ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে!

ঢাকার যানজট নিরসনের জন‍্য স্ট্র‍্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল‍্যানের (ঝঞচ) আওতায় দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে। কুর্মিটোলাস্থ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী/শনিরটেক পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি। এটি সরকারের একটি প্রতিশ্রæত ও অগ্রাধিকার প্রকল্প। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্টের আওতায় এই প্রকল্পটির অগ্রগতি নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। এই প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সে অনুসারে দেশের পিপিপি আইন ও বিধিবিধান অনুসরণে এর যাবতীয় কার্যক্রম গৃহীত হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিকেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদে‍্যাগ গ্রহণ করে। ২০১০ সালের শুরুতে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের থেকে প্রস্তাব গ্রহণের পর তা যাচাই-বাছাই করে সরকারের অর্থনৈতিক ক্যাবিনেট কমিটির (ঈঈঊঅ) সভায় পেশ করা হয় এবং ২০১১ সালের ২০ জুলাই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

চার লেনবিশিষ্ট এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ‍্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার, যার সম্ভাব‍্য ব‍্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১২২ বিলিয়ন টাকা বা ১ দশমিক ৪ ডলার। কাজটির মূল গ্যারান্টার সরকারের সেতু বিভাগ এবং কনসেশনায়ার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কো. লি. ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদের কনসেশন   অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটি ইঙঞ (উবংরমহ-ইঁরষফ-ঙঢ়বৎধঃব-ঙহি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন‍্য চুক্তি হয় এবং ৪২ মাসের মধে‍্য প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন তদারকি, মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণের জন‍্য সেতু বিভাগের অধীনে ফ্রাস্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কো. লি. (ঋউঊঊ) নামে একটি কোম্পানিও গঠিত হয়। ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ঊচঈ কনট্রাকটর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে চীনের চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে (ঈজঈঈ)। প্রত‍্যাশা করা হয়েছিল, সাড়ে তিন বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হবে, কিন্ত তা হয়নি!

এখানে উল্লেখ‍্য, কাজটির বাস্তবায়নে তড়িঘড়ি করে উদ্যোক্তার প্রস্তাব অনুমোদন এবং চুক্তি সম্পাদন করা হলেও তখনো এই কাজের বিভিন্ন সমীক্ষা (যেমন, ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি), বিশদ নকশা প্রণয়ন, ভূমি অধিগ্রহণ, প্রকল্পটির পরিবেশগত প্রভাব মূল‍্যায়ন ইত‍্যাদি বিষয় সম্পন্ন হয়নি! নিয়ম ছিল, আগে নকশা চূড়ান্ত করেই চুক্তি করা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে চুক্তির পর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নকশা তৈরি করে তা অনুমোদনের জন‍্য পেশ করা হয়। অপর দিকে চুক্তির ২-৩ বছর পরও প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই গ্রæপ এই কাজটির বাস্তবায়নের জন‍্য কোনো অর্থ জোগাড় করতে পারেনি। অবশ‍্য প্রকল্পের প্রস্তাবিত রুটে জমি অধিগ্রহণও একটি বড় সমস‍্যা ছিল। তাই জমি ত্বরিত অধিগ্রহণের জন‍্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তাও নিতে হয়। ওই অবস্থায় কাজ শুরুর অংশে (কুর্মিটোলা থেকে বনানী পর্যন্ত এলাকায়) জমি অধিগ্রহণ এবং প্রকল্পটির নকশা পরিবর্তন/সংশোধন করে তথা অর্থের সংস্থান হওয়ার পর ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে নতুন করে ইতাল-থাই গ্রæপের সঙ্গে ইইঅ/ঋউঊঊ-এর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়।

অতঃপর ২০১৫ সালে আবারও কিছু কারণে এই প্রকল্পটির চুক্তি পুনঃসংশোধন করা হয়। এতে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত হয়েছে চীনের স‍্যানডং ইন্টান‍্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক‍্যাল করপোরেশন (ঝওঊঞ) এবং সিনো-হাইড্রো করপোরেশন। এই পর্যায়ে প্রকল্প এলাকাটিকে প্রথমে দুই ভাগে অতঃপর তিন ভাগে (ঞৎধহপযব-এ) বিভক্ত করা হয়। প্রথম পর্যায়ে লক্ষ‍্য স্থির করা হয় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে বনানী/তেজগাঁও (ট্রান্স ১); দ্বিতীয় পর্যায়ে বনানী থেকে মগবাজার/কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (ট্রান্স ২) এবং তৃতীয় পর্যায়ে কমলাপুর থেকে কুতুবখালী/শিরনিরটেক (ট্রান্স ৩) পর্যন্ত। ইতাল-থাই সূত্রে জানা যায়, বিগত সাত বছরে (২০১৫ থেকে) প্রকল্পটির প্রথম ট্রান্সে আনুমানিক ৮০ শতাংশের মতো কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী ডিসেম্বর বা ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে এই অংশ উন্মুক্ত করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এই প্রকল্পটির আওতায় (ক) ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘে‍্যর চার লেনের ডুয়েল মেইন ক‍্যারেজওয়ে, (খ) ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘে‍্যর চার লেনের ডুয়েল লিংক রোড ক‍্যারেজওয়ে, (গ) ২৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ‍্য, (ঘ) ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের ৩২টি অন-অফ র‍্যাম্প, (ঙ) ৮টি টোল প্লাজা, (চ) ৪৩টি টোল কালেকশন বুথ ও (ছ) কন্ট্রোল অফিস নির্মাণ ও পরিচালনার সংস্থান রয়েছে। এর মধ্যে অদ‍্যাবধি কুর্মিটোলা থেকে বনানী/তেজগাঁও পর্যন্ত এলাকার অংশে এক্সপ্রেসওয়ের পিয়ার/কলামের পাইলিং ও ফাউন্ডেশন কাজ, সুপারস্ট্রাকচার এবং ক‍্যারেজওয়ের নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক প্রায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দফায় দফায় সময় বর্ধিত করার পরও অদ‍্যাবধি ইতাল-থাই গ্রæপ এখনো প্রকল্পটির কাক্স্ক্ষিত পর্যায়ে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে পারেনি এবং এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে প্রকল্প ব‍্যয়ও বেড়ে চলেছে। এর জন‍্য ইতাল-থাই গ্রæপের পক্ষ থেকে সময়মতো জমি না পাওয়া, অপরাপর পরিবহন প্রকল্পের (ইজঞ, গজঞ ও পাতাল রেল) কাজের সঙ্গে সংঘর্ষ, নকশায় গরমিল, সিদ্ধান্তহীনতা ইত‍্যাদি বিষয়ের কথা বলা হচ্ছে।

এখনো প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময়সীমা আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। কিন্তু সতি‍্যকার অর্থে কখন যে এই প্রকল্পটির প্রথম ট্রান্সের কাজ পরিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে তা বর্তমানে কেউই জানেন না! এর জন‍্য এখন বেশি মাত্রায় দায়ী করা হচ্ছে প্রকল্পটির অ্যালাইনমেন্টে নিষ্কণ্টকভাবে কাজের জন‍্য জমি না পাওয়া এবং কয়েকটি এমআরটি রুটের পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান! যেমন, গাবতলী থেকে আগত এমআরটি-৫ লাইনটি কারওয়ান বাজারে এফডিসি রেলগেট ও হাতিরঝিল প্রকল্প ক্রস করবে; কুর্মিটোলা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মিতব‍্য এমআরটি-১ রুটের অ্যালাইনমেন্টের অনেক স্থানেও এলিভেটেড রোডের কাজে সমস‍্যার সৃষ্টি করছে ইত‍্যাদি। একইভাবে বিমানবন্দরের সম্মুখে এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মাল্টি মডেল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণ এবং এই এলিভেটেড প্রকল্পের বিভিন্ন পয়েন্টে টোল প্লাজা ও কন্ট্রোল রুমে পরিকল্পনা এবং নির্মাণেও সমস‍্যা দৃশ‍্যমান! এ জন‍্য রেল কর্তৃপক্ষ এবং অন‍্যান‍্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন ডিটিসিএ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, রাজউক, সিটি করপোরেশনস, বিদ্যুৎ বিভাগ ইত‍্যাদির সঙ্গে বারবার আলোচনা ও তদবির করতে হচ্ছে বলে বলা হয়। অন‍্যদিকে এই দীর্ঘ সময়েও নির্মাণকাজ শেষ করতে না পারায় বিমানবন্দর থেকে বনানী/মহাখালী পর্যন্ত তথা নগরীতে জনভোগান্তি ও ভয়াবহ যানজট সমস‍্যা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান (বিআইপি, আইইবি), ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির মেয়র এবং দেশের বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ/প্রকৌশলীরা সরকারের সেতু বিভাগ, সেতু কর্তৃপক্ষ এবং ঋউঊঊ-কে দায়ী করছেন!

পিপিপি চুক্তি অনুযায়ী কনসেশনারস ইতাল-থাই এই এক্সপ্রেসওয়ের কারিগরি ডিজাইন তৈরি করেছেন। নিয়ম তথা প্রকল্পটির অনুমোদিত শিডিউল/ডকুমেন্ট অনুযায়ী ১০০ বছর মেয়াদের জন‍্য এসব অবকাঠামোর ডিজাইন তৈরি করার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়েছে কি না অস্পষ্ট!! কারণ, সেতু কর্তৃপক্ষ (ইইঅ/ঋউঊঊ) কর্তৃক ইতাল-থাই থেকে এই প্রকল্পের কারিগরি নকশাগুলো প্রাপ্তির পর তা চেকিং/ভেটিংয়ের জন‍্য বিআরটিসি, বুয়েটের কাছে পাঠানো হলে বুয়েট কর্তৃপক্ষও অনেকটা তড়িঘড়ি করেই তা ভেটিং করে দিয়ে দেয়। সতি‍্যকার অর্থে, বুয়েট টিম যথাযথভাবে এই জটিল ও দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির ডিজাইন ক‍্যালকুলেশনস চেক করেছে কি না সন্দেহ? এ প্রসঙ্গে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের একজন সাবেক সিনিয়র অধ‍্যাপকের কাছে জানতে চাইলে তিনি এতদ্্বিষয়ে কিছু মন্তব‍্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বাস্তবে উচিত ছিল এই চেকিংয়ের কাজটি দেশের অভিজ্ঞ কোনো প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান দ্বারা করানোর এবং বুয়েট দিয়ে তা রিভিউ/ভেটিং করানোর। দেশের অনেক কারিগরি/অবকাঠামো বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইনে অনেক দুর্বলতা ও অসামঞ্জস‍্যতা রয়েছে! দৃশ‍্যত খুব হালকা ডিজাইনে এই এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হচ্ছে!! যা আমাদের দেশের পরিবহনব‍্যবস্থায় কতটুকু টেকসই হবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ!! 

গড়ঃঃ গধপউড়হধষফং (গগ) নামক এশটি আন্তর্দেশীয় উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পটির ইনডিপেনডেন্ট/সুপারভাইজরি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োজিত আছে। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার ভয়াবহ ট্রাফিক সমস‍্যার মধ্যে অচিরে এই নির্মাণাধীন সড়কের মাধ‍্যমে ৮০ কিলোমিটার গতিতে মাত্র ২০ মিনিটে প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক ও অন‍্যান‍্য ভারী গাড়ি টোল পরিশোধ করে উত্তর থেকে দক্ষিণে বা ারপব-াবৎংধ দ্রæত যাওয়া-আসা করতে পারবে। কিন্তু দৃশ‍্যত ৩০-৪০ ফুট উঁচু ও ¯িøম আকৃতির ণ-শেপড কনক্রিট পিয়ার/কলাম আর হালকা-আকৃতি/সাইজের প্রিস্ট্রেসড/প্রিকাস্ট ক্রস গার্ডার বিম ও ডেক ¯ø্যাব দিয়ে যেভাবে এই এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হচ্ছে, তাতে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং বেশ আতঙ্কিতও বটে! ভূকম্পন বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় যদি কখনো প্রকৃত মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে এই এক্সপ্রেসওয়েটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে!! আবার অনেকে ঢাকা তথা দেশের ট্রাফিক ব‍্যবস্থাপনার সঙ্গেও এই এলিভেটেড প্রকল্পটির নির্মাণশৈলী যথাযথভাবে নয় বলে মনে করছেন!!

এই অবস্থায় পরিবহন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ ২৫ বছর মেয়াদের কনসেশন অ্যাগ্রিমেন্টে নির্মাণাধীন এই হালকা আকৃতির (ডিজাইনের) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি দিয়ে কোনো অবস্থায় ভারী গাড়ি চলাচল করতে পারবে না বলে মনে করছেন! অন‍্যদিকে কীভাবে ও কোথায় এই এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে ডবরমযরহম ইৎরফমব স্থাপন করা হবে, তাও এখনো অস্পষ্ট!! ফলে সব মিলে কনসেশন সময়কাল পার না হতেই এক্সপ্রেসওয়েটি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা তথা বিধৎ ্ ঃবধৎ-এ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আপনাতে ধসে বা ভেঙে পড়তে পারে বলে মনে করছেন! এমনিতে ণ-শেপড কনক্রিট কলামের ওপর অনেক লম্বা (২০ থেকে ৪০ মিটার সাইজের) কাস্ট ইন সিটু ও শেপড প্রিস্ট্রেসড/প্রিকাস্ট গার্ডারগুলোও দৃশ‍্যত বেশ হালকা আকৃতিতে নির্মিত হচ্ছে! তাই এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচলে অতিমাত্রায় কম্পনের সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে! আবার এই এক্সপ্রেসওয়ের কিছু স্থানে কান্টিলিভার আকারে নির্মিত হচ্ছে। ফলে এক্সপ্রেসওয়েটির ওপর ভারী গাড়ির প্রেসার অথবা সড়ক দিয়ে এলোমেলো গাড়ি চলাচলের কারণেও অঘটনের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে!! তা ছাড়া বিমানবন্দর সড়কের ওপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের যেসব অন-অফ বা এন্ট্রি-এক্সিট র‍্যাম্পগুলো হচ্ছে সেগুলোও দৃশ‍্যত অনেকটা হালকা আকৃতিতেই নির্মিত হচ্ছে! এ প্রসঙ্গে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের এক শিক্ষকের (যিনি এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত) সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি সম্পূর্ণভাবে স্মার্ট টেকনোলজিতে ডিজাইন করা ও সেভাবে নির্মিত হচ্ছে এবং এতে ভয় বা আতঙ্কের কোনো কারণ নেই! আশা করি তা-ই হোক!!

তবে এই প্রকল্পটির চুক্তিপত্রে একটি নতুন ও সুন্দর ধারা সংযোজিত করা আছে, যা হলো ট্রান্সফার অব টেকনোলজি (ঞঙঞ) অব দিস প্রজেক্ট। বলা হয়েছে, দেশে প্রথমবারের মতো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে বিধায় তার শহড়-িযড়ি বা টেকনোলজি যাতে দেশের প্রকে‍ৗশলী ও অপরাপর পেশাজীবীদের মধ্যে বিস্তার করা যায়, সে জন‍্য প্রকল্প ব‍্যয়ের এক পাসেন্ট অর্থ সংরক্ষিত করে তা দিয়েই কনসেশনায়ার গ্রæপ দেশে এতদ্্সংক্রান্ত গবেষণা, স্টাডি, প্রশিক্ষণ ইত‍্যাদির জন‍্য একটি ইনস্টিটিউট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ওঈঊগ) প্রতিষ্ঠার ব‍্যবস্থা করবে। এর আওতায় এই প্রকল্পটির ডিজাইন, নির্মাণ এবং পরিচালনায়ও এই ইনস্টিটিউটটি সক্রিয় থাকার কথা! এবং এটির প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় ও প্রাথমিক অপারেশন কনসেশনায়ার কর্তৃক এই প্রকল্পের নির্ধারিত খাত থেকে মেটানো হবে বলে উল্লেখ করা আছে। কিন্তু জানা মতে, এখনো এই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম বা সৃষ্টি হয়নি!

তাই যদি এখনই এই ইনস্টিটিউটটির প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে এর মাধ‍্যমেই এই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো বা যেসব ভুলত্রæটি দৃশ‍্যনীয় বা সমস‍্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তা নিরসনে গবেষণা, ফলোআপ ইত‍্যাদি করা যাবে। তা ছাড়া এটি একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও বিনির্মাণের কথা, যার মাধ‍্যমে ভবিষ‍্যতে প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট অপরাপর পেশাজীবীদের মাধ‍্যমে দেশের উন্নয়নে গৃহীত অপরাপর যেকোনো অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্পের কাজের গবেষণা, নকশার মূল‍্যায়ন, বিভিন্ন সমীক্ষার পর্যালোচনা, এ জন‍্য সংশ্লিষ্টদের দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব‍্যবস্থা এবং দেশের সড়ক-মহাসড়কের ব‍্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পদ্ধতির উন্নয়নে সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ করা যাবে। কাজেই অনতিবিলম্বেই এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির (ওঈঊগ-এর) বাস্তবায়নের ব‍্যবস্থা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রকৌশলী মো. এমদাদুল ইসলাম

লেখক:

সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, রাজউক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৪৯ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top