সেখ আকিজ উদ্দিন: জীবন ও সময়

প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

সেখ আকিজ উদ্দিন, প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের বাইরে দাঁড়িয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গড়ে তুলেছেন দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রæপ। তৈরি করেছেন নিজের মতো একটা পথ। একটা সময় ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করেছেন। তবে তিনি নিজে ভোগ করতেন কম। ব্যবসায়ী হিসেবে ছিলেন সাহসী, খরচের ক্ষেত্রে ছিলেন সংযমী। এই ব্যবসায়ী তাঁর সব সম্পদ দেশে বিনিয়োগ করেছেন। বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কেনেননি, এমনকি ছিলেন না ঋণখেলাপিও। ১৮ জুন ২০২৩ রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রæপের প্রতিষ্ঠাতা সেখ আকিজ উদ্দিন-এর জীবনীগ্রন্থ ‘সেখ আকিজ উদ্দিন: জীবন ও সময়’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন বক্তারা। বইটি প্রকাশ করেছে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক দৈনিক বণিক বার্তা। অনুষ্ঠানে সেখ আকিজ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরাসহ দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘সেখ আকিজ উদ্দিন ছিলেন আমার এলাকার মানুষ। ছোটবেলা থেকেই ওনার সম্পর্কে জেনেছি। উনি বড় ব্যবসায়ী হয়েও খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি সফল ছিলেন। নতুন উদ্যোগ নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।’

অনুষ্ঠানে আকিজ-বশির গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘যশোরের একটা গ্রাম থেকে এসে দেশের পণ্য বিতরণব্যবস্থার চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। ভোগ্যপণ্য বানাতেন, তবে ভোগে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি মিতব্যয়ী ছিলেন, তবে কৃপণ ছিলেন না। আমেরিকান এক চিকিৎসক ওনাকে দেখতে দুবার ঢাকায় এসেছেন। গভীর সম্পর্কের কারণেই তিনি এ দেশে এসেছিলেন।’

বশির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা ১০ ভাই, ৫ বোন। সবাই বাবার আদর্শকে লালন করার চেষ্টা করি। আমি আমার বড় ভাইয়ের সামনে কখনোই উঁচু গলায় কথা বলি না। এই শিক্ষা আব্বা আমাদের দিয়েছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আমার বন্ধুরা যখন ঘুরতে গেল, আব্বা তখন আমাকে ডেকে বললেন, সময় নষ্ট না করে ব্যবসায় সময় দাও। মাত্র ১৭ বছর বয়সে আব্বার সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমার প্রথম বেতন ছিল মাত্র তিন হাজার টাকা।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, দেশ থেকে অর্থের পাশাপাশি উদ্যোক্তা-মেধা এসবও পাচার হয়ে যাচ্ছে। আকিজ উদ্দিনের মতো উদ্যোক্তা এখন আর দেশে দেখা যাচ্ছে না। তিনি ব্যবসায় যেমন সৎ ছিলেন, তেমনি ছিলেন সাহসী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক পরিচালক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, তিনি শুধু ব্যবসায়ী হিসেবে নয়, একজন মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আবেগাক্রান্ত কণ্ঠে সেখ আকিজ উদ্দিনের ছেলে আমিন উদ্দিন বলেন, ‘একবার ব্রিটিশ এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটা মিলের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য আব্বা আমাকে বলে দিলেন ১৫ লাখ ডলার দাম দিতে। কিন্তু আমি সেটা দামাদামি করে ১৪ লাখ ডলারে কিনেছিলাম। এ কথা আব্বাকে জানানোর পর তিনি দেশের ডলার কম খরচ হওয়ায় খুবই খুশি হন।’

আনোয়ার গ্রæপের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের টাকা কেন দেশে থাকছে না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। আনোয়ার হোসেন বা আকিজ উদ্দিন চাচার মতো ব্যবসায়ীরা দেশে বিনিয়োগ করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন।’

অনুষ্ঠানে আবদুল মোনেম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, ‘বড় মানুষেরা একই কাজ আলাদাভাবে করে থাকেন। আকিজ চাচা, আনোয়ার চাচা কিংবা আমার বাবা- তাঁরা সেই কাজ করে দেখিয়েছেন।’

বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘প্রকাশিত বইয়ের মাধ্যমে আমরা ওনাকে “হিরো” বা নায়ক বানাতে চাইনি; বরং ওনার উদ্যোক্তাজীবনের নানা দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, অর্থনীতিবিদ মামুন রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ও সেখ আকিজ উদ্দিনের পুত্রবধূ জামালুন্নেছা। উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয়, এসিআই অ্যাগ্রোলিংকের এমডি এফ এইচ আনসারী, আইপিডিসির এমডি মমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৫ তম সংখ্যা, জুলাই ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top