ব্যবহারের ভিত্তিতে সিল্যান্টের কারিগরি বৈশিষ্ট্য
সিল্যান্ট বাজার থেকে কিনে আনার সময় তা পেস্ট আকারে থাকে। পরে যখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তখন তা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্লাস্টিক আকার ধারণ করে। বিভিন্ন ফাটল বা যেকোনো দুটি ধাতব বা কাঠের বস্তুর মাঝখানে এই উপকরণটি প্রয়োগ করার পর ফাটল থাকলে তা বন্ধ হয় এবং ফেটে যাওয়া দুটি অংশ বা সংস্থাপিত দুটি অংশকে আটকে রাখে।
সিল্যান্ট প্রয়োগের সময় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা
জলবায়ু এবং বছরের সময় অনুযায়ী বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাপমাত্রা কম হলে যেমন সিল্যান্ট শুকাতে অনেক সময় লাগে, একইভাবে তাপমাত্রা বেশি হলেও দ্রæত শুকিয়ে যায়। ফলে সিল্যান্টের স্থিতিস্থাপকতা কমতে থাকে।
সান্দ্রতা (ঠরংপড়ংরঃু) এবং আনুভূমিক ফাটলের জন্য সিল্যান্ট
সিল্যান্টের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো কোনো সিল্যান্ট আড়াআড়ি ফাটলের জন্য ভালো। আবার কোনোটি আনুভূমিক যেকোনো বস্তুর জোড়া লাগানোর জন্য বেশ কার্যকরী। তবে এ দুই ধরনের কোনো সিল্যান্টই দেয়ালের জন্য ভালো কাজ করবে না। তাই দেয়ালের জন্য নন-স্যাগিং সিল্যান্ট নির্বাচন করতে হবে। এটি এমন সিল্যান্ট, যা কোনো নির্দিষ্ট ধরনের কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয়। ফ্লোরে ব্যবহারের সিল্যান্ট অবশ্যই পেস্টের মতো শক্ত হলে হবে না। এ সিল্যান্টের তারল্য একটু বেশি হতে হবে। কারণ যেখানে ফাটল থাকবে, সে পর্যন্ত গড়িয়ে বিস্তৃত হওয়ার মতো তরল না হলে এবং ভালোভাবে না ছড়ালে ফাটল সহজে বন্ধ হবে না। তারপরও যিনি প্রয়োগ করবেন, তাঁকে অবশ্যই উপযুক্ত টুলস ব্যবহার করে সব জায়গায় সিল্যান্ট সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সিল্যান্ট শুকানোর ধরন
আধুনিক সব সিল্যান্ট এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তা বাতাসের সংস্পর্শে আসার পর বায়ুর আর্দ্রতার সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রæত শুকিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে চটজ এবং গঝ পলিমারসমৃদ্ধ সিল্যান্টগুলো এভাবেই অল্প সময়ের মধ্যে শুকিয়ে যায়। এ ধরনের সিল্যান্টের প্রতি ১ মিলিমিটার স্তর শুকাতে কয়েক ঘণ্টা সময় নেয়। সিল্যান্টের স্তরের পুরুত্বভেদে কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোপুরি শুকিয়ে যায়।
কিছু সিল্যান্ট আছে, যেগুলো পলিমার বা জলভিত্তিক, যা শুধু তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করেই শুকিয়ে থাকে। সেগুলোর সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতার কোনো বিক্রিয়া না হওয়ায় তা শুকাতে একটু বেশি সময় লাগে। এটির উপরিভাগ বাতাসের সংস্পর্শে এলে খুব দ্রæত শুকিয়ে গেলেও ভেতরে শুকাতে সময় দরকার হয়। জলভিত্তিক অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট, পুরোনো ওলিওরেসিনাস বা রাবারভিত্তিক সিল্যান্ট এ ধরনের সিল্যান্টের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
নির্মাণ প্রকল্পে ২ কম্পোনেন্টবিশিষ্ট সিল্যান্টও ব্যবহার করা হয়। তবে তা প্রয়োগে বেশি ঝামেলা থাকায় খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না। তবে নির্মাণে এ ধরনের সিল্যান্ট ব্যবহারের কিছু সুবিধাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তা সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে শুকিয়ে যায়। অসুবিধা হলো তা মিক্সিংয়ের জন্য একজন পেইন্টারকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সে কারণে যেসব প্রকল্পে অপেক্ষা করার মতো সময়ের অভাব থাকে, সেখানে হয়তো এক কম্পোনেন্টবিশিষ্ট রেডিমেইড সিল্যান্ট ব্যবহার করা হয়।
ক্রস সেকশন এবং প্রশস্ততার সক্ষমতা
কিছু সিল্যান্ট আছে, যেগুলোর প্রশস্ততার সক্ষমতা খুবই কম। সেগুলো প্রশস্ত ফাটলে ব্যবহার করলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হতে পারে। ধরুন, আপনার ফ্লোরে একটি ফাটল আছে, যা ৬ ইঞ্চি প্রশস্ত এবং ৪০ ইঞ্চি লম্বা। এই ফাটল বন্ধ করতে নন-ইলাস্টোমেরিক সিল্যান্ট ব্যবহার করলে তা শুকানোর পর ফেটে যেতে পারে। কারণ এ ধরনের সিল্যান্টের সম্প্রসারণ ক্ষমতা খুবই কম। তবে ইলাস্টোমেরিক সিল্যান্টের সম্প্রসারণ ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় তা যেকোনো প্রশস্তের ফাটল বন্ধে বেশ কার্যকরী।
সিল্যান্টের গভীরতা
সিল্যান্টের গভীরতা সব সময় প্রস্থের চেয়ে কম হওয়া উচিত। কারণ পৃষ্ঠ শুকিয়ে গেলে তাতে টান ধরতে বা কিছুটা সংকুচিত হতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিকৃতও হতে পারে। এর ফলে ভেতরে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে, সে কারণে প্রস্থের চেয়ে গভীরতা কম হওয়া উচিত। গভীরতা প্রস্থের তুলনায় কত কম হবে সে ব্যাপারে নিচের তুলনামূলক অনুপাতটি অনুসরণ করা যেতে পারে।
ন্যূনতম মাত্রা ৫ মি.মি. ী ৫মি.মি. হওয়া উচিত
৫ থেকে ১২ মি.মি. প্রস্থের জন্য গভীরতা সামান্য কম হওয়া প্রয়োজন
১২ থেকে ২৫ মি.মি. প্রস্থের জন্য গভীরতা ৮ থেকে ১২ মি.মি. হতে হবে এবং
২৫ মিলিমিটারের বেশি প্রস্থের জন্য রাসায়নিক জয়েন্টের ধরন অনুযায়ী ১২ থেকে ১৮ মি.মি. পর্যন্ত গভীরতা হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী গভীরতা প্রস্থের অর্ধেক হওয়া প্রয়োজন
এ ছাড়া বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে ফাটলের গভীরতা খুব বেশি হলে প্রথমে তা বিভিন্ন ব্যাকআপ উপকরণ ব্যবহার করে গভীরতা কমিয়ে আনতে হবে। পরে সেখানে সিল্যান্ট প্রয়োগ করলে তা বেশি টেকসই হবে।
সিল্যান্টের ফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য
বিভিন্ন পৃষ্ঠে সিল্যান্টের আসক্তি নির্ভর করে সিল্যান্ট ও নির্ধারিত পৃষ্ঠের ধরনের ওপর। চটজ শ্রেণিভুক্ত সিল্যান্ট কিছু বস্তুর সঙ্গে ভালো শক্তিশালী বন্ধন সৃষ্টি করে। এ ধরনের সিল্যান্ট যেকোনো ধাতব বস্তু, কংক্রিট, কাচ এমনকি প্লাস্টিকের (পিভিসি) সঙ্গেও শক্তিশালী বন্ধন সৃষ্টি করে। তবে সিলিকন সিল্যান্টের ক্ষেত্রে কিছু ধাতব বস্তু এবং প্লাস্টিকের পৃষ্ঠের আনুগত্য পেতে প্রাইমারের প্রয়োজন হয়। প্রাইমার হলো একধরনের এজেন্ট-জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ, যা সিল্যান্টকে সহজে আটকে থাকতে সহায়তা করে। এ ধরনের সিল্যান্ট কাচের ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকরী হলেও অন্যান্য পদার্থের ক্ষেত্রে সিল্যান্স প্রাইমার ব্যবহার করতে হয়। তাই সিল্যান্ট প্রস্তুতকারদের উচিত তাদের প্রস্তুতকৃত সিল্যান্টটি প্রাইমারসহ এবং প্রাইমার ছাড়া কোন কোন পৃষ্ঠে ভালো কাজ করবে, মোড়কের গায়ে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা। নির্মাণ এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোন কোন ক্ষেত্রে ওই সিল্যান্ট ব্যবহার করা যাবে, তাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকা দরকার।
সিল্যান্টের স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা
ফাটল বন্ধ করার পরপরই যদি চাপ প্রয়োগ করা হয়, তবে জোড়া ভেঙে যাবে এটিই স্বাভাবিক। তবে সামান্য চাপে ভেঙে গেলে তা অস্বাভাবিক। আবার যদি জোড়া লাগানোর পর হালকা চাপে জোড়ার মুখ খুলে যায়, তবেও সিল্যান্টের জোড়া ভেঙে যেতে পারে। যদি সিল্যান্ট শুকাতে বেশি সময় নেয়, তবে সে ক্ষেত্রেও জোড়া ভেঙে যেতে পারে। তাই সিল্যান্ট শুকানোর পর ফাটলের মুখে হালকা চাপ প্রয়োগ করে সিল্যান্টের স্থিতিস্থাপকতা ও পৃষ্ঠের প্রতি আসক্তি পরীক্ষা করার দরকার হয়। সাধারণত সিল্যান্টের স্থিতিস্থাপকতার পরিমাপক হিসেবে ৫০ বা ১০০ শতাংশকে ধরা হয়। আইএসও ৮৩৩৯ (ওঝঙ৮৩৩৯)-কে সিল্যান্টের সম্প্রসারণ ক্ষমতার আদর্শ মান ধরে প্রসারণক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়। সিল্যান্টের জোড়ার মুখের প্রসারণ ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতার ভিত্তিতেই পুরো জয়েন্টের মডুলাস (মাপাঙ্ক) নির্ধারণ করা হয়। তাই সিল্যান্ট ব্যবহারকারীদের সিল্যান্ট প্রয়োগের আগে আইএসও প্রদত্ত নিচের গুণগত মানের তালিকা অনুযায়ী যাচাই করে নেওয়া উচিত। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সিল্যান্ট ব্যবহারের করলে তা সঠিকভাবে কাজ করবে।
সিল্যান্ট নির্মাণসংক্রান্ত অনেক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া পুরোনো ভবন সংস্কারেও সিল্যান্টের গুরুত্ব কম নয়। তাই এটি ব্যবহারের আগে তার গুণগত মান যাচাই করা এবং প্রয়োগের আগে তা আইএসও স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পরীক্ষা করা প্রকৌশলীদের দায়িত্ব। তাই ব্যবহারের ক্ষেত্র অনুযায়ী উপযুক্ত সিল্যান্ট নির্বাচন করে তা যথা স্থানে যথা নিয়মে প্রয়োগ করলে স্থাপনার স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে অনেকাংশে।
ংনহংধৎধিৎ@মসধরষ.পড়স
সারোয়ার আলম
প্রকাশকা:ল বন্ধন ১৫৪ তম সংখ্যা, জুন ২০২৩