ছুটে চলাই যাঁর সাফল্যসূত্র

ছোটবেলা থেকেই মনেপ্রাণে চাইতেন ব্যবসায়ী হবেন। চাকরি মানেই বাঁধাধরা নিয়ম, যা তাঁর পক্ষে মেনে চলা সম্ভব না। তাই পেশাগত জীবনের শুরুতে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু বিধি বাম; ব্যবসার অনুক‚ল পরিবেশ না পাওয়ায় সফল হতে পারেননি। তাই ব্যবসা ছেড়ে চাকরি করেছেন। কিন্তু ব্যবসায়ী হওয়ার অদম্য ইচ্ছা তাড়িয়ে বেড়াত তাঁকে। শেষমেশ চাকরি ছেড়ে জড়িয়ে পড়েন নির্মাণপণ্য ব্যবসায়। আর এই ব্যবসাই তাঁকে এনে দেয় কাক্স্ক্ষিত সাফল্য। মাদারীপুরের শহীদ বাচ্চু সড়কের ‘সিটি বিল্ড ট্রেড’-এর স্বত্বাধিকারী তরুণ এ ব্যবসায়ী এস এম মামুন। বন্ধনের নিয়মিত আয়োজন ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে এবার জানাব তাঁর সাফল্যের গল্প। সহযোগিতায় ছিলেন আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির জ্যেষ্ঠ টেরিটরি অফিসার মো. রবিউল আলম।

ব্যবসায়ী এস এম মামুনের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২০ এপ্রিল, ফরিদপুর জেলায়। বাবা মৃত মোছলেম শিকদার ও মা লাইলী বেগম। ২০০৮ সালে তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করে শুরু করেন ব্যবসা। খুলনা শহরে স্থাপন করেন একটি প্লাস্টিক রশি উৎপাদনের কারখানা। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ। কিন্তু উভয় ব্যবসাতেই খান ধাক্কা; পাননি কোনো সফলতা। শেয়ারবাজারে ধস নামলে বেশ কিছু টাকা আটকে যায়। আর লোডশেডিং জটিলতায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না পেয়ে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কারখানাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এরপর আকিজ সিমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিন্তু কিছুতেই যেন মন বসছিল না চাকরিতে। কিছুটা অসুস্থও হয়ে পড়েন। প্রায় সাড়ে ৩ বছর পর চাকরি ছেড়ে দেন। কিছুদিন বিশ্রামের পর অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। জীবিকার তাগিদে কিছু তো একটা করতে হবে! তবে এবার আর চাকরি নয়, ব্যবসা। ২০১৮ সালে শুরু করেন সিমেন্ট ব্যবসা। সেই শুরু, আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমেই বেড়েছে ব্যবসার পরিসর। একপর্যায়ে যুক্ত হন আকিজ সিমেন্ট ব্যবসায়। গুণগত মানের এ পণ্যটি তাঁর ব্যবসায় সাফল্য পেতে হয় দারুণ সহায়ক। বর্তমানে তিনি আকিজ সিমেন্ট, মাদারীপুর সদর থানা একাংশের একজন বিজনেস পার্টনার। সিমেন্ট ছাড়াও বর্তমানে তাঁর ব্যবসা রয়েছে রড ও সিকা কেমিক্যালে।  

ব্যবসা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই যে সাফল্য পান, তা সত্যিই অভাবনীয়। সাধারণত দেখা যায়, অনেক বছর খুচরা পর্যায়ে ব্যবসার পর ব্যবসায়ীরা ডিলার ব্যবসায় ঝুঁকে থাকেন। কিন্তু তিনি সরাসরি হন ডিলার। নির্মাণপণ্য ব্যবসার অভিজ্ঞতা না থাকলেও চাকরির সুবাদে সহজেই তিনি ব্যবসাটিকে আয়ত্বে নেন। আগে থেকেই পরিচিতি ও সুসম্পর্ক থাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পেয়েছেন যথেষ্ট সহযোগিতা। এমন সব পলিসি তিনি প্রয়োগ করেন, যা অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে নতুন। তবে ডিলার পর্যায়ে ব্যবসা শুরু করলেও নিজের মূলধন ছিল সামান্যই; মাত্র লক্ষাধিক টাকা। বাকিটা আত্মীয়-বন্ধুদের থেকে ধার নেন। মূলধনস্বল্পতার কারণে ব্যবসায় টিকে থাকা তাঁর জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। যদিও তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম ও ব্যবসায়িক কৌশলের বলে সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অর্জন করেন সাফল্য। সততা, দ্রæততম সময়ে পণ্য সরবরাহ ও বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন হয়ে ওঠে তাঁর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। 

ব্যবসায়ী মামুন বিয়ে করেন ২০১২ সালে। স্ত্রী টুম্পা আক্তার। তাঁদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ফারাবী রহমান আমান্তু বিয়্যাম ল্যাবরেটরি স্কুলে কেজি শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট মেয়ে আনায়া নূর, বয়স আড়াই বছর। ব্যবসায় ব্যস্ততার মধ্যেও শারীরিকভাবে ফিট থাকার জন্য নিয়মিত জিম করেন। অবসরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন। পরিবারকে সময় দেন; ঘুরতে যান। ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও রাজমিস্ত্রিদের নিয়ে বিনোদন ভ্রমণ করেন। তাঁর কাছে শারীরিক সুস্থতা ও পরিবার সবার আগে। ব্যবসায় অনেক চাপ নিতে হয় বিধায় শরীর ও মন ভালো রাখা জরুরি। 

জীবনের শুরুর ব্যবসার ব্যর্থতা ও ব্যাপক ক্ষতি সত্তে¡¡ও চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসার সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী মামুনের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু তাঁর বিশ^াস ছিল সততা, পরিশ্রম ও বুঝে ব্যবসা করতে পারলে সাফল্য আসবেই। একবার ব্যর্থ হয়েছেন বলে বারবার হবেন এমন নয়। কিন্তু নির্মাণপণ্যের ব্যবসাটিও হুমকির মুখে পড়ে; হানা দেয় মহামারি করোনা। তিলে তিলে গড়া ব্যবসাটি যেন নিঃশেষ হতে চলেছে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি; সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে মিলেছে উত্তোরণের পথ। কারণ তাঁর মতে, ‘হাল ছেড়ে দেওয়া মানেই ছিটকে পড়া। তাই বাধা এলেও তা জয় করে এগিয়ে চলতে হবে; থেমে গেলে চলবে না। কারণ ব্যবসায় সফলতার অলিখিত সূত্রই প্রতিনিয়ত ছুটে চলা!’ 

একনজরে

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম: সিটি বিল্ড ট্রেড

স্বত্বাধিকারীর নাম: এস এম মামুন

অবস্থান: শহীদ বাচ্চু সড়ক, মাদারীপুর 

ব্যবসা শুরু: ২০১৮ সালে

নির্মাণপণ্য: সিমেন্ট, রড ও সিকা কেমিক্যাল।

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৪৯ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top