ব্যবসার সাফল্যে চাই পরিকল্পনা

জীবন মানে যুদ্ধ; আর যুদ্ধে জেতার বড় উপায় কৌশল। তেমনি ব্যবসায় সাফল্য পেতেও হতে হয় কৌশলী; দিতে হয় শ্রম। লক্ষ্য সামনে রেখে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজেকে বড় এবং কোনো কাজকে ছোট মনে করা যাবে না। তাহলেই আসবে ব্যবসায় সাফল্য। এই সূত্রগুলো মেনেই সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন মো. বাবুল হোসেন খান। শরীয়তপুর আংগারিয়ার বাখসী বাজারের ‘মেসার্স খান ট্রেডার্স’-এর স্বত্বাধিকারী তিনি। বন্ধন-এর নিয়মিত আয়োজন ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে এবার জানাব এ ব্যবসায়ীর সাফল্য-কাহিনি। সহযোগিতায় ছিলেন আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির সিনিয়র টেরিটরি অফিসার মো. কামরুজ্জামান। 

ব্যবসায়ী মো. বাবুল হোসেন খান ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. আলেপ খান ও মা নুরজাহান বেগম। সংসারে ছয় বোনের একমাত্র ভাই তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন একজন কৃষক। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার পাশাপাশি তাঁকেও নিতে হয় সংসারের দায়ভার। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন; পালতেন গবাদিপশু। সংসারে সচ্ছলতা আনতে কৈশরে শুরু করেন ব্যবসা। ঢাকা থেকে মুদি পণ্য পাইকারি দরে কিনে এনে শরীয়তপুরের বিভিন্ন খুচরা দোকানে সরবরাহ করতেন। পাশাপাশি একটি মোমবাতির কারখানাও প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধন না থাকায় মুদি ব্যবসায় সাফল্য না পেয়ে ২০০৪ সালে ভাগ্যানে¦ষণে পাড়ি জমান সৌদি আরব। প্রায় এক যুগ পর দেশে ফিরে ২০১৫ সালে শুরু করেন নির্মাণপণ্য ব্যবসা। আর এই ব্যবসাই তাঁকে এনে দেয় কাক্স্ক্ষিত সাফল্য। বর্তমানে তিনি আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির শরীয়তপুর সদর টেরিটরির একজন বিজনেস অ্যাসোসিয়েট। 

প্রবাসে অবস্থান করলেও দেশ ও ব্যবসার প্রতি প্রবল আকর্ষণ অনুভব করতেন বাবুল হোসেন। তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের কাছে নির্মাণপণ্য ব্যবসার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পান। কারণ নিকটাত্মীয় ছিলেন একজন সফল নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ী। মন স্থির করেন যত দ্রæত সম্ভব দেশে ফিরে ব্যবসাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন। যার জন্য দেশে ফেরার মাস কয়েক আগেই একটি দোকান ভাড়া নেন। দেশের মাটিতে পা রেখে এক দিনও অপেক্ষা করেননি। মালামাল সংগ্রহ করে চালু করেন দোকান। প্রথমে খুচরা পর্যায়ে ব্যবসা করলেও, পরে বেশ কিছু ব্র্যান্ডের সিমেন্টের ডিলারশিপ নেন। কিন্তু সেসব ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করে সফল হননি। ২০১৮ সালে গ্রহণ করেন আকিজ সিমেন্টের ডিলারশিপ। গুণগতমানের এই পণ্যটির ডিলারশিপ নেওয়ার পর থেকেই আসতে থাকে সাফল্য। ক্রমেই বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিসর। পরবর্তী সময়ে যুক্ত হন স্যানিটারি ব্যবসার সঙ্গে। সিমেন্ট ছাড়াও আকিজ ইস্পাত ও আকিজ পাইপেরও ডিলার তিনি। নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে রড, সিমেন্ট, কেমিক্যাল, পাইপ, স্যানিটারিসামগ্রী, ফিটিংস, গ্যাসচুলা ও হার্ডওয়্যারসামগ্রী রয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠানে। এসব পণ্য বিক্রির সুবিধার্থে বর্তমানে তাঁর রয়েছে ৩টি শোরুম ও ৪টি গোডাউন।  

ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন খান মাত্র কয়েক বছর আগে নির্মাণপণ্য ব্যবসা শুরু করেন। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের ডিলার হওয়া, অত্র এলাকার একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়া মোটেও সহজ নয়। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন। যদিও দোকান ভাড়া নিতেই তাঁর সঞ্চয়কৃত টাকার অধিকাংশই ব্যয় হয়ে যায়, হাতে থাকে মাত্র ২ লাখ টাকা। সীমিত এই মূলধন নিয়েও সততা ও পরিশ্রমের বলেই ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সক্ষম হন। প্রায় প্রতিদিনই কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে বিভিন্ন প্রান্তের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ছুটে যান তাঁদের উৎসাহিত করতে। এলাকার মানুষের সঙ্গেও তাঁর চমৎকার সম্পর্ক। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ লেনদেনে স্বচ্ছতা ও কথা রাখার প্রবণতা। তা ছাড়া ব্যবসার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় দ্রæতই এই ব্যবসাটি আয়ত্তে আনতে ও প্রসার ঘটাতে সক্ষম হন।

বাবুল হোসেন খান বিয়ে করেন ২০০৪ সালে। স্ত্রী সুমি আক্তার। সংসারে তাঁদের দুই মেয়ে দুই ছেলে। বড় ছেলে মো. ফয়সাল খান মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, দি¦তীয় মেয়ে হাফসা আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণি, তৃতীয় মেয়ে রাফিয়া আক্তার তৃতীয় শ্রেণি, ছোট ছেলে মো. ওমর ফারুক প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। তারা তিন ভাই-বোন জোহরাতুন ফাতেমা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। 

একনজরে

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম: মেসার্স খান ট্রেডার্স

স্বত্বাধিকারীর নাম: মো. বাবুল হোসেন খান

অবস্থান: আংগারিয়া, বাখসী বাজার, শরীয়তপুর

ব্যবসা শুরু: ২০১৫ সালে

নির্মাণপণ্য: রড, সিমেন্ট, কেমিক্যাল, পাইপ, স্যানিটারিসামগ্রী, ফিটিংস, গ্যাসচুলা ও হার্ডওয়্যারসামগ্রী।

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৫ তম সংখ্যা, জুলাই ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top