ব্যবসা যাঁকে দেয় প্রশান্তি

নিজের পরিচয়ে বেড়ে ওঠার মত শান্তি আর কিছুতেই নাই! আর এই পরিচিতি পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম ব্যবসা। ব্যবসার সুবাদে লোকে চেনে-জানে; গড়ে ওঠে একে অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক। মো. ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল একজন সফল ব্যবসায়ী যিনি ব্যবসার মাধ্যমেই খুঁজে পেয়েছেন আতিœক প্রশান্তি। মেইন রোড, নওগাঁর ‘মেসার্স ইথেন এন্টারপ্রাইজ (প্রাইভেট) লি. এর স্বত্বাধিকারী তিনি। বন্ধনের নিয়মিত আয়োজন ‘সফল যারা কেমন তারা’ পর্বে এবার জানাব সফল এ মানুষটির সাফল্য রহস্য। সহযোগিতায় ছিলেন আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির জেষ্ঠ আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল- এর জন্ম ১৯৭২ সালের ১ জুলাই নওগাঁয়। বাবা মরহুম এস এম হাতেম আলী ও মা মমতাজ বেগম। বাবা ছিলেন একজন কলেজ শিক্ষক। বাবার শিক্ষকতার সুবাদে তাঁর শৈশব কাটে জয়পুরহাটে। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে পড়ালেখা শেষে একটি ভালো চাকরী করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ঘটেছে উল্টো। স্কুল পড়ুয়া কিশোর রাসেল হুট করে বিয়ে করে বসেন। উভয় পরিবারের অজান্তে বিয়ে করায় নতুন সংসারের সকল দায়ভার বর্তায় তাঁর কাধে। অনুভব করেন জীবিকার তাগিদ। মিলেও যায় একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চাকরী। তবে বেতন সামান্যই; মাত্র নয়শ’ টাকা। তা স্বত্তে¡ও কর্মস্থল নওগাঁ হওয়ায়, শেকড়ের টানেই তিনি চাকরীতে যোগ দেন। তাঁর দারুণ কর্মনৈপুণ্যে মাস দুই যেতে না যেতেই বেতন বেড়ে হয় দ্বিগুণ। এরপর ধীরে ধীরে বেতনের সঙ্গে বাড়তে থাকে পদবি। এক পর্যায়ে জয়পুরহাট ছেড়ে ফিরে আসেন নওগাঁ। পরবর্তীতে বেশ কিছু কোম্পানি থেকে পান মনোলোভা চাকরির অফার। অনন্য মেধা ও কৌশলের গুণে একে একে তিনটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। 

বাল্যকাল থেকেই শাহরিয়ার রাসেলের ইচ্ছে ছিল ব্যবসায়ী হবার। তাই চাকরি করলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন নি। বছর দুয়েক চাকরির সুবাদে ১১-১২ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে সক্ষম হন তিনি। ১৯৯২ সালে জমানো এই অর্থ দিয়েই শুরু করেন ঠিকাদারী ব্যবসা। মাত্র ১২ হাজার টাকায় টেন্ডার সিডিউল জমা দেন; কাজও পেয়ে যান। এতে অত্যন্ত খুশি হন বাবা। টিচার ফাÐ থেকে গাড়ি কেনার জন্য প্রাপ্ত লোনের টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা তাঁর হাতে তুলে দেন। নিকটাত্মীয় ও শুভাকাঙ্খীরাও কিছু টাকা দিয়ে বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। একের পর এক কাজ পেতে থাকেন। ঠিকাদারী কাজের একপর্যায়ে একজন প্রকৌশলীর পরামর্শে ২০১৩ সালে জড়িয়ে পড়েন নির্মাণপণ্য ব্যবসায়। বর্তমানে তিনি আকিজ সিমেন্টের নওগাঁ টেরিটরির বিজনেস পার্টনার। এছাড়াও অন্যান্য সিমেন্ট ব্র্যান্ড ও ইস্পাতের ডিলারশীপ ব্যবসাও রয়েছে। পণ্য পরিবাহী ট্রাক, বিটুমিন ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত তিনি।

শাহরিয়ার রাসেলের অন্যতম গুণ মানুষের সঙ্গে মেশা ও তাদের বোঝানোর ক্ষমতা। সকলে তাঁর ব্যবহার ও কথায় আকৃষ্ট হয়ে যেতো। ফলে চাকরির উদ্দেশ্য পূরণে কারও কাছ থেকে ফিরে আসতে হয় নি। অনেক অভিজ্ঞ অফিসারা যে কাজটি করতে পারেন নি, তিনি তা পেরেছিলেন। আর এই গুণের কারণেই স্বল্প সময়ের চাকরী জীবনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেন। কিন্তু ব্যবসায়ী হবার অপার বাসনা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াতো। কিন্তু ব্যবসা করতে দরকার মূলধন। সামান্য বেতনে চাকরি করা শিক্ষক বাবা যে তাঁকে খুব বেশি মূলধন দিয়ে সহায়তা করতে পারবেন না, সেটা তিনি ভালোই বুঝতেন। তা স্বত্বেও ব্যবসা করতে তিনি যে সহযোগিতা করেছেন তা ছিল অপ্রত্যাশিত। ঠিকাদারি কাজে তিনি যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছেন, যার মূলমন্ত্র ছিল পরিশ্রম। ব্যবসা পরিচিতির ব্যাপার; মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্কও থাকতে হবে। যেহেতু তাঁর উভয়ই ছিল তাই নির্মাণপণ্য ব্যবসায় তিনি উৎসাহ পান। ডিলাশীপ সাফল্য পেতে তিনি গ্রহন করেন নানা পদক্ষেপ। ব্যবসায়ীদেরকে দেন নানা সুযোগ-সুবিধা; এমনকি বিদেশ ভ্রমণ করানো হয় নিজ খরচেই। 

ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল বিয়ে করেন ১৯৮৫ সালে। তাঁর স্ত্রী আফসানা ইকবাল। এ দম্পত্তির ২ ছেলে। বড় ছেলে রাফসান ইকবাল শিক্ষাজীবন শেষে ব্যবসা দেখাশুনা করছেন। ছোট ছেলে রাহিম ইকবাল নর্থ-সাউথ বিশ^বিদ্যালয়ে বিবিএ শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। ব্যস্ততার ফুরসত পেলেই ব্যবসায়ী রাসেল স্বúরিবারে দেশ-বিদেশে ঘুরতে যান। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ব্যবসায় সংগঠন ও ক্রিড়া অঙ্গনের সঙ্গেও জড়িত। তিনি দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর ডিরেক্টর, নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর প্রেসিডেন্ট এবং জেলা ক্রিড়া সংস্থার টুর্ণামেন্ট কমিটির আহওবায়ক। এছাড়াও সামাজিক নানা উন্নয়ন কর্মকাÐে তাঁর স্বরব পদচারণা। তাঁর ব্যবসার অধীনে নিশ্চিত হয়েছে অন্তত ২০০ মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থান। 

একনজরে

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম: মেসার্স ইথেন এন্টারপ্রাইজ (প্রাইভেট) লি.

স্বত্বাধিকারীর নাম: মো. ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। 

অবস্থান: মেইন রোড, নওগাঁ

ব্যবসা শুরু: ২০১৩ সাল

নির্মাণপণ্য: রড, সিমেন্ট, বিটুমিন।

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫১ তম সংখ্যা, মার্চ ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top