তারকাদের নিয়ে ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই। তারকাদের পছন্দ-অপছন্দ, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভক্তদের কৌতূহল দেখা যায়। প্রিয় তারকারা কোথায় থাকেন, তাঁদের বাড়ির অন্দরমহলটা কেমনÑ এই নিয়েও ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই। আজ আপনাদের ফেস অফ-এ শন আর্চার কিংবা ব্রোকেন অ্যারোর ভিক ডেকিন্স চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করা হলিউড অভিনেতা জন ট্রাভোল্টার স্বপ্নের বিমানবাড়ির গল্প শোনাবেন ফয়সল মোয়ারেফুর রসূল
ট্রাভোল্টা। পুরো নাম জন জোসেফ ট্রাভোল্টা। ইতালীয় বংশোদ্ভূত বাবা ও আইরিশ বংশোদ্ভূত মায়ের ছয় সন্তানের একজন ট্রাভোল্টা। তাঁর বয়স যখন পাঁচ, তখন থেকেই বিমানের প্রতি গড়ে ওঠে প্রচÐ ভালোবাসা। সে বয়সেই রপ্ত করেন বিমান চালনার কলাকৌশল। এরপর থেকেই বিমান নিয়ে বাড়তি মোহ কাজ করত; মনের ভেতরে চলত নানা জল্পনাকল্পনা। এমনকি হলিউডের সফলতম অভিনেতা হয়েও বিমানের চিন্তা রয়ে যায় তাঁর মননেই। ফলে ফ্লোরিডায় নিজস্ব এস্টেটে যখন তিনি নির্মাণ করেন তাঁর স্বপ্নের বাড়ি, সেখানেও গড়ে তোলেন একটি প্রাইভেট এয়ারপোর্ট! তাঁর বাড়িটিই যেন হয়ে ওঠে বিমানবাড়ি!
ফ্লোরিডায় নিজের ৫৫০ একর এস্টেটের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ একর জায়গার ওপর ট্রাভোল্টা নির্মাণ করেন তাঁর স্বপ্নের বাড়ি। জাম্বলএয়ার এভিয়েশন এস্টেটে ৭ হাজার ৬০০ বর্গফুটের বাড়িটি হলিউডের অন্য তারকাদের আবাস্থলের মতোই আকর্ষণীয় ও অভিজাত। তবে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এতে প্রাইভেট এয়ারপোর্ট সংযোগ করে। বাড়ির বাইরে অবস্থিত দুটি জেট পার্ক করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান এবং পেছনের দরজার সঙ্গে সংযোগকৃত ৭ হাজার ৫০০ ফুট লম্বা রানওয়ের প্রথম দর্শনে যে কাউকে করবে মুগ্ধ। জন ট্রাভোল্টা একজন প্রাইভেট পাইলট। তাঁর রয়েছে একাধিক এয়ারক্রাফট। এতেও তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বিমানবাড়ি নির্মাণ করে ছোটবেলার স্বপ্নকে একেবারে বাস্তবে রূপ দেন এই হলিউড তারকা।
ফ্লোরিডায় বিশাল এই সম্পত্তি কেনার পর নিজেদের মনের মতো করে বাড়ি নির্মাণে উদ্যোগ নেন ট্রাভোলটা ও তাঁর প্রয়াত স্ত্রী কেলি প্রেস্টন। নকশা তৈরির ক্ষেত্রে আভিজাত্য এবং নিজেদের শখের বাস্তবায়ন ঘটাতে কোনো কার্পণ্য করেনি এই তারকা দম্পত্তি। বাড়িটির স্থাপত্য নকশা করেন স্থপতি ডানা স্মিথ। তাঁর নকশায় মধ্য শতাব্দীর অর্থাৎ ১৯৬০-এর দশকের প্যান অ্যাম যুগের আবহ পাওয়া যায়। বাড়ি নির্মাণে মূল লক্ষ্য ছিল ভেতর থেকে বাইরে অবস্থিত বিমানগুলোকে দৃশ্যমান করে তোলা। এই স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে কংক্রিট ও কাচ।
বাড়ির অভ্যন্তরের বেশির ভাগ অংশই শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রবেশদ্বার হলের মেঝের প্যালেটটি গাঢ় চকচকে কাঠের ওপর দারুণভাবে নকশা করে সাজানো হয়েছে। বসার জায়গাটিতে আরামদায়ক পালঙ্ক, অত্যাধুনিক আসবাব এবং পারিবারিক ছবি রাখা। এ ছাড়া বিভিন্ন মডেলের বিমান কাঠের কেবিনেটে রাখা হয়েছে।
১০ মিলিয়ন ডলারের এই বিলাসবহুল বাড়িটির ভেতরে রয়েছে ৮ হাজার ৭০০ বর্গফুটের কনফারেন্স সেন্টার, পাঁচটি বেডরুম ও সমানসংখ্যক স্নানকক্ষ। রয়েছে দুটি রান্নাঘর, বার ও একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এই বাড়িতে আরও রয়েছে একটি বড় গেস্ট হাউস ও ব্রেকফাস্ট কোয়ার্টার, যেখানে পাইলট এবং অতিথিরা দীর্ঘ সময় ভ্রমণের পর নিজেদের সতেজ করে থাকেন। বাড়ির বাইরে রয়েছে বিনোদনের জায়গা, যেখানে রয়েছে উন্মুক্ত লিভিং এরিয়া, বাগানের মাঝে নান্দনিক সুইমিং পুল এবং একটি গলফ কোর্স। এ ছাড়া আছে ১৬টি গাড়ি রাখার পার্কিং এরিয়া, যা পরবর্তীকালে ট্রাভোল্টার পুত্র বেনের জিমন্যাস্টিকস সরঞ্জাম রাখার স্থান করা হয়েছে।
২০২০ সালে স্ত্রী কেলি প্রেস্টনের মৃত্যুর পর বর্তমানে মেয়ে এলা বøু এবং ছেলে বেঞ্জামিনকে নিয়ে বিলাসবহুল এই বাড়িতে বসবাস করছেন জন ট্রাভোল্টা। তিনি ও তাঁর মেয়ে প্রায়ই এই নান্দনিক বাড়ির অভ্যন্তরের ছবি ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে থাকেন, যার মাধ্যমে ট্রাভোল্টা ভক্তরা বিখ্যাত এই বাড়ির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিতভাবে জেনে থাকে।
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৫ তম সংখ্যা, জুলাই ২০২৩