ঢাকার যানজট নিরসনে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন

একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি সঠিক পরিকল্পনা এবং তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ফলে, উন্নয়নসংক্রান্ত প্রতিটি পরিকল্পনাই হওয়া উচিত সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত। সুতরাং, যেকোনো কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন ফলপ্রসূ করার জন্য আগেই এর সুবিধা-অসুবিধা বিশদভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং সে অনুযায়ী সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে প্রকল্প পরিচালনা করা অপরিহার্য। 

অতএব, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র গঠন, জনগণ ও রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রেই কার্যকরী একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি, প্রণীত কর্মপরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য ম্যানেজমেন্ট সাইকেল অর্থাৎ ‘পিডিসিএ’ (প্ল্যান-ডু-চেক-অ্যাক্ট) নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন করা জরুরি। সেই সঙ্গে, ম্যানেজমেন্টে ডেভেলপমেন্টের অন্যতম একটি সিস্টেম ৮০/২০ রুলের প্রয়োগ অর্থাৎ ২০% বিনিয়োগে ৮০% ফলাফল পাওয়া সম্পর্কে প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট সবার যথার্থ জ্ঞান থাকা এবং তা কাজে লাগানোর ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া একান্ত জরুরি। 

ঘন বসতিপূর্ণ ও জনবহুল দেশ বাংলাদেশ, স্বাধীনতার পর ৫২ বছর পার করে এসেছি আমরা। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে আজ জনাকীর্ণতার তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে যানজট, যা এখন ঢাকা শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এ সমস্যা সমাধান করে শহরবাসীর জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ একটি যাতায়াতব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ যাবতীয় নাগরিক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু, দুর্বিষহ এই যানজট নিরসনে সরকারের গৃহীত কোনো প্রকল্প ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা এই যানজট সমস্যা সমাধানে সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ত্রæটি-বিচ্যুতির কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকৃত সমস্যার কোনো উন্নতি দেখা হচ্ছে না। জনগণের ভোগান্তি দিন দিন আরও বাড়ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের গৃহীত এসব প্রকল্প হস্তান্তর পরবর্তী কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পরিকল্পনা প্রণয়নকালীন বাস্তবায়নোত্তর সুফল-কুফল যথাযথভাবে বিশ্লেষণ না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করাই উদ্ভূত সমস্যার মূল কারণ। যানজট নিরসনে গৃহীত প্রকল্পসমূহ যেমন- রোড ডিভাইডার দেওয়া, ফ্লাইওভার নির্মাণ, ইউলুপ সৃষ্টিÑ কোনোটাই সঠিকভাবে কাজ করছে না।

সর্বশেষ হস্তান্তরিত প্রকল্প মেট্রো রেল (আংশিক)-এর ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে ম্যানেজমেন্টে ডেভেলপমেন্টের অন্যতম সিস্টেম ৮০/২০ রুলের উল্টো চিত্র। এ রুল অনুযায়ী, যেখানে ২০% বিনিয়োগ করে ৮০% ফলাফল পাওয়ার কথা, সেখানে ৮০% বিনিয়োগে ২০% ফলাফল পাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। যেমন- প্রাথমিক পর্যায়ে দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে আগারগাঁঁও স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইন চালু করা হয়েছে। কিন্তু দিয়াবাড়ির জনবসতি কত কিংবা উত্তরার অন্যান্য বসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দিয়াবাড়ি আসা-যাওয়া করার জন্য স্বল্প সময় ও খরচে ব্যবহারযোগ্য যাতায়াতব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়গুলো কতটুকু আমলে নেওয়া হয়েছে জানি না। একই অবস্থা আগারগাঁও স্টেশনেরও। ফলে কাক্স্ক্ষিত লক্ষ্য তো হাসিল হচ্ছেই না বরং সরকার তথা জাতির ঋণের বোঝা বাড়ছে।

একইভাবে ইউলুপ, ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্মাণ পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের অসঙ্গতি  ধরা পড়েছে। যেখানে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন টিমের অদূরদর্শিতার বিষয়গুলোই বারবার ভেসে উঠেছে। ফলে, ঢাকা শহরের অসহনীয় যানজটে নাকাল মানুষ একেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে আলোর মুখ দেখার পরিবর্তে তিমিরেই রয়ে যাচ্ছে। একইভাবে, শহরের দুর্বিষহ যানজটের কারণে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না শহরের ৮০% মানুষ। অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকা ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বনানী, গুলশান, বারিধারা, উত্তরা ইত্যাদি অঞ্চল থেকে হানিফ ফøাইওভার পার হয়ে বুড়িগঙ্গার ওপার যেতে বেহাল দশা। উল্লিখিত এলাকাগুলো থেকে হানিফ ফাইওভার পর্যন্ত যেতেই নাভিশ্বাস উঠছে প্রতিটি মানুষের। 

রাজধানীর যানজট নিরসনে দৃশ্যত অনেক বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও ট্রাফিক চলাচলব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না। শহরের ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় আইনের প্রয়োগ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যাপারে সর্বত্রই শিথিলতা বিরাজমান। ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতি সদা দৃশ্যমান এবং তার খেসারত দিতে হচ্ছে জনসাধারণকে। দুর্বিষহ যানজটে নাকাল-নাজেহাল হচ্ছে নগরবাসী, অপচয় হচ্ছে বেসুমার কর্মঘণ্টা, যার প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতির ওপর। জানি না, কবে এ দেশে সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক সার্বিক সমন্বয় সাধন করে কাজ করা হবে, কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণ এই দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাবে।

বর্তমান সরকারের আমলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বিশেষ করে টেকনোলজিক্যাল এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। মনে রাখা দরকার, একটি দেশের সার্বিক উন্নতির প্রধান সোপান নির্বিঘœ যোগাযোগব্যবস্থা। সে লক্ষ্যে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু, সড়ক ও জনপথ নির্মাণ মিলে বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধন করা হয়েছে/হচ্ছে এই সরকারের অধীনে, যা অস্বীকার করার নয়। কিন্তু, পরিকল্পনা প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে কাক্স্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারাই এসব অদূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা এবং সমন্বয়হীনতার একমাত্র কারণ বলে আমি মনে করি। স্বপ্নের মেট্রো রেল উদ্বোধনের আগেই বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এলিভেটেড মেট্রো রেল চালু করার পর নিচে চলমান রাস্তার ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে যানজটের কোনো উন্নতি সাধিত হবে না।’ জানি না, এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে বিদ্যমান পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি দেখতে চাই। যেকোনো আলোচনা বা সমালোচনাকে নেতিবাচকভাবে না দেখে ইতিবাচকভাবে  গ্রহণ করতে পারলে মানুষ তার নিজের ভুল খুঁজে বের করতে পারে এবং তা সংশোধনের সুযোগ তৈরি করে সার্বিক উন্নয়ন সাধন করতে সামর্থ্য হয়। ফলে, আমাদের প্রত্যেকের উচিত, যে যার যার অবস্থান থেকে নিজের ভুল খুঁজে বের করে তা সংশোধন করতে সচেষ্ট হওয়া।

মনে রাখা প্রয়োজন, ইতিবাচক উপলব্ধি প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে এবং এর সুফল অনেক। যদি কোনো বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর পাওয়া যায়, তবে তা বাস্তবায়ন করার জন্য নানা ধরনের অপশন খুঁজে বের করা যেতে পারে। কিন্তু নেতিবাচক কোনো বিষয়ের বাস্তবায়নার্থে কোনো অপশন না থাকায় তার অকালমৃত্যু ঘটে। কারণ, কোনো বিষয়ে যদি ‘না’ শব্দটি উচ্চারিত হয়, তাহলে তার আর কোনো বিকল্প চিন্তা থাকে না, অপশন খোঁজার তো প্রশ্নই ওঠে না। তাই আমি আমার পরিমÐলে সবাইকে ইতিবাচক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। 

যাহোক, আমি ১৯৮৭ সাল থেকে ঢাকা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। সেই থেকে আজ অবদি প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে শহরের লোকসংখ্যা এবং ব্যক্তিগত যানবাহনের পরিমাণ। পাশাপাশি প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে/হচ্ছে রাস্তাঘাট সংস্কার করাসহ সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থার। কিন্তু, উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় বরং যত দিন যাচ্ছে তত অবনতি হচ্ছে। সভা-সেমিনার, লেখালেখি কোনো কিছুর কমতি নেই এই বিষয়ে। তারপরও অসহনীয় ট্রাফিক জ্যামের কারণে পথ চলতে নাকাল-নাজেহাল সর্বস্তরের মানুষ। সময়, জনশক্তি এবং যানবাহনের জ্বালানিসহ অপরিমেয় ক্ষতি হচ্ছে, অর্থের অপচয় হচ্ছে ব্যক্তি ও জাতীয় পর্যায়ে। যা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর সমূহ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। দুর্বিষহ মানসিক ও শারীরিক যাতনার শিকার হচ্ছে শহরবাসী। মূল্যবান আয়ু ক্ষয় হচ্ছে মানুষ ও যানবাহনের। 

ঢাকা শহরে উল্লেখযোগ্যভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হলেও ট্রাফিক চলাচল ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ার কারণেই সুফল পাচ্ছে না শহরের মানুষ। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে বসতিপূর্ণ এলাকায় আনুপাতিক হারে রাস্তার এরিয়া কম (২৫%-এর স্থলে ৮%)। তারপরও আমি বলতে চাই, অত্র শহরে যে পরিমাণ রাস্তা আছে, তার সঠিক ব্যবহার এবং ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। আমার বিশ্বাস, বিদ্যমান এই ৮% রাস্তার ওপর অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করা, ভ্যান-বাজার বসানো বন্ধ করা এবং ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাসহ সার্বিক নিয়ম-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটাতে পারলেই  চলমান ট্রাফিক জ্যাম সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব। 

বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে বাস্তবমুখী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সফল করতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি আছে, আছে সেসব নিয়মনীতি মেনে চলার জন্য কঠোর আইন এবং আইনের প্রয়োগ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তেমন নিয়মনীতি কিংবা আইনের কোনো কমতি আছে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু সেসব আইনের যথার্থ প্রয়োগ না থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সব অনিয়মই আজ নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সব প্রক্রিয়াই ব্যাহত হচ্ছে। 

উন্নত বিশ্বে ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গকারী কাউকেই কোনোরূপ ছাড় দেওয়া হয় না। তাদের কাছে আইনের চোখে সবাই সমান। ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের মতো ট্রাফিক চলাচলে নিয়মনীতি ভঙ্গ করে পথ চলার কোনো নজির আমি দেখিনি। বরং নিয়মনীতি ভঙ্গ করে পথ চলার দায়ে তাৎক্ষণিক অর্থদÐ প্রদান করাসহ নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সদা তৎপর দেখেছি। ফলে, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিতনির্বিশেষে সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বলাই বাহুল্য, শুধু আইনের শাসনব্যবস্থা বলবত থাকার কারণে উন্নত বিশ্বে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার মত দুঃসাহস কেউ দেখাতে যায় না। রাস্তায় গাড়ি নেই, জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারী নেই, কিন্তু সিগন্যালে গাড়ি না থামিয়ে পাস করার কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত স্থান ছাড়া গাড়ি থামানো কিংবা পার্কিং করার কোনো বিকল্প নেই। অথচ আমাদের দেশে কিসের সিগনাল? কিসের জেব্রা ক্রসিং? কিসের নির্ধারিত স্থান? কোথাও কারও ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। 

ফলে, ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামের অবস্থা মাঝে মাঝে এমন প্রকট আকার ধারণ করে, যাতে চলমান গাড়িগুলো বিশেষ কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দীর্ঘ সময়ের জন্য নিঃশ্চল হয়ে যায়। ১০ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে কখনো কখনো এক ঘণ্টা কিংবা তারও অধিক সময় লেগে যায়। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনকে বেশ তৎপর দেখা গেলেও তার কোনো ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় না। এসব অনিয়মের কারণ বিশ্লেষণ করা এবং তার প্রতিকার ও প্রতিরোধকল্পে প্রশাসনিক কিংবা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায় তা আমার জানা নেই। ঢাকা শহরের বিদ্যমান রাস্তার অবস্থা বিবেচনায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে বা মেট্রো রেল চালু করার পরও যদি ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার উন্নতি করা না যায়, তাহলে কোনো সুফল পাওয়ার আশা অতীব ক্ষীণ। তাই আবারও বলছি, শুধু রোড পার্কিং বন্ধ করে বিদ্যমান রাস্তার সদব্যবহার এবং ট্রাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে পারলেই অন্তত ৫০% ট্রাফিক জ্যাম কমে যেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। 

প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান, পিইঞ্জ

এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (সার্ভিসেস্)

অ্যাডভান্সড্ ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস্ লি.

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৩ তম সংখ্যা, মে ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top