ঢাকায় কবরস্থানের ক্রাইসিস কবরের ওপর কবর!!

ঢাকায় এখন কবরের জায়গার বড্ড অভাব। এ নিয়ে নগরবাসীর হাহাকার! কবরস্থান নগরায়ণের প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা হয়েছে। কিছু কিছু কবরস্থান অবহেলা-অযতেœ হারিয়ে গেছে! অথচ মোগল আমলেও ঢাকায় লাখ লাখ মানুষের বসবাস ছিল এবং মৃত্যুর পর তাদের অধিকাংশকেই বিভিন্ন স্থানে কবর দেওয়া হতো। কিন্তু বিশালসংখ্যক কবরস্থানের মধে‍্য এখন মাত্র হাতে গোনা কিছু এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে আছে। অনুরূপভাবে শুরু থেকেই ঢাকায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়েরও অনেক কবরস্থান বা সিমেট্রি রয়েছে। 

প্রাক্্-মোগল যুগে ঢাকায় মুসলমানদের কোনো আধিপত‍্য ছিল না। তাই কোনো মুসলিম মারা গেলে তাকে কবর দেওয়ার জন‍্যও কোনো নির্ধারিত কবরস্থান ছিল না। মৃত ব্যক্তিকে ঘরের আঙিনায় বা পার্শ¦বর্তী নিচু ও ঝোঁপঝাড়ে কবর দেওয়া হতো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) ১৫৭৭ সালে প্রথম ধার্মিক মুসলিম, যিনি ইরাকের বাগদাদ থেকে ভারত হয়ে বঙ্গোপসাগর-বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদী দিয়ে ঢাকার মিরপুরে তুরাগ নদীর ধারে তাঁর আস্তানা গড়ে তোলেন। সেখানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করে ধর্ম প্রচারে নামেন। তিনি মারা যাওয়ার পর মসজিদের পাদদেশেই তাঁকে দাফন করা হয়। আর তখন এই মসজিদের আশপাশে জঙ্গল ও নিচু জমিতে তাঁর ভক্তদের কবর দেওয়া হতো। অর্থাৎ বলা যায়, সেই থেকেই ঢাকায় মুসলমানদের বিস্তার ও কবর সংস্কৃতি চালু হয়। অনুরূপ ঢাকার কেন্দ্রবিন্দুতে (জিরো পয়েন্টের পাশে) শেখ মালিক পীর ইয়ামেনি (রহ.)-এরও একটি প্রাক্্- ঐতিহাসিক কবর রয়েছে, যিনি সিলেটের হজরত শাহ জালাল (রহ.) এর সঙ্গে সুদূর ইয়ামেন থেকে এখানে ধর্ম প্রচারের জন‍্য এসেছিলেন বলে জানা যায়! নবাব সলিমুল্লাহ নাকি তাঁর কবরের ওপর গম্বুজ তৈরি করে দিয়েছিলেন!

 মোগল আমলেই ঢাকায় মুসলমান ও মসজিদের সংখ‍্যা বৃদ্ধি পায়। তখন থেকেই মসজিদ প্রাঙ্গণে কবরস্থান গড়ে ওঠে। সে সময় মোগল পরিবারের লোকজন ও তাঁদের ঘনিষ্ঠজনদের মসজিদ প্রাঙ্গণের কবরস্থানে বা কিছু বিশেষ স্থানে (যেমন লালবাগ ও পরীবাগ) কবর দেওয়া হতো, যার ওপর তখন তাঁরা বিভিন্ন ধরনের প্রাসাদ, গম্বুজ বা অন‍্যান‍্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাও নির্মাণ করেন। পাশাপাশি শহরের স্থানীয় গণমান‍্য ব‍্যক্তিবর্গ ও সরকারি পদস্থ ব্যক্তিদের নারিন্দা, জুরাইন, লালবাগ, পুরানা পল্টন, রমনা ইত‍্যাদি এলাকায় কিছু পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হতো। আর শহরের সাধারণ মানুষজনকে এখানে-ওখানে (রাস্তা বা খালের ধারে) বা বাড়ির প্রাঙ্গণে বা শহরতলির পারিবারিক কবরস্থানে বা জঙ্গলা ও নিচু জায়গায় দাফন করা হতো। জানা যায়, পুরান ঢাকার আরমানিটোলায়ও এই রকম একটা নিচু জায়গায় গরিব ও অসহায় মানুষের কবর দেওয়ার জন‍্য নির্ধারিত ছিল।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ঢাকার অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। তখন ঢাকায় অভাব-অনটনে এবং উপর্যুপরি বন‍্যাকবলিত হয়ে ও মহামারিতে মানুষজন পথঘাটে মরে থাকত এবং তাদের স্থানীয় মাঠ-ময়দান ও অন‍্যান‍্য জায়গায় গণকবর দেওয়া হয়। তখনকার এক জরিপ মতে, ১৭০৪ সাল থেকে ১৮০০ সালের শুরুতে ঢাকার জনসংখ‍্যা ১০ লাখ থেকে কমে গিয়ে অবশিষ্ট থাকে মাত্র ৬৮ হাজারে। সে সময় ঢাকার উত্তর প্রান্তে রমনা এলাকার পশ্চিমে জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় একটি বিশাল গণকবর ছিল, যেখানে শহরের অসংখ‍্য মানুষজনকে গণকবর দেওয়া হয়! অনেক ইতিহাসবিদের মতে, বস্তুতপক্ষে সে সময় ঢাকা শহরে এত বেশি মানুষের গণমড়ক হয়েছিল যে অনেককেই দাফন করতে না পেরে লাশ নদীতে-ঝিলেও ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দীর্ঘ শাসনামলে পুরো ঢাকা শহরই একধরনের কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল। 

ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকায় নবাব পরিবারের রাজত্ব চলে, যখন নবাবদের  প্রভাব-প্রতিপত্তিতে পুনরায় ঢাকার অবস্থা কিছুটা উন্নত হতে শুরু করে। ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর শহরের বিভিন্ন স্থানে এ রকম অনেক গণকবর ও কবরস্থান চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে  চম্পাতলী, সিদ্দিকবাজার, আরমানিটোলা, বেঁচারাম দেউড়ি, আগামসি লেন, রমনা উদ‍্যানের পশ্চিমে, মিরপুর ইত‍্যাদি উল্লেখযোগ‍্য। ১৮৬৯ সালে শহরের পরিস্থিতির পুনঃউন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে এ রকম একটি ঐক‍মত্য হয় যে শহরের বিভিন্ন স্থানে গণকবর, যত্রতত্র গড়ে ওঠা কবরস্থান ও পারিবারিক কবরস্থানগুলো ভেঙে পৌরসভার অধীনে একটি কমন বা পাবলিক গোরস্থান প্রতিষ্ঠা করা হবে। সে অনুসারে ওই ধরনের সব গণকবর গুঁড়িয়ে দিয়ে শুধু কয়েকটি পারিবারিক কবরস্থান যেমন সিদ্দিকবাজার, জুরাইন, গেন্ডারিয়া ও পুরানা পল্টনের কবরস্থানগুলোকে কিছুটা সংস্কারের ব‍্যবস্থা করা হয়। ওই ধারাবাহিকতায় ঢাকা পৌরসভা ১৮৮২ সালে পুরানা পল্টনের পারিবারিক কবরস্থান এবং ১৮৮৯ সালে গেন্ডারিয়ার পারিবারিক কবরস্থানকে পাবলিক গোরস্থান হিসেবে ঘোষণা করে।

১৯০৫ সালে ঢাকায় পূর্ববঙ্গ ও আসামের প্রাদেশিক রাজধানী স্থাপনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর রমনা এলাকায় তখন নবাব পরিবারের জোত ‘বাগ-ই-বাদশাহী’তে গণকবরস্থান ছিল। কিন্তু তা পরে জনগণের প্রতিবাদের মুখে ধ্বংস করে ও গুঁড়িয়ে সেখানে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এবং শহরের পশ্চিমে আজিমপুরে পরিকল্পিতভাবে একটি নতুন কবরস্থান গড়ে তোলার ব‍্যবস্থা করা হয়। উল্লে‍খ‍্য, আজিমপুরে এর আগে থেকেই (১৮৫০ সাল থেকে) স্থানীয় অলি-আউলিয়া ও সমাজের বুজুর্গ-গুণীজনদের সমাহিত করার জন‍্য আরেকটি পুরোনো কবরস্থান ছিল, যেখানে ১৭৬৯ সালে সুফি মোহাম্মদ দায়েম কর্তৃক একটি মসজিদও নির্মাণ করা হয়েছিল বলে প্রকাশ।

মোট কথা, ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ দিকে ঢাকার পুনঃনগরায়ণ প্রক্রিয়ায় ও ভাঙাগড়ার খেলায় মুসলমানদের জন‍্য আজিমপুরেই প্রথম পরিকল্পিতভাবে কবরস্থান ছিল। অতঃপর পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে পর্যায়ক্রমে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বনানী, উত্তরা, রায়েরবাজার, গোড়ানসহ বড়-ছোট মোট আটটি কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেগুলোর মধ্যে আজিমপুর কবরস্থান ৩২ একর, বনানী ১০ একর, মিরপুর ৬৫ একর, রায়েরবাজার ৯৬ একর এবং গোরানের কবরস্থান ২৫ একর জায়গায় বিস্তৃত। উত্তরায় কেন্দ্রীয়ভাবে না হলেও বিভিন্ন সেক্টরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কবরস্থানের সংস্থান করা হয়েছে। তা ছাড়া নগরীর স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে আরও বেশ কিছু পারিবারিক ও ওয়াকফকৃত কবরস্থান রয়েছে।

এক সমীক্ষা মতে, ঢাকায় ৯ ধরনের কবরস্থান চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে সরকারি ব‍্যবস্থাপনায় পাবলিক কবরস্থান, ওয়াকফ করা কবরস্থান, পারিবারিক কবরস্থান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণের কবরস্থান, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যক্তিদের কবরস্থান, নিয়ন্ত্রিত গোরস্থান, মালিকানাবিহীন ইত‍্যাদি উল্লেখযোগ‍্য। তা ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অনেক পীর-আউলিয়ার কবর বা মাজার। যেমন পীর ইয়ামেনির মাজার, গোলাপ শাহের মাজার, পীর জঙ্গির মাজার, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ইসলাম শাহ চিশতির মাজার, বঙ্গভবন প্রাঙ্গণে শেখ জালাল দাখিনীর মাজার, পরী বিবির মাজার ইত‍্যাদি উল্লেখযোগ‍্য।

প্রথম দিকে সব কবরস্থানেই স্থায়ী কবরের ব‍্যবস্থা করা হলেও বর্তমানে নগরীতে জনসংখ‍্যার চাপে কিছু কবরস্থানেই স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের কবরের ব‍্যবস্থা আছে। তন্মধ্যে বনানী কবরস্থানে সাধারণ মানুষজনের কবর দেওয়ার জন‍্য তেমন কোনো সুযোগ নেই বললে চলে! বনানীতে একেকটি অস্থায়ী কবরের মূল‍্যও কয়েক লাখ টাকা। অন‍্যদিকে মিরপুর কবরস্থানটি হজরত শাহ আলী (রহ.)-এর মাজারসংলগ্ন জায়গায় আর মিরপুর ও রায়েরবাজারে, যেখানে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ সময়ে সাধারণ মানুষ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত‍্যা করে বা জীবন্ত পুঁতে রাখা বা কবর দেওয়া হয়, সেখানেই এই দুটি বৃহদাকার কবরস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়। মিরপুর কবরস্থানের অংশবিশেষ ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থান’ হিসেবেও পরিচিত।

এটাও লক্ষ‍ণীয়, ঢাকার পুরোনো প্রায় সব মসজিদ প্রাঙ্গণেই ছোট-বড় কবরস্থান রয়েছে। আগে এসব মসজিদ প্রাঙ্গণে বা পারিবারিক কবরস্থানে স্থায়ী কবরই দেওয়া হতো, যা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে জনসংখ‍্যার চাপে নগরীর পরিকল্পিত কবরস্থানগুলোতেও বেশির ভাগই অস্থায়ী কবরের ব‍্যবস্থা করা হচ্ছে। স্থানভেদে এখন এসব একেকটি অস্থায়ী কবরের মূল‍্য হাজার-লাখ টাকা। অস্থায়ী কবরগুলো সীমিত সময়ের জন‍্য সংরক্ষিত থাকে। একটি কবর দেওয়ার কয়েক বছর বা মাসের মধ্যে তা ধ্বংস করে তার ওপর নতুন কবর দেওয়া হয়। আর কিছু কবরস্থানে তো মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আগের কবর ধ্বংস করে নতুন কবর দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ‍্য, কয়েক বছরের জন‍্য এসব কবর সংরক্ষণ করে রাখতে হলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। 

অন‍্যদিকে আগেকার দিনে নগরীর প্রায় সব কবর বিভিন্নভাবে বাঁধিয়ে রাখা হতো, কবরের গায়ে এফিটাফ লেখা হতো, অনেকে তো তাঁদের মা-বাবার কবরের ওপর বিভিন্ন ধরনের স্মৃতিসৌধ বা গম্বুজও বানিয়ে রেখেছেন। ঢাকার পুরোনো কবরস্থানগুলোতে এই ধরনের অসংখ‍্য কবর দেখা যায়। ইদানীং এসব কিছু কবরের ওপর আবার শুধু তাদের পরিবারের উত্তরসূরিদের কবরস্থ করা হচ্ছে। অন‍্যদিকে নগরীর তথা দেশের কিছু কিছু ভিআইপি/সিআইপি মানুষেরা তো তাঁদের পরিবারের লোকজনের জন‍্যও এসব কিছু কবরস্থানে (যেমন বনানীতে) অগ্রিম কবর বুকিং করে রেখেছে। বনানী কবর স্থানভেদে সাড়ে তিন হাতের একেকটি কবর এখন কোটি টাকার ওপর বিক্রি হচ্ছে। 

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঢাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিকল্পিত এলাকা ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, বসুন্ধরা, বনশ্রীতে কোনো কবরস্থানের ব‍্যবস্থা নেই। তবে উত্তরায় সেক্টরভিত্তিক কয়েকটি ছোট ছোট কবরস্থান রয়েছে, যা সেখানকার আবাসিক বাসিন্দাদের তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত। আর এসব এলাকার ভিআইপি/সিআইপিরা মারা গেলে তথা অনেক সময় দেশ-গ্রাম থেকেও কিছু বড় বা ধনবান লোকজনকে ঢাকায় এনে কবর দেওয়া হয়। অনুরূপ নগরী তথা দেশের শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের জন‍্যও পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ও তেজগাঁওয়ে ড্রাম ফ‍্যাক্টরি প্রাঙ্গণে এবং সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের জন‍্য বনানীতে একটি বিশেষায়িত কবরস্থান রয়েছে, যেখানে শুধুই সংশ্লিষ্টদেরই কবরস্থ করা হয়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অনুরূপভাবে সমাজের কিছু বিশেষ শ্রেণি-গোষ্ঠীর লোকজনের জন‍্য আরও কয়েকটি বিশেষায়িত কবরস্থান রয়েছে।

এখানে আরও উল্লেখ‍্য, স্বাধীনতার পর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সংসদ ভবন প্লাজার পশ্চিম-দক্ষিণ কোনায়ও বিতর্কিতভাবে কিছু বিশেষ নেতা ও ব‍্যক্তির জন‍্য একটি কবরস্থানের সৃষ্টি করা হয়, যেভাবে পাকিস্তান আমলেও সোহরাওয়ার্দী উদ‍্যানের পশ্চিম-দক্ষিণে তিন নেতার কবরস্থানের সৃষ্টি করা হয়। যেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জাতীয় সংসদ প্লাজার উত্তরে চন্দ্রিমা উদ‍্যানের বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে জাতীয় ও রাজনৈতিক পর্যায়ে তুলকালাম চলছে!

আরেকটি অনাকাক্স্ক্ষিত বিষয় হলো, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে নিহত কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তখন যিনি যেখানে মারা গেছেন, তাঁকে সেখানে (যেমন রাস্তার ওপর বা ধারে, পার্ক বা মাঠে) সমাহিত করা হয়। অনুরূপ বিভিন্ন সময়ে নগরীর স্থানে স্থানে কিছু পীর-ফকিরকেও তাঁদের ভক্তরা স্ব-স্ব বসবাস বা সাধনাস্থলে সমাহিত করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন এসব জায়গার ওপর দিয়ে সড়ক বা অন‍্যান‍্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হয়, তখন নগর কর্তৃপক্ষকে কঠিন সমস‍্যার পড়তে হয়। অর্থাৎ ওসব স্থানের কবর/মাজার রক্ষা করতে গিয়ে সড়কগুলো সংকুচিত বা আঁকাবাঁকা করে নির্মাণ করতে হয়েছে। এতে কিছু কিছু সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। 

এত সমস‍্যার মধ্যে ঢাকায় বর্তমানে প্রতিদিন কত মানুষ মারা যায় এবং কাকে কোথায় দাফন করা হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ‍্যান কোথাও বা কারও কাছে নেই। এই বিষয়টি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল করোনাকালে। প্রতিদিন অসংখ‍্য মানুষকে এসব কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে। আর কবরের জায়গার হাহাকারে বর্তমানে প্রায় কবরস্থানেই মাত্র কয়েক মাস বা সপ্তাহের ব‍্যবধানে একেকটি কবরের ওপর নতুন করে কবর দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকায় দু-তিন কোটি মানুষের বসবাস এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে গড়ে ৪৫ হাজার মানুষ। তাই অচিরে ঢাকা তথা পুরো দেশে কবরস্থানের একটি ভয়াবহ রূপ নেবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কবরের জায়গা বিক্রিযোগ‍্য ও সংরক্ষণ করা উচিত কি না? স্থায়ী কবরের ব‍্যবস্থা বাতিল করা যায় কি না? সৌদি আরব বা অপরাপর মুসলিম বিশ্বে বিনা পয়সায় দাফন করা হয় এবং আল্লাহর নবী (সা.) ব‍্যতীত আর কারও কবর স্থায়ী নয়! তাই ঢাকা মহানগরীসহ দেশের যত্রতত্র কবর দেওয়া বা মাজার তৈরি করার অপসংস্কৃতি বন্ধ করা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে কবরস্থান বানানো বাধ‍্যতামূলক করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিন্তাভাবনার সময় হয়েছে। তা না হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে নগরবাসীকে।

প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৫ তম সংখ্যা, জুলাই ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top