হেরিটেজ ট্রেইল যেভাবে ডিজাইন করা হয়
হেরিটেজ ট্রেইল ডিজাইন করতে হলে অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সেগুলো হচ্ছে-
হেরিটেজ ওয়াক ও ট্রেইল
মিশ্র ট্রেইল
সংরক্ষণ এবং পুনরায় অভিযোজিত ভবনের ব্যবহার
রিভারফ্রন্ট (নদীর সম্মুখভাগ) উন্নয়ন
স্থানীয় স্থাপনার ব্যবহার, পুনরুজ্জীবন ও অভিনব নকশা প্রণয়ন
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
সাইনেজ সিস্টেম ও প্রকাশনা
সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা
নদীপথ ও ঘাট সংযোগ
মডেল স্ট্রিট পুনরুদ্ধার
ঐতিহ্যবাহী পাড়া নির্ধারণ
অ্যাকসেস, এক্সপোজার ও বাফার
ট্রাফিক কন্ট্রোল
পথচারী ওয়াকওয়ে
ঐতিহাসিক কাঠামোর পুনর্জন্ম এবং
পাবলিক স্পেস
হেরিটেজ ওয়াক ও ট্রেইল
হেরিটেজ ট্রেইল মূলত একটি পূর্বপরিকল্পিত যাত্রাব্যবস্থা। এই ট্রেইল এক্সপ্লোর করবে সব ধরনের কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত স্থাপত্যের সম্পর্ক, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃৃতি, মানুষের জীবনধারা, খাদ্যাভাস, উৎসব, কলা, পার্বণ ইত্যাদি। আর এসব কিছুর মধ্য দিয়ে একটা প্রাণবন্ত প্রেক্ষাপট উপস্থাপিত হবে। যার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে পথ-ঘাট, সড়ক, ঐতিহাসিক ভবন, ঐতিহাসিক স্থান ইত্যাদি। ট্রেইলকে আরও গভীরভাবে উপস্থাপন করা যায়। ঐতিহাসিক স্থাপনার সামগ্রিক সংখ্যা ও সংখ্যার অনুপাত গণনা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ইতিহাস জড়িত থাকতে পারে বা মেলবন্ধন রচনা হতে পারে। যেখানে স্থাপত্যের ওপর সহগামী উপাদান ফর্ম অনুশীলনের বিষয়। এই ফর্মের সংরক্ষণ, সংকলন, রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন গড়ে তোলা বিষয়গুলো সরাসরি জড়িত থাকতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় অন্বেষণ ব্যাপারটা থাকতে পারে। কোনো কিছুই অন্বেষণ ছাড়া সামনের দিকে যাওয়া সম্ভব নয়। একটা সময় এই অন্বেষণের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা, যা কাজে লাগিয়ে ট্রেইল ডিজাইন করা যায়। হেরিটেজ ট্রেইলে ওয়াকিং ট্রেইল বিষয়টা প্রাথমিক। পাশাপাশি আরও সম্পৃক্ত হয় সাইকেলচালিত ট্রেইল, ঘোড়ার গাড়ির ট্রেইল, রিকশাচালিত ট্রেইল, হাতিতে চড়ে ট্রেইল ইত্যাদি। আবার একই জায়গায় সংমিশ্রণ ট্রেইলও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে, ট্রেইলগুলোকে পর্যায়ক্রমে ভাগ করা যায়, যাদের নাম্বারিং করা যেতে পারে।
মিশ্র ট্রেইল
হেরিটেজ ট্রেইল কখনো কখনো একাঙ্কিক ট্রেইল আবার বহুমাত্রিক বা মিশ্র ট্রেইলও হতে পারে। হেরিটেজ ট্রেইলকে রচনার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। কেননা এতে স্থাপত্য ফেনোমেনার সঙ্গে শিল্পসত্তা ও সাহিত্যের মতো করে রসায়ন বিরাজমান। মিশ্র ট্রেইলে ওয়াকিং ট্রেইল, হেরিটেজ বাস ট্রেইল, হাতি-ঘোড়ায় চালিত ট্রেইল, ওয়াটার ট্রেইলসহ বহুমাত্রিক ট্রেইল সংযুক্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ নারায়ণগঞ্জ শহরে হেরিটেজ ট্রেইল হতে পারে মিশ্র ট্রেইল। কেননা, এখানে স্থলের পাশাপাশি জলের সহাবস্থান এবং পেরিফেরাল কানেকশন। পুরো শহরজুড়ে হেরিটেজ সাইটের অস্তিত্ব। তাই শহরজুড়ে হতে পারে হেরিটেজ বাস ট্রেইল। শহরের অ্যাডজ বা সীমানাজুড়ে হবে ওয়াটার ট্রেইল। ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ এলাকাগুলোতে হতে পারে ওয়াকিং ট্রেইল। কোথাও কোথাও দূরত্ব বিশেষ এ বিবেচনা করে হাতি বা ঘোড়ায় পিঠে চড়ে ট্রেইল হতে পারে।
সংরক্ষণ এবং পুনরায় অভিযোজিত ভবনের ব্যবহার
হেরিটেজ ট্রেইলগুলোতে প্রাচ্য স্থাপনার সংরক্ষণ করতে হয়। এই স্থাপনার সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক। কেননা, এই স্থাপনার সংরক্ষণ ব্যতিরেকে হেরিটেজ ট্রেইল পূর্ণাঙ্গতা পাবে না। নয়তো শুধু ট্রেইল হয়ে যাবে। সংরক্ষণ ও পুনরায় অভিযোজিত ভবন সংরক্ষণের বেলায় বিবেচনায় নিতে হবে কী কী স্থাপনা সংরক্ষণ করতে হবে এবং কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করতে হয়? পুরোনো স্থাপনা সংরক্ষণ একটি অপরিহার্য বিষয়। যেখানে অতীত স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষকে পুনর্জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয় এবং এই শহরের অন্তর্নিহিত গুণমান ও জীবনধারাকে প্রভাবিত করে থাকে। এই প্রক্রিয়াটিকে ঐতিহাসিক রূপান্তরও বলা চলে। যেখানে একটি ঐতিহাসিক ভবন হতে পারে জাদুঘর, আবার এটি হতে পারে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, আর্ট গ্যালারি, ভিজিটিং সেন্টার, স্যুভেনির শপ, কারুশিল্প দোকান, লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক ভবন।
রিভারফ্রন্ট উন্নয়ন
সাধারণত ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ ঐতিহাসিক এলাকা থাকে নদ-নদীবিধৌত। আবার স্থান-কাল-পরিবেশভেদে নদ-নদীর পরিবর্তে ওয়াটার চ্যানেল বা নদী-নালা-খাল-বিল থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে নগরায়ণের অনেক কিছু উঠে আসে। যাকে শহর ও নগরব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এলাকাজুড়ে রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী। আবার ঐতিহাসিক নারায়ণগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। ঐতিহাসিক সোনারগাঁ ও পানাম নগরজুড়ে রয়েছে পঙ্খীরাজ খালের অংশবিশেষ, যা নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ত্রিবেণী খাল হয়ে শীতলক্ষ্যায় মিশে গেছে।
স্থানীয় স্থাপনার ব্যবহার, পুনরুজ্জীবন ও অভিনব নকশা প্রণয়ন
ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ এলাকায় বহু স্থাপনা কালক্রমে গড়ে ওঠে। এসব স্থাপনার কিছু ব্যবহারযোগ্য আবার কিছু অব্যবহারযোগ্য। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে দোকানপাট, হাটবাজার, স্কুল ভবন, পাঠাগার ভবন, সরকারি কোনো দপ্তরখানা ইত্যাদি। এসব স্থাপনার সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাÐ সরাসরিভাবে জড়িত থাকে, যা বংশপরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত বহন করে আসছে। আবার, এই অর্থনৈতিক প্রভাব সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক শাখায় প্রবাহ বিদ্যমান। ঐতিহাসিক স্থাপনার উন্নয়নের পেছনে এসব ছোট-বড় স্থাপনার স্থানান্তর বা পুনরুজ্জীবন দরকার। পুরোনো বাড়িঘরগুলোর নিচের অংশে এমন চালচিত্র বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ, শাঁখারী বাজার, ঝিনাইদহের বারোবাজার এবং নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে এমনটা দেখা যায়। মোগল ও ঔপনিবেশিক আমলের বহু স্থাপনা যেগুলো দুই-তিনতলা পর্যন্ত বিরাজমান, সেগুলোর নিচের তলা অর্থাৎ, গ্রাউন্ড ফ্লোর মোটামুটি উন্মুক্ত থাকে। যাতে প্রচলিত স্থাপনার মতো করে দরজা বা দেয়ালের পরিবর্তে শাটার সিস্টেম ও গদিসাইত করা থাকে। এসব জায়গায় থাকে ব্যবসায়িক লোকজনের কার্যকলাপ। দেখা যায়, সরাসরি সড়কের সঙ্গে দোকানের সম্পর্ক থাকে এবং একটি সামাজিক হাব বিশেষ গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে এসব এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পে এই স্থানীয় বাজারব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন দরকার, যা অর্থনৈতিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে ও বাজারের পুনর্জন্ম প্রদান করবে। আবার, নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বিবি মরিয়ম সমাধি ও মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি অধুনা স্কুল গড়ে উঠেছে। যার সঙ্গে ওই কমপ্লেক্সের সময়সীমার কোনো রকম সম্পর্ক নেই। এখন এই স্থানের উন্নয়ন প্রকল্পে এই স্কুলের স্থানান্তর অত্যাবশ্যক। তা না হলে শুধু অসামঞ্জস্যই তৈরি হবে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
হেরিটেজ ট্রেইল ডিজাইনের আরও একটি অত্যাবশ্যক বিষয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ইতিপূর্বে, হেরিটেজ ট্রেইলে কাঠামোগত উন্নয়ন সম্পর্কে বহু আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে কাঠামোগত উন্নয়ন দরকার, সেখানেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ছোট পরিসরের ডিজাইন সংযুক্ত রয়েছে। এসব উন্নয়নের মধ্যে যা যা রয়েছে –
পাবলিক টয়লেট
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ডিসপোজাল পয়েন্ট
ডাক ও টেলিযোগাযোগ লাইনের ব্যবস্থা করা
রাস্তা, কোর্টইয়ার্ড ও বাগানে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা
ড্রেন সিস্টেম
পার্কিং হাউস
স্যুভেনিওর শপ
সুপেয় পানীয়র ব্যবস্থা
কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই জরুরি। আর এগুলোর প্রতিফলনের ফলেই আরবান ট্রেইল নির্মাণ সম্ভব।
সাইনেজ সিস্টেম ও প্রকাশনা
ট্রেইলে খুব অত্যাবশ্যক একটা বিষয় হলো ম্যাপিং বা মানচিত্র। মানচিত্র বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। একটা মানচিত্র হয়ে ওঠে প্রশিক্ষিত গাইড। এটিকে ব্রোশিওর ট্রেইলও বলা যায়। এই ধরনের ট্রেইলগুলো সাধারণত বাংলা, ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়ে থাকে। ব্রোশিওর ট্রেইলের ম্যাপগুলো প্রতিটা দেশের ভাষায় লিখিত হয়। তবে, আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষাও সংযুক্ত থাকতে পারে। এই ট্রেইল সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সারাংশভাবে প্রকাশ করে। ম্যাপিং ব্রোশিওর ট্রেইল ছাড়াও সাইনিং ট্রেইল থাকতে পারে। এখানে, বিভিন্ন রাস্তার চিহ্ন ও স্পষ্ট নির্দেশনা ইংরেজি ও বাংলায় লেখা থাকে। তা ছাড়া এই ট্রেইলে পথচারী ক্রসিং, বাস স্টপ, এমআরটি স্টেশন, ট্রাফিক পয়েন্ট এবং সাইকেল পাথওয়ে উপযুক্ত হতে হবে চিহ্ন এবং মানচিত্রে সঠিকভাবে উল্লেখ করা উচিত।
সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা
যেকোনো স্থানের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও নিয়মকানুন যেমন অত্যাবশ্যক, তেমন ওই ঐতিহাসিক এলাকায় যে সম্প্রদায় বা মানুষজন বসবাস করে থাকে তাদের সর্বদলীয় অংশগ্রহণ ও সার্বিক অনুমোদন প্রয়োজন। এই দুই এর ব্যতিরেকে কোনোভাবেই ঐহিত্যকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। এক একটা ঐতিহাসিক এলাকায় বহু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস কওে, যারা বংশপরম্পরায় সেই স্থানের দেখভাল করে থাকে। তাদের এক প্রজন্মের বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে আরেক প্রজন্মের হাতে ঐতিহ্যের চাবিকাঠি তুলে দেয়। আর এভাবেই একটি ঐতিহাসিক এলাকার ঐতিহ্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। সম্প্রদায়ের লোকজনের অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে সবার সর্বজনীনতা প্রয়োজন।
একটি ঐতিহাসিক এলাকায় সম্প্রদায়ের উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও সার্বিকতার ওপরে নির্ভর করে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সেগুলো হচ্ছে-
সম্প্রদায়ের মন থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণ
সম্প্রদায়ের সবার অনুমতি গ্রহণ
সম্প্রদায়ের স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও সেই মতামতের অনুমোদন
সম্প্রদায়ের কাজের ব্যাপারে সক্ষমতা
সম্প্রদায়ের উদার মানসিকতা
সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রায় ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্য ব্যস্ততা
সম্প্রদায়ের সক্ষমতা
সম্প্রদায়ের পেশাদারত্বের প্রতিস্থাপন
সম্প্রদায়কে সামগ্রিক সম্প্রদায়ে রূপদান
সম্প্রদায়ের সার্বিক সমর্থন।
উদাহরণস্বরূপ, মিরকাদিমের নগর কসবা বা পুরান ঢাকায় শাঁখারী বাজারে বহু লোকজন বা অধিবাসী প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বসবাস করে আসছে। এই সম্প্রদায়ের লোকজন কাউকে বাদ দিয়েই উন্নয়ন সম্ভব না। বরঞ্চ, এসব এলাকার ঐতিহাসিক স্থাপনার উন্নয়নের পেছনে এই সম্প্রদায়ের লোকজনের সর্বজনীন উপস্থিতি, সরাসরি অংশগ্রহণ, হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা ও উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। সম্প্রদায়কে ঘিরে ঢেলে সাজাতে হবে আরবান নকশা।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সম্প্রদায়ের লোকজনের টাকাপয়সা দিয়ে স্থানান্তর করা হয় আবার জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়, যা মোটেও ঠিক নয়। আপনি একটা তাঁতিপাড়ায় ঐতিহ্য উপভোগ করতে গেলেন আর সেই এলাকায় তাঁতিদের কোনো বাস নেই। ভাবা যায়, সেখানে ঐতিহ্যের মূল্যায়ন হচ্ছে নাকি অবমূল্যায়ন হচ্ছে? শাঁখারী বাজারে আমরা হিন্দু জনগোষ্ঠী ছাড়া ভাবতেই পারি না। সুতরাং, এমন উন্নয়ন যেন না হয়, যেখানে শাঁখারী বাজারের লোকজনের বিতাড়িত করে নকশা প্রণয়ন করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সম্প্রদায়ের লোকজনের উদার মানসিকতার অধিকারী হতে হয়। তাঁদের ভাবতে হবে যে তাঁরা সাধারণ কোনো মানুষজন নন। তাঁদের ওপর সমাজ তথা দেশ ও কালের অনেক দায়িত্ব বর্তায়। এখন কথা হলো তাহলে সব ঐতিহ্যবাহী সব বাড়িঘরজুড়েই কি লোকজন বাস করবে? উত্তর হলো না। যারা বাড়িঘরে বাস করে থাকে তাদের উপযুক্ত জায়গা-জমির কাগজপত্র ও দলিল-দস্তাবেজ দেখানোটাও জরুরি। অন্যের বাড়ি যারা জোরপূর্বক বেদখল করে আছে, তাদের জন্য কোনো সৌজন্যতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে স্থান, কাল ও পরিবেশভেদেও এসব সম্প্রদায়ের লোকজনের কথা গভীরভাবে ভাবতে হয় ও বিশ্লেষণ করতে হয়। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় বহু হিন্দু এই দেশ, বাড়িঘর ত্যাগ করে ভারতে স্থানান্তর হন। তাদের ছেড়ে যাওয়া এই পোড়োবাড়িগুলো অনেক মুসলিম বেদখল করে আছে। আবার, কেউ কেউ তাদের থেকে কম দামে কেনেন। অনেক সময় সেটি ছিল জোর-দখলের মতো। এখন এসব বাড়িঘরের ব্যাপারে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
স্থপতি মৃধা রাতুল
চলবে
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৯ তম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩