ত করে তুলতে সক্ষম, প্রতিটি ‘কীভাবে’ প্রশ্নের জবাব আসে ‘কি’ প্রশ্নের উত্তর থেকে। ফর্মের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক থাকার চেয়ে ভেতরে ভালো কিন্তু বাইরেরটা আধা ভালো-জাতীয় বাড়িও উন্নত মানের। আসল ফর্ম জীবনকে ধারণ করতে সাহায্য করে। আমরা ডিজাইনের সময় মাথায় রাখি না যে এর শুরুটা হয় জীবনের সঙ্গে, জীবন্ত প্রাণীর আচার ও স্বস্তির নিশ্চয়তা দানের সঙ্গে এবং সেটি রচনা করে একটা ফর্ম। এই কারণে একটি সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়াকে আমি এতটা গুরুত্ব প্রদান করে থাকি। 

লুই আই কান: অর্ডারের নিত্যতা-১৯৬০

ডিজাইন হলো অর্ডার (সুবিন্যস্ততার) অনুসারে ফর্মকে বিনির্মাণ করা

ফর্ম একটা নির্মাণ প্রণালি থেকে উদ্ভূত হয়।

ক্রমশ ফুটে ওঠার ব্যাপারটা হলো নির্মাণ প্রণালি

সৃষ্টিশীল শক্তি অর্ডারের মাঝে নিহিত

ডিজাইনের ক্ষেত্রে এর অর্থ হলোÑ কোথায়, কীভাবে, কখন, কিসের দ্বারা এবং কতখানি 

একটা স্পেসের প্রকৃত ধর্ম জানান দেয় যে সে কী হতে চায়।

প্রকল্পের প্রকৃতি থেকে জানা যায় –কেন

সুবিন্যাসকরণের ধারা থেকে জানা যায় কি

ডিজাইনের দ্বারা জানা যায় কীভাবে

একটা ফর্ম বা আকৃতি আসলে জেগে ওঠে সেই আকৃতিকে রূপদান করার জন্য উপাদানগুলো যে কাঠামোর মধ্য দিয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই কাঠামোর নিগূঢ়তার মাঝেই ফর্মের গল্পটি লুকিয়ে আছে।

একটা গম্বুজ কীভাবে বানানো হবে এই প্রশ্নের মাঝ দিয়ে গম্বুজ তৈরি হয় না।

শিরার মাধ্যমে গঠিত হয় ধনুকাকৃতির খিলান বা আর্চ।

একজন ধোপার সদ্য কাচা ফুলে ওঠা কাপড়ের ধারণা জন্ম দেয় গম্বুজের।

প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ মোৎসার্টের কাজগুলো ডিজাইনের মতোই।

তারা হলো অর্ডারের মাধ্যমে সৃষ্টি করা অমৃত সুর সজ্ঞাত

ডিজাইন আরও অনেক ডিজাইন তৈরি করতে উৎসাহ জোগায়

অর্ডারের মাধ্যমেই ডিজাইন উদ্ভূত হয় বা দৃশ্যমান হয়

দৃশ্যগত রূপটি বস্তুত স্মৃতির ফসল, আকৃতি বা ফর্ম 

আমরা যাকে স্টাইল বলি, তা হলো দত্তক নেওয়া এক অর্ডার

অর্ডারের অর্থের মাঝে সৌন্দর্যকে সূচিত করা হয় না

অর্ডারের মাধ্যমে নির্ণীত একটি ভবন যে বাহ্যিকভাবে চমকপ্রদ হবে ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। বিশ শতকের স্থাপত্য এটাই জানান দিতে চায় যে অর্ডারের মধ্যে যে রহস্য ও গুণাগুণ আছে, তাকে ধরা গেলে সৌন্দর্য সেখান থেকে মুখরিত হয়ে ওঠাটা অনিবার্য। কিন্তু অর্ডার সৌন্দর্যকে খুঁজে ফিরে না বরং সৌন্দর্য নিহিত আছে অর্ডারের সঠিক ব্যবহারের মাঝে। 

ডিজাইনের অর্থ দেখতে সুন্দর কিছু নির্মাণ করা নয়

সৌন্দর্য আসে বাছাইকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে

সৌন্দর্য আসে ঐক্যের মধ্য দিয়ে

সৌন্দর্য আসে সম্পূর্ণতা দানের মধ্য দিয়ে

সৌন্দর্য আসে প্রেমের মধ্য দিয়ে

শিল্প হলো সেই মাধ্যম যা জীবনে অর্ডার আনে, পারলৌকিক।

অর্ডার স্পর্শাতীত 

এটি সৃষ্টিশীল চৈতন্যের একটি পর্যায়

যা সারা জীবন ধরে কেবলই ঊর্ধ্বগামী

অর্ডারের মান যত উঁচুতে যেতে থাকবে, ডিজাইনে ততই বৈচিত্র্যতার প্রকাশ পাওয়া যাবে।

অর্ডার সম্পূর্ণতাকে সমর্থন করে

স্পেস কী হতে চায় থেকে শুরু করে একদম অজ্ঞেয় অবস্থাটি পর্যন্ত যে যাত্রা তা স্থপতির সামনে উন্মোচিত হয়। একমাত্র অর্ডার থেকে সৃষ্টিশক্তির এবং আত্মসমালোচনার ক্ষমতা কেউ অর্জন করতে পারে, যা তাকে সেই অজ্ঞেয় অবস্থাটির একটি দৃশ্যগত রূপ নির্মাণ করতে রসদ জোগায়। এরপর, সৌন্দর্য এখান থেকেই স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয়। 

ওয়ালটার পিচলার/হান্স হোলেইন: অসীম স্থাপত্য-১৯৬২

সব থেকে ক্ষমতাশীল চিন্তার মধ্য থেকে স্থাপত্যবিদ্যার জন্ম। এখানে বোকামো বা দুর্বলতার কোনো জায়গা নেই। এর একমাত্র কাজ কেবল সেবাদান নয়। যারা স্থাপত্যকে নিতে ব্যর্থ, তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত এক জাতি হবে। স্থাপত্যবিদ্যা হলো সেই আইন, যারা আইন মানে না কিন্তু আইন বানিয়ে থাকে। এটা একটা অস্ত্র। ভবনের মধ্য দিয়ে অনুভব করা যায় যে স্থাপত্য আসলে আধ্যাত্মিক এক সুবিন্যস্ততার ফসল। স্থাপত্য, অসীম এক জায়গায় নির্মিত একটা চেতনার বস্তুগত রূপ, যা মানুষের আধ্যাত্মিক শক্তি ও ক্ষমতার জানান দেয়। যেদিন থেকে স্থাপত্যের শুরু সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত এর অভ্যন্তরীণ মূলতত্ত¡ একই থেকেছে। মাথার ওপরে ছাদ বলে নয় বরং ঐশ্বরিক জায়গাকে চিহ্নিত করতে স্থাপত্যের শুরু। এই নির্মাণ আমাদের মৌলিক অবস্থান। 

সমস্ত ভবন ঐশ্বরিক 

স্থাপত্য, হলো মানুষের মনের বহিঃপ্রকাশ- একদম রক্ত ও মাংসে প্রকাশ। স্থাপত্য উপাদাননির্ভর, স্পর্শগ্রাহ্য, আদিমতার বাহক, নির্মম, ভয়ংকর, পরাক্রমশালী ও শাসক। একই সঙ্গে স্থাপত্য হলো আমাদের সম্যক আবেগ এবং আমাদের সব থেকে নিখাঁদ যে সংবেদনশীল দিক, সেই স্বর্গীয় ভাবেরই একটি বস্তুসুলভ রূপ। স্থাপত্য একটি পরিসরকে শাসন করে। স্থাপত্য দিন দিন সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষের জন্য হয়ে যাচ্ছে। সে আমজনতার সুখের প্রতি আর যতœশীল নয়। উঁচু শ্রেণির উঁচু মানুষের উন্নয়নের জন্য স্থাপত্য এখন নিবেদিত।

ংযঁঢ়ৎড়াধলঁর@মসধরষ.পড়স

ছবি: ইন্টারনেট 

তথ্যসূত্র: উলরিখ কনরাডস, প্রোগ্রামস অ্যান্ড ম্যানিফেস্টোস অন টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি আর্কিটেকচার

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৩ তম সংখ্যা, মে ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top