সাধারণ কল্ক বা পুটি
১৯৫০-এর দশকের আগে বিভিন্ন উপকরণ যেমন কাচ, ধাতু, কাঠ, কংক্রিট ইত্যাদি জোড়া দেওয়ার জন্য ঐতিহ্যবাহী কল্ক ব্যবহার করা হতো। ব্যবহার অনুযায়ী এর ধরন ছিল ভিন্ন। যেমন, সাধারণ নির্মাণের ক্ষেত্রে অলিওরেসিন, তিসির তেল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে বিটুমিন ও আলকাতরা ব্যবহার করা হতো। এই ফর্মুলেশনগুলো পর্যাপ্ত স্থিতিস্থাপক ছিল না। নির্দিষ্ট সময় পর তা শুধু কয়েক শতাংশ প্রসারণ সহ্য করতে পারে এবং আবহাওয়া প্রতিরোধের ক্ষমতা ছিল খুবই সামান্য।
উপকরণ
বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার
তিসির তেলের পুটি
১০-১৫ শতাংশ মিনারেল ফিলার বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট থাকে।
তিসির তেল বাতাসের অক্সিডেশনের মাধ্যমে শুকিয়ে যায়।
তেলের সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া সব সময় চলতে থাকে। ফলে কয়েক বছর পর এই পুটি জয়েন্টগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
এ ধরনের সিল্যান্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধাতব বস্তু ও কাচের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ লোহার ফ্রেমবিশিষ্ট কাচের জানালায় এ ধরনের ব্যবহার দেখা যায়।
উন্নত অলিওরেসিনাস পুটি/কল্ক
পরিপক্ব সয়া-জাতীয় শস্য অথবা তিসির তেলের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং ফাইব্রাস ট্যাল্ক যুক্ত করে এ ধরনের সিল্যান্ট তৈরি করা হয়।
এ সিল্যান্ট সর্বোচ্চ মানের হলে তা ৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারণ হতে পারে, যা যথেষ্ট নয়। প্রিফেব্রিকেটিং সিল্যান্ট হিসেবে তা খুব উপযোগী নয়।
বিটুমিনভিত্তিক ফর্মুলা
বিটুমিনভিত্তিকু ফর্মুলায় তৈরি অনেক সিল্যান্ট আগে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল। পুরকৌশল কাজে ফাঁকা স্থান খুব বেশি হয়ে থাকে। তাই উচ্চ পারফরম্যান্সের পলিমার দিয়ে বড় বড় ফাঁকা বন্ধ করা ছিল বেশি ব্যয়বহুল। তা ছাড়া বিটুমিন ও আলকাতরা ব্যবহারে প্রকৌশলীরা অভ্যস্ত ছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় পুরকৌশলকাজে এখনো বিটুমিন বা আলকাতরা সিল্যান্ট ব্যবহার করা হয়। সময়ের ব্যবধানে গুণগত মান ও প্রস্তুতকৌশল উন্নত করা হয়েছে। সত্তরের দশক থেকে শুরু করে রাবার, স্টাইরেনিক পলিমার যেমন এসবিএস, বা পলিউরেথিনও ব্যবহার করা হয় এ ধরনের সিল্যান্টের সঙ্গে। বিশুদ্ধ বিটুমিন বা আলকাতরা যৌগগুলো শুধু কয়েক শতাংশ প্রসারণ সহ্য করতে পারে এবং সবচেয়ে সেরা ফর্মুলেশনের পরও ২০-২৫% পর্যন্ত স¤প্রসারিত হতে পারে।
সিন্থেটিক পলিমার এবং রাবারভিত্তিক সিল্যান্ট
সিন্থেটিক পলিমার খুব উচ্চ স্থিতিস্থাপকতা এবং দীর্ঘ স্থায়িত্বসম্পন্ন উচ্চ কার্যকর সিল্যান্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পর্যাপ্ত ফর্মুলেশনের মাধ্যমে যেকোনো নির্দিষ্ট প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন গুণমানের সিল্যান্ট তৈরি হতে পারে। এই সিল্যান্ট নির্দিষ্ট বৈচিত্র্যের অটোমোটিভ সিল্যান্ট, যা সিন্থেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি। এটি পলিমার নামেও পরিচিত। বিশেষত গাড়ির ফিনিশিংয়ের ক্ষেত্রে এই সিল্যান্ট বেশি ব্যবহৃত হয়। বাজারে প্রচলিত কিছু পলিমার সিল্যান্টের মধ্যে রয়েছে-
পলিবিউটিন
পলিবিউটিন একটি কম আণবিক ওজনের পলিমার, যা তরল, আঠালো, অশুকানো ও সস্তা।
এই পলিমারগুলো প্রায়ই ফিলার (ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ট্যালক, মাটি) এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে মেশানো হয়। তারল্য নিয়ন্ত্রণ করতে অল্প পরিমাণে দ্রাবক পলিবিউটিনের সঙ্গে যোগ করা হয়।
পলিবিউটিনের ওপর ভিত্তি করে সিল্যান্ট ফর্মুলেশনগুলো শুধু দ্রাবক-জাতীয় পদার্থ শুকানোর মাধ্যমে সেট করা হয়।
স্থিতিস্থাপকতা গুরুত্বপূর্ণ নয়, এমন সেকশন বা জয়েন্টের ক্ষেত্রে সিল্যান্ট তৈরিতে পলিবিউটিন ব্যবহার করা হয়। যেমন, দুই প্রস্থ ধাতব বস্তুকে জোড়া লাগাতে যে সিল্যান্ট দরকার, তাতে স্থিতিস্থাপকতা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। জানালায় গøাসিং, প্রিফর্মড ফিতা ও টেপ তৈরি করতেও ব্যবহৃত হয় পলিবিউটিন সিনথেটিক সিল্যান্ট। আমরা পানির কল ও গ্যাসপাইপে যে ধরনের থ্রেড টেপ ব্যবহার করে থাকি, তাও পলিমার (পলিবিউটিন) সিল্যান্ট।
পলিবিউটিনগুলোকে প্লাস্টিকাইজার হিসেবে কাজ করার জন্য প্রায়ই বিউটাইল রাবারের সঙ্গে মেশানো হয়।
পলি-আইসোবিউটিলিন (পিআইবি)
এটি একটি স্থায়ীভাবে চটচটে পলিমার এবং এটি শুধু অন্যান্য সিল্যান্ট যেমন, ওলিওরেসিনাস বা বিউটাইল রাবার পরিবর্তন করতে ব্যবহৃত হয়।
পিআইবি সিল্যান্টগুলো গøাস শিল্পকারখানায় বেড তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিউটাইল রাবার
বিউটাইল রাবার আইসোবিউটিলিন এবং আইসোপ্রিনের বিক্রিয়ায় গঠিত একটি যৌগ। রাসায়নিকভাবে এর স্যাচুরেশনে ২ মোল শতাংশ রয়েছে।
বিউটাইল রাবার গ্যাসের জন্য দুর্ভেদ্য, এটির মোটামুটি ভালো আবহাওয়া এবং অক্সিজেন প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে। এই রাবারের কিছু স্থিতিস্থাপকতা দেখা যায়। ৪০% স¤প্রসারণ এর মাধ্যমে সৃষ্ট জয়েন্টগুলো আলাদা হয়ে যেতে পারে, তবে ১৫% পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে।
বিউটাইল রাবার যে ফর্মুলায় প্রস্তুত করা হয়, তাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
২০% বিউটাইল রাবার
৫ থেকে ১০% ট্যাকফাইং রজন যেমন, পরিবর্তিত বা হাইড্রোজেনেটেড রেসিন বা হাইড্রোকার্বন রজন ধাতু এবং কাচের ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদানের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫০ থেকে ৬০% খনিজ ফিলার (ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ফাইবারস ট্যালক, কাদামাটি এবং অন্যান্য)।
এতে থাকে ২০ থেকে ২৫% দ্রাবক। যেমন খনিজ স্পিরিট ও অন্যান্য দ্রাবক। দ্রাবকগুলো সব উপাদান দ্রবীভূত এবং মিশ্রিত করতে সাহায্য করে।
পলিবিউটিন প্রায়ই প্লাস্টিকাইজার হিসেবে যোগ করা হয়।
বহিরাবরণের টেপ ও ফিতা (উদাহরণস্বরূপ থ্রেড টেপ) শতভাগ কঠিন, যা সহজে সংকুচিত হয় না।
বিউটাইল ও পলিসোবিউটিলিন উষ্ণতায় গলিত সিল্যান্ট
এগুলো বিশেষ পণ্য, যা আর্দ্রতার অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ কার্যকর। জানালায় কাচ স্থাপন করতে এই সিল্যান্ট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। দুটি কাচের প্যানেলেও এর ব্যবহার বেশ কার্যকর।
অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট
অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট রাবার-জাতীয় নরম ও নমনীয় ধর্মী, যা অ্যাক্রেলিক সিলার বা ল্যাটেক্স কল্কও বলা হয়। নমনীয়তার কারণে স্থাপনার ফাটল ও ছিদ্র সিল করার জন্যই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এটি। এ ছাড়া বাড়িতে ধুলোবালি, পানি ও পোকামাকড়ের অনুপ্রবেশ রোধে বেশ কার্যকর। প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি সব সময় নমনীয় থাকে এবং যেকোনো সময় এর আকৃতি পরিবর্তন করা যায়। এ ধরনের সিল্যান্ট কাঠ ও প্লাস্টারের মতো শোষণকারী পৃষ্ঠে ভালো কাজ করে। সে তুলনায় কাচ ও ধাতব পদার্থের ক্ষেত্রে কম কার্যকর। সিল্যান্ট মূলত প্লাস্টোমেরিক, যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারণ হতে পারে। শুকিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টে থাকা জল বাষ্পীভূত হয়। সে ক্ষেত্রে তা ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। প্রকৃতিগতভাবেই অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টগুলো দারুণ আবহাওয়া প্রতিরোধী। তবে জলের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। শুষ্ক আবহাওয়ায় ঘরের বাইরে ব্যবহার করলেও অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে কোনো ক্ষতি ছাড়াই। এ ছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধে অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট দারুণ কার্যকর। বাজারে অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙে।
যেসব ক্ষেত্রে অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলো হলো:
গøাস কিংবা অ্যালুমিনিয়াম শিটযুক্ত আধুনিক ভবনে গøাস কিংবা মেটাল শিট স্থাপনের ক্ষেত্রে অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ভবনের ইন্টেরিয়র সিস্টেমকে বাইরে আবহাওয়া থেকে সুরক্ষার জন্য এ ধরনের দেয়াল নির্মাণ করা হয়, যা কার্টেইন ওয়াল নামে পরিচিত।
অনেক সময় ভবনের দেয়ালের বাইরের দিকেও আরও একটি পাতলা দেয়াল তৈরি করা হয়। এটি কোনো আলাদা দেয়াল নয়, বরং মূল দেয়ালের গায়ে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা একটি সুরক্ষা স্তর, যা সাইডিং হিসেবে পরিচিত। বাইরের দেয়ালে এসব সাইডিং স্থাপনের জন্যও অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টের কোনো জুড়ি নেই।
প্রিফেব্রিকেটেড প্যানেলের সংযোগস্থলে।
কংক্রিটের দেয়ালে ধাতব যেকোনো ধরনের প্যানেল বা ডিজাইন করা ফ্রেম যুক্ত করতে ব্যবহার করা হয় অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট।
কংক্রিটের দেয়ালে কাঠের জানালা, প্যানেল, দরজা ইত্যাদি স্থাপন করতে অবশ্যই অ্যাক্রেলিক সিল্যান্ট ব্যবহার করা হয়।
অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টে ৮০ শতাংশ পলিমার বা প্লাস্টিক এবং ফিলার ব্যবহার করা হয় মোট ওজনের প্রায় ৫০ শতাংশ। ফিলার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পাইরোজেনেটেড সিলিকা, ম্যাগনেশিয়াম সিলিকেট। অল্প পরিমাণ প্লাস্টিকাইজারও ব্যবহার করা হয় ক্ষেত্রবিশেষে। দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয় পাইনের তেল। সিল্যান্টে সর্বাধিক কঠিন পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যার পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ। শুকানোর সময় এ ধরনের সিল্যান্ট প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশিই সংকুচিত হয়। খুব বেশি সংকুচিত হলেও যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সে কারণে যথা মাত্রায় ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিকাইজার।
সাধারণত সবচেয়ে বেশি যে সংযোজনকারীগুলো অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টে যোগ করা হয় তা হলো:
ফিলার: ফিলার এমন এক উপাদান, যা সিল্যান্টের পরিমাণ বাড়ায় এবং উৎপাদনব্যয় সীমিত রাখে। ফিলার হিসেবে অধিক ব্যবহৃত হয়- ক্যালসিয়াম কার্বনেট, কাদামাটি, বেরিয়াম সালফেট ও ফিউমড সিলিকা।
প্লাস্টিকাইজার: প্লাস্টিকাইজার হলো অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্লাস্টিকাইজার হিসেবে এ সিল্যান্টে ব্যবহার করা হয় পিএইচথেলেটস (ঢ়যঃযধষধঃবং), ডিবেনজোয়েটস (ফরনবহুড়ধঃবং), প্রোপিলিন ও গøাইকোল অ্যালকাইল। এসব সংযোজনকারী উপাদান অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে শুকিয়ে যাওয়ার পরও এ সিল্যান্ট অনেক বেশি নমনীয় থাকে।
বিচ্ছুরণকারী এজেন্ট: এতে যোগ করা হয় বিচ্ছুরণকারী এজেন্ট। এগুলো ফিলারের সংযোজনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি স্থিতিশীলতাও বাড়ায়। অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টে যদি কোনো বিচ্ছুরণকারী এজেন্ট না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ফিলারগুলো ধীরে ধীরে পলিমারকে তার পৃষ্ঠে শোষণ করবে ফলে স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কম আণবিক ওজনের পলিকারবক্সিলিক অ্যাসিড লবণ ফিলার হিসেবে অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টে বিচ্ছুরণকারী এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সিল্যান্স: কাচের সঙ্গে অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টের ব্যবহার শতভাগ কার্যকর করতে এ ধরনের সিল্যান্টে ফিলার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সিল্যান্স। কাচের মতো দুর্ভেদ্য স্তরগুলোতে সিল্যান্টের কার্যকারিতা বাড়াতে ছোট অনুপাতে এ ফিলার যোগ করা হয়। এটি মূলত সিলিকনভিত্তিক একটি উপদান। যেহেতু কাচের সঙ্গে সিলিকনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, তাই এই ফিলার কাচকে জোড়া লাগতে দারুণভাবে কাজ করে। ফিলারযুক্ত এ সিল্যান্টকে সিলিকানাইজড অ্যাক্রেলিক সিল্যান্টও বলে থাকে।
ইলাস্টোমেরিক সিল্যান্ট
ইলাস্টোমেরিক সিল্যান্ট সব ধরনের সিল্যান্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান ও কার্যকর। ইঞ্জিনিয়ার, রাজমিস্ত্রি এবং সংশ্লিষ্ট যারা নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে এ ধরনের সিল্যান্টের কদর অনেক বেশি। এ সিল্যান্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাসায়নিক গঠনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভেরিয়েশন তৈরি করে থাকে। গাঠনিক ভিন্নতার কারণে ইলাস্টোমেরিক সিল্যান্টক চারভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হচ্ছে-
১। পলিসালফাইড সিল্যান্ট
পলিসালফাইড সিল্যান্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তরলে নিমজ্জিত স্থাপনায় প্রয়োগ করা হয়। অক্সিডাইজিং এজেন্ট ব্যবহারের ফলে পানির নিচেও এ সিল্যান্ট সহজ কিউরিং সিস্টেমের মধ্য দিয়ে দৃঢ়তা অর্জন করে। সাধারণত সুইমিংপুল, ফোয়ারা, কুলিং টাওয়ার, জ¦ালানি ও রাসায়নিক স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, বর্জ্য জল ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্টে বিশেষভাবে পলিসালফাইড সিল্যান্ট ব্যবহার করা হয়।
২। সিলিকন সিল্যান্ট
সত্তরের দশকের পর থেকে সিলিকন সিল্যান্ট অত্যন্ত সফল এবং জনপ্রিয় কনস্ট্রাকশন সিল্যান্ট হিসেবে বাজার দখল করে। যেসব কারণে সিলিকন সিল্যান্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, সেগুলো হচ্ছে-
প্রচÐ তাপ, তাপমাত্রা চক্র (ঠান্ডা ও গরম), পানি এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রতিরোধী। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ৪০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে সিলিকন সিল্যান্ট।
ফর্মুলেশন অনুসারে এর মডুলাস কম বা বেশি হতে পারে। অল্প চাপেই এ সিল্যান্টের জোড়া ভেঙে যায় না। অন্য সাধারণ সিল্যান্টের চেয়ে অন্তত ৫০০ গুণ বেশি চাপ সহ্য করতে পারে এবং স্থিতিস্থাপকতাও প্রায় ২৫-৫০ শতাংশ বেশি হয়।
খুব বেশি পরিমাণে উৎপাদন হওয়ায় এর দামও হাতের নাগালে।
৩। পলিউরেথিন সিল্যান্ট
এটি একধরনের ইলাস্টোমেরিক সিল্যান্ট, যার বৈশিষ্ট্যগত করণে তা পলিউরেথিন সিল্যান্ট হিসেবে বেশি পরিচিত। এর বৈশিষ্ট্যসমূহ নি¤েœ দেওয়া হলো-
ভাঙার আগে অন্তত ৬০০ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে।
৯০ শতাংশেরও বেশি ইলাস্টিক রিকভার করতে পারে।
ঘর্ষণ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে।
কংক্রিট, ধাতু, কাঠ কিংবা পিভিসি যেকোনো ধরনের উপকরণের সঙ্গে ব্যবহার করা যায়।
৪। এমএস পলিমার সিল্যান্ট
এম এস পলিমার সিল্যান্ট এক নতুন ধরনের সিল্যান্ট। সিলিল গ্রæপের উপকরণে তৈরি সিল্যান্ট বিলুপ্তির পর পলিথার পলিমারে তৈরি এ নতুন সিল্যান্টের নাম হয়েছে এমএস পলিমার সিল্যান্ট। এই সিল্যান্টের রাসায়নিক পদার্থগুলো বাতাসের আর্দ্রতার সঙ্গে বিক্রিয়া করে দৈনিক ৩ মিলিমিটার পর্যন্ত শুকাতে পারে, যা অন্যান্য সিল্যান্টের তুলনায় অনেক কম সময়।
ফেনাযুক্ত ফোম সিল্যান্ট
ফেনাযুক্ত ফোম আরেক ধরনের সিল্যান্ট, যা অন্য সব সিল্যান্টের চেয়ে ব্যতিক্রম। এটি হলো পলিউরেথিন পলিস্টার ফোম, যা বিভিন্ন সিলিং ট্যাকির (ফাঁকা বন্ধ করার আঠালো পদার্থ) মিশ্রণে তৈরি করা এক প্রকারের সিল্যান্ট। এটি ফোম-জাতীয় এবং ভেতরে আঠালো পদার্থ দিয়ে পূর্ণ থাকে। সে কারণেই এ ধরনের সিল্যান্টকে সুসিক্ত (ওসঢ়ৎবমহধঃবফ) বলা হয়ে থাকে। সুসিক্ত ফোম ফাটল বন্ধ করার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো কাজে না লাগলেও নির্মাণের বিচ্ছিন্ন অংশ জোড়া লাগাতে এই সিল্যান্ট সবচেয়ে বেশি কার্যকর। সাধারণত কোনো জানালার ফ্রেম দেয়ালে আটকানের ক্ষেত্রে, প্রিফেব্রিকেটেড ওয়াল (দূরবর্তী স্থানে তৈরি করা রেডিমেড ওয়াল), কার্টেইন ওয়াল ইত্যাদি স্থাপনের ক্ষেত্রে অন্যান্য সিল্যান্টের চেয়ে সুসিক্ত ফোম সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ছোট ছোট ব্রিজ, কালভার্টে ব্যবহার করা পাটাতনেও ব্যবহার করা যেতে পারে এ ধরনের সিল্যান্ট।
ব্যাকআপ উপকরণ
ব্যাকআপ উপকরণকে আসলেই সিল্যান্ট হিসেবে ধরা যায়, না তবুও এটি একধরনের সিল্যান্টের মতোই কাজ করে। তাই ব্যাকআপ উপকরণও সিল্যান্টের শ্রেণিভুক্ত। এ কথায় হয়তো আপনার মধ্যে বিভ্রম সৃষ্টি হতে পারে। সহজ করে বললে সিল্যান্টের সাপোর্টের জন্য যে উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তা-ই হলো ব্যাকআপ উপকরণ। তবে কেন ব্যাকআপ উপকরণ সিল্যান্টের শ্রেণিভুক্ত হবে? এর উত্তর হলো সিল্যান্ট ব্যবহার করার পর যেন অণু পরিমাণ ফাঁকাও অবশিষ্ট না থাকে তা বন্ধ করার জন্য এবং সিল্যান্টের গভীরতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিল্যান্টকে অনুভূমিকভাবে এই উপকরণগুলো সাপোর্ট দিয়ে থাকে। সে কারণেই এগুলো সিল্যান্টের শ্রেণিভুক্ত হওয়ার দাবি রাখে এবং এগুলো সিল্যান্টের শ্রেণিভুক্ত।
সিল্যান্টের সঙ্গে ব্যাকআপ উপকরণ ব্যবহার করার সময় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো, সিল্যান্টে ব্যবহৃত রাসায়নিক ও বিভিন্ন এজেন্ট যেন ব্যাকআপ উপকরণগুলো প্রভাবিত না করে। ব্যাকআপ উপকরণগুলো সাধারণতই পলিইথিলিন ফোমের হয়ে থাকে। এর খোলা ও বন্ধ দুই ধরনের কোষগহŸরই থাকতে পারে। কাজের ধরন, চাপ, তাপ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় আপনাকেই নির্বাচন করতে হবে কোন ধরনের উপকরণ আপনার প্রয়োজন হবে।
(…চলবে)
সারোয়ার আলম
ংনহংধৎধিৎ@মসধরষ.পড়স
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৩ তম সংখ্যা, মে ২০২৩