সততাই যাঁর ব্যবসার নীতি

সিদ্দিক আলী। বগুড়ার একজন সফল নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ী। তাঁর সাফল্যের পেছনে অবদান রেখেছে আকিজ সিমেন্ট। ব্যবসার শুরুতে তিনি খুচরা পর্যায়ে ব্যবসাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। কিন্তু আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির কর্মকর্তারা ব্যবসায় তাঁর দূরদর্শিতা উপলব্ধি করে তাঁকে ডিলারশিপ ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করেন। সম্ভাবনা বুঝতে পেরে তিনিও প্রস্তাবে রাজি হন। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমেই বেড়েছে তাঁর ব্যবসার কলেবর। এখন তিনি বগুড়া শহরের ফুলতলা, শাহজাহানপুরের ‘মেসার্স এস অ্যান্ড এইচ এন্টারপ্রাইজ’-এর স্বত্বাধিকারী। আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা মো. আরিফ হাসানের সহায়তায় এবারের ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে জানাব তাঁর ব্যবসায়িক জীবনের নানা সাফল্য-কথন।

ব্যবসায়ী সিদ্দিক আলীর জন্ম ১৪ আগস্ট ১৯৬৩ সালে বগুড়ায়। বাবা মরহুম নয়েম উদ্দিন প্রামাণিক ও মা মোছা. কিনী বিবি। তিনি সুলতানগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে মাধ্যমিক এবং সরকারি শাহ সুলতান মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর একই কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে বি.কম পাস করেন। এরপর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠানটি চাল, সার, কয়লা ও সিমেন্ট আমদানি ও বিপণন করত। দীর্ঘদিন চাকরির পর একটি অনাকাক্স্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্দিক আলীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা একসঙ্গে চাকরি ছেড়ে দেন। পরবর্তী সময়ে একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি পেলেও পরিবারের সবার আপত্তিতে তা করা হয়নি। ফুলতলা বাজারে তাঁদের একটি ভুসিমালের দোকান ছিল, যেটি পরিচালনা করতেন তাঁর ছোট ভাই। ওই ব্যবসাতেই তিনি যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর সাবেক এক সহকর্মীর সহযোগিতায় শুরু করেন সিমেন্ট ব্যবসা। একপর্যায়ে যুক্ত হন আকিজ সিমেন্ট ব্যবসায়। গুণগতমানের এ পণ্যটি তাঁর ব্যবসায় সাফল্য পেতে হয় দারুণ সহায়ক। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় হন কোম্পানিটির ক্যাশ ডিলার এবং ২০১৫ সালে পান পূর্ণাঙ্গ ডিলারশিপ। বর্তমানে তিনি আকিজ সিমেন্ট বগুড়া ১ টেরিটরির একজন এক্সক্লুসিভ বিজনেস পার্টনার। সিমেন্ট ছাড়াও তিনি রডের ব্যবসাও করছেন।  

চাকরি ছেড়ে নতুনভাবে ব্যবসা করা সিদ্দিক আলীর জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে সমধর্মী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় চাকরির অভিজ্ঞতা হয় বেশ সহায়ক। তা ছাড়া ব্যবসাকে নিজের আয়ত্তে আনতে কিছুটা কৌশলী হন তিনি। সে সময়ে বাজারে আরও দুটি সিমেন্টের দোকান ছিল। তাঁরা প্রতি ব্যাগে অন্তত ২০ টাকা মুনাফা করত। কিন্তু তিনি ৫-১০ টাকার বেশি মুনাফা করতেন না। ফলে স্বল্পমূল্যে সিমেন্ট পেয়ে ক্রেতারা তাঁদের প্রতিষ্ঠানে ভিড় করতে থাকে। এতে কয়েক মাসের মধ্যেই অন্য দোকান দুটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাজার চলে আসে তাঁদের দখলে। তাই বলে অতিরিক্ত দামে কখনোই সিমেন্ট বিক্রি করেননি। এতে প্রতিদিন প্রচুর সিমেন্ট বিক্রি হতে থাকে। তা ছাড়া গুণগতমানের আকিজ সিমেন্ট বিক্রির ফলে ক্রমেই বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিসর। পণ্যটি বিক্রিতে অল্প সময়ের মধ্যেই সাফল্য পেয়েছেন। বেশ কয়েকবার বগুড়া জেলার সর্বোচ্চ বিক্রেতা নির্বচিত হন। স্বীকৃতিস্বরূপ কোম্পানির পক্ষ থেকে পেয়েছেন ফ্রিজ, টেলিভিশন, মাইক্রোওভেন, ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়াশিং মেশিন, ল্যাপটপ, মোবাইল, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ নানা উপহারসামগ্রী। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও ভারত ভ্রমণের অফার পেয়েছেন।

সিদ্দিক আলী বিয়ে করেছেন ১৯৯২ সালে। স্ত্রী মোছা. মোসলেমা বেগম। সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে আইরিন আক্তার শিমু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে ¯œাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে মো. মশিউর রহমান আপেল পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে ইসলামি স্টাডিজে ৩য় বর্ষে পড়ছেন। পাশাপাশি বাবার ব্যবসায় তিনি নানাভাবে সহযোগিতা করেন। ব্যবসার পাশাপাশি মো. সিদ্দিক আলী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জামিয়াতুল আশরাফিয়া কওমি মাদ্রাসার ও চককানপাড়া বটতলা জামে মসজিদের সভাপতি।  

একনজরে

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম: মেসার্স এস অ্যান্ড এইচ এন্টারপ্রাইজ

স্বত্বাধিকারীর নাম: মো. সিদ্দিক আলী

অবস্থান: ফুলতলা, শাহজাহানপুর, বগুড়া

ব্যবসা শুরু: ১৯৯৮ সালে

নির্মাণপণ্য: সিমেন্ট ও রড।

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫২ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top