নির্মল বায়ুর প্রত্যাশায়

বিশ্বের প্রতিটি নাগরিক অধিকার রাখে বিশুদ্ধ ও নির্মল বায়ু গ্রহণের। কিন্তু প্রতিনিয়ত বায়ুর মান যেভাবে নি¤œগামী ও দূষিত হচ্ছে, তাতে বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ যেন অলীক কল্পনা। ইউরোপের বায়ুর মান কিছুটা উন্নত হলেও এশিয়া ও আফ্রিকার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বিশে^র বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকা ১০-এর মধ্যেই থাকে সব সময়। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) ঢাকার অবস্থান ১৫০-২৫০-এর মধ্যে। বাতাসের এ মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতের দিল্লি নগরীর ভয়াবহ বায়ুদূষণের খবর প্রতিনিয়তই আমরা পাই, যা আতঙ্কিত করে বিশ^বাসীকে। দিল্লির বাতাস বিশ্বের সবচেয়ে দূষণকবলিত হওয়ায় এ নগরকে বলা হয় ‘গ্যাসচেম্বার’। তবে বাংলাদেশের বায়ুদূষণ পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দূষণ রোধে সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা মোকাবিলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। বায়ুদূষণের ভয়াবহতা ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরছেন গোলাম মোর্শেদ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট মৃত্যুর ২৮ শতাংশই ঘটে পরিবেশদূষণজনিত অসুখবিসুখের কারণে। অথচ সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ আর ভারত ও চীনে মারা গেছে ১২ লাখ মানুষ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবেশদূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয়, সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের কারণে বাংলাদেশের বছরে ৬৫০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়, যা মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ। 

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশ করা বায়ুদূষণবিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড়পড়তা আয়ু ২ বছর ৪ মাস কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালের তুলনায় বায়ুদূষণ ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। আর এতে গড় আয়ু ২ বছর ৮ মাস কমেছে। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৪৮ লাখ মানুষ সারা বছর দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) নির্ধারিত মানমাত্রা, প্রতি ঘনমিটারে অতি ক্ষুদ্র্র কণা ৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ একজন মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে কম অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম-২.৫ থাকতে হবে। এমনকি বাংলাদেশ সরকার তার নিজস্ব মানমাত্রা হিসেবে পিএম-২.৫ ঘনমিটারে ১৫ নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্মল বায়ুর জেলা সিলেটেও এর চেয়ে বেশি মাত্রায় বায়দূষণ থাকছে। ওই জেলায়ও ডবিøউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে অতি ক্ষুদ্র্র বস্তুকণা প্রায় ১০ গুণ বেশি। আর বাংলাদেশের নিজস্ব মানমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা ‘স্টেট অব গেøাবাল এয়ার’ তাদের প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করছে। বায়ুদূষণকে অদৃশ্য ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির হিসাবমতে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৭০ লাখ মানুষ অপরিণত বয়সে মারা যায় এই নীরব ঘাতকে। বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে দূষণ আক্রান্তদের সংখ্যা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়। শীতের শুষ্ক হাওয়ায় ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা এখন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণকাজ ও কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাস বলয়ের মধ্যে বাস করছে। মাস্ক বা মুখোশ ছাড়া যেন প্রতিটি নিশ^াসই এখানে ক্ষতিকর। 

বায়ুদূষণ কী? 

বায়ুদূষণ বলতে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুমÐলের দূষণকে বোঝায়। বায়ুমÐলে যেসব ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির কারণে মানুষ এবং অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিংবা জলবায়ু বা পদার্থের ক্ষতি করে, সেটাই বায়ুদূষণ। এটি মূলত রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ, শারীরিক বা জৈবমাধ্যম দ্বারা গঠিত ভেতরের বা বাইরের পরিবেশের একপ্রকার দূষণ, যা বায়ুমÐলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরিবর্তন করে দেয়। বিভিন্ন ধরনের বায়ুদূষক রয়েছে, যেমন গ্যাস (অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং ক্লোরোফ্লুরোকার্বন), কণা (জৈব এবং অজৈব উভয়) এবং জৈব অণু। বায়ুদূষণপূর্ণ এলাকায় বায়ুতে অবমুক্ত ক্ষতিকর পদার্থসমূহের পরিমাণ অন্যান্য স্থানের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। পৃথিবীকে বেষ্টন করে যে বায়ুমÐল রয়েছে, তাতে রয়েছে- 

নাইটোজেন ৭৮.০৯%

অক্সিজেন ২০.৯৫%

কার্বন ডাই-অক্সাইড ০.০৩%

নিষ্ক্রিয় গ্যাস ০.৯৩%

এ ছাড়া অবশিষ্ট খুব সামান্য পরিমাণে হাইড্রোজেন, কার্বন মনো-অক্সাইড, ওজোন, নিয়ন, হিলিয়াম, মিথেন ও জলীয় বাষ্প রয়েছে। বায়ুর এসব উপাদান ছাড়া মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ তথা জীবের অস্তিত্ব টিকে রাখা রীতিমতো অসম্ভব। বায়ুতে এসবের বাইরে সীসা, কার্বন মনোক্সাইড, অ্যামোনিয়া, ক্লোরিনসহ ক্ষতিকর নানা উপাদান মিশে বৈশি^ক পরিবেশ বিরূপ করে তোলে, সেটাই মূলত বায়ুদূষণ।  

বায়ুদূষণের জন্য যেসব উপাদান দায়ী

সালফার ডাই-অক্সাইড

সালফার ট্রাই-অক্সাইড

নাইটোজেন অক্সাইড

কার্বন মনোক্সাইড

কার্বন ডাই-অক্সাইড

ক্লোরোফ্লোরো কার্বন 

আসবেস্টস

সীসা

ক্যাডমিয়াম 

ওজোন

হাইড্রোজেন সালফাইড

এসপিএম

অ্যারোসল

ধূলিকণা

ধোঁয়াশা

কুয়াশা

তেজস্ক্রিয় পদার্থ

বিভিন্ন ধাতব পদার্থের কণা।

বায়ুদূষণের যত কারণ ও উৎস

বায়ুর গুণমান পৃথিবীর জলবায়ু এবং বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। বায়ুদূষণের অনেক প্রভাবক বা উৎস একই সঙ্গে গ্রিনহাউস নির্গমনেরও উৎস। বায়ুদূষণ প্রাকৃতিক অথবা মানুষের কর্মকাÐের ফলেই সংঘটিত হয়। তবে প্রাকৃতিক কারণের থেকে মানবসৃষ্ট কারণে অনেক বেশি বায়ুদূষণ ঘটছে। বায়ুদূষণের জন্য মূলত দায়ী ধোঁয়া, বাষ্প, গ্যাস, ধূলিকণা ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক। এ ছাড়া অন যেসব বিষয় দায়ী, সেগুলো হচ্ছে- 

প্রাকৃতিক কারণ

বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থের পচনের ফলে সৃষ্ট গ্যাস

ঝড়, দাবানল, ধূলিঝড়, বন্যা, খরা, সাইক্লোন

অ্যাসিড বৃষ্টি

অগ্ন্যুৎপাতের ফলে উৎপন্ন গ্যাস

উপক‚লীয় দ্বীপ ও জনপদে সমুদ্র তরঙ্গসৃষ্ট লবণ কণা

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ঊর্ধ্বে বায়ুমÐলের ওজোন স্তরে ক্রমবর্ধমান ফাটল সৃষ্টি হওয়া প্রভৃতি

প্রাকৃতিক উৎস থেকে ছড়ানো ধুলা, সাধারণত গাছপালার পরিমাণ অল্প বা একেবারেই নেই এমন জমি দিয়ে গঠিত বৃহৎ অঞ্চলে এটি হয়ে থাকে

বিভিন্ন প্রাণীর খাদ্য হজমের মাধ্যমে নির্গত হওয়া মিথেন গ্যাস, উদাহরণস্বরূপ গরু।

পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় থেকে সৃষ্ট রেডন গ্যাস। রেডন একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট, তেজস্ক্রিয় নিষ্ক্রিয় গ্যাস, যা রেডিয়ামের ক্ষয় থেকে তৈরি হয়। এটিকে স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। 

দাবানল থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং কার্বন মনোক্সাইড। সক্রিয় দাবানলের সময়ে অনিয়ন্ত্রিত বায়োমাস দহনের ধোঁয়া ঘনত্ব থেকে সব বায়ুদূষণের প্রায় ৭৫% পর্যন্ত তৈরি করতে পারে।

মানবসৃষ্ট যত কারণ

ইটভাটার কালো ধোঁয়া 

শিল্পকারখানার ধোঁয়া

গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া

বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্র থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া

কঠিন বর্জ্য পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া

নির্মাণাধীন ভবন, সড়ক ও অবকাঠামো থেকে সৃষ্ট ধুলা

কৃষিজমি থেকে উৎপন্ন ধুলা

আবাদি কৃষিজমি থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন

ফসল উৎপাদন ও পোকা দমনে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক

সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি থেকে উৎপন্ন ধুলা

ট্যানারি থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ

রান্না, শীত নিবারণ ও বর্জ্য পদার্থ পোড়াতে সৃষ্ট অগ্নিকাÐ

গাছ কাটা ও অরণ্য ধ্বংস

ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো

অতিরিক্ত এসি ব্যবহার

রং, চুলের স্প্রে, বার্নিশ, অ্যারোসল স্প্রে এবং অন্যান্য দ্রাবক থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া

গ্রিনহাউস গ্যাস প্রভৃতি।

বায়ুদূষণের ক্ষতিকর যত প্রভাব

বিভিন্ন উৎস থেকে সৃষ্ট ধুলা, বিষাক্ত ক্ষতিকারক গ্যাস ও ভারী ধাতব কণা বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে; জীববৈচিত্র্য পড়ছে হুমকির মুখে। উৎপাদিত ক্ষতিকারক পদার্থ, যেমন- গ্রিনহাউস গ্যাস, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, আর্সেনিকযুক্ত বর্জ্য, পারদ, ক্যাডমিয়াম, সীসা, বালাইনাশক, আগাছানাশক, ধোঁয়া, ধোঁয়াশা, ধূলিকণা, ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে। গ্রিনহাউস ইফেক্টের কারণে বায়ুমÐলের তাপ বাড়ছে। এতে মেরু অঞ্চল ও পর্বতশ্রেণির বরফ গলে বাড়ছে সাগরের পানির উচ্চতা। রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, পলিথিন, প্লাস্টিক ও রং তৈরির কারখানা থেকে যে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সিএফসি) গ্যাস নির্গত হয়, তা বায়ুমÐলের ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এক অণু সিএফসি প্রায় ২ হাজার ওজোন অণুকে ধ্বংস করতে পারে। এতে ওজোন স্তর ছিদ্র হয় দ্রæততার সঙ্গে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং কসমিক রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে প্রথমে ফাইটোপ্লাংটনসহ বিভিন্ন অণুজীব ও পরে উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণিকুলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করবে। এতে বাড়বে ক্যানসার ও বিভিন্ন প্রকার রোগের প্রকোপ। এ ছাড়া বায়ুদূষণের ফলে গাছের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া বা সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এর প্রভাব পুরো প্রাণিজগতের ওপর পড়ছে। উদ্ভিদের জৈবনিক প্রক্রিয়া ঠিক না থাকলে পৃথিবীতে খাদ্যশৃঙ্খল ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। বায়ুদূষণের কারণে খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে উদ্ভিদ নিজেও বিপদে পড়ে এবং উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল প্রাণীরাও বিপদে পড়ে। এ ছাড়া উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়।

স্বাস্থ্যঝুঁকি 

বায়ুদূষণের এক ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর। দূষণকবলিত কণা এতোটাই ক্ষুদ্র যে এটি সহজেই মানুষের চোখ-নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং ফুসফুস, হার্ট, কিডনি লিভার আক্রান্ত করে থাকে। বিশেষ করে ফুসফুসের ওপর পড়ে বিরূপ প্রভাব। এতে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘হেলথ অ্যাফেক্টস ইনস্টিটিউট’ এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভল্যুশন’-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘বৈশ্বিক বায়ুদূষণ পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শ্বাসজনিত জটিল সমস্যার শিকার হয় এবং একই কারণে প্রতিবছর ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু অধ্যুষিত এলাকায় বাস করে, যার মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। আর বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী ৬ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটে। ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের আইকিউ ৪ পয়েন্ট কমে যাচ্ছে। দূষিত বায়ু বাচ্চাদের শ্বাসযন্ত্র বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে এবং কার্ডিওভাস্কুলারের অবস্থা আরও বেশি খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। ঢাকায় পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের কারণে বছরে মারা যায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ এবং আবাসিক দূষণের কারণে বছরে সাড়ে ৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ুদূষণের কারণে আরও যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-   

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রজননস্বাস্থ্য। বিশেষ করে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রæটি, শিশুর ¯œায়ুতন্ত্রের বিকাশে বড় প্রভাব ফেলছে

পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে, শুক্রাণুর মান যাচ্ছে কমে

মেয়েদের ডিম্বাণু কমছে, অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে

স্ট্রোক, হৃদ্্রোগ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের ক্যানসার বাড়ছে

প্রসূতি মায়েদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে

শিশুদের মধ্যে অ্যাজমার মতো রোগ ছড়াচ্ছে

মানসিক অবসাদ

বাড়ছে জেনেটিক পরিবর্তনজনিত নানা অজানা রোগ

এতে এক দিকে যেমন চিকিৎসাব্যয় বাড়ছে, তেমনিভাবে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদনশীলতাও ব্যাপকভাবে কমতে পারে। বাংলাদেশের দূষণপ্রবণ এলাকাগুলোর প্রায় ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণœতায় ভুগছেন বলে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা থেকে ১% দূষণ বাড়লে বিষণœতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। ক্রমবর্ধমান প্রমাণগুলো থেকে ধারণা করা হয়, বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আইকিউ স্কোর কমা, মেধার দুর্বলতা বাড়া ও নতুন মানসিক ব্যাধি যুক্ত হতে পারে।

দূষণের ভয়াবহতার মাত্রা নির্ণয় 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বায়ুদূষণের গ্রহণযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রার তারতম্য বোঝাতে ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ ব্যবহার করে থাকে। এই ইনডেক্সের সাহায্যে বায়ুর মান ও অবস্থা সহজেই নির্ণয় করা যায়। ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ চার্টের সাহায্যে বায়ুদূষণের মাত্রা অনুযায়ী অবস্থা ও এর ভয়াবহতা তুলে ধরা হলো-  

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স হার

ফলাফল

প্রভাব

০-৫০

আদর্শ

মানবস্বাস্থ্যের জন্য স্বাভাবিক।

৫১-১০০

মাঝারি/গ্রহণযোগ্য

মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

১০১-১৫০

মোটামুটি পর্যায়ে

অস্বাস্থ্যকর বিধায় স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

১৫১-২০০

অস্বাস্থ্যকর বায়ু

খুব অস্বাস্থ্যকর; বাসিন্দারা নানা ধরনের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভোগেন।

২০১-৩০০

খুবই অস্বাস্থ্যকর

বিপজ্জনক; প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। সংবেদনশীল ও রোগাক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকর। 

৩০১-৫০০

মারাত্মক/ঝুঁকিপূর্ণ

অধিক বিপজ্জনক; গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগ-ব্যাধি নাগরিকদের নিত্যসঙ্গী। 

৫০০-১৫০০

অতি মারাত্মক

অতিমাত্রায় বিপজ্জনক; নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে মানুষের মৃত্যু অবধারিত। 

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর (২৮ নভেম্বর ২০২৩)  

ক্রমিক

শহর

দেশ

বায়ুর মান

লাহোর

পাকিস্তান

৩৪৯

দিল্লি

ভারত

২৪৫

করাচি 

পাকিস্তান

২২২

কলকাতা

ভারত

১৬৬

সাংহাই

চীন 

১৬২

ক্রাসনইয়াস্ক

রাশিয়া 

১৫৩

ওহান 

চীন 

১৩৪

চেংডু

চীন 

১৩৩

কাম্পালা 

উগান্ডা 

১১৯

১০

ঢাকা

বাংলাদেশ

১১৯

১১

হ্যানয়

ভিয়েতনাম

১১৯

১২

কাবুল 

আফগানিস্তান

১১৪

১৩

কাঠমান্ডু

নেপাল

১১০

১৪

আক্রা

ঘানা

১০৩

১৫

দুবাই

আরব আমিরাত

১০৩

সূত্র: যঃঃঢ়ং://িি.িরয়ধরৎ.পড়স/ড়িৎষফ-ধরৎ-য়ঁধষরঃু-ৎধহশরহম

ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স

বায়ুদূষণে নাকাল ঢাকা ও এই নগরীর মানুষ। আইকিউএয়ারের দেওয়া তালিকায় বিগত কয়েক দিনের ঢাকার বাতাসের অবস্থা-

তারিখ

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স

২৫ নভেম্বর

১৭৭

২৬ নভেম্বর

১৭০

২৭ নভেম্বর

১৬৭

২৮ নভেম্বর

১৮১

২৯ নভেম্বর

১৬০

২৫-২৯ নভেম্বর ২০২৩-এর রাজধানীর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স চার্ট যঃঃঢ়ং://িি.িরয়ধরৎ.পড়স/নধহমষধফবংয/ফযধশধ

ওপরে প্রদর্শিত বায়ুদূষণ চিত্র একটি নগরের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জনসংখ্যা দিয়ে বায়ুদূষণ বিবেচনা করলে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত বায়ুদূষণের দেশ বাংলাদেশ। স্টেট অব গেøাবাল এয়ারের মতে, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। আর এই অসহনীয় উপাদান নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ১৯৯০ সাল থেকে বসবাস করছে। 

বায়ুদূষণরোধে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সফলতা

গত এক যুগে বিশ্বে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীন সবচেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে। দেশটি বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দূষণরোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করেছে। দূষণকারী শিল্পকারখানার সংখ্যা কমিয়েছে। রাস্তায় পানি ছিটানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে দেশটির বায়ুর মান ৪২ শতাংশে বেশি উন্নতি হয়েছে। ফলে তাদের নাগরিকদের গড় আয়ু ২ বছর ২ মাস বেড়েছে। তবে এখনো চীনে বায়ুর মান ডবিøউএইচওর বায়ুমানের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্র নানা উদ্যোগের মাধ্যমে বায়ুর মানের উন্নতি করেছে। দেশটি ১৯৭০ সালের তুলনায় বায়ুর মান ৬৫ শতাংশ উন্নতি করেছে। তবে বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা ১ বছর ৪ মাস বেশি বাঁচে। এর কারণ দেশটি নির্মল বায়ু আইন করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ওই আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। বায়ুর মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ইউরোপের দেশগুলো। এখানকার অধিবাসীরা ১৯৯৮ সালের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভালো বায়ুর মধ্যে বসবাস করছে। এখানকার বেশির ভাগ দেশ এয়ার কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক ডিরেক্টিভ তৈরি করেছে। তারপরও সেখানকার ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ডবিøউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ বায়ুর মধ্যে বাস করে। তবে তারা ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ুর মান ওই মানমাত্রায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।

বায়ুদূষণরোধে করণীয়

বায়ুদূষণ মোকাবিলার প্রথম কাজ হচ্ছে দূষণের উৎস বন্ধ করা। যদিও দূষণের উৎস একেবারেই নির্মূল করা সম্ভব নয়, সে জন্য দূষণ কমাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার পাশাপাশি জলাশয়গুলো রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। আরও যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে দূষণ কমানো যেতে পারে-

নির্মল বায়ু আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন 

পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ আইনের বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ

সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ

জ¦ালানিনির্ভর ইটভাটা বন্ধ করে অটোমেশন পদ্ধতিতে ইট ও বøক উৎপাদন বাড়ানো

শিল্পকারখানা এবং ইটভাটার চিমনি অনেক উঁচু করে তৈরি ও ধোঁয়া নির্গমন হ্রাসকরণে ছাঁকনি বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা

যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে জ্বালানিনির্ভর গাড়ির বদলে ইলেকট্রিক গাড়ি চালু

ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ

যানবাহনে সীসামুক্ত জ্বালানি ও সিএনজি ব্যবহার নিশ্চিত করা

পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানাগুলো সরিয়ে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর 

শুষ্ক মৌসুমে ধুলা নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ

বিআরটি, মেট্রোরেলসহ সব প্রকল্প নির্দিষ্ট বেষ্টনীর মধ্যে রেখে ধুলা নিয়ন্ত্রণ

ইট, বালু, মাটিসহ নির্মাণসামগ্রী পরিবহনকারী ট্রাক বা গাড়ি ঢেকে মালামাল পরিবহন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ 

পরিত্যক্ত বর্জ্য না পোড়ানো

শিল্পকারখানার বর্জ্য খাল, বিল ও নদীতে না ফেলে ইটিপি স্থাপনের মাধ্যমে শোধন নিশ্চিতকরণ

বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা এবং জৈব বর্জ্য দ্বারা বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন 

বায়োটেকনোলজি প্রযুক্তির সাহায্যে সুপার ফাংশনাল ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করে বর্জ্য বা আবর্জনাকে দ্রæত পচনশীল করার মাধ্যমে সার্বিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ

জনগণকে সচেতন করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ

জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ হ্রাস করে সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ানো 

কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প উপায়ে শস্যের রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ

হাটবাজার, বসতবাড়ির পচনশীল দ্রব্য দ্রæত অপসারণ

গাছ লাগানো, ছাদবাগানে উৎসাহিত করা

জলাধার সংরক্ষণ ও নতুন জলাধার গড়ে তোলা

ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা

বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি।

সামগ্রিকভাবে ডবিøউএইচওর গাইডলাইন মেনে বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণ করলে গড় আয়ু ২ বছর ৩ মাস বাড়ানো সম্ভব। আর বছরে বিশ্বের ১ কোটি ৭৮ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশ নির্মল বায়ু আইন, ২০১৯ বায়ু দূষণরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুমানের উন্নতি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের সুরক্ষায় প্রণীত আইন। বায়ুদূষণ রোধে এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অধিক কার্বন নিঃসরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর গ্রিন ট্যাক্স ও কার্বন ট্যাক্সের মতো জরিমানা ধার্য করে একটি অর্থ তহবিল গঠনের মাধ্যমে দেশের পরিবেশ উন্নয়নে ব্যয় করা এখন সময়ের দাবি।

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬০ তম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top