স্থপতি জঁ ন্যুভেল একজন বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি স্থপতি এবং নগর পরিকল্পনাবিদ। তিনি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য আইকনিক ভবন এবং কাঠামোর নকশা করেছেন। ন্যুভেল তাঁর উদ্ভাবনী ও যুগান্তকারী ডিজাইনের জন্য অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার; পেয়েছেন প্রশংসা। ২০০৮ সালে পাওয়া মর্যাদাপূর্ণ প্রিৎজকার আর্কিটেকচার পুরস্কার এসবের মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া পেয়েছেন ওল্ফ পুরস্কার, আগাখান পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা। ন্যুভেলের স্থাপত্যকর্মের তালিকায় সাংস্কৃতিক ও নাগরিক ভবন থেকে বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত। তাঁর কিছু বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে প্যারিসের ইনস্টিটিউট ডু মন্ডে আরবে, বার্সেলোনার টোরে আগবার, আবুধাবি ল্যুভরে জাদুঘর এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ওয়ান সেন্ট্রাল পার্ক আবাসিক কমপ্লেক্স। বিশ্ববিখ্যাত এই স্থপতিকে নিয়ে লিখেছেন স্থপতি খালিদ মাহমুদ
স্থপতি জঁ ন্যুভেল প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী স্থপতিদের অন্যতম একজন। যিনি স্থাপত্য নকশা ও উদ্ভাবনের সীমানাকে নিজেই বারবার অতিক্রম করেছেন। স্থাপত্যের কাজের পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ নগর পরিকল্পনাবিদও। তিনি বিশ্বের অনেক নগর পুনর্নির্মাণ প্রকল্প এবং মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে জড়িত। ভবন তৈরির জন্য আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের সঙ্গে আধুনিকতাবাদী ও উত্তর-আধুনিকতাবাদী শৈলীকে মিশ্রণের দক্ষতার জন্য তিনি স্বীকৃত হয়েছেন।
বিখ্যাত এ স্থপতি ১৯৪৫ সালে ফ্রান্সের ফুমেলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্যারিসের ইনস্টিটিউট অব আর্ট অ্যান্ড টেকনোলজি (ণ্ঠপড়ষব ফবং ইবধীঁ-অৎঃং-) এ পড়াশোনা করেন এবং পরে ১৯৭০ সালে তাঁর স্থাপত্যচর্চার সূচনা করেন। শিক্ষক পিতামাতা তাঁকে নিয়ে গণিত এবং ভাষাতত্তে¡র বিষয়ে সব সময় উৎসাহিত করলেও ন্যুভেলের মুগ্ধতা ছিল চিত্রকলায়। কৈশোরে শিক্ষক যখন তাঁকে আঁকা শিখিছিলেন তখনই তিনি শিল্পে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বোরডক্সের স্কুল অব আর্টসে ভর্তি পরীক্ষায় বিফল হয়ে জিদ চেপে যায় মাথায়। প্যারিসে গিয়ে অংশ নেন জাতীয় পর্যায়ে আর্ট কম্পিটিশনে। অর্জন করেন প্রথম স্থান। শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিবারও স্থাপত্য পড়াশোনায় আর অমত করেনি। পেশা হিসেবে শিল্পের চেয়ে স্থাপত্য তুলনামূলক নিরাপদ মনে করেছিলেন তাঁরা। স্থাপত্যে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থপতি ক্লাউডি প্যারেন্ট ও পল ভিরিলিওর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। মাত্র এক বছরের মাথায় তাঁকে একটি বৃহৎ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করা হয়।
২৫ বছর বয়সে, ন্যুভেল স্থাপত্যে ¯œাতক শেষ করে ফ্রাঙ্কোইস সিগনিউরের সঙ্গে স্থাপত্যচর্চায় যোগ দেন। ন্যুভেলের পিতামাতা ন্যুভেলকে প্যারিস বিয়েনাল (ইরবহহধষব ফব চধৎরং)-এর সপ্তম সংস্করণের চেয়ারপারসনের কাছে একটি মূল্যবান সুপারিশসহ প্রেরণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে ন্যুভেল সেখানে ১৫ বছর ধরে যুক্ত থাকেন। তিনি প্রদর্শনীর নকশা করেন এবং শিল্প ও থিয়েটারে যোগাযোগ করেন। এ সুবাদে ন্যুভেল ফ্রান্সের স্থাপত্যবিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কে একজন প্রধান অংশগ্রহণকারী হয়ে ওঠেন। তিনি মার্স ১৯৭৬ আন্দোলনের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করেন এবং এক বছর পরে সিন্ডিকেট ডি ল আর্কিটেকচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন।
ন্যুভেল লেস হ্যালেস জেলার পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক ছিলেন (১৯৭৭) এবং তিনি ১৯৮০ সালে প্রথম প্যারিস স্থাপত্য বিয়েনাল (চধৎরং ধৎপযরঃবপঃঁৎব ইরবহহধষব) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ন্যুভেল তিনজন ভিন্ন ভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে কাজ করেন। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে, তাঁর জুনিয়র স্থপতি ইমানুয়েল বø্যামন্ট, জিন-মার্ক ইবোস ও মির্টো ভিটার্টের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন জঁ ন্যুভেল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। তবে বর্তমান প্র্যাকটিস চলছে অ্যাটেলিয়ার্স জঁ ন্যুভেল নামে, যা ১৯৯৪ সালে মিশেল পেলিসির সঙ্গে গঠিত হয়েছিল। প্যারিসে এর প্রধান অফিসে ১৪০ জন সহযোগী সহকারে এটি ফ্রান্সের বৃহত্তম স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। এ ছাড়া রোম, জেনেভা, মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় স্থানীয় কার্যালয় আছে। ১৩টি দেশে ৩০টি সক্রিয় প্রকল্পে তাঁরা যুক্ত আছেন। জঁ ন্যুভেল ২০০৮ সালে তিনি প্রিৎজকার পুরস্কারে ভুষিত হন। তবে তাঁর মেধা ও যোগ্যতার প্রকাশ ঘটতে শুরু করে তারও আগে। তাঁর প্রথম সাড়া জাগানো স্থাপত্যকর্ম হচ্ছে আরব ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট। ১৯৮১ সালে ন্যুভেল আর্কিটেকচার-স্টুডিওর সঙ্গে, প্যারিসের আরব ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট ভবনের নকশা প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন, যার নির্মাণ ১৯৮৭ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। এর সুবাদে ১৯৮৯ সালে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার সম্মাননা পেয়ে ন্যুভেল মনোযোগের কেন্দ্রে আসেন। প্রিৎজকার পুরস্কারের আগে ওল্ফ পুরস্কার পান।
ন্যুভেলের স্থাপত্যকর্মের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে আরব ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট। জঁ ন্যুভেল আরবি স্থাপনা কাঠামোর একটি আধুনিক রূপান্তরকে মূর্ত করেছেন। ঐতিহ্যবাহী নকশাবহুল জালিকাটা দেয়াল, যেখানে প্রযুক্তির নতুন মোড়কে আবির্ভ‚ত হয়েছে। ভবনের বাইরের দেয়াল হলো আলোক সংবেদনশীল লেন্সসমৃদ্ধ একটি গ্রিড প্যাটার্নের দেয়াল। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যান্ত্রিক লেন্সগুলো আকৃতি ও আকার পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা এবং বন্ধ হয়ে যায়। লেন্সের আলোক-বৈদ্যুতিক কোষগুলো (ঢ়যড়ঃড়বষবপঃৎরপ পবষষং) বাইরের আলোর মাত্রাকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্যন্তরীণ আলোর কমবেশি করে নিতে পারে। বিল্ডিংটি সারা দিন তার সরল অভিব্যক্তি প্রকাশ করে এবং সন্ধ্যায় সবচেয়ে নাটকীয় রূপান্তর ঘটে যখন অভ্যন্তরীণ আলোকরশ্মি জালিনকশার মধ্য দিয়ে ঠিকরে বের হয় এবং নকশাগুলোকে আলোকিত করে। ভোরবেলা প্রকৃতি জেগে ওঠে, আলো নিভে যায় এবং ঠিক উল্টো অনুভব। বাইরের আলো অন্তঃপরিসরে তখন জটিল নকশার ছায়া তৈরি করে। ন্যুভেল আলো ও অন্ধকার এবং ভেতর ও বাইরের মধ্যে একটি সংলাপ তৈরি করেন। অভ্যন্তর হলের মধ্য দিয়ে চলার সময় মুক্ত এবং বদ্ধপরিসরের একটি বৈপরীত্য আছে, যা পর্যায়ক্রমে কখনো বিস্মিত এবং কখনো বিব্রত করে।
নিউইয়ার্ক টাইমসের ভাষ্যমতে, প্রিৎজকার পুরস্কার পাওয়ার পেছনে যে কয়টি প্রকল্প মূল ভ‚মিকা পালন করে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই আরব ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া বার্সেলোনায় অবস্থিত বুলেট আকৃতির এবং ল্যুভরে মোড়ানো ক্যান্ডি কালারের টাওয়ার অ্যাগবর, কিংবা মিনেপোলিশের মেদবহুল এবং ঝুলন্ত ব্রিজসমৃদ্ধ গোথরি থিয়েটারও ন্যুভেলের সৃষ্টিশীল দক্ষতাকে আরেকবার পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। প্যারিসের প্রতিবাদী চেহারার রহস্যময় এবং বন্য অথবা উদ্ভট মিউজিয়াম অব ব্রানলি কিয়ে অথবা ফিলহারমোনি ডি প্যারিসও আছে তেমনই উল্লেখযোগ্য স্থাপনার তালিকায়। এর বাইরেও প্রিৎজকার কমিটি আরও বেশ কিছু প্রকল্পকে নির্দেশ করে, যার মধ্যে আছে ইউরোপে কার্টিয়ার ফাউন্ডেশন ফর কনটেমপোরারি আর্ট (১৯৯৪), দ্য কালচারাল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার, লৃসার্ন (২০০০), অপেরা ন্যুভেল, লিয়ন (১৯৯৩), এক্সপো ২০০২ সুইজারল্যান্ড এবং নির্মাণাধীন কোপেনহেগেন কনসার্ট হল এবং ন্যান্টেসের কোর্টহাউস (২০০০)। পাশাপাশি উত্তর আমেরিকায় দুটি লম্বা টাওয়ার, নিউইয়র্ক সিটিতে ট্যুর ভেরে এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি বাতিল কনডোমিনিয়াম টাওয়ার।
স্থপতি জঁ ন্যুভেল তাঁর বৈচিত্র্যময় এবং উদ্ভাবনী স্থাপত্যশৈলীর জন্য পরিচিত, যা প্রায়ই আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের সঙ্গে আধুনিকতাবাদী ও উত্তর-আধুনিকতাবাদী উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে মিলানে একটি বক্তৃতায় তাঁর ‘আধুনিকতা’ খোলাসা করে ন্যুভেল বলেছিলেন, ‘আধুনিকতা হচ্ছে একটি চলমান ও জীবন্ত ধারণা, এটা কোনো ইতিহাসের টুকরো নয় যে একসময় এটা থেমে যাবে। আধুনিকতা আমাদের স্মৃতির সর্বোত্তম ব্যবহার করছে এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যত দ্রæত সম্ভব এগিয়ে যাচ্ছি।’ তাঁর ডিজাইনগুলো রং, আলো ও ফর্মের সাহসী এবং অভিব্যক্তিপূর্ণ ব্যবহার দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং তিনি প্রায়ই তাঁর বিল্ডিং তৈরি করতে উদ্ভাবনী উপকরণ ও কৌশল ব্যবহার করেন। ‘স্থাপত্যের ভবিষ্যৎ আর স্থাপত্য নয়’, ন্যুভেলের একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, স্থাপত্য কখনোই একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। আজকের সংস্কৃতিতে অন্যান্য শাখায় স্থাপত্যের উৎস সন্ধান করতে হবে এবং সমাজের প্রকৃতিকে সম্পূর্ণরূপে আলিঙ্গন করতে হবে। ন্যুভেলের ওপর সিনেমার প্রভাবের পাশাপাশি পোস্টমডার্ন বা উত্তর-আধুনিক দর্শনের প্রকাশ খুঁজে পাওয়া যায়।
ন্যুভেল ফিলহারমোনি ডি প্যারিস কনসার্ট হল, আবুধাবি ল্যুভর জাদুঘর ও কাতার জাতীয় জাদুঘরের মতো অনেক সাংস্কৃতিক ও নাগরিক ভবনের নকশাও করেছেন, যার প্রতিটি তার অবস্থানের অনন্য সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে প্রতিফলিত করে। ২০০৬ সালে জিন ন্যুভেল প্যারিসের নৃতাত্তি¡ক শিল্পের জাদুঘর কোয়াই ব্রানলি তৈরি করেন। কাচের সেতুসদৃশ স্থাপনাটি বাগানের ওপরে ঝুলন্ত কাঠামোতে রূপ নেয়। উদ্যানগুলোকে প্রচলিত ফরাসি উদ্যানের ভিন্ন ধাঁচে ডিজাইন করা হয়েছিল। বাগানে কোনো সীমানা নেই, যেন মুক্ত প্রকৃতিকে বাগান ও ভবনের দেয়াল উভয়ের মাঝে স্বাধীনভাবে বিচরণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভবনের সৌন্দর্যকে আরও অভাবিত করে দিয়েছে এই সবুজ প্রাচীর, যা স্থপতি ন্যুভেল ও উদ্ভিদবিদ প্যাট্রিক বøাংঙ্কের মিলিত প্রয়াসে সূচনা করা হয়। এই জীবন্ত প্রাচীর তৈরি করতে, ভবনের গা ঘেষে একটি স্টিলের ফ্রেম তৈরি করে গুল্ম ও পাহাড়ি গাছপালাকে সে কাঠামোতে সন্নিবেশ করা হয়। সবুজ বেড়ে উঠলে আশ্চর্যজনকভাবে সুন্দর এবং অন্য জাগতিক একটি অনুভ‚তি তৈরি হয়। এখানে ন্যুভেল স্থাপত্য ও প্রকৃতির মধ্যে ঐকতান তৈরি করতে সফল হন।
২০১৫ সালে চালু হওয়া ফিলহারমোনি ডি প্যারিস পার্ক দে লা ভিলেটে অবস্থিত একটি সিম্ফোনিক কনসার্ট হল। একটি মহাকাশযানের সঙ্গে পাড়ি দেওয়া একটি সমুদ্র-লাইনারের মতো ডিজাইন করা। এই ভবনটি তার উদ্ভাবনী আঙ্গিক ও বাহ্যিক প্রকাশ উভয় ক্ষেত্রেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শ্রোতা ও সংগীতজ্ঞদের এক জায়গায় আলিঙ্গন করা, একটি অকপট ঘনিষ্ঠতা তৈরি করার লক্ষ্যে এর কাঠামো বিন্যাস। কনসার্ট হোস্ট করার পাশাপাশি ভবনটি রিহার্সাল কক্ষ, প্রদর্শনীর স্থান, রেস্তোরাঁসহ সংগীতের জন্য একটি ‘লিভিং স্পেস’ হিসেবে কাজ করে। ন্যুভেল এমন একটি বিল্ডিং কল্পনা করেছেন, যা নান্দনিক ও কার্যকরীভাবে দৃষ্টিনন্দন।
ন্যুভেল সমসাময়িক স্থাপত্যের সৌন্দর্যকে আয়ত্ত করে প্রতিটি প্রজেক্টকে স্বতন্ত্র ও শক্তিমান ধারণার সঙ্গে সংযুক্ত করেন। তাঁর সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ কাজের মধ্যে আবুধাবিতে ল্যুভর অন্যতম। প্রকল্পটি মরুভূমির মাঝখানে একটি দ্বীপে নির্মিত বিশাল গম্ভুজ, যার ছায়ায় ছোট ছোট ভবন কাঠামো এবং অন্তঃপরিসর আশ্রয় নিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ভাসমান গম্বুজকাঠামো হিসেবে ডিজাইন করেছিলেন, যা সূর্যরশ্মিকে পরিশীলিত ও নমনীয় হয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়। সামগ্রিক প্রভাবটি বোঝানো হয়েছে ‘একটি মরূদ্যানে খেজুরের পাতার মধ্য দিয়ে যাওয়া সূর্যালোকের রশ্মি।’ ল্যুভর কেবল একটি আর্ট গ্যালারি নয়, এটি এমন একটি মরূদ্যান, যেখানে পানির ধারা প্রবাহিত হয় এবং স্থাপত্যের চারপাশে একটা নিরব বাষ্পীয় বলয় তৈরি করে। পানির নিজস্ব একটি শীতল প্রভাব রয়েছে, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গম্ভুজ আবুধাবির তীব্র উত্তাপে ছায়া প্রদান করে। ভবনটি তার শান্ত মননশীল সৌন্দর্যে এত নিখুঁত যে অন্তঃপরিসরে এটি স্বর্গীয় বলে মনে হয়।
সামগ্রিকভাবে, জঁ ন্যুভেলের স্থাপত্যশৈলীকে উদ্ভাবনী, পরীক্ষামূলক ও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে, যেখানে এমন কাঠামো তৈরি করার ওপর ফোকাস রয়েছে, যা কেবল নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয় নয়, বরং তাদের আশপাশের জন্য কার্যকরী ও প্রতিক্রিয়াশীলও। ১৯৭০-এর দশকে তাঁর স্থাপত্য কর্মজীবনের শুরু থেকে ন্যুভেল আধুনিকতাবাদ ও উত্তর-আধুনিকতার নান্দনিকতা ভেঙে নিজের একটি শৈলীগত ভাষা তৈরি করেছেন। তিনি তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভবন ডিজাইন করার ওপর প্রচুর গুরুত্ব দেন। স্থাপত্য সমালোচকেরা ‘অধ্যবসায়, কল্পনাশক্তি, উচ্ছ¡াস এবং সর্বোপরি সৃজনশীল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি অতৃপ্ত তাগিদকে ন্যুভেলের কাজের গুণাবলি হিসেবে স্বীকার করেছেন।
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৩ তম সংখ্যা, মে ২০২৩