নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলুন

শিক্ষাজীবন শেষে শুরু হলো সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য করতে হয়েছে প্রচুর পড়াশোনা। কিন্তু চাকরি যেনো সোনার হরিণ! তা ছাড়া সরকারি চাকরির বেতনও সীমিত। সৎভাবে চাকরি করলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়া সহজ নয়। মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান হওয়ায় তাঁর পক্ষে অসৎ হওয়াও অসম্ভব। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যবসা হতে পারে অন্যতম পাথেয়। ব্যবসার মাধ্যমেই স্বচ্ছল হওয়া সম্ভব। সে উপলব্ধি থেকেই শুরু হয় তাঁর ব্যবসায় যাত্রা। একদিন যে মানুষটি চাকরির পেছনে দৌড়াতেন, এখন তাঁর অধীনে কাজ করছে অনেক মানুষ। সফল এ ব্যবসায়ীর নাম প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। শরীয়তপুরের জাজিরার কাজীরহাটের ‘মেসার্স হামিম এন্টারপ্রাইজ’-এর স্বত্বাধিকারী তিনি। বন্ধন-এর নিয়মিত আয়োজন ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে এবার জানাব এ ব্যবসায়ীর সাফল্য-কাহিনি। সহযোগিতায় ছিলেন আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির সিনিয়র টেরিটরি অফিসার মো. কামরুজ্জামান। 

মিজানুর রহমান ১৯৯২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশাহ মোড়ল ও মা শিরিন আক্তার। তিনি ২০০৮ সালে পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ২০১২ সালে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমা এবং ২০২০ সালে শরীয়তপুর জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কিছুদিন চাকরি করেন। পরবর্তী সময়ে নিজ এলাকায় ফিরে ছোট ছোট স্থাপত্য প্রকল্প ডিজাইনের মাধ্যমে কনসালট্যান্সি শুরু করেন। এগুলোর মধ্যে কিছু প্রকল্পের ঠিকাদারি কন্ট্রাক্ট নিয়েও কাজ করেছেন। জড়িয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের চাকরিতেও। ২০১৮ সালে তিনি শুরু করেন নির্মাণপণ্য ব্যবসা। বর্তমানে তিনি আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির শরীয়তপুরের জাজিরা টেরিটরির একজন এক্সক্লুসিভ বিজনেস অ্যাসোসিয়েট। 

কনসালট্যান্সি করার সময় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান তাঁর প্রকল্পে গুণগতমানের নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করতেন। কারণ একজন প্রকৌশলী হওয়ায় ভবন নির্মাতাদের প্রত্যাশা একটু বেশিই! তা ছাড়া তিনি ওই এলাকার সন্তান হওয়ায় তাঁদের দাবিও যৌক্তিক। তাই প্রতিটি নির্মাণ উপকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ভবন নির্মাণে ব্যবহার করতেন। সে ক্ষেত্রে সিমেন্টের বেলায় আকিজ সিমেন্টই সেরা বলে প্রমাণ পান। তাই তিনি তাঁর সব প্রকল্পে এই পণ্যটি ব্যবহার করতেন। তিনি লক্ষ করেন, স্থানীয় ভবন নির্মাতাদের মধ্যে নির্মাণ বিষয়ে সচেতনতা কম। তাঁরা মিস্ত্রির পরামর্শে মানহীন নির্মাণপণ্য ভবন নির্মাণে ব্যবহার করেন। এভাবে নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতি দেখে গুণগতমানের নির্মাণপণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। যেহেতু আগে থেকেই আকিজ সিমেন্ট সম্পর্কে জানতেন, তাই কোনো দ্বিধা ছাড়াই সম্পৃক্ত হন পণ্যটির ডিলারশিপ ব্যবসায়। গুণগতমানের এই পণ্যটির ডিলারশিপ নেওয়ার পর থেকেই আসতে থাকে সাফল্য। ক্রমেই বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিসর। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আকিজ ইস্পাতের ডিলারশিপও গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে যুক্ত হন স্যানিটারি ব্যবসার সঙ্গে। এসব পণ্য বিক্রির সুবিধার্থে বর্তমানে তাঁর রয়েছে ৪টি শো-রুম ও ২টি গোডাউন। 

ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ঠিকাদারি কাজ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে শিখেছেন নির্মাণকাজের খুঁটিনাটি। ব্যবসার ক্ষেত্রে তিনি বেশ সচেতন। তাঁর বিক্রীত প্রতিটি পণ্যই ব্র্যান্ডের। যেহেতু কনসালট্যান্সি করেন, তাই কেউ ভবন নির্মাণ বিষয়ে জানতে চাইলে ভালো পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তাঁর নিজের তেমন মূলধন নেই। সীমিত এই মূলধন নিয়েও সততা ও পরিশ্রমের ফলেই ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সক্ষম হন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ লেনদেনে স্বচ্ছতা ও কথা রাখার প্রবণতা। তাঁর প্রতি আস্থা থাকায় অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে যায়, যা তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় বেশ সহায়ক।

ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের স্ত্রী তামান্না আক্তার। সংসারে তাঁদের এক ছেলে ইশরাক মোড়ল, বয়স প্রায় ৪ বছর। ব্যবসা ও প্রকৌশল চর্চার পাশাপাশি তিনি পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত। তিনি শরীয়তপুর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্য, সামাজিক সেবামূলক সংগঠন রঙধনুর উপদেষ্টা এবং বাজার মালিক সমিতির স্থায়ী সদস্য। 

একনজরে

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম: মেসার্স হামিম এন্টারপ্রাইজ

স্বত্বাধিকারীর নাম: মিজানুর রহমান

অবস্থান: কাজীরহাট, জাজিরা, শরীয়তপুর

ব্যবসা শুরু: ২০১৮ সালে

নির্মাণপণ্য: রড, সিমেন্ট, স্যানিটারিসামগ্রী

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৯ তম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top